পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বন্দর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে কোটি কোটি টাকার পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বন্দর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে আমদানিকৃত বহু মালামালের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাগজ, টেক্সটাইল ডাইস, কেমিক্যাল, বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত গার্মেন্টসের কাপড় ও সুতা, এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যেখানে ছিল, সেসব কালভার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই এই জলাবদ্ধতা। বেনাপোল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বন্দরের পাশে ছোট আঁচড়ার নিচে থাকা কালভার্টে মাটি ফেলে বন্ধ করে দেয়ায় পানি বের হতে না পেরে বন্দরের ভেতরে জমে গেছে। বুধবার,(০৯ জুলাই ২০২৫) সকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে সেই মাটি সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
জলাবদ্ধতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকাল থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বন্দর শ্রমিকরা। পরে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার এবং শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে পানি নিষ্কাশনের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
জানা গেছে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বেনাপোল বন্দরে প্রতি বছরই বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে পণ্য খালাস ব্যহত হয়, শ্রমিকদের চলাচল কষ্টকর হয়, এবং পণ্যের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে বছরে প্রায় ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণের জন্য ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। অধিকাংশ শেড ও ইয়ার্ড পরিকল্পনাহীনভাবে তৈরি হওয়ায় এবং বন্দরের সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদাম নিচু হওয়ায় পানি সহজে নিষ্কাশিত হয় না।
বুধবার সকালে বন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেড ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি শেডেই হাঁটু সমান পানি জমে আছে। শ্রমিকরা জগ, মগ, বালতি দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করলেও কোনো কার্যকর ফল মিলছে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ নম্বর শেড, যেখানে প্রায় এক ফুট পানি ঢুকে গোডাউনে রক্ষিত অধিকাংশ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন পানির মধ্য দিয়ে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা চুলকানিসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। বৃষ্টির পানিতে মিশে থাকা কেমিক্যালের কারণে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।’
ব্যবসায়ী বকুল মাহবুব বলেন, ‘বন্দরের ভাড়া বাড়ছে প্রতি বছর, অথচ উন্নয়নে নেই কোনো মনোযোগ। অল্প বৃষ্টিতেই পণ্যগারগুলো ডুবে যায়। লাখ লাখ টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হচ্ছে।’
আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, ‘সরকার বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, অথচ পানি নিষ্কাশনের মতো একটি মৌলিক সমস্যার সমাধানে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নেই। বছরের পর বছর অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’
সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বিনা বীমায় শতাধিক আমদানিকারকের পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন ক্ষতিপূরণ দেয় না।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেলওয়ের বন্ধ করে রাখা কালভার্টের মাটি সরিয়ে ড্রেন তৈরি করে পানি বের করা হয়েছে। কয়েকটি শেডে পানি ঢুকে কিছু মালামাল ভিজে গেছে। ভবিষ্যতে স্থায়ী কালভার্ট নির্মাণ করা হলে এ ধরনের সমস্যা আর হবে না।’
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বন্দর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে কোটি কোটি টাকার পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বন্দর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে আমদানিকৃত বহু মালামালের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাগজ, টেক্সটাইল ডাইস, কেমিক্যাল, বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত গার্মেন্টসের কাপড় ও সুতা, এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যেখানে ছিল, সেসব কালভার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই এই জলাবদ্ধতা। বেনাপোল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বন্দরের পাশে ছোট আঁচড়ার নিচে থাকা কালভার্টে মাটি ফেলে বন্ধ করে দেয়ায় পানি বের হতে না পেরে বন্দরের ভেতরে জমে গেছে। বুধবার,(০৯ জুলাই ২০২৫) সকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে সেই মাটি সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
জলাবদ্ধতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকাল থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বন্দর শ্রমিকরা। পরে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার এবং শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে পানি নিষ্কাশনের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
জানা গেছে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বেনাপোল বন্দরে প্রতি বছরই বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে পণ্য খালাস ব্যহত হয়, শ্রমিকদের চলাচল কষ্টকর হয়, এবং পণ্যের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে বছরে প্রায় ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণের জন্য ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। অধিকাংশ শেড ও ইয়ার্ড পরিকল্পনাহীনভাবে তৈরি হওয়ায় এবং বন্দরের সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদাম নিচু হওয়ায় পানি সহজে নিষ্কাশিত হয় না।
বুধবার সকালে বন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেড ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি শেডেই হাঁটু সমান পানি জমে আছে। শ্রমিকরা জগ, মগ, বালতি দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করলেও কোনো কার্যকর ফল মিলছে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ নম্বর শেড, যেখানে প্রায় এক ফুট পানি ঢুকে গোডাউনে রক্ষিত অধিকাংশ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন পানির মধ্য দিয়ে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা চুলকানিসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। বৃষ্টির পানিতে মিশে থাকা কেমিক্যালের কারণে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।’
ব্যবসায়ী বকুল মাহবুব বলেন, ‘বন্দরের ভাড়া বাড়ছে প্রতি বছর, অথচ উন্নয়নে নেই কোনো মনোযোগ। অল্প বৃষ্টিতেই পণ্যগারগুলো ডুবে যায়। লাখ লাখ টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হচ্ছে।’
আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, ‘সরকার বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, অথচ পানি নিষ্কাশনের মতো একটি মৌলিক সমস্যার সমাধানে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নেই। বছরের পর বছর অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’
সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বিনা বীমায় শতাধিক আমদানিকারকের পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন ক্ষতিপূরণ দেয় না।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেলওয়ের বন্ধ করে রাখা কালভার্টের মাটি সরিয়ে ড্রেন তৈরি করে পানি বের করা হয়েছে। কয়েকটি শেডে পানি ঢুকে কিছু মালামাল ভিজে গেছে। ভবিষ্যতে স্থায়ী কালভার্ট নির্মাণ করা হলে এ ধরনের সমস্যা আর হবে না।’