সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে’ পাঠানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক- হেলথ পলিসি ওয়াচ। হেলথ পলিসি ওয়াচ বলেছে, আঞ্চলিক পরিচালকের এ পদ থেকে পুতুলকে গতকাল শুক্রবার ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো’ হয়েছে। হেলথ পলিসি ওয়াচ বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস এক অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। ওই মেইলে মহাপরিচালক বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদ গতকাল শুক্রবার থেকে ছুটিতে থাকবেন। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ক্যাথরিনা বেম। গেব্রিয়াসুস গত ১৫ জুলাই বেমকে নয়াদিল্লি গিয়ে পুতুলের দায়িত্ব নিতে বলেছেন বলেও হেলথ পলিসি ওয়াচের খবরে বলা হয়েছে।
তবে সংবাদের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়াদিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন পুতুল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব নেন।
অটিজম নিয়ে কাজ করেন- এমন পরিচিতি পাওয়া পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করার পর তাকে ছুটি পাঠানোর এ খবর সামনে এলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে এই কার্যালয় হয়েই যোগাযোগ করতে হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। আর
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার মা শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
দুদকের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার প্রচার চালানোর সময় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এটি বাংলাদেশ দ-বিধির ৪৬৮ ধারা (প্রতারণার উদ্দেশে জালিয়াতি) ও ৪৭১ ধারার (জাল দলিল ব্যবহার) লঙ্ঘন।
সায়মার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে তিনি নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রায় ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন (প্রায় ২৮ লাখ) ডলার সংগ্রহ করেছেন। তবে এ অর্থ কীভাবে খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে মামলায় বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়নি। এসব ঘটনায় সায়মার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দ-বিধির ৪২০ ধারায় (প্রতারণা ও অসৎভাবে অর্থ বা সম্পত্তি হস্তান্তর) জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ ওঠার পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোয় নির্বিঘেœ ভ্রমণ করতে পারছেন না। এছাড়া দেশে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শেখ হাসিনা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ তার মেয়ে পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে। এমনকি গত জানুয়ারিতে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা পুতুলের নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়, তারা পুতুলকে বাদ দিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে চায়। গত ৩০ অক্টোবরের ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকার তরফে বলা হয়েছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে সরকার বলেছে, বাংলাদেশ যেন সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের যেন পরিচালকের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে না হয়।
এ বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুসকে সায়মা ওয়াজেদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অস্বস্তির কথা জানান।
জবাবদিহিতার প্রথম পদক্ষেপ: প্রেস সচিব
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদের অনির্দিষ্টকালের ছুটিকে আমরা জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানোর প্রেক্ষিতে শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এ কথা বলেন।
ডব্লিউএইচওর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের এই উদ্যোগে আনন্দিত।’
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে’ পাঠানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক- হেলথ পলিসি ওয়াচ। হেলথ পলিসি ওয়াচ বলেছে, আঞ্চলিক পরিচালকের এ পদ থেকে পুতুলকে গতকাল শুক্রবার ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো’ হয়েছে। হেলথ পলিসি ওয়াচ বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস এক অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। ওই মেইলে মহাপরিচালক বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদ গতকাল শুক্রবার থেকে ছুটিতে থাকবেন। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ক্যাথরিনা বেম। গেব্রিয়াসুস গত ১৫ জুলাই বেমকে নয়াদিল্লি গিয়ে পুতুলের দায়িত্ব নিতে বলেছেন বলেও হেলথ পলিসি ওয়াচের খবরে বলা হয়েছে।
তবে সংবাদের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়াদিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন পুতুল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব নেন।
অটিজম নিয়ে কাজ করেন- এমন পরিচিতি পাওয়া পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করার পর তাকে ছুটি পাঠানোর এ খবর সামনে এলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে এই কার্যালয় হয়েই যোগাযোগ করতে হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। আর
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার মা শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
দুদকের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার প্রচার চালানোর সময় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এটি বাংলাদেশ দ-বিধির ৪৬৮ ধারা (প্রতারণার উদ্দেশে জালিয়াতি) ও ৪৭১ ধারার (জাল দলিল ব্যবহার) লঙ্ঘন।
সায়মার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে তিনি নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রায় ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন (প্রায় ২৮ লাখ) ডলার সংগ্রহ করেছেন। তবে এ অর্থ কীভাবে খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে মামলায় বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়নি। এসব ঘটনায় সায়মার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দ-বিধির ৪২০ ধারায় (প্রতারণা ও অসৎভাবে অর্থ বা সম্পত্তি হস্তান্তর) জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ ওঠার পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোয় নির্বিঘেœ ভ্রমণ করতে পারছেন না। এছাড়া দেশে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শেখ হাসিনা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ তার মেয়ে পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে। এমনকি গত জানুয়ারিতে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা পুতুলের নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়, তারা পুতুলকে বাদ দিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে চায়। গত ৩০ অক্টোবরের ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকার তরফে বলা হয়েছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে সরকার বলেছে, বাংলাদেশ যেন সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের যেন পরিচালকের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে না হয়।
এ বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুসকে সায়মা ওয়াজেদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অস্বস্তির কথা জানান।
জবাবদিহিতার প্রথম পদক্ষেপ: প্রেস সচিব
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদের অনির্দিষ্টকালের ছুটিকে আমরা জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানোর প্রেক্ষিতে শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এ কথা বলেন।
ডব্লিউএইচওর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের এই উদ্যোগে আনন্দিত।’