বরিশালে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকা -সংবাদ
টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১৭টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রাম। উপজেলা দুটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগও।
এদিকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে ছোট-বড় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পরশুরাম উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, বুধবার,(০৯ জুলাই ২০২৫) বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ফেনীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সীমান্তবর্তী মুহুরী নদীর পানি বুধবার বেলা ১২টায় বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ১৫ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। দুদিনে তিনটি নদীর বাঁধের অন্তত ১৭টি অংশে ভেঙে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।
পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বিদ্যুৎ বন্ধ, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট। এদিকে টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট মোবাইল সংযোগ। এতে পানিবন্দী এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন স্বজনরা।
ফেনী থেকে পরশুরামগামী যাত্রী জাহানারা ফেরদৌস বলেন, বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা একা অবস্থান করছে। মায়ের চিন্তায় উদ্বিগ্ন এই নারী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সকালে ফেনী এসে পৌঁছলেও পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি।’
এ উপজেলার পশ্চিম অলকা গ্রামের বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের আলতাফ আলী চৌধুরী বাড়ির (৮ নং ওয়ার্ড) পিছন অংশ ভেঙে সন্ধ্যা ৭টার পর তাদের ঘরের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন।’
উত্তর মণিপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর ছিদ্দিক রুবেল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রায় ৬০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। যাদের দোতলা ঘর আছে, অনেকে সেসব ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।’
একই পরিস্থিতি ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলাতেও। ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, তার ঘরে গলা পর্যন্ত পানি থাকায় তিনি স্ত্রীসহ পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। হঠাৎ পানি বাড়ায় দুটি গরু উদ্ধার করতে পারলেও হাঁস ও মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। একদিকে সন্তান নেই, অন্যদিকে বাড়িতে পানিবন্দী হয়ে সব মালামাল নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই দম্পতি।
একই এলাকার আলী রাজ বলেন, তার বাড়িসংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের অন্তত ৩০ মিটার ভেঙে তার ও তার ভাইয়ের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পুরো ঘরটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় কোনো আসবাবপত্র বের করা সম্ভব হয়নি।
ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভেঙে নদীর পানি প্রবেশ করায় বাজারের শতাধিক দোকান পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব দোকানের সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, কন্ট্রোল রুম। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিয়া ইসলাম বলেন, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ফুলগাজী
উপজেলার সাতটি অংশে ভেঙেছে। ভাঙনকৃত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘ভারী বর্ষণ বন্ধ থাকায় নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে এবং নদীর পানি কমলে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।’
নতুন করে যেন বেড়িবাঁধের আর কোনো স্থান না ভাঙে সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
বরিশাল থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, গত চার দিন ধরে একটানা ভারী বর্ষণে বরিশাল বিভাগের কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, বিষখালি নদীর পানি (ঝালকাঠি) বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপরে, মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি (ভোলা জেলার তজুমদ্দিন পয়েন্টে) ৬২ সেন্টিমিটার ওপরে, পায়রা নদীর পানি (পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে) ৪৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি পয়েন্টে নদীর পানির উচ্চতা মাপা হলেও সব পয়েন্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে অধিকাংশ নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে। টানা বৃষ্টিতে নদী তীরবর্তী গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, কারণ নদীর পানি বাড়ায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ‘এটা বন্যার পূর্বাভাস নয়, বর্ষাকালের স্বাভাবিক আবহ। এই বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাবে।’
চট্টগ্রামে একটানা বর্ষণে
ডুবে গেছে সড়ক
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রামে রাতভর বর্ষণের পর বুধবার সারাদিনই বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এর ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে গন্তব্যে যেতে কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভোর থেকে কখনো টানা, আবার কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায়। এতে নগরীর জিইসি মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও গলিপথ পানিতে ডুবে গেছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে ৭০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং রাতের দিকে তা আরও তীব্র হয়।
বৃষ্টির কারণে সকালে গণপরিবহন কম থাকায় অফিসগামী ও স্কুল-কলেজগামী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। অনেককেই বৃষ্টির মধ্যে রিকশা, অটো কিংবা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অন্তত আরও এক-দুই দিন এই অবস্থা চলবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা ও খুলনায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার এক দোকানি বলেন, ‘প্রতি বর্ষায় মার্কেটের নিচতলায় পানি উঠে যায়। আজকেও সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি উঠে গেছে।’
তিন পোলের মাথা এলাকাসহ অনেক জায়গায় হাঁটুসমান পানি জমেছে। সেই পানির মধ্য দিয়ে রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেছে।
চকবাজারের কে.বি. আমান আলী সড়কের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি রাস্তায় পানি জমে গেছে। ভিজে ভিজে হেঁটে কাজে এসেছি। বৃষ্টির কারণে সকালে যানবাহনের পরিমাণও কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে শুরু করে।’
বরিশালে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকা -সংবাদ
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১৭টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রাম। উপজেলা দুটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগও।
এদিকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে ছোট-বড় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পরশুরাম উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, বুধবার,(০৯ জুলাই ২০২৫) বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ফেনীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সীমান্তবর্তী মুহুরী নদীর পানি বুধবার বেলা ১২টায় বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ১৫ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। দুদিনে তিনটি নদীর বাঁধের অন্তত ১৭টি অংশে ভেঙে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।
পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বিদ্যুৎ বন্ধ, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট। এদিকে টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট মোবাইল সংযোগ। এতে পানিবন্দী এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন স্বজনরা।
ফেনী থেকে পরশুরামগামী যাত্রী জাহানারা ফেরদৌস বলেন, বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা একা অবস্থান করছে। মায়ের চিন্তায় উদ্বিগ্ন এই নারী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সকালে ফেনী এসে পৌঁছলেও পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি।’
এ উপজেলার পশ্চিম অলকা গ্রামের বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের আলতাফ আলী চৌধুরী বাড়ির (৮ নং ওয়ার্ড) পিছন অংশ ভেঙে সন্ধ্যা ৭টার পর তাদের ঘরের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন।’
উত্তর মণিপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর ছিদ্দিক রুবেল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রায় ৬০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। যাদের দোতলা ঘর আছে, অনেকে সেসব ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।’
একই পরিস্থিতি ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলাতেও। ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, তার ঘরে গলা পর্যন্ত পানি থাকায় তিনি স্ত্রীসহ পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। হঠাৎ পানি বাড়ায় দুটি গরু উদ্ধার করতে পারলেও হাঁস ও মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। একদিকে সন্তান নেই, অন্যদিকে বাড়িতে পানিবন্দী হয়ে সব মালামাল নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই দম্পতি।
একই এলাকার আলী রাজ বলেন, তার বাড়িসংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের অন্তত ৩০ মিটার ভেঙে তার ও তার ভাইয়ের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পুরো ঘরটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় কোনো আসবাবপত্র বের করা সম্ভব হয়নি।
ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভেঙে নদীর পানি প্রবেশ করায় বাজারের শতাধিক দোকান পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব দোকানের সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, কন্ট্রোল রুম। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিয়া ইসলাম বলেন, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ফুলগাজী
উপজেলার সাতটি অংশে ভেঙেছে। ভাঙনকৃত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘ভারী বর্ষণ বন্ধ থাকায় নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে এবং নদীর পানি কমলে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।’
নতুন করে যেন বেড়িবাঁধের আর কোনো স্থান না ভাঙে সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
বরিশাল থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, গত চার দিন ধরে একটানা ভারী বর্ষণে বরিশাল বিভাগের কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, বিষখালি নদীর পানি (ঝালকাঠি) বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপরে, মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি (ভোলা জেলার তজুমদ্দিন পয়েন্টে) ৬২ সেন্টিমিটার ওপরে, পায়রা নদীর পানি (পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে) ৪৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি পয়েন্টে নদীর পানির উচ্চতা মাপা হলেও সব পয়েন্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে অধিকাংশ নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে। টানা বৃষ্টিতে নদী তীরবর্তী গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, কারণ নদীর পানি বাড়ায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ‘এটা বন্যার পূর্বাভাস নয়, বর্ষাকালের স্বাভাবিক আবহ। এই বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাবে।’
চট্টগ্রামে একটানা বর্ষণে
ডুবে গেছে সড়ক
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রামে রাতভর বর্ষণের পর বুধবার সারাদিনই বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এর ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে গন্তব্যে যেতে কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভোর থেকে কখনো টানা, আবার কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায়। এতে নগরীর জিইসি মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও গলিপথ পানিতে ডুবে গেছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে ৭০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং রাতের দিকে তা আরও তীব্র হয়।
বৃষ্টির কারণে সকালে গণপরিবহন কম থাকায় অফিসগামী ও স্কুল-কলেজগামী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। অনেককেই বৃষ্টির মধ্যে রিকশা, অটো কিংবা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অন্তত আরও এক-দুই দিন এই অবস্থা চলবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা ও খুলনায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার এক দোকানি বলেন, ‘প্রতি বর্ষায় মার্কেটের নিচতলায় পানি উঠে যায়। আজকেও সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি উঠে গেছে।’
তিন পোলের মাথা এলাকাসহ অনেক জায়গায় হাঁটুসমান পানি জমেছে। সেই পানির মধ্য দিয়ে রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেছে।
চকবাজারের কে.বি. আমান আলী সড়কের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি রাস্তায় পানি জমে গেছে। ভিজে ভিজে হেঁটে কাজে এসেছি। বৃষ্টির কারণে সকালে যানবাহনের পরিমাণও কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে শুরু করে।’