আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি, যা আমার জন্যে অবশ্যই লজ্জার। তবে এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই
খাঁচাবন্দী শিশুদের নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের জান্নাতের জীবনযাত্রা -সংবাদ
‘জীবন মানে যন্ত্রণা, নয় ফুলের বিছানা’ এ কথা সহজে আমরা মানতে চাই না। যদিও কারো কারো জীবন আমৃত্যুই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে নারীর জীবনের গল্পটাই বেশি সামনে আসে। এরকমই ভাগ্য বিড়ম্বিত একজন নারী ঠাকুরগাঁওয়ের জান্নাত বেগম।
অনেক নারীর মতো জান্নাতও স্বপ্ন দেখতো স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করার। তবে বাস্তবতার কাছে মুখ থুবড়ে দাঁড়ায় সেসব অনুভূতি। আজ তাকে চারটি সন্তান নিয়ে বন্ধুর পথে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আর সেই লড়াইটা তাকে একাই লড়তে হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও পরিষদপাড়া কিংবা কাঁচাবাজার আড়ৎ এলাকায় গেলে দেখা মিলবে লোহা দিয়ে বানানো খাঁচার ঠেলা গাড়ি। যাতে ১৩ মাস বয়সী তিন যমজ শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন জান্নাত। খাঁচার পাশে তার সাথেই হাঁটছে সাড়ে ৩ বছর বয়সী আরেক সন্তান।
জানা গেছে, জমজ তিন শিশু আব্দুল্লাহ, আমেনা ও আয়শা। সেইসাথে সাড়ে ৩ বছর বয়সী মরিয়মকে নিয়েই মা জান্নাতের লড়াই। বছর পাঁচেক আগে প্রেম করে ঢাকায় বিয়ে করেন ঠাকুরগাঁওয়ের হাবিলকে। সেই সময়ই স্বামীর সাথে ঠাকুরগাঁও ফিরেন ময়মনসিংহের মেয়ে জান্নাত।
তাদের সংসারে প্রথমে কন্যা মরিয়ম ও পরে একই সাথে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এর কিছুদিন পরই জান্নাতকে ছেড়ে চলে যায় হাবিল। এর পর থেকেই চার শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন অল্প বয়সী সংগ্রামী এ মা। এতো ছোট ছোট চার শিশুকে রেখে কোথাও কাজে যাওয়ার উপায় পাচ্ছিলেন না তিনি। কিন্তু ক্ষুধা ওেতা আর মানে না। তাছাড়া মা হয়ে সন্তানের ক্ষুধার্ত মুখ কিভাবে দেখা যায়? তাই যেভাবেই হোক সন্তানদের আহার যোগাড় করতে হবে। খুঁজে বের করেন এক অভিনব উপায়। সাত হাজার টাকা খরচ করে কামারের দোকানে চাকা লাগানো একটি লোহার খাঁচা তৈরি করেন অসহায় এই মা। সেই খাঁচার ঠেলাগাড়িতেই তিন যমজ শিশুকে বসিয়ে এবং সাথে সাড়ে ৩ বছরে বড় কন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। বিভিন্ন সময় অনেকেই তার সন্তানদের কিনে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু মায়ের মন মানে না।
জান্নাত বেগম জানান, আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি। যা আমার জন্যে অবশ্যই লজ্জার। তবে এ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময় বাসাবাড়িতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু ছোটো চার শিশু বাচ্চাদের কার কাছে রেখে কাজে যাবো ? তাই আমার পক্ষে কোথাও কাজ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। উপায় না পেয়ে ৭ হাজার খরচ করে এই চাকা সহ খাঁচার গাড়িটি বানিয়েছি। সন্তানদের এই খাঁচায় করে নিয়েই এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাহায্য তুলি। তবে এভাবে ঘুরে খুব বেশি পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারিনা। তাই আমার সন্তানদের যথাযোগ্য পুষ্টিকর খাবার কখনো দিতে পারিনা। অনেক সময় তারা পেট ভরে খাবারও পায় না।
জান্নাতের প্রতিবেশীরা প্রায়শই তার এই কষ্টের জীবন দেখে আফসোস করে। অনেক সময় তারা জান্নাতের সন্তানদের ক্ষুধার জ্বালায় কান্নাকাটি করতেও দেখে। সেসময় কেউ কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসে।
প্রতিবেশীরা জানান, যে কোনো নারীর পক্ষে এত ছোটো ছোটো ৪টি বাচ্চা লালন-পালন করা বেশ কষ্টকর। কিন্তু সেখানে এই নারীকে বাচ্চাদের লালন-পালনের পাশাপাশি
উপার্জনের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এই নারীকে দেখলেই বোঝা যায় একটা মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে। অনেক সময় তার বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনলে খুবই খারাপ লাগে। অনেক সময় পেট ভরে খাবারও পায়না তারা। বিত্তশালীরা কত কত জায়গায় সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু এই নারীকে সেভাবে কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা জানা ছিলো না। আমি দ্রুতই এর খোঁজখবর নিবো। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও প্রশাসন যতটা সম্ভব তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।
আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি, যা আমার জন্যে অবশ্যই লজ্জার। তবে এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই
খাঁচাবন্দী শিশুদের নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের জান্নাতের জীবনযাত্রা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
‘জীবন মানে যন্ত্রণা, নয় ফুলের বিছানা’ এ কথা সহজে আমরা মানতে চাই না। যদিও কারো কারো জীবন আমৃত্যুই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে নারীর জীবনের গল্পটাই বেশি সামনে আসে। এরকমই ভাগ্য বিড়ম্বিত একজন নারী ঠাকুরগাঁওয়ের জান্নাত বেগম।
অনেক নারীর মতো জান্নাতও স্বপ্ন দেখতো স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করার। তবে বাস্তবতার কাছে মুখ থুবড়ে দাঁড়ায় সেসব অনুভূতি। আজ তাকে চারটি সন্তান নিয়ে বন্ধুর পথে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আর সেই লড়াইটা তাকে একাই লড়তে হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও পরিষদপাড়া কিংবা কাঁচাবাজার আড়ৎ এলাকায় গেলে দেখা মিলবে লোহা দিয়ে বানানো খাঁচার ঠেলা গাড়ি। যাতে ১৩ মাস বয়সী তিন যমজ শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন জান্নাত। খাঁচার পাশে তার সাথেই হাঁটছে সাড়ে ৩ বছর বয়সী আরেক সন্তান।
জানা গেছে, জমজ তিন শিশু আব্দুল্লাহ, আমেনা ও আয়শা। সেইসাথে সাড়ে ৩ বছর বয়সী মরিয়মকে নিয়েই মা জান্নাতের লড়াই। বছর পাঁচেক আগে প্রেম করে ঢাকায় বিয়ে করেন ঠাকুরগাঁওয়ের হাবিলকে। সেই সময়ই স্বামীর সাথে ঠাকুরগাঁও ফিরেন ময়মনসিংহের মেয়ে জান্নাত।
তাদের সংসারে প্রথমে কন্যা মরিয়ম ও পরে একই সাথে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এর কিছুদিন পরই জান্নাতকে ছেড়ে চলে যায় হাবিল। এর পর থেকেই চার শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন অল্প বয়সী সংগ্রামী এ মা। এতো ছোট ছোট চার শিশুকে রেখে কোথাও কাজে যাওয়ার উপায় পাচ্ছিলেন না তিনি। কিন্তু ক্ষুধা ওেতা আর মানে না। তাছাড়া মা হয়ে সন্তানের ক্ষুধার্ত মুখ কিভাবে দেখা যায়? তাই যেভাবেই হোক সন্তানদের আহার যোগাড় করতে হবে। খুঁজে বের করেন এক অভিনব উপায়। সাত হাজার টাকা খরচ করে কামারের দোকানে চাকা লাগানো একটি লোহার খাঁচা তৈরি করেন অসহায় এই মা। সেই খাঁচার ঠেলাগাড়িতেই তিন যমজ শিশুকে বসিয়ে এবং সাথে সাড়ে ৩ বছরে বড় কন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। বিভিন্ন সময় অনেকেই তার সন্তানদের কিনে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু মায়ের মন মানে না।
জান্নাত বেগম জানান, আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি। যা আমার জন্যে অবশ্যই লজ্জার। তবে এ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময় বাসাবাড়িতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু ছোটো চার শিশু বাচ্চাদের কার কাছে রেখে কাজে যাবো ? তাই আমার পক্ষে কোথাও কাজ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। উপায় না পেয়ে ৭ হাজার খরচ করে এই চাকা সহ খাঁচার গাড়িটি বানিয়েছি। সন্তানদের এই খাঁচায় করে নিয়েই এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাহায্য তুলি। তবে এভাবে ঘুরে খুব বেশি পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারিনা। তাই আমার সন্তানদের যথাযোগ্য পুষ্টিকর খাবার কখনো দিতে পারিনা। অনেক সময় তারা পেট ভরে খাবারও পায় না।
জান্নাতের প্রতিবেশীরা প্রায়শই তার এই কষ্টের জীবন দেখে আফসোস করে। অনেক সময় তারা জান্নাতের সন্তানদের ক্ষুধার জ্বালায় কান্নাকাটি করতেও দেখে। সেসময় কেউ কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসে।
প্রতিবেশীরা জানান, যে কোনো নারীর পক্ষে এত ছোটো ছোটো ৪টি বাচ্চা লালন-পালন করা বেশ কষ্টকর। কিন্তু সেখানে এই নারীকে বাচ্চাদের লালন-পালনের পাশাপাশি
উপার্জনের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এই নারীকে দেখলেই বোঝা যায় একটা মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে। অনেক সময় তার বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনলে খুবই খারাপ লাগে। অনেক সময় পেট ভরে খাবারও পায়না তারা। বিত্তশালীরা কত কত জায়গায় সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু এই নারীকে সেভাবে কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা জানা ছিলো না। আমি দ্রুতই এর খোঁজখবর নিবো। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও প্রশাসন যতটা সম্ভব তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।