alt

জাতীয়

‘ঋণ জালিয়াতি’র অভিযোগে আবুল বারকাত কারাগারে

জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

অ্যাননটেক্সের ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির মামলায় অর্থনীতিবিদ এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. জুয়েল রানা শুক্রবার,(১১ জুলাই ২০২৫) এই আদেশ দেয়। আবুল বারকাতকে শুক্রবার দুপুরে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মম শাহজাহান মিরাজ। দুপুর আড়াইটার দিকে বারকাতকে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়।

২টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়, বসানো হয় আদালতের বেঞ্চে। এ সময় মেয়েসহ স্বজনরা তার পাশে বসে ছিলেন। মাঝে মধ্যে নাতিকে কোলে নেন বারকাত। অন্যদের সঙ্গে আলাপ করতেও দেখা যায় তাকে। ৩ টা ৩৫ মিনিটে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। দুদকের প্রসিকিউটর রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, ‘২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা। তদন্ত কর্মকর্তা তার তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’

আবুল বারকাতের পক্ষে তার আইনজীবী আব্দুল আউয়াল রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘তিনি (বারকাত) বয়স্ক, অসুস্থ একজন মানুষ। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আর যে বিষয়ে মামলা সেটা ২০২২ সালেই সেটলমেন্ট হয়ে গেছে। এ বছর আবার সেই বিষয়ে এসে মামলা। রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’ পাশাপাশি আবুল বারকাতের ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন এ আইনজীবী।

এরপর দুদকের প্রসিকিউটর আদালতকে বলেন, এ ধরনের মামলায় জামিন বা রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার এই আদালতের নেই। মেট্রো সেশন স্পেশাল জজ কোর্টে সেবা হতে পারে। এ সময় বিচারক জানতে চান, ‘তাহলে এখানে আসলেন কেন?’ এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি দুদকের আইনজীবী। পরে আদালত আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

জামিন ও রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার এই আদালতের না থাকার পরও কেন দুদক এ আদালতে এলো এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আদালত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেবেন। কিন্তু যখন আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন আদালতকে মেনশন করেছি। আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মেট্রো সেশন স্পেশাল জজ কোর্টে পরবর্তীতে রিমান্ড এবং জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে।’

দুদকের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ‘মামলাটি অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল-জালিয়াতির বিষয়াধীন। এরসঙ্গে আর কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা উদ্ঘাটন করতে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

শুনানি শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে বারকারতে আদালত থেকে হাজতখানায় নেয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো থাকবেন। আমি একজন শিক্ষক মানুষ।’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুল হুসাইন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তবে মূলত বড় অঙ্কের বিতরণ ঘটে ২০১৩-১৪ সময়কালে, যখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আবুল বারকাত প্রথম ওই দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এক সময় ভালো ব্যাংকের কাতারে থাকা জনতা ব্যাংক বারাকাতের অধীনে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা, জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান,

এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ। এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি

গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।

এজাহারে বলা হয়েছে, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড জমির মালিক হওয়ার আগেই সেই জমি নিজেদের বলে দাবি করে এবং সেখানে স্থাপনা দেখিয়ে ব্যাংকে বন্ধক রাখে। সেই জমিতে বাস্তবে কোনো স্থাপনা বা কারখানা না থাকার পরও আসামিরা ‘পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, মিথ্যা নথি তৈরি, জালিয়াতির’ মাধ্যমে সেই আবেদন মূল্যায়ন করেন।

স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকার জমির মূল্যায়ন করা হয় ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মাধ্যামে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আসামিরা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে জড়িতদের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এক নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে জমি ও স্থাপনার মূল্য বাড়িয়ে দেখাতে ‘সহায়তা’ করেছেন অন্য ২০ আসামি। মামলার দুই নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের পরিচালক মো. আবু তালহা কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ওই কোম্পানির আয়-ব্যয়, ভালো-মন্দের সুবিধাভোগী। তার ‘জ্ঞাতসারে’ এবং সম্মতিতে ‘মিথ্যা নথি ব্যবহার ও জালিয়াতি’ করে জনতা ব্যাংকের টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। তাতে সহায়তা করেছেন অন্য আসামিরা।

অভিযোগে বলা হয়, ‘অবৈধভাবে ঋণ পেতে ও টাকা আত্মসাতে সহায়তা’ করেছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক।

জনতা ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, মো. গোলাম ফারুক ও ওমর ফারুক বলেছিলেন, প্রস্তাবিত ঋণটি মঞ্জুর হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশাসন লঙ্ঘন হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে ঋণ মঞ্জুরের জন্য সুপারিশ করেছেন আসামিরা।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল সুপ্রভ স্পিনিংয়ে অনুকূলে মঞ্জুর করা ১৮০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘ঋণ পেতে ও আত্মসাতে’ সহায়তা করেছেন বলে দুদকের অভিযোগ।

দুদক বলছে, ঋণ গ্রহীতা একজন ‘নাম সর্বস্ব ব্যবসায়ী’ জেনেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ঋণ পেতে ও আত্মসাতে ‘সহায়তা’ করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসেবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব পান আতিউর রহমান।

এজাহারে বলা হয়েছে, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনে ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর কর্মরত যুগ্ম-পরিচালক-২, উপ-মহাব্যবস্থাপক-২, মহাব্যবস্থাপক, নির্বাহী পরিচালক-১০ এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও নাম, ঠিকানাসহ ব্যক্তিগত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক না দেয়ায় তাদের এজাহারভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলা তদন্তকালে তাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।

ডেমরায় বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত

শেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১০ জনকে পুশইন

চাঁদপুরে খতিবকে হত্যার চেষ্টা, হামলাকারী আটক

ছবি

শার্শায় বাগআঁচড়া-কায়বা সড়কের বেহাল দশা : চরম দুর্ভোগে মানুষ

ছবি

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ১৩৮ রোগী, বেশিরভাগই বরিশালের

সূত্রাপুরে ‘গ্যাসের’ আগুনে একই পরিবারে দগ্ধ ৫

১৮ মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা: ইউএনএইচসিআর

ছবি

ভারী বৃষ্টিপাতে টেকনাফে ৫০ হেক্টর আমন বীজতলা নষ্ট

ছবি

তিস্তার ভাঙন: হুমকির মুখে শতাধিক বসতবাড়ি ও স্থাপনা

শুল্ক নিয়ে আলোচনা: দ্বিতীয় দিনে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য

আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে: নাহিদ

খুলনায় গুলি করে ও রগ কেটে সেই সাবেক যুবদল নেতাকে হত্যা

১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালো সরকার

হঠাৎই চারগুণ হলো কাঁচামরিচের ঝাঁজ

পুরান ঢাকায় হত্যার পর লাশ ঘিরে প্রকাশ্যে উল্লাস

ছবি

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্বেগ

ছবি

এবারের হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৮২ হাজারের বেশি হাজি, মৃত্যু ৪৪ জনের

ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ১৪ হাজার ছাড়াল, মৃত্যুর শীর্ষ জুনে

ছবি

শুল্ক আলোচনা: দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র কিছু বিষয় একমত

পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চায় নির্বাচন কমিশন

ছবি

বৃষ্টিপাত কমার আভাস, সরানো হলো সতর্ক সংকেত

ছবি

১৮ বিচারককে অবসরে পাঠাল সরকার

প্রধান উপদেষ্টার উপহারের আম গেলো ত্রিপুরা

৯৮৪টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ উত্তীর্ণ, ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে খসড়া অনুমোদন

৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য ভিত্তিহীন: পিএসসি

নির্মাণাধীন ভবনে সাবেক সচিব, বিচারক ও কর্মকর্তার ফ্ল্যাট, অনুসন্ধানে দুদক

দেশে আবার ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সবাই একমত: আলী রীয়াজ

সরকারি নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধনের নির্দেশনা বাতিল

এস আলম ও পরিবারের সিঙ্গাপুরে ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

অর্থ আত্মসাৎ স্বাস্থ্যের সাবেক পরিচালকসহ ২ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় সড়কে প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বার

ছবি

প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে এসএসসিতে অদম্য লিতুন জিরার চমক

ডেঙ্গু: চলতি বছরে আক্রান্ত প্রায় ১৪ হাজার, মোট মৃত্যু ৫৪ জনের

ছবি

বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনী: নাহিদ

ছবি

মোবাইল তুলতে গিয়ে ৪ চা শ্রমিকের মৃত্যু, বাগানে শোকের ছায়া

tab

জাতীয়

‘ঋণ জালিয়াতি’র অভিযোগে আবুল বারকাত কারাগারে

জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

অ্যাননটেক্সের ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির মামলায় অর্থনীতিবিদ এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. জুয়েল রানা শুক্রবার,(১১ জুলাই ২০২৫) এই আদেশ দেয়। আবুল বারকাতকে শুক্রবার দুপুরে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মম শাহজাহান মিরাজ। দুপুর আড়াইটার দিকে বারকাতকে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়।

২টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়, বসানো হয় আদালতের বেঞ্চে। এ সময় মেয়েসহ স্বজনরা তার পাশে বসে ছিলেন। মাঝে মধ্যে নাতিকে কোলে নেন বারকাত। অন্যদের সঙ্গে আলাপ করতেও দেখা যায় তাকে। ৩ টা ৩৫ মিনিটে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। দুদকের প্রসিকিউটর রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, ‘২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা। তদন্ত কর্মকর্তা তার তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’

আবুল বারকাতের পক্ষে তার আইনজীবী আব্দুল আউয়াল রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘তিনি (বারকাত) বয়স্ক, অসুস্থ একজন মানুষ। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আর যে বিষয়ে মামলা সেটা ২০২২ সালেই সেটলমেন্ট হয়ে গেছে। এ বছর আবার সেই বিষয়ে এসে মামলা। রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’ পাশাপাশি আবুল বারকাতের ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন এ আইনজীবী।

এরপর দুদকের প্রসিকিউটর আদালতকে বলেন, এ ধরনের মামলায় জামিন বা রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার এই আদালতের নেই। মেট্রো সেশন স্পেশাল জজ কোর্টে সেবা হতে পারে। এ সময় বিচারক জানতে চান, ‘তাহলে এখানে আসলেন কেন?’ এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি দুদকের আইনজীবী। পরে আদালত আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

জামিন ও রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার এই আদালতের না থাকার পরও কেন দুদক এ আদালতে এলো এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আদালত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেবেন। কিন্তু যখন আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন আদালতকে মেনশন করেছি। আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মেট্রো সেশন স্পেশাল জজ কোর্টে পরবর্তীতে রিমান্ড এবং জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে।’

দুদকের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ‘মামলাটি অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল-জালিয়াতির বিষয়াধীন। এরসঙ্গে আর কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা উদ্ঘাটন করতে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

শুনানি শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে বারকারতে আদালত থেকে হাজতখানায় নেয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো থাকবেন। আমি একজন শিক্ষক মানুষ।’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুল হুসাইন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তবে মূলত বড় অঙ্কের বিতরণ ঘটে ২০১৩-১৪ সময়কালে, যখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আবুল বারকাত প্রথম ওই দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এক সময় ভালো ব্যাংকের কাতারে থাকা জনতা ব্যাংক বারাকাতের অধীনে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা, জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান,

এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ। এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি

গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।

এজাহারে বলা হয়েছে, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড জমির মালিক হওয়ার আগেই সেই জমি নিজেদের বলে দাবি করে এবং সেখানে স্থাপনা দেখিয়ে ব্যাংকে বন্ধক রাখে। সেই জমিতে বাস্তবে কোনো স্থাপনা বা কারখানা না থাকার পরও আসামিরা ‘পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, মিথ্যা নথি তৈরি, জালিয়াতির’ মাধ্যমে সেই আবেদন মূল্যায়ন করেন।

স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকার জমির মূল্যায়ন করা হয় ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মাধ্যামে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আসামিরা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে জড়িতদের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এক নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে জমি ও স্থাপনার মূল্য বাড়িয়ে দেখাতে ‘সহায়তা’ করেছেন অন্য ২০ আসামি। মামলার দুই নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের পরিচালক মো. আবু তালহা কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ওই কোম্পানির আয়-ব্যয়, ভালো-মন্দের সুবিধাভোগী। তার ‘জ্ঞাতসারে’ এবং সম্মতিতে ‘মিথ্যা নথি ব্যবহার ও জালিয়াতি’ করে জনতা ব্যাংকের টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। তাতে সহায়তা করেছেন অন্য আসামিরা।

অভিযোগে বলা হয়, ‘অবৈধভাবে ঋণ পেতে ও টাকা আত্মসাতে সহায়তা’ করেছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক।

জনতা ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, মো. গোলাম ফারুক ও ওমর ফারুক বলেছিলেন, প্রস্তাবিত ঋণটি মঞ্জুর হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশাসন লঙ্ঘন হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে ঋণ মঞ্জুরের জন্য সুপারিশ করেছেন আসামিরা।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল সুপ্রভ স্পিনিংয়ে অনুকূলে মঞ্জুর করা ১৮০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘ঋণ পেতে ও আত্মসাতে’ সহায়তা করেছেন বলে দুদকের অভিযোগ।

দুদক বলছে, ঋণ গ্রহীতা একজন ‘নাম সর্বস্ব ব্যবসায়ী’ জেনেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ঋণ পেতে ও আত্মসাতে ‘সহায়তা’ করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসেবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব পান আতিউর রহমান।

এজাহারে বলা হয়েছে, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনে ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর কর্মরত যুগ্ম-পরিচালক-২, উপ-মহাব্যবস্থাপক-২, মহাব্যবস্থাপক, নির্বাহী পরিচালক-১০ এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও নাম, ঠিকানাসহ ব্যক্তিগত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক না দেয়ায় তাদের এজাহারভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলা তদন্তকালে তাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।

back to top