সোহাগকে শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমি সেখানে ছিলাম। সবাই তার আর্তনাদ শুনেছে, কিন্তু আমরা সবাই নীরব ছিলাম। কেউ ভিডিও করছিল, কেউ দূর থেকে দেখছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের ভয় আমাদের সবাইকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এটি আমার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ এভাবেই বলছিলেন ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী পুরান ঢাকার এক রাসায়নিক ব্যবসায়ী।
গত বুধবার সন্ত্রাসীরা চাঁদার টাকা না পেয়ে সোহাগকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে এনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে নিয়ে পিটিয়ে এবং ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ভাবি, আমরা যদি সেদিন চুপ না থাকতাম, একসঙ্গে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে হয়তো সোহাগ বেঁচে থাকতেন। কিন্তু আমরা ভয়ের কারণে আগাতে পারিনি। এ কথা মনে পড়লে অনুশোচনা হয়। আমরা চাই এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক। চাঁদাবাজ আর সন্ত্রাসীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়।’
৪ নম্বর রজনী বোস লেনে ‘সোহানা মেটাল’ নামে দোকান আছে সোহাগের। ওই দোকানের পাশে দোকান আছে মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ীর। শরীয়তপুর স্টোর নামের ওই দোকানের মালিক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে তার দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোহাগ মাঝে মধ্যে দোকানে আসতেন। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি দোকানে কাজ করছিলাম। এমন সময় দেখি ২০ থেকে ২২ জন যুবক ও তরুণ এসে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমিসহ অন্যান্য দোকানদার সোহাগকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, ‘চুপ করে দোকানে বসে থাক, নইলে খবর আছে।’ এরপর তারা সোহাগকে চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের গেইটের সামনে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর শুনতে পাই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।’
‘চাঁদা না দেয়ায় হত্যা’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার তামা-কাঁসার এক ব্যবসায়ী বলেন, সোহাগ কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় দোকান ভাড়া নেন। চার মাস ধরে মাহমুদুল হাসান (মহিন), ছোট মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে বিএনপির এক নেতার মধ্যস্থতায় মাসে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। গত বুধবার বিকেলে সোহাগের কাছে তারা চাঁদা নিতে আসে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়।
ফ্ল্যাটে ঝুলছে তালা
কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ির ৯ তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সোহাগ। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। বাড়ির অষ্টম তলার ভাড়াটে মো. আলী নুর বলেন, ‘সোহাগ ভাই খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে প্রতি ফ্ল্যাটে খাবার ও উপহারসামগ্রী পাঠাতেন। গত সোমবার সকালে দোকানে যাওয়ার সময় সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। তিনি খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন।’
ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
সারাদেশে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে এ প্রতিবাদ সভা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।
চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক
দ্বন্দ্বে খুন: পুলিশ
চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যা করা হয়েছে। একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে আগ থেকে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ঘটনার নেপথ্য নিয়ে অনেক রকম কথাবার্তা আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা খুব প্রচলিত। সেখানে একটি ভাঙারি দোকান ছিল। সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।
আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা পরস্পর সম্পর্কিত। তারা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একপর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম বলেন, গত বুধবার বিকেল ৬টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে ১০ জুলাই এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ১১ জুলাই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র?্যাব কর্তৃক আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামের আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, গতকাল শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
লালবাগ বিভাগের ডিসি আরও বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উদ্ঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেপ্তার এবং সোহাগ কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উদ্ঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত সোহাগের এবং তার হত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, একটা অপরাধ সংঘটিত হলে কে অপরাধী সেটা বিবেচনা করে পুলিশ মামলা তদন্ত করে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। অপরাধের সঙ্গে তাদের যে সম্পৃক্ততা, এটাতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। তারা কেন অপরাধটি সংঘটিত করেছে, এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িয়ে তাদের পরিচয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরও আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা। এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য তারা আমাদের দেয়নি। আমরা তাদের আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে চাঁদাবাজির কোনো বিষয় ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টা আমরা জানি না। এ সম্পর্কে কোনো তথ্য আমরা পাইনি। যতটুকু জেনেছি, এটা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের বিষয়। ?ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও ব্যবসায়িক এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে আগাম পুলিশিং ব্যবস্থা ও পুলিশের টহলের ব্যত্যয় ঘটেছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে জসীম উদ্দিন বলেন, ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
গত ১০ মার্চ একইদিন চকবাজারে একটি ক্রোকারিজ মার্কেট দখল দিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এবং বাবু বাজার ব্রিজের নিচে ফুটপাত দখল নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। ওই ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়তো মিটফোর্ডের ঘটনা ঘটতো না। এমন প্রশ্নের উত্তরে লালবাগের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, ওই দুইটা ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি ঘটনায় চারজন ও আরেকটি ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা এসব বিষয়কে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই না। এখন কারও যদি রাজনৈতিক পরিচয় থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে আমরা দেখছি কারা অপরাধী, সে কী অপরাধ করেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি আলোচনায় বলেছি, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক এলাকায় হয় চাঁদাবাজরা থাকবে, না হয় লালবাগের ডিসি থাকবে? আমরা কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের ছাড় দেবো না।
রবিনের স্বীকারোক্তি, রিমান্ডে আরেকজন
ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আর হত্যা মামলায় টিটন গাজী নামের আরেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মনিরের আবেদনে শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ গিয়াস রবিনের জবানবন্দী রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই বিচারক টিটন গাজীর রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা রবিন ও টিটনকে আদালতে হাজির করেন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মনির। রবিন এ ঘটনায় পুলিশের করা অস্ত্র মামলার আসামি। আর টিটন গাজীকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন আরেক তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন।
‘ফাইসা গেছি’, বললেন রবিন
আদালতে জবানবন্দী দেয়া অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার রবিন বলেছেন ‘তিনি ফেঁসে গেছেন’, আর টিটনের ভাষ্য, ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে তিনি কোনো ‘আঘাত’ করেননি বা অন্য কাউকে মারধরের নির্দেশও দেননি। রবিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। আমি দোষী, সারা বাংলাদেশের মানুষ মানুষ জেনে গেছে।’ তার কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিন বলেন, আর ৮ দিন পর তার পর্তুগালের ফ্লাইট, বিদেশ যাওয়ার জন্য তার ২২ লাখ টাকা এ বাবদ খরচ হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের কারও সঙ্গে তার ‘সম্পর্ক নেই’ জানিয়ে রবিন বলেন, ‘আমি ফাইসা গেছি। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সন্দেহের কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। আমার জীবনটা শেষ। আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। আর কিছু বলতে চাই না।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে যাদের অংশ নিতে দেখা গেছে এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। একসময় তাদের কয়েকজন সোহাগের ব্যবসার সহযোগী ছিলেন। ব্যবসাসংক্রান্ত বিরোধে এমন ভয়ঙ্করভাবে কাউকে হত্যা করা হতে পারে, তা পরিচিতজনদের ধারণারও বাইরে। ওই এলাকার একজন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী বলছেন, পুরনো তারের ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট সেখানে রয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ করতেন সোহাগ। গ্রেপ্তার মহিন তার দলবল নিয়ে ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। ‘সেই চেষ্টায় তারা সোহাগের গোডাউনে তালা মেরে দেয়। তাদের মধ্যে এটা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। জড়িতদের কয়েকজন স্থানীয় যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত। সোহাগও এক সময় যুবদল করতেন।’
গত বুধবার বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে। এরপর এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় তার বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর পুলিশ দায়ের করেছে অস্ত্র মামলা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘দুঃখজনক’ বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এইটার জন্য আমরা অলরেডি পাঁচজনরে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
‘ব্যবসার শেয়ার, না হয় মাসে ২ লাখ টাকা’,
বনিবনা না হওয়ায় হত্যা: সোহাগের স্ত্রী
আগে চাকরি করতেন লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। কয়েক বছর আগে ব্যবসা শুরু করেন তিনি, যা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ব্যবসার শেয়ার, না হয় মাসে মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে দাবি করেন তারা। কিন্তু এতে রাজি না হওয়ায় সোহাগের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে গত বুধবার সমাধানের কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেয়া হয়। বনিবনা না হওয়ায় তাকে পিটিয়ে এবং পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম। গত শনিবার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরে সোহাগের গ্রামের বাড়িতে স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লাকি বেগম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। আর এ কারণেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে।’
ঘটনার দুই দিন পর গতকাল শুক্রবার এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ৩৯ বছর বয়সী সোহাগের মৃতদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। ঘটনার পরদিন গত বৃহস্পতিবার সোহাগের বড় বোন মঞ্জুরা বেগম কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামে হত্যা মামলা করেন।
শনিবার সকালে সোহাগের গ্রামে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীর আনাগোনা। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী লাকি বেগম। সোহাগের ১২ বছরের ছেলে সোহান এবং ১৪ বছরের মেয়ে সোহানাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা জানা নেই কারও। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। সোহাগের বড় বোনের স্বামী আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন আগে জীবিকার তাগিদে মা আলেয়া বেগম শিশু সোহাগ ও তার আরও দুই মেয়েকে নিয়ে বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেই সময় থেকে সোহাগ ঢাকায় বসবাস করতেন।
শুরুর দিকে কিছুদিন সোহাগ চাকরি করলেও পরে মিডফোর্ডে হাসপাতালের সামনে মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে সোহাগ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরা কদমতলী কেরাণীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এক সময় সোহাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
গত বুধবার বিকেলে ঢাকার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে সোহাগকে আটকে রেখে দফায় দফায় চাপ দেয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় সোহাগকে।
সোহাগের ছেলে সোহান বলে, ‘চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওরা বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।’ সোহাগের বড় বোন এবং মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ভাই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ছাড়া তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছেন আসামিরা। ‘তবে আমার ভাই তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করে এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে।’
মামাকে হত্যায় জড়িতদের ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়ার দাবি জানিয়েছে সোহাগের ভাগ্নি বিথী বলেন, ‘আমরা চাই এই হত্যা মামলার বিচার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হোক। ‘তাদের প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হোক। বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার মতো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করা হোক।’
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
সোহাগকে শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমি সেখানে ছিলাম। সবাই তার আর্তনাদ শুনেছে, কিন্তু আমরা সবাই নীরব ছিলাম। কেউ ভিডিও করছিল, কেউ দূর থেকে দেখছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের ভয় আমাদের সবাইকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এটি আমার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ এভাবেই বলছিলেন ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী পুরান ঢাকার এক রাসায়নিক ব্যবসায়ী।
গত বুধবার সন্ত্রাসীরা চাঁদার টাকা না পেয়ে সোহাগকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে এনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে নিয়ে পিটিয়ে এবং ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ভাবি, আমরা যদি সেদিন চুপ না থাকতাম, একসঙ্গে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে হয়তো সোহাগ বেঁচে থাকতেন। কিন্তু আমরা ভয়ের কারণে আগাতে পারিনি। এ কথা মনে পড়লে অনুশোচনা হয়। আমরা চাই এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক। চাঁদাবাজ আর সন্ত্রাসীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়।’
৪ নম্বর রজনী বোস লেনে ‘সোহানা মেটাল’ নামে দোকান আছে সোহাগের। ওই দোকানের পাশে দোকান আছে মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ীর। শরীয়তপুর স্টোর নামের ওই দোকানের মালিক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে তার দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোহাগ মাঝে মধ্যে দোকানে আসতেন। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি দোকানে কাজ করছিলাম। এমন সময় দেখি ২০ থেকে ২২ জন যুবক ও তরুণ এসে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমিসহ অন্যান্য দোকানদার সোহাগকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, ‘চুপ করে দোকানে বসে থাক, নইলে খবর আছে।’ এরপর তারা সোহাগকে চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের গেইটের সামনে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর শুনতে পাই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।’
‘চাঁদা না দেয়ায় হত্যা’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার তামা-কাঁসার এক ব্যবসায়ী বলেন, সোহাগ কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় দোকান ভাড়া নেন। চার মাস ধরে মাহমুদুল হাসান (মহিন), ছোট মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে বিএনপির এক নেতার মধ্যস্থতায় মাসে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। গত বুধবার বিকেলে সোহাগের কাছে তারা চাঁদা নিতে আসে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়।
ফ্ল্যাটে ঝুলছে তালা
কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ির ৯ তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সোহাগ। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। বাড়ির অষ্টম তলার ভাড়াটে মো. আলী নুর বলেন, ‘সোহাগ ভাই খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে প্রতি ফ্ল্যাটে খাবার ও উপহারসামগ্রী পাঠাতেন। গত সোমবার সকালে দোকানে যাওয়ার সময় সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। তিনি খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন।’
ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
সারাদেশে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে এ প্রতিবাদ সভা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।
চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক
দ্বন্দ্বে খুন: পুলিশ
চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যা করা হয়েছে। একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে আগ থেকে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ঘটনার নেপথ্য নিয়ে অনেক রকম কথাবার্তা আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা খুব প্রচলিত। সেখানে একটি ভাঙারি দোকান ছিল। সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।
আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা পরস্পর সম্পর্কিত। তারা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একপর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম বলেন, গত বুধবার বিকেল ৬টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে ১০ জুলাই এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ১১ জুলাই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র?্যাব কর্তৃক আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামের আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, গতকাল শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
লালবাগ বিভাগের ডিসি আরও বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উদ্ঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেপ্তার এবং সোহাগ কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উদ্ঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত সোহাগের এবং তার হত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, একটা অপরাধ সংঘটিত হলে কে অপরাধী সেটা বিবেচনা করে পুলিশ মামলা তদন্ত করে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। অপরাধের সঙ্গে তাদের যে সম্পৃক্ততা, এটাতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। তারা কেন অপরাধটি সংঘটিত করেছে, এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িয়ে তাদের পরিচয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরও আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা। এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য তারা আমাদের দেয়নি। আমরা তাদের আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে চাঁদাবাজির কোনো বিষয় ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টা আমরা জানি না। এ সম্পর্কে কোনো তথ্য আমরা পাইনি। যতটুকু জেনেছি, এটা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের বিষয়। ?ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও ব্যবসায়িক এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে আগাম পুলিশিং ব্যবস্থা ও পুলিশের টহলের ব্যত্যয় ঘটেছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে জসীম উদ্দিন বলেন, ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
গত ১০ মার্চ একইদিন চকবাজারে একটি ক্রোকারিজ মার্কেট দখল দিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এবং বাবু বাজার ব্রিজের নিচে ফুটপাত দখল নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। ওই ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়তো মিটফোর্ডের ঘটনা ঘটতো না। এমন প্রশ্নের উত্তরে লালবাগের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, ওই দুইটা ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি ঘটনায় চারজন ও আরেকটি ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা এসব বিষয়কে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই না। এখন কারও যদি রাজনৈতিক পরিচয় থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে আমরা দেখছি কারা অপরাধী, সে কী অপরাধ করেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি আলোচনায় বলেছি, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক এলাকায় হয় চাঁদাবাজরা থাকবে, না হয় লালবাগের ডিসি থাকবে? আমরা কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের ছাড় দেবো না।
রবিনের স্বীকারোক্তি, রিমান্ডে আরেকজন
ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আর হত্যা মামলায় টিটন গাজী নামের আরেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মনিরের আবেদনে শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ গিয়াস রবিনের জবানবন্দী রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই বিচারক টিটন গাজীর রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা রবিন ও টিটনকে আদালতে হাজির করেন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মনির। রবিন এ ঘটনায় পুলিশের করা অস্ত্র মামলার আসামি। আর টিটন গাজীকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন আরেক তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন।
‘ফাইসা গেছি’, বললেন রবিন
আদালতে জবানবন্দী দেয়া অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার রবিন বলেছেন ‘তিনি ফেঁসে গেছেন’, আর টিটনের ভাষ্য, ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে তিনি কোনো ‘আঘাত’ করেননি বা অন্য কাউকে মারধরের নির্দেশও দেননি। রবিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। আমি দোষী, সারা বাংলাদেশের মানুষ মানুষ জেনে গেছে।’ তার কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিন বলেন, আর ৮ দিন পর তার পর্তুগালের ফ্লাইট, বিদেশ যাওয়ার জন্য তার ২২ লাখ টাকা এ বাবদ খরচ হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের কারও সঙ্গে তার ‘সম্পর্ক নেই’ জানিয়ে রবিন বলেন, ‘আমি ফাইসা গেছি। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সন্দেহের কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। আমার জীবনটা শেষ। আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। আর কিছু বলতে চাই না।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে যাদের অংশ নিতে দেখা গেছে এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। একসময় তাদের কয়েকজন সোহাগের ব্যবসার সহযোগী ছিলেন। ব্যবসাসংক্রান্ত বিরোধে এমন ভয়ঙ্করভাবে কাউকে হত্যা করা হতে পারে, তা পরিচিতজনদের ধারণারও বাইরে। ওই এলাকার একজন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী বলছেন, পুরনো তারের ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট সেখানে রয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ করতেন সোহাগ। গ্রেপ্তার মহিন তার দলবল নিয়ে ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। ‘সেই চেষ্টায় তারা সোহাগের গোডাউনে তালা মেরে দেয়। তাদের মধ্যে এটা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। জড়িতদের কয়েকজন স্থানীয় যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত। সোহাগও এক সময় যুবদল করতেন।’
গত বুধবার বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে। এরপর এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় তার বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর পুলিশ দায়ের করেছে অস্ত্র মামলা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘দুঃখজনক’ বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এইটার জন্য আমরা অলরেডি পাঁচজনরে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
‘ব্যবসার শেয়ার, না হয় মাসে ২ লাখ টাকা’,
বনিবনা না হওয়ায় হত্যা: সোহাগের স্ত্রী
আগে চাকরি করতেন লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। কয়েক বছর আগে ব্যবসা শুরু করেন তিনি, যা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ব্যবসার শেয়ার, না হয় মাসে মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে দাবি করেন তারা। কিন্তু এতে রাজি না হওয়ায় সোহাগের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে গত বুধবার সমাধানের কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেয়া হয়। বনিবনা না হওয়ায় তাকে পিটিয়ে এবং পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম। গত শনিবার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরে সোহাগের গ্রামের বাড়িতে স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লাকি বেগম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। আর এ কারণেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে।’
ঘটনার দুই দিন পর গতকাল শুক্রবার এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ৩৯ বছর বয়সী সোহাগের মৃতদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। ঘটনার পরদিন গত বৃহস্পতিবার সোহাগের বড় বোন মঞ্জুরা বেগম কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামে হত্যা মামলা করেন।
শনিবার সকালে সোহাগের গ্রামে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীর আনাগোনা। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী লাকি বেগম। সোহাগের ১২ বছরের ছেলে সোহান এবং ১৪ বছরের মেয়ে সোহানাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা জানা নেই কারও। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। সোহাগের বড় বোনের স্বামী আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন আগে জীবিকার তাগিদে মা আলেয়া বেগম শিশু সোহাগ ও তার আরও দুই মেয়েকে নিয়ে বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেই সময় থেকে সোহাগ ঢাকায় বসবাস করতেন।
শুরুর দিকে কিছুদিন সোহাগ চাকরি করলেও পরে মিডফোর্ডে হাসপাতালের সামনে মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে সোহাগ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরা কদমতলী কেরাণীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এক সময় সোহাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
গত বুধবার বিকেলে ঢাকার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে সোহাগকে আটকে রেখে দফায় দফায় চাপ দেয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় সোহাগকে।
সোহাগের ছেলে সোহান বলে, ‘চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওরা বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।’ সোহাগের বড় বোন এবং মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ভাই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ছাড়া তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছেন আসামিরা। ‘তবে আমার ভাই তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করে এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে।’
মামাকে হত্যায় জড়িতদের ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়ার দাবি জানিয়েছে সোহাগের ভাগ্নি বিথী বলেন, ‘আমরা চাই এই হত্যা মামলার বিচার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হোক। ‘তাদের প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হোক। বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার মতো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করা হোক।’