alt

জাতীয়

পাঁচই আগস্টের ভয়াবহতা: গুলিতে ছিন্নভিন্ন যাত্রাবাড়ী, শেখ হাসিনার অডিও, বিবিসির প্রতিবেদন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

বিবিসি আই এবং বিবিসি বাংলা

২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসির এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ভয়াবহ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, সেটি বের করার জন্য তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিন বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিবিসি।

এই হত্যাকাণ্ড সেদিন ঘটেছিল, যেদিন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে পালিয়ে যান।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেক খবর প্রকাশিত হলেও হত্যাকাণ্ডের সূচনা, অন্তিম ও নিহত-আহতের সঠিক সংখ্যা নিয়ে এমন বিস্তারিত তথ্য আগে আসেনি।

আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।"

যাত্রাবাড়ীতে হত্যাকাণ্ডের শুরু

অনুসন্ধানের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও উদ্ধার হয়, যেখানে পাঁচই অগাস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রথম মুহূর্তগুলো দেখা যায়। ভিডিওটি করেছিলেন এক আন্দোলনকারী, মিরাজ হোসেন, যিনি সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

মিরাজের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা মোবাইলটি খুঁজে পেয়ে ভিডিওটি উদ্ধার করেন। মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গুলিবর্ষণ শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে।

ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনা সদস্যদের একটি দল দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর তারা সরে যায়। এরপর হঠাৎ থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা গুলিবর্ষণ শুরু করেন।

একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গুলি শুরু হলে বিক্ষোভকারীরা প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে পালাচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে আহতদের ওপর পুলিশকে লাথি মারতে দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়া ভুল ভিডিও

মিরাজের ভিডিও থেকে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত শুরুর সময় জানা গেলেও যাত্রাবাড়ীর অন্য একটি দিনের ভিডিও ভাইরাল হয়ে পাঁচই অগাস্টের ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল।

ভাইরাল ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেটি আসলে চৌঠা অগাস্টের। পাঁচই অগাস্টের যাচাইকৃত ভিডিওতে থানার সামনে সবুজ ও সাদা গাড়ি দেখা গেলেও ভাইরাল ভিডিওতে সেগুলো অনুপস্থিত।

চৌঠা অগাস্টের ভিডিওতে পুলিশের গুলি ও ট্রাক থেকে ধোঁয়ার দৃশ্য এবং গাড়িগুলোর অবস্থান ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। সেদিনও বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।

কতক্ষণ চলেছিল হত্যাকাণ্ড

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাঁচই অগাস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গুলি চলে। ড্রোন ভিডিও ও মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটেও পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল।

এরপর একটি বড় দলকে থানার উল্টো পাশে সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। ড্রোন ফুটেজে হতাহতদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আহতদের রিকশা ও বাইকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল।

পরবর্তী ঘণ্টাগুলোতে আন্দোলনকারীদের এক অংশ শাহবাগের দিকে চলে যায়, আর একটি অংশ থানায় আগুন দেয়, যাতে পুলিশের অন্তত ছয়জন সদস্য নিহত হন।

প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা ৩০ বলা হলেও পরে নিহতদের পরিবার, হাসপাতালের নথি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অন্তত ৫২ জন নিহত হন।

হত্যার নির্দেশ

পাঁচই অগাস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, "বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যেই পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়টির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।" সেনা সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

হাসিনার অডিও ফাঁস

একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ নিজেই দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, "প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার" করতে হবে এবং "তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি করা হবে।"

ফাঁস হওয়া অডিওটি গণভবন থেকে করা হয়েছিল ১৮ জুলাই। ফরেনসিক বিশ্লেষণে অডিওতে কোনো এডিট বা জালিয়াতির প্রমাণ মেলেনি।

মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, "রেকর্ডিংগুলো তার (হাসিনা) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।"

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেন, রেকর্ডিংটি সত্য কিনা তা তারা নিশ্চিত নন।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও আদালতে বিচার চলছে।

সূত্র: বিবিসি,

শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও ‘বিচার হওয়া উচিত’: মির্জা ফখরুল

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন: সারাদেশে ১৪শ’ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা, আইজিপিসহ গ্রেপ্তার ৬১ জন

নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটেনি, অগ্রগতি নেই ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও

ছবি

শেখ হাসিনার ‘গুলির নির্দেশের’ অডিও, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ‘নির্বিচার গুলি’র ভিডিও যাচাই বিবিসির

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক: ঝুঁকিতে বাংলাদেশের যেসব খাত

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াল ১৩ হাজার

ছবি

দুদক থেকে শরীফের চাকরিচ্যুতি অবৈধ, ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহালের নির্দেশ হাইকোর্টের

ছবি

দেশে ফিরলেন লিবিয়ায় মাফিয়ার হাতে বিক্রি হওয়া দুই তরুণ

ছবি

চার বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, ঢাকাসহ নগরীতে জলাবদ্ধতার সতর্কতা

ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতায় আশঙ্কাজনক চিত্র, সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান

ছবি

গত বছর ধর্ষণের ঘটনা ৫১৬টি, এ বছর ছয় মাসেই ৪৮১টি

ডিপজলের বিরুদ্ধে তরুণীর মামলা, মারধর-অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ

শিবলী রুবাইয়াতের জমিসহ ১০ তলা ভবন জব্দের আদেশ

সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারসহ ৪ জনের নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা

শার্শায় গণধর্ষণ: ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১

টিকটকে পরিচয়, ইমোতে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেপ্তার ১

আবারও যমুনা, সচিবালয় ও আশপাশের এলাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোবারকের আপিল শুনানি বুধবার

ছবি

মায়ের বানানো লোহার খাঁচায় ৩ শিশু, ক্ষুধা নিবারণই লক্ষ্য

ছবি

নার্স সংকটে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ, ঝুঁকিতে রোগীরা

ছবি

প্রথমবারের মতো অনুমোদন পেলো ছোট্ট শিশুদের ম্যালেরিয়ার ওষুধ

ছবি

খুলনায় মেলা ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে শোকজ

ছবি

রাতে ভোট করে সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সুনাম নষ্ট করেছে: সিইসি

হবিগঞ্জে দুই সাংবাদিকের বিরোধের জেরে সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত শতাধিক

মালয়েশিয়ায় ‘সন্ত্রাসবাদে জড়িত’ অভিযোগে ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা

ছবি

ভর মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে না

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা থেকে বাসায় ফেরার পথে প্রবাসীকে অপহরণের পর হত্যা 

জিএম কাদেরের সিদ্ধান্ত মানেন না আনিসুল-রুহুল-মুজিবুল

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩ জন, নতুন আক্রান্ত ৪২৫

খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ৩ কোম্পানির চিঠি

ছবি

টানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্ক, সমঝোতার আশা ছাড়েনি বাংলাদেশ

ছবি

অন্যের অপকর্মে ‘ফেঁসে গেছেন’, রিমান্ড শুনানিতে জানালেন মালয়েশিয়া ফেরত চারজন

ছবি

বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুনের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি পরিচালনায় দেওয়া অবৈধ কি না—রিটের শুনানি বুধবার

tab

জাতীয়

পাঁচই আগস্টের ভয়াবহতা: গুলিতে ছিন্নভিন্ন যাত্রাবাড়ী, শেখ হাসিনার অডিও, বিবিসির প্রতিবেদন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

বিবিসি আই এবং বিবিসি বাংলা

২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসির এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ভয়াবহ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, সেটি বের করার জন্য তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিন বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিবিসি।

এই হত্যাকাণ্ড সেদিন ঘটেছিল, যেদিন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে পালিয়ে যান।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেক খবর প্রকাশিত হলেও হত্যাকাণ্ডের সূচনা, অন্তিম ও নিহত-আহতের সঠিক সংখ্যা নিয়ে এমন বিস্তারিত তথ্য আগে আসেনি।

আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।"

যাত্রাবাড়ীতে হত্যাকাণ্ডের শুরু

অনুসন্ধানের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও উদ্ধার হয়, যেখানে পাঁচই অগাস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রথম মুহূর্তগুলো দেখা যায়। ভিডিওটি করেছিলেন এক আন্দোলনকারী, মিরাজ হোসেন, যিনি সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

মিরাজের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা মোবাইলটি খুঁজে পেয়ে ভিডিওটি উদ্ধার করেন। মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গুলিবর্ষণ শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে।

ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনা সদস্যদের একটি দল দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর তারা সরে যায়। এরপর হঠাৎ থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা গুলিবর্ষণ শুরু করেন।

একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গুলি শুরু হলে বিক্ষোভকারীরা প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে পালাচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে আহতদের ওপর পুলিশকে লাথি মারতে দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়া ভুল ভিডিও

মিরাজের ভিডিও থেকে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত শুরুর সময় জানা গেলেও যাত্রাবাড়ীর অন্য একটি দিনের ভিডিও ভাইরাল হয়ে পাঁচই অগাস্টের ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল।

ভাইরাল ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেটি আসলে চৌঠা অগাস্টের। পাঁচই অগাস্টের যাচাইকৃত ভিডিওতে থানার সামনে সবুজ ও সাদা গাড়ি দেখা গেলেও ভাইরাল ভিডিওতে সেগুলো অনুপস্থিত।

চৌঠা অগাস্টের ভিডিওতে পুলিশের গুলি ও ট্রাক থেকে ধোঁয়ার দৃশ্য এবং গাড়িগুলোর অবস্থান ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। সেদিনও বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।

কতক্ষণ চলেছিল হত্যাকাণ্ড

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাঁচই অগাস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গুলি চলে। ড্রোন ভিডিও ও মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটেও পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল।

এরপর একটি বড় দলকে থানার উল্টো পাশে সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। ড্রোন ফুটেজে হতাহতদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আহতদের রিকশা ও বাইকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল।

পরবর্তী ঘণ্টাগুলোতে আন্দোলনকারীদের এক অংশ শাহবাগের দিকে চলে যায়, আর একটি অংশ থানায় আগুন দেয়, যাতে পুলিশের অন্তত ছয়জন সদস্য নিহত হন।

প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা ৩০ বলা হলেও পরে নিহতদের পরিবার, হাসপাতালের নথি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অন্তত ৫২ জন নিহত হন।

হত্যার নির্দেশ

পাঁচই অগাস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, "বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যেই পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়টির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।" সেনা সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

হাসিনার অডিও ফাঁস

একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ নিজেই দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, "প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার" করতে হবে এবং "তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি করা হবে।"

ফাঁস হওয়া অডিওটি গণভবন থেকে করা হয়েছিল ১৮ জুলাই। ফরেনসিক বিশ্লেষণে অডিওতে কোনো এডিট বা জালিয়াতির প্রমাণ মেলেনি।

মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, "রেকর্ডিংগুলো তার (হাসিনা) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।"

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেন, রেকর্ডিংটি সত্য কিনা তা তারা নিশ্চিত নন।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও আদালতে বিচার চলছে।

সূত্র: বিবিসি,

back to top