আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, সেসব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তিতর্ক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। শুক্রবার,(১১ জুলাই ২০২৫) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুকে এক পোস্টে এসব বিষয় জানানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষ হয়। শুক্রবার ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টার দিকে তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেই আলোচনার হালনাগাদ তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
ওই পোস্টে জানানো হয়, দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একান্তে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব। তার সঙ্গে শুল্কবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
পোস্টে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি এর মধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক থাকে। গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা অর্থাৎ বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ। শুল্ক আরোপের কার্যকরের তারিখ ছিল গত ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কহারের ঘোষণাও তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৯ জুলাই। তবে এর মধ্যেই গত ৮ জুলাই এক চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, আগামী ১ আগস্ট থেকেই বর্ধিত শুল্ক আরোপ হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১০৯ কোটি ডলার বা ১৪ শতাংশ বেশি। দেশটিতে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ রপ্তানি বেড়েছে, তা একই সময়ে ১৫৪টি দেশে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির সমান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫৮
কোটি ৫০ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের।
শুল্কারোপের ঘটনায় উদ্বেগে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেছেন, ‘মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ওভারঅল একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হবে। আর যারা ঠু মাচ ডিপেন্ড অন ইউএস মার্কেট (যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল), তারা অলমোস্ট দেউলিয়া হয়ে যাবে। আগস্টের এক তারিখ পর্যন্ত সময় থাকায় সরকার এখনও আলোচনার কথা বলছে, দেখা যাক কী হয়। আমরা চাই সরকার দ্রুত এর সমাধান করুক।’
আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, সেসব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তিতর্ক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। শুক্রবার,(১১ জুলাই ২০২৫) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুকে এক পোস্টে এসব বিষয় জানানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষ হয়। শুক্রবার ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টার দিকে তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেই আলোচনার হালনাগাদ তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
ওই পোস্টে জানানো হয়, দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একান্তে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব। তার সঙ্গে শুল্কবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
পোস্টে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি এর মধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক থাকে। গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা অর্থাৎ বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ। শুল্ক আরোপের কার্যকরের তারিখ ছিল গত ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কহারের ঘোষণাও তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৯ জুলাই। তবে এর মধ্যেই গত ৮ জুলাই এক চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, আগামী ১ আগস্ট থেকেই বর্ধিত শুল্ক আরোপ হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১০৯ কোটি ডলার বা ১৪ শতাংশ বেশি। দেশটিতে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ রপ্তানি বেড়েছে, তা একই সময়ে ১৫৪টি দেশে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির সমান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫৮
কোটি ৫০ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের।
শুল্কারোপের ঘটনায় উদ্বেগে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেছেন, ‘মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ওভারঅল একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হবে। আর যারা ঠু মাচ ডিপেন্ড অন ইউএস মার্কেট (যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল), তারা অলমোস্ট দেউলিয়া হয়ে যাবে। আগস্টের এক তারিখ পর্যন্ত সময় থাকায় সরকার এখনও আলোচনার কথা বলছে, দেখা যাক কী হয়। আমরা চাই সরকার দ্রুত এর সমাধান করুক।’