গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৫১৬টি ছিল ধর্ষণের ঘটনা এবং শিশু ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৩৬৭টি। তবে এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৮১ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৩৪৫ জন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৫টি পত্রিকার খবর সংকলন করে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণের খবর মাত্র ৩৫টি কম। নারীর প্রতি সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাই সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে আনোয়ারা বেগম–মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা’ শিরোনামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে তুলে ধরা তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ধর্ষণের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, ১৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের পর সবচেয়ে বেশি খবর প্রকাশিত হয়েছে হত্যার। প্রকাশিত খবর অনুসারে ৩২০ জন নারী ও কন্যা হত্যার শিকার হয়েছেন। ৫১ জন যৌন নিপীড়ন ও ৩৪ জন উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন।
গত বছর ৫২৮ নারী ও কন্যাকে হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮১ জন যৌন নিপীড়ন ও ৪৩ জন উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছিলেন। রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা, শারীরিক নির্যাতন, সাইবার ক্রাইম, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যার খবরও উল্লেখযোগ্য হারে ছিল।
সভায় দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি ও মহিলা পরিষদের গণমাধ্যম উপপরিষদের সদস্য মুনিমা সুলতানা এবং সংগঠনের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজের অভ্যন্তরে থাকা নারীর প্রতি বৈষম্যকে দৃশ্যমান করা, নারীর কণ্ঠকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ তৈরি, সবাইকে সচেতন করা, আইনি সহায়তা পেতে সহায়তা করা এবং নারীর জয়ী হওয়ার গল্প তুলে ধরা—এই সবের মাধ্যমে সাংবাদিকদের আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, এখন উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ সহিংসতা দিয়ে আইন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাজকে আরও নারীবিদ্বেষী করে তোলা হচ্ছে। বিচার চাওয়ার জায়গায়ও বাধা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, আইন সংশোধনের ফলে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতায় যেতে হবে, যা উদ্বেগজনক।
সভায় সূচনা বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের চেয়ে প্রকৃত সহিংসতার ঘটনা আরও বেশি। নতুন নতুন ধরন ও মাত্রা নিয়ে নারী নির্যাতন হচ্ছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে দেখা হয়, ফলে নির্যাতনের আসল বিষয়টি আড়াল হয়ে যায়।
সভার সঞ্চালনা করেন প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজা জেসমিন। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন শাহনাজ মুন্নী, নাদিরা কিরণ, রীতা ভৌমিক, উম্মুল ওয়ারা সুইটি, জাহিদা পারভেজ, শাহনাজ পারভীন, সেবিকা দেবনাথ, দ্রোহী তারা, রাফিয়া খানম চৌধুরী, জান্নাতুল রুহি, নাসরিন গীতি ও সেলিনা আক্তার।
তাদের বক্তব্যে বাসে, পথে চলাচলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের হয়রানি, নারী সাংবাদিকদের চাকরির জায়গা সংকুচিত হওয়া, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অনুপস্থিতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার খবর কম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশের প্রবণতার বিষয়গুলো উঠে আসে।
সভায় নারী নির্যাতনের অবনতিশীল পরিস্থিতি রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সম্মিলিত আওয়াজ তোলা এবং গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৫১৬টি ছিল ধর্ষণের ঘটনা এবং শিশু ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৩৬৭টি। তবে এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৮১ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৩৪৫ জন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৫টি পত্রিকার খবর সংকলন করে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণের খবর মাত্র ৩৫টি কম। নারীর প্রতি সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাই সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে আনোয়ারা বেগম–মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা’ শিরোনামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে তুলে ধরা তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ধর্ষণের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, ১৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের পর সবচেয়ে বেশি খবর প্রকাশিত হয়েছে হত্যার। প্রকাশিত খবর অনুসারে ৩২০ জন নারী ও কন্যা হত্যার শিকার হয়েছেন। ৫১ জন যৌন নিপীড়ন ও ৩৪ জন উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন।
গত বছর ৫২৮ নারী ও কন্যাকে হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮১ জন যৌন নিপীড়ন ও ৪৩ জন উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছিলেন। রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা, শারীরিক নির্যাতন, সাইবার ক্রাইম, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যার খবরও উল্লেখযোগ্য হারে ছিল।
সভায় দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি ও মহিলা পরিষদের গণমাধ্যম উপপরিষদের সদস্য মুনিমা সুলতানা এবং সংগঠনের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজের অভ্যন্তরে থাকা নারীর প্রতি বৈষম্যকে দৃশ্যমান করা, নারীর কণ্ঠকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ তৈরি, সবাইকে সচেতন করা, আইনি সহায়তা পেতে সহায়তা করা এবং নারীর জয়ী হওয়ার গল্প তুলে ধরা—এই সবের মাধ্যমে সাংবাদিকদের আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, এখন উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ সহিংসতা দিয়ে আইন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাজকে আরও নারীবিদ্বেষী করে তোলা হচ্ছে। বিচার চাওয়ার জায়গায়ও বাধা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, আইন সংশোধনের ফলে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতায় যেতে হবে, যা উদ্বেগজনক।
সভায় সূচনা বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের চেয়ে প্রকৃত সহিংসতার ঘটনা আরও বেশি। নতুন নতুন ধরন ও মাত্রা নিয়ে নারী নির্যাতন হচ্ছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে দেখা হয়, ফলে নির্যাতনের আসল বিষয়টি আড়াল হয়ে যায়।
সভার সঞ্চালনা করেন প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজা জেসমিন। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন শাহনাজ মুন্নী, নাদিরা কিরণ, রীতা ভৌমিক, উম্মুল ওয়ারা সুইটি, জাহিদা পারভেজ, শাহনাজ পারভীন, সেবিকা দেবনাথ, দ্রোহী তারা, রাফিয়া খানম চৌধুরী, জান্নাতুল রুহি, নাসরিন গীতি ও সেলিনা আক্তার।
তাদের বক্তব্যে বাসে, পথে চলাচলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের হয়রানি, নারী সাংবাদিকদের চাকরির জায়গা সংকুচিত হওয়া, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অনুপস্থিতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার খবর কম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশের প্রবণতার বিষয়গুলো উঠে আসে।
সভায় নারী নির্যাতনের অবনতিশীল পরিস্থিতি রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সম্মিলিত আওয়াজ তোলা এবং গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।