গত ৮ দিন ধরে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতে প্লাবিত টেকনাফ -সংবাদ
কক্সবাজারের টেকনাফে গত আটদিন ধরে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে মাঠ-ঘাট ও মানুষের বসতবাড়ি। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর আমন বীজতলা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
গত তিন দিনের টানা বর্ষণে এসব বীজতলা পানির নিচে চলে যায়। এ কারণে চলতি মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
টেকনাফ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে টেকনাফে এমন সপ্তাহব্যাপী ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কয়েকদিন ধরে সেগুলো পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নতুন করে বীজতলা প্রস্তুত করতে সময় লাগবে। সবমিলিয়ে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ শফিউল আলম জানান, গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টেকনাফে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের ধারা ১০ জুলাইয়ের পর থামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, মাঠ থেকে পানি নামছে না। আমার দুই একর আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেখছি না। এ বছর আমার পক্ষে আমন উৎপাদন সম্ভব হবে না।”
শাহপরীর দ্বীপ উত্তর পাড়ার কৃষক মোহাম্মদ নুর বলেন, “দুই হেক্টর লবণ মাঠে লবণ সহিষ্ণু ধানের বীজ রোপণ করেছিলাম। গত তিনদিন ধরে ফসলি মাঠ পানির নিচে। পানি নামছে না, আর এখনো ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।”
উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “প্রতিবছর আমন উৎপাদন ভালো হতো। সময়মতো বীজ রোপণ করতে পারতাম। কিন্তু এবারের কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। এখনো বীজতলায় হাঁটুর ওপর পানি।”
গত এক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাতে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, ঘোলার পাড়া, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়ার একাংশ, ডাংগর পাড়া, মাঝের ডেইল, হারিয়াখালী; হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, রঙ্গিখালী, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং; হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল, কাটাখালী, খারাংখালী, মিনাবাজার, সদর ইউনিয়নের কচুবনিয়া, মহেশখালীয়া পাড়া এবং পৌরসভার জালিয়া পাড়া, ডেইল পাড়া, অলিয়াবাদ, পল্লান পাড়া ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, ‘গত তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানি। বাচ্চারা স্কুল-মাদরাসায় যেতে পারছে না। ঘরের বাজার-সদাইয়ের জন্য বের হতেও পারছি না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো খাদ্য বা সহায়তা পৌঁছায়নি। অনেকেই পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে।’
সাবরাং ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুস সালাম বলেন, “গত সপ্তাহ-দশ দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিতে কয়েকটি গ্রাম পানিতে আটকে গেছে। বিশেষ করে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, ক্যাম্প পাড়া, ঘোলার পাড়া ও মাঝের পাড়ার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রায় প্রতিটি ঘর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণও বিতরণ করা হয়েছে।”
টেকনাফ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার জন্য শুধু বৃষ্টিপাত নয়, মানবসৃষ্ট কারণও দায়ী। অপরিকল্পিত নগরায়ন, খাল ভরাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদি কারণে পানি চলাচলের স্বাভাবিক পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে পৌর এলাকার কয়েকশত বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে।”
গত ৮ দিন ধরে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতে প্লাবিত টেকনাফ -সংবাদ
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
কক্সবাজারের টেকনাফে গত আটদিন ধরে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে মাঠ-ঘাট ও মানুষের বসতবাড়ি। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর আমন বীজতলা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
গত তিন দিনের টানা বর্ষণে এসব বীজতলা পানির নিচে চলে যায়। এ কারণে চলতি মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
টেকনাফ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে টেকনাফে এমন সপ্তাহব্যাপী ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কয়েকদিন ধরে সেগুলো পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নতুন করে বীজতলা প্রস্তুত করতে সময় লাগবে। সবমিলিয়ে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ শফিউল আলম জানান, গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টেকনাফে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের ধারা ১০ জুলাইয়ের পর থামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, মাঠ থেকে পানি নামছে না। আমার দুই একর আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেখছি না। এ বছর আমার পক্ষে আমন উৎপাদন সম্ভব হবে না।”
শাহপরীর দ্বীপ উত্তর পাড়ার কৃষক মোহাম্মদ নুর বলেন, “দুই হেক্টর লবণ মাঠে লবণ সহিষ্ণু ধানের বীজ রোপণ করেছিলাম। গত তিনদিন ধরে ফসলি মাঠ পানির নিচে। পানি নামছে না, আর এখনো ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।”
উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “প্রতিবছর আমন উৎপাদন ভালো হতো। সময়মতো বীজ রোপণ করতে পারতাম। কিন্তু এবারের কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। এখনো বীজতলায় হাঁটুর ওপর পানি।”
গত এক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাতে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, ঘোলার পাড়া, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়ার একাংশ, ডাংগর পাড়া, মাঝের ডেইল, হারিয়াখালী; হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, রঙ্গিখালী, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং; হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল, কাটাখালী, খারাংখালী, মিনাবাজার, সদর ইউনিয়নের কচুবনিয়া, মহেশখালীয়া পাড়া এবং পৌরসভার জালিয়া পাড়া, ডেইল পাড়া, অলিয়াবাদ, পল্লান পাড়া ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, ‘গত তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানি। বাচ্চারা স্কুল-মাদরাসায় যেতে পারছে না। ঘরের বাজার-সদাইয়ের জন্য বের হতেও পারছি না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো খাদ্য বা সহায়তা পৌঁছায়নি। অনেকেই পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে।’
সাবরাং ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুস সালাম বলেন, “গত সপ্তাহ-দশ দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিতে কয়েকটি গ্রাম পানিতে আটকে গেছে। বিশেষ করে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, ক্যাম্প পাড়া, ঘোলার পাড়া ও মাঝের পাড়ার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রায় প্রতিটি ঘর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণও বিতরণ করা হয়েছে।”
টেকনাফ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার জন্য শুধু বৃষ্টিপাত নয়, মানবসৃষ্ট কারণও দায়ী। অপরিকল্পিত নগরায়ন, খাল ভরাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদি কারণে পানি চলাচলের স্বাভাবিক পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে পৌর এলাকার কয়েকশত বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে।”