যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কছাড়ের বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় কিছু বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি দুই দেশ। এই অবস্থায় শেষ হলো তিন দিনের আলোচনা। তবে দুই দেশেই কিছু বিষয়ে একমত ও কিছু বিষয়ে দ্বিমত হয়েছে। এ কারণে শুল্কছাড়ের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আবারও বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
কিছু বিষয়ে সম্মত হয়নি
নিজ নিজ দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে আবারও বৈঠকে বসবে দুই দেশ
বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব আজ দেশে ফিরবেন
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে
বলে আশা তাদের
শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে কোন কোন বিষয়ে সমঝোতা হয়নি তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
দূতাবাস জানিয়েছে, আগামী বৈঠকের আগে উভয় দেশ নিজ নিজ দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর শিগগির ভার্চুয়ালি অথবা সামনাসামনি পরবর্তী বৈঠকের সময় ও তারিখ ঠিক করা হবে। তিন দিনের আলোচনার পর বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়বসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দূতাবাস জানিয়েছে, বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব আজ দেশে ফিরবেন। প্রয়োজনে পরবর্তী আলোচনায় অংশ নিতে তারা আবার যুক্তরাষ্ট্র যাবেন।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘোষিত শুল্ক হার ছিল ৩৭। এর পরপরই শুল্ক কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। একপর্যায়ে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ৯ জুলাই এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এরই মধ্যে ৭ জুলাই বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে বাড়তি শুল্কারোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্ক হার ৩৫। বাড়তি শুল্কছাড় নিয়ে গত বুধবার দুই দেশের মধ্যে তিন দিনের আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১০৯ কোটি ডলার বা ১৪ শতাংশ বেশি। দেশটিতে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ রপ্তানি বেড়েছে, তা একই সময়ে ১৫৪টি দেশে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির সমান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের।
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঘোষণায় বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশের বিভিন্ন খাত। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। কারণ, এই খাত একাই বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশের মতো অংশ দখল করে আছে। এছাড়াও হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সুতা ও কাপড়, তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার, ওষুধ, হস্তশিল্প এবং ছোট আকারের জাহাজ দেশটিতে রপ্তানি হয়। শুল্কারোপের ফলে এই খাতগুলো বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এর মধ্যে ওষুধ, সফটওয়্যার ও ছোট আকারের জাহাজ রপ্তানিকে বাংলাদেশের জন্য উদীয়মান রপ্তানি খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হঠাৎ এই শুল্কারোপের কারণে খাতগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে পারে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, আলোচনা করে বাড়তি শুল্ক কমানো না গেলে রপ্তানি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। সরকারের উচিত, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এর সমাধান করা।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি যে খাতগুলোর পণ্য রপ্তানি হয়, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। টি-শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি হয়ে থাকে। এই খাত একাই বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের মতো জুড়ে রয়েছে।
এরপরই রয়েছে হোম টেক্সটাইল খাত। বিছানার চাদর, তোয়ালে, পর্দাসহ নানান ধরনের গৃহস্থালি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। এ খাতেও সম্প্রতি বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার, প্যাকেজিং সামগ্রী ও অন্যান্য প্লাস্টিকজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের সহযোগী পণ্য হিসেবে বেশি রপ্তানি হয়। আবার কোনো কোনো সময় আলাদাভাবেও এই খাত থেকে রপ্তানি হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কছাড়ের বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় কিছু বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি দুই দেশ। এই অবস্থায় শেষ হলো তিন দিনের আলোচনা। তবে দুই দেশেই কিছু বিষয়ে একমত ও কিছু বিষয়ে দ্বিমত হয়েছে। এ কারণে শুল্কছাড়ের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আবারও বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
কিছু বিষয়ে সম্মত হয়নি
নিজ নিজ দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে আবারও বৈঠকে বসবে দুই দেশ
বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব আজ দেশে ফিরবেন
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে
বলে আশা তাদের
শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে কোন কোন বিষয়ে সমঝোতা হয়নি তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
দূতাবাস জানিয়েছে, আগামী বৈঠকের আগে উভয় দেশ নিজ নিজ দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর শিগগির ভার্চুয়ালি অথবা সামনাসামনি পরবর্তী বৈঠকের সময় ও তারিখ ঠিক করা হবে। তিন দিনের আলোচনার পর বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়বসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দূতাবাস জানিয়েছে, বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব আজ দেশে ফিরবেন। প্রয়োজনে পরবর্তী আলোচনায় অংশ নিতে তারা আবার যুক্তরাষ্ট্র যাবেন।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘোষিত শুল্ক হার ছিল ৩৭। এর পরপরই শুল্ক কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। একপর্যায়ে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ৯ জুলাই এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এরই মধ্যে ৭ জুলাই বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে বাড়তি শুল্কারোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্ক হার ৩৫। বাড়তি শুল্কছাড় নিয়ে গত বুধবার দুই দেশের মধ্যে তিন দিনের আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১০৯ কোটি ডলার বা ১৪ শতাংশ বেশি। দেশটিতে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ রপ্তানি বেড়েছে, তা একই সময়ে ১৫৪টি দেশে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির সমান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের।
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঘোষণায় বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশের বিভিন্ন খাত। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। কারণ, এই খাত একাই বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশের মতো অংশ দখল করে আছে। এছাড়াও হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সুতা ও কাপড়, তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার, ওষুধ, হস্তশিল্প এবং ছোট আকারের জাহাজ দেশটিতে রপ্তানি হয়। শুল্কারোপের ফলে এই খাতগুলো বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এর মধ্যে ওষুধ, সফটওয়্যার ও ছোট আকারের জাহাজ রপ্তানিকে বাংলাদেশের জন্য উদীয়মান রপ্তানি খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হঠাৎ এই শুল্কারোপের কারণে খাতগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে পারে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, আলোচনা করে বাড়তি শুল্ক কমানো না গেলে রপ্তানি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। সরকারের উচিত, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এর সমাধান করা।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি যে খাতগুলোর পণ্য রপ্তানি হয়, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। টি-শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি হয়ে থাকে। এই খাত একাই বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের মতো জুড়ে রয়েছে।
এরপরই রয়েছে হোম টেক্সটাইল খাত। বিছানার চাদর, তোয়ালে, পর্দাসহ নানান ধরনের গৃহস্থালি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। এ খাতেও সম্প্রতি বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার, প্যাকেজিং সামগ্রী ও অন্যান্য প্লাস্টিকজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের সহযোগী পণ্য হিসেবে বেশি রপ্তানি হয়। আবার কোনো কোনো সময় আলাদাভাবেও এই খাত থেকে রপ্তানি হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।