দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকায় বর্তমানে বেহাল দশায় যশোরের বাগআঁচড়া-কায়বা সড়ক -সংবাদ
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া-কায়বা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকায় বর্তমানে বেহাল দশার মধ্য দিয়ে চলেছে। কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কোনো কোনো স্থানে রাস্তা এতটাই খারাপ যে যানবাহনের চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন শার্শা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে শার্শা উপজেলা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রকল্পটির জন্য ‘ম্যাপ’ তৈরি করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তালিকায় সড়ক উন্নয়নের প্রস্তাব ঢাকায় পাঠিয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন পেলে দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ৪৩৫ মিটার দীর্ঘ এবং ৫.৫ মিটার প্রস্থের একটি আরসিসি (রিনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট) সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে পর্যায়ক্রমে পুরো সড়কটির উন্নয়ন ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগআঁচড়া বাজার থেকে কবরস্থান, রাড়িপুকুর বটতলা থেকে কায়বা ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাদামতলা বাজার থেকে কায়বা বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় এসব গর্তে জমে থাকা পানি সড়ককে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। যানবাহন চলছে হেলেদুলে, অনেক সময় চলাচলই সম্ভব হয় না। কোনো কোনো জায়গায় সড়কের একাংশ কাঁদা-পানিতে ডুবে রয়েছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে অন্তত কয়েকটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। যাতায়াত করে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও রোগীবাহী যানবাহন। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। সড়কটির দুই পাশে রয়েছে অন্তত ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫টি বাজার। এদের মধ্যে রয়েছে বাগআঁচড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, ড. আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চালিতাবিড়িয়া আর ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চালিতাবড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইকোলা ওসমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বাইকোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঁচ কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাড়ের কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। অনেকে সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারে না।
বাগআঁচড়া আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবু হুরায়রা বলেন, ভাঙা সড়কের কারণে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। গাড়ির ঝাকুনিতে শরীরে ব্যথা অনুভব করি। এতে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাদামতলা বাজারের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কের মাঝখানে এত বড় গর্ত হয়ে গেছে যে দেখলে মনে হয় মাছ চাষ করা যায়। অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সোজা কথা এ রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি আমি নিজেও দুর্ঘটনায় পড়েছি। মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আশা করি সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
বাগআঁচড়া বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, ভাঙা সড়কে
মালবাহী ট্রাক বা পিকআপ আসতে চায় না। যদি আসেও, কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
ট্রাকচালক জহুরুল বলেন, এ রাস্তায় গাড়ি চালানো মানে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে জীবন ও গাড়ির ক্ষতি করা। গাড়ির চাকা তো গেলই, নিজের মাজাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ইজিবাইক ও ভ্যান চালকরা বলেন, সড়কজুড়ে গর্ত আর কাঁদা। প্রতিদিন গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। যা আয় করি, তা গাড়ি সারাতে খরচ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটিবাহী ট্রাক ও ড্রামট্রাক নিয়মিত চলাচলের ফলে সড়কটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলা, বর্ষায় কাঁদা উভয়ই দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া এসব ট্রাক রোগী পরিবহন ও জরুরি যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
চালক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি এ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে হবে। না হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান আরও অবনতির দিকে যাবে। স্কুল-কলেজে উপস্থিতি কমে যাবে, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রোগী পরিবহন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকায় বর্তমানে বেহাল দশায় যশোরের বাগআঁচড়া-কায়বা সড়ক -সংবাদ
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া-কায়বা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকায় বর্তমানে বেহাল দশার মধ্য দিয়ে চলেছে। কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কোনো কোনো স্থানে রাস্তা এতটাই খারাপ যে যানবাহনের চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন শার্শা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে শার্শা উপজেলা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রকল্পটির জন্য ‘ম্যাপ’ তৈরি করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তালিকায় সড়ক উন্নয়নের প্রস্তাব ঢাকায় পাঠিয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন পেলে দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ৪৩৫ মিটার দীর্ঘ এবং ৫.৫ মিটার প্রস্থের একটি আরসিসি (রিনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট) সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে পর্যায়ক্রমে পুরো সড়কটির উন্নয়ন ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগআঁচড়া বাজার থেকে কবরস্থান, রাড়িপুকুর বটতলা থেকে কায়বা ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাদামতলা বাজার থেকে কায়বা বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় এসব গর্তে জমে থাকা পানি সড়ককে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। যানবাহন চলছে হেলেদুলে, অনেক সময় চলাচলই সম্ভব হয় না। কোনো কোনো জায়গায় সড়কের একাংশ কাঁদা-পানিতে ডুবে রয়েছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে অন্তত কয়েকটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। যাতায়াত করে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও রোগীবাহী যানবাহন। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। সড়কটির দুই পাশে রয়েছে অন্তত ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫টি বাজার। এদের মধ্যে রয়েছে বাগআঁচড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, ড. আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চালিতাবিড়িয়া আর ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চালিতাবড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইকোলা ওসমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বাইকোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঁচ কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাড়ের কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কায়বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। অনেকে সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারে না।
বাগআঁচড়া আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবু হুরায়রা বলেন, ভাঙা সড়কের কারণে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। গাড়ির ঝাকুনিতে শরীরে ব্যথা অনুভব করি। এতে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাদামতলা বাজারের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কের মাঝখানে এত বড় গর্ত হয়ে গেছে যে দেখলে মনে হয় মাছ চাষ করা যায়। অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সোজা কথা এ রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি আমি নিজেও দুর্ঘটনায় পড়েছি। মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আশা করি সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
বাগআঁচড়া বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, ভাঙা সড়কে
মালবাহী ট্রাক বা পিকআপ আসতে চায় না। যদি আসেও, কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
ট্রাকচালক জহুরুল বলেন, এ রাস্তায় গাড়ি চালানো মানে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে জীবন ও গাড়ির ক্ষতি করা। গাড়ির চাকা তো গেলই, নিজের মাজাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ইজিবাইক ও ভ্যান চালকরা বলেন, সড়কজুড়ে গর্ত আর কাঁদা। প্রতিদিন গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। যা আয় করি, তা গাড়ি সারাতে খরচ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটিবাহী ট্রাক ও ড্রামট্রাক নিয়মিত চলাচলের ফলে সড়কটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলা, বর্ষায় কাঁদা উভয়ই দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া এসব ট্রাক রোগী পরিবহন ও জরুরি যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
চালক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি এ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে হবে। না হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান আরও অবনতির দিকে যাবে। স্কুল-কলেজে উপস্থিতি কমে যাবে, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রোগী পরিবহন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।