alt

জাতীয়

সীমান্তে ‘পুশইন’: আইন ভেঙেও ভারত কেন এত নির্বিকার?

বিবিসি : বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিউ পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। গত ১৫ মে তোলা ছবি -সংবাদ

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারত অন্তত বেশ কয়েক হাজার সন্দেহভাজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গোপনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে বা ‘পুশ ইন’ করেছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিমকেও ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আন্দামান সাগরে নামিয়ে দিয়ে মায়ানমারের দিকে সাঁতরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে- এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ভারত যে এই পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি ও সনদ লঙ্ঘন করে, বিশেষজ্ঞরা সবাই প্রায় তা নিয়ে একমত বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এমনকি, ভারতের নিজস্ব আইনকানুন বা সংবিধানও এক্ষেত্রে মানার কোনো অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে না সরকারের তরফে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির দিল্লী সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত তেসরা জুলাইও ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ এয়ারক্র্যাফট এরকম ২৫০জন নারী-পুরুষকে গুজরাটের ভাদোদরা থেকে এয়ারলিফট করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এনে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে ভারতীয় মিডিয়া রিপোর্ট করেছে।

এদেরও পুশ-ইন করা হয়েছে ইতোমধ্যেই, অথবা হবে যেকোনো দিন।

“অনেকটা যেন ভারত সরকার এই লোকগুলোকে সোজা ‘কিডন্যাপ’ করে বর্ডারে নিয়ে এসে নো ম্যানস ল্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে”, বলছিলেন দিল্লিতে সাউথ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবি নায়ার।

অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে নিজস্ব রীতিনীতি বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ আছে- সেটাও দিল্লি যে এখানে মানার কোনো ৃধার ধারছে না তা একেবারেই পরিষ্কার। আর সেটা করাও হচ্ছে বেশ খোলাখুলি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ আইন ভেঙেও ভারত কেন আর কীভাবে এই বিতর্কিত ‘পুশ ইন স্ট্র্যাটেজি’ লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে?

# ভারত জানে পশ্চিমারাও এই ইস্যুতে কিছু বলবে না

ভারতে আশ্রয় নেওয়া বিদেশি শরণার্থীদের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত ভারতের লেখক ও প্রথম সারির মানবাধিকার আইনজীবী নন্দিতা হাকসা। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি মানছি ভারত ১৯৫১-এর রিফিউজি কনভেনশন (শরণার্থী সনদ) বা ১৯৬৭ প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। কিন্তু তার পরও মানবাধিকার নিয়ে যত আন্তর্জাতিক আইন আছে ভারত তা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে, এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী কমিটিতেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব আছে।”

নন্দিতা আরো বলেন, “এরপরও যেভাবে বাংলাদেশ বা মিয়ানমার থেকে আসা লোকজনদের সীমান্ত দিয়ে জোর করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা স্পষ্টতই সেই আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন। দ্বিতীয়ত, ভারতের সংবিধানের আর্টিকল ২১ যে ‘রাইট টু লাইফ’ (জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার) দিয়েছে ও আর্টিকল ১৪ যে ‘ইক্যুয়ালিটি বিফোর ল’ (আইনের চোখে সবাই সমান) নিশ্চিত করেছে – সেই দুটো মৌলিক অধিকারও এখানে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।”

পশ্চিমারা কেন কথা বলবে না, সে ব্যাপারে এই আইনজীবী বলেন, “এই মুহূর্তে আমেরিকা বা ইউরোপ যেভাবে তাদের দেশে আসা অভিবাসীদের তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে এবং সেখানে কোনো আইনকানুনের ধার ধারছে না, তাতে তো ভারতকে তো তাদের কিছু বলার মুখই নেই!”

আটকদের ন্যূনতম যাচাই-বাছাইটাই তো হচ্ছে না

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচে’র ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “যেমন ধরুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। আমরা সেটা সমর্থন করি বা না করি। এটা তো দেখা যাচ্ছে ভারতের কাছে তথ্য পাঠিয়ে এই অভিবাসীদের পরিচয় আগে যাচাই করা হচ্ছে এবং ভারত রাজি হওয়ার পরই কেবল তাদের নিয়ে প্লেন দিল্লি বা অমৃতসরে এসে নামছে।”

“এটা যতই অমানবিক হোক, একটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে ভারতও প্রকাশ্যে অন্তত এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি এবং এই ডিপোর্টিদের ভারতীয় নাগরিক বলে মেনেও নিয়েছে।”

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত কিন্তু সেই পদ্ধতিটা নিজেরা মানার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না।”

আরও একটা বিষয়ের দিকে মীনাক্ষী দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন- এপর্যন্ত যতজনকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে তাদের সবাই কিন্তু বাংলাভাষী মুসলিম।

“এখন এই যে বেছে বেছে বাঙালি মুসলিমদের পাকড়াও করে তাদের সীমান্তের ওপারে চালান করা হচ্ছে, এটা ভারতের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ এমন সন্দেহ কিন্তু করা যেতেই পারে।” “আর সেটা সত্যি হলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতেই পারে না”।

# ঢাকাকে একটা বার্তা দিতেই এটা করা হচ্ছে’

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী আবার বিশ্বাস করেন, বর্ডার দিয়ে এই যে লোকজনকে ঠেলে ফেরত পাঠানো – সেটা আসলে বাংলাদেশের জন্য ভারতের একটা ‘মেসেজিং’ – মানে বার্তা দেওয়া।

ঢাকায় ভারতের এই সাবেক হাই কমিশনার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “এই জিনিস তো নতুন কিছু নয়! আগেও যখনই দেখা গেছে ঢাকাতে আমাদের প্রতি তত বন্ধুত্বপূর্ণ নয় এমন সরকার (’আনফ্রেন্ডলি রেজিম’) ক্ষমতায় এসেছে, তখনই আমরা এ জিনিস করেছি।”

“উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার- বাংলাদেশকে একটা বার্তা দেওয়া যে, তোমরা যদি বেশি ঝামেলা করো তাহলে ভারতে তোমাদের যত ইল্লিগ্যাল লোকজন আছে তাদের এক-ধারসে ফেরত পাঠানো হবে।”

গত কয়েক মাসের ভেতর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকেও একাধিকবার এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে তিনি সেই প্রশ্নের জবাবে বারবার একই গতবাঁধা উত্তর দিয়ে গেছেন, “দেখুন, আমাদের দেশে নিয়ম ও আইন মোতাবেক বহু বিদেশি আসা-যাওয়া করেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিয়ম আর আইন ভেঙে কেউ যদি ভারতে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।

কিন্তু সীমান্তে ‘ফোর্সড ডিপোর্টেশনে’র ঘটনা ঘটছে কি না, বা ভারত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বিদেশিদের জোর করে ফেরত পাঠাচ্ছে কি না – সে প্রশ্নের জবাব তিনি সব সময়ই এড়িয়ে গিয়েছেন।

ছবি

‘গুম’ থেকে ফিরে আসাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি বৈঠকে আলোচনায়

লিবিয়ায় ‘মাফিয়াদের হাতে’ বিক্রি হওয়া দুই তরুণ দেশে ফিরেছেন

বেইমানির কারণেই ৭ বার ভেঙেছে জাতীয় পার্টি: শামীম

রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় কমিটির সময় তিন মাস বাড়লো

যুবদল কর্মী হত্যায় সুব্রত বাইন ৭ দিনের রিমান্ডে

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশ হবে, জানা যাবে যেভাবে

ছবি

বেনাপোল স্থলবন্দরে টানা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কোটি টাকার মালামাল

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

রসিক-এ চাকরিচ্যুতদের ‘অসাধারণ ছুটি’ দেখিয়ে পুনঃনিয়োগের অভিযোগ!

ছবি

ফেনীতে বাঁধের ১৭ স্থানে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

ছবি

রাজধানীতে দিনভর বৃষ্টি, চরম দুর্ভোগ সাধারণ মানুষের

দুদকের শরীফকে চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত আরও ৪০৬ জন, একজনের মৃত্যু

শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও ‘বিচার হওয়া উচিত’: মির্জা ফখরুল

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন: সারাদেশে ১৪শ’ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা, আইজিপিসহ গ্রেপ্তার ৬১ জন

নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটেনি, অগ্রগতি নেই ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও

ছবি

শেখ হাসিনার ‘গুলির নির্দেশের’ অডিও, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ‘নির্বিচার গুলি’র ভিডিও যাচাই বিবিসির

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক: ঝুঁকিতে বাংলাদেশের যেসব খাত

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াল ১৩ হাজার

পাঁচই আগস্টের ভয়াবহতা: গুলিতে ছিন্নভিন্ন যাত্রাবাড়ী, শেখ হাসিনার অডিও, বিবিসির প্রতিবেদন

ছবি

দুদক থেকে শরীফের চাকরিচ্যুতি অবৈধ, ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহালের নির্দেশ হাইকোর্টের

ছবি

দেশে ফিরলেন লিবিয়ায় মাফিয়ার হাতে বিক্রি হওয়া দুই তরুণ

ছবি

চার বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, ঢাকাসহ নগরীতে জলাবদ্ধতার সতর্কতা

ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতায় আশঙ্কাজনক চিত্র, সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান

ছবি

গত বছর ধর্ষণের ঘটনা ৫১৬টি, এ বছর ছয় মাসেই ৪৮১টি

ডিপজলের বিরুদ্ধে তরুণীর মামলা, মারধর-অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ

শিবলী রুবাইয়াতের জমিসহ ১০ তলা ভবন জব্দের আদেশ

সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারসহ ৪ জনের নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা

শার্শায় গণধর্ষণ: ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১

টিকটকে পরিচয়, ইমোতে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেপ্তার ১

আবারও যমুনা, সচিবালয় ও আশপাশের এলাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোবারকের আপিল শুনানি বুধবার

ছবি

মায়ের বানানো লোহার খাঁচায় ৩ শিশু, ক্ষুধা নিবারণই লক্ষ্য

ছবি

নার্স সংকটে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ, ঝুঁকিতে রোগীরা

ছবি

প্রথমবারের মতো অনুমোদন পেলো ছোট্ট শিশুদের ম্যালেরিয়ার ওষুধ

tab

জাতীয়

সীমান্তে ‘পুশইন’: আইন ভেঙেও ভারত কেন এত নির্বিকার?

বিবিসি

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিউ পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। গত ১৫ মে তোলা ছবি -সংবাদ

বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারত অন্তত বেশ কয়েক হাজার সন্দেহভাজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গোপনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে বা ‘পুশ ইন’ করেছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিমকেও ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আন্দামান সাগরে নামিয়ে দিয়ে মায়ানমারের দিকে সাঁতরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে- এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ভারত যে এই পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি ও সনদ লঙ্ঘন করে, বিশেষজ্ঞরা সবাই প্রায় তা নিয়ে একমত বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এমনকি, ভারতের নিজস্ব আইনকানুন বা সংবিধানও এক্ষেত্রে মানার কোনো অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে না সরকারের তরফে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির দিল্লী সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত তেসরা জুলাইও ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ এয়ারক্র্যাফট এরকম ২৫০জন নারী-পুরুষকে গুজরাটের ভাদোদরা থেকে এয়ারলিফট করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এনে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে ভারতীয় মিডিয়া রিপোর্ট করেছে।

এদেরও পুশ-ইন করা হয়েছে ইতোমধ্যেই, অথবা হবে যেকোনো দিন।

“অনেকটা যেন ভারত সরকার এই লোকগুলোকে সোজা ‘কিডন্যাপ’ করে বর্ডারে নিয়ে এসে নো ম্যানস ল্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে”, বলছিলেন দিল্লিতে সাউথ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবি নায়ার।

অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে নিজস্ব রীতিনীতি বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ আছে- সেটাও দিল্লি যে এখানে মানার কোনো ৃধার ধারছে না তা একেবারেই পরিষ্কার। আর সেটা করাও হচ্ছে বেশ খোলাখুলি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ আইন ভেঙেও ভারত কেন আর কীভাবে এই বিতর্কিত ‘পুশ ইন স্ট্র্যাটেজি’ লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে?

# ভারত জানে পশ্চিমারাও এই ইস্যুতে কিছু বলবে না

ভারতে আশ্রয় নেওয়া বিদেশি শরণার্থীদের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত ভারতের লেখক ও প্রথম সারির মানবাধিকার আইনজীবী নন্দিতা হাকসা। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি মানছি ভারত ১৯৫১-এর রিফিউজি কনভেনশন (শরণার্থী সনদ) বা ১৯৬৭ প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। কিন্তু তার পরও মানবাধিকার নিয়ে যত আন্তর্জাতিক আইন আছে ভারত তা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে, এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী কমিটিতেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব আছে।”

নন্দিতা আরো বলেন, “এরপরও যেভাবে বাংলাদেশ বা মিয়ানমার থেকে আসা লোকজনদের সীমান্ত দিয়ে জোর করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা স্পষ্টতই সেই আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন। দ্বিতীয়ত, ভারতের সংবিধানের আর্টিকল ২১ যে ‘রাইট টু লাইফ’ (জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার) দিয়েছে ও আর্টিকল ১৪ যে ‘ইক্যুয়ালিটি বিফোর ল’ (আইনের চোখে সবাই সমান) নিশ্চিত করেছে – সেই দুটো মৌলিক অধিকারও এখানে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।”

পশ্চিমারা কেন কথা বলবে না, সে ব্যাপারে এই আইনজীবী বলেন, “এই মুহূর্তে আমেরিকা বা ইউরোপ যেভাবে তাদের দেশে আসা অভিবাসীদের তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে এবং সেখানে কোনো আইনকানুনের ধার ধারছে না, তাতে তো ভারতকে তো তাদের কিছু বলার মুখই নেই!”

আটকদের ন্যূনতম যাচাই-বাছাইটাই তো হচ্ছে না

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচে’র ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “যেমন ধরুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। আমরা সেটা সমর্থন করি বা না করি। এটা তো দেখা যাচ্ছে ভারতের কাছে তথ্য পাঠিয়ে এই অভিবাসীদের পরিচয় আগে যাচাই করা হচ্ছে এবং ভারত রাজি হওয়ার পরই কেবল তাদের নিয়ে প্লেন দিল্লি বা অমৃতসরে এসে নামছে।”

“এটা যতই অমানবিক হোক, একটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে ভারতও প্রকাশ্যে অন্তত এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি এবং এই ডিপোর্টিদের ভারতীয় নাগরিক বলে মেনেও নিয়েছে।”

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত কিন্তু সেই পদ্ধতিটা নিজেরা মানার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না।”

আরও একটা বিষয়ের দিকে মীনাক্ষী দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন- এপর্যন্ত যতজনকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে তাদের সবাই কিন্তু বাংলাভাষী মুসলিম।

“এখন এই যে বেছে বেছে বাঙালি মুসলিমদের পাকড়াও করে তাদের সীমান্তের ওপারে চালান করা হচ্ছে, এটা ভারতের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ এমন সন্দেহ কিন্তু করা যেতেই পারে।” “আর সেটা সত্যি হলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতেই পারে না”।

# ঢাকাকে একটা বার্তা দিতেই এটা করা হচ্ছে’

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী আবার বিশ্বাস করেন, বর্ডার দিয়ে এই যে লোকজনকে ঠেলে ফেরত পাঠানো – সেটা আসলে বাংলাদেশের জন্য ভারতের একটা ‘মেসেজিং’ – মানে বার্তা দেওয়া।

ঢাকায় ভারতের এই সাবেক হাই কমিশনার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “এই জিনিস তো নতুন কিছু নয়! আগেও যখনই দেখা গেছে ঢাকাতে আমাদের প্রতি তত বন্ধুত্বপূর্ণ নয় এমন সরকার (’আনফ্রেন্ডলি রেজিম’) ক্ষমতায় এসেছে, তখনই আমরা এ জিনিস করেছি।”

“উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার- বাংলাদেশকে একটা বার্তা দেওয়া যে, তোমরা যদি বেশি ঝামেলা করো তাহলে ভারতে তোমাদের যত ইল্লিগ্যাল লোকজন আছে তাদের এক-ধারসে ফেরত পাঠানো হবে।”

গত কয়েক মাসের ভেতর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকেও একাধিকবার এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে তিনি সেই প্রশ্নের জবাবে বারবার একই গতবাঁধা উত্তর দিয়ে গেছেন, “দেখুন, আমাদের দেশে নিয়ম ও আইন মোতাবেক বহু বিদেশি আসা-যাওয়া করেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিয়ম আর আইন ভেঙে কেউ যদি ভারতে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।

কিন্তু সীমান্তে ‘ফোর্সড ডিপোর্টেশনে’র ঘটনা ঘটছে কি না, বা ভারত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বিদেশিদের জোর করে ফেরত পাঠাচ্ছে কি না – সে প্রশ্নের জবাব তিনি সব সময়ই এড়িয়ে গিয়েছেন।

back to top