রাজধানীর মিটফোর্ড হাসাপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামিদের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) সকালে নিজের ফেইসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে উপদেষ্টা বলেছেন, এই ‘নারকীয়’ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার ‘বদ্ধপরিকর’।

গত বুধবার বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে। এরপর এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে যাদের অংশ নিতে দেখা গেছে এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। একসময় তাদের কয়েকজন সোহাগের ব্যবসার সহযোগী ছিলেন। ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধে এমন ভয়ংকরভাবে কাউকে হত্যা করা হতে পারে, তা পরিচিতজনদের ধারণারও বাইরে।

এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিন নামে দু’জনকে এবং র‌্যাব আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মহিন ও রবিনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি।

সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, হত্যায় জড়িতদের বিচার এবং সারাদেশে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাতে বিভিন্ন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও।

এমন প্রেক্ষাপটে আইন উপদেষ্টা ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ধারা ১০ এর অধীনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।’

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১৯ আসামির মধ্যে দু’জন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরে নেতা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল।

এ মামলার অন্য আসামি কালু স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী। তাকেও দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। হত্যাকাণ্ডে নাম আসায় চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাসকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’