টানা বর্ষণে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ডুবে যাওয়া একটি সড়ক -সংবাদ
নোয়াখালীতে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৬৩ হাজার ৮৬০টি পরিবার। জেলায় প্রস্তুত রাখা ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ২৬৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া চার উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এবার ২০২৪ সালের বন্যার চেয়েও বেশি পানি হয়েছে। ফেনী নদীর মাতামুহুরী বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে অনেকের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বাতাসে গাছপালা পড়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার,(১০ জুলাই ২০২৫) অতিবৃষ্টিতে জেলার বহু গ্রাম, রাস্তা ও ফসলের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। মাছের ঘের ও পোল্ট্রি খামারগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, নোয়াখালী সদর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচরের নিচু এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শহর মাইজদীতে ডিসি অফিস, মৎস্য অফিস, জেলখানা সড়ক, পাঁচরাস্তার মোড় ও পৌর বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ঘরবাড়ি ও সড়কে পানি জমে আছে। এতে কর্মজীবী মানুষ ও যানবাহনের চালকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বেগমগঞ্জ, বিশেষ করে চৌমুহনী শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে।
এলাকাবাসীরা জানান, খাল-বিল, নালা-নর্দমা ভরাট ও দখলের কারণে স্বাভাবিক পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলেই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।
জেলা শহরের বাসিন্দা হৃদয় পাল বলেন, ‘টানা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।’
অশ্বদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিউলি বলেন, ‘তিন দিন ধরে রান্নাঘর পানিতে ডুবে আছে। স্বামীর কোনো কাজ নেই, অথচ এনজিওগুলো কিস্তি চাইতে আসছে। খাওয়ার মতো অবস্থাও নেই, কিস্তি দেবো কোথা থেকে?’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করছি এবং পানিবন্দী পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, ১০১টি মেডিকেল টিম, ৫০০ টন চাল, ২৭৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বন্যা পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা, উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা
ভারী বর্ষণের কারণে ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা বন্যা ও পরবর্তী ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মতামত ও করণীয় তুলে ধরেন বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত দু’দিনের টানা ভারী বর্ষণে ফেনীর প্রায় ৪০টি গ্রামের ১১ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের দেয়া এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজারের কম হবে না। আগের বছরের বন্যার দগদগে স্মৃতির মধ্যে ফেনী ছাড়াও নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও সাতক্ষীরায় নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে; কোথাও কোথাও বন্যার চোখ রাঙানির মধ্যে মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও বাধ্য হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নোয়াখালীর মুছাপুর রেগুলেটর ও বামনী নদীর ক্লোজার এর নকশা চূড়ান্ত করা, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্ত করা এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, নদীর তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে।
বৈঠকে দুই জেলায় চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
টানা বর্ষণে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ডুবে যাওয়া একটি সড়ক -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
নোয়াখালীতে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৬৩ হাজার ৮৬০টি পরিবার। জেলায় প্রস্তুত রাখা ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ২৬৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া চার উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এবার ২০২৪ সালের বন্যার চেয়েও বেশি পানি হয়েছে। ফেনী নদীর মাতামুহুরী বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে অনেকের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বাতাসে গাছপালা পড়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার,(১০ জুলাই ২০২৫) অতিবৃষ্টিতে জেলার বহু গ্রাম, রাস্তা ও ফসলের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। মাছের ঘের ও পোল্ট্রি খামারগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, নোয়াখালী সদর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচরের নিচু এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শহর মাইজদীতে ডিসি অফিস, মৎস্য অফিস, জেলখানা সড়ক, পাঁচরাস্তার মোড় ও পৌর বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ঘরবাড়ি ও সড়কে পানি জমে আছে। এতে কর্মজীবী মানুষ ও যানবাহনের চালকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বেগমগঞ্জ, বিশেষ করে চৌমুহনী শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে।
এলাকাবাসীরা জানান, খাল-বিল, নালা-নর্দমা ভরাট ও দখলের কারণে স্বাভাবিক পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলেই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।
জেলা শহরের বাসিন্দা হৃদয় পাল বলেন, ‘টানা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।’
অশ্বদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিউলি বলেন, ‘তিন দিন ধরে রান্নাঘর পানিতে ডুবে আছে। স্বামীর কোনো কাজ নেই, অথচ এনজিওগুলো কিস্তি চাইতে আসছে। খাওয়ার মতো অবস্থাও নেই, কিস্তি দেবো কোথা থেকে?’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করছি এবং পানিবন্দী পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, ১০১টি মেডিকেল টিম, ৫০০ টন চাল, ২৭৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বন্যা পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা, উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা
ভারী বর্ষণের কারণে ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা বন্যা ও পরবর্তী ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মতামত ও করণীয় তুলে ধরেন বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত দু’দিনের টানা ভারী বর্ষণে ফেনীর প্রায় ৪০টি গ্রামের ১১ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের দেয়া এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজারের কম হবে না। আগের বছরের বন্যার দগদগে স্মৃতির মধ্যে ফেনী ছাড়াও নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও সাতক্ষীরায় নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে; কোথাও কোথাও বন্যার চোখ রাঙানির মধ্যে মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও বাধ্য হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নোয়াখালীর মুছাপুর রেগুলেটর ও বামনী নদীর ক্লোজার এর নকশা চূড়ান্ত করা, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্ত করা এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, নদীর তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে।
বৈঠকে দুই জেলায় চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।