ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘উজানের দেশ’ বাঁধ খুলে পানি ছাড়ার আগ মুহূর্তে তথ্য দিলে বন্যার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থাকে না। ঢলের মাত্রা সম্পর্কে তথ্য না পাওয়ায় বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সোমবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নতুন ওয়েবসাইট এবং ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (ডিএসএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্যোগ পূর্বাভাসের আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা রাইমস ও বিশ্ব ব্যাংকের কেয়ার ফর সাউথ এশিয়া প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে এই সেবা চালু করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমি এসেই শুনেছি যে রিয়েল টাইম ডেটা নাই আমাদের। উজানের দেশ যদি আমাদেরকে না জানায়- ভারি মানে কত, তাইলে আমরা বেশিটা জানতে পারি না। ফলে উজানের দেশ যদি আমাদের দুই ঘণ্টা আগেই বলে যে ‘আমি গেইট খুলে দেব’, ২ ঘণ্টায় তো আর আপনি কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেন না।”
তিনি আরও জানান, রিয়েল টাইম তথ্য পেতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। “২ ঘণ্টা (আগে তথ্য পেলেন), আপনার এখানে (ঢল) নামতে নামতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা, এর মধ্যে আপনার তো ওটা (তথ্যপ্রাপ্তি) মাঝ রাতেও হইতে পারে। সো ইউ মে নট গেট এনাফ টাইম টু প্রিপারেশন। সেজন্য আমরা ইউকেতে কথা বলেছি এবং ইউকে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে যে ওরা আমাদেরকে সাইট স্পেসিফিক এবং রিয়েল টাইম ডেটাতে অ্যাকসেস দিয়ে আমাদের সাথে একটা সমঝোতায় যাবে।”
কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করে বন্যা মোকাবেলা সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া ফেনীর যে বন্যা, ওটা কিন্তু আমাদের আশঙ্কাটাকে আরো অনেক বাড়িয়ে তোলে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা তো আরো বেশি এগুলোর ভেতর দিয়ে যাব। কতটা ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সমাধান আপনি দিতে পারবেন? আমাদের মতন আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অবকাঠামোগত প্রটেকশন আপনি কতটা দিতে পারবেন? কতটা অবকাঠামোগত সমাধান হলে ৫৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন? কতটা অবকাঠামোগত সমাধান হলে ২১ ফিট পানিকে আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন? ফলে প্রাক-প্রস্তুতিটাই আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক বেশি জরুরি।”
তিনি বলেন, সেই প্রাক-প্রস্তুতির জন্য বন্যা ও বৃষ্টির পূর্বাভাসের তথ্যের সঙ্গে কোন এলাকায় নদী ভাঙনের ঝুঁকি বেশি- সেই তথ্যও লাগবে। পাশাপাশি সেসব এলাকায় সামনের দিনগুলোতে কী হতে পারে তারও পূর্বাভাস লাগবে, যাতে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে জনবসতি ও অবকাঠামো নির্মাণে বিধিনিষেধ রাখা যায়।
তিনি জানান, নতুন চালু হওয়া ওয়েবসাইটে ১০ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি ও পানি বাড়া-কমার পূর্বাভাস মিলবে। একইসঙ্গে সতর্কবার্তার নোটিফিকেশনও পাওয়া যাবে। এছাড়া গবেষণার জন্য বৃষ্টি ও বন্যার কয়েক বছরের তথ্য, গতি-প্রকৃতির তথ্যও থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও বিনিয়োগের তাগিদ দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এখানে আসলে সরকারকে অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। টাকা, মেধা, শ্রম সবই ইনভেস্ট করতে হবে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে। নেটওয়ার্কিং করতে হবে। কারণ আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি রাখতে চান, তাহলে এটাই আমাদের প্রধান কাজ হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান বলেন, “২০১২ সাল থেকে রাইমসের সহযোগিতায় বাংলাদেশে ৫, ১০ এবং ১৫ দিনের বিভিন্ন মেয়াদে বন্যার পূর্বাভাস চালু হয়েছে, যা আমাদের সক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়েছে।”
রাইমস’র কান্ট্রি প্রোগ্রাম লিড রায়হানুল হক খান বলেন, “শুধু ঝুঁকিভিত্তিক নয়, ডিএসএসকে প্রভাবভিত্তিক পূর্বাভাসে রূপান্তর করা হচ্ছে, যাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।”
ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে বন্যার আগাম বার্তা প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “২০২৪ সালে সময়মত বন্যার সতর্ক বার্তার প্রচারের কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।”
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যায়ে তথ্য পৌঁছানো প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, “২০ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীকে ভয়েস মেসেজে পূর্বাভাস পাঠানো হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন চালু হওয়া ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম দেশের দুর্যোগ প্রস্তুতি, আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ে নতুন মাত্রা আনবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে এই প্লাটফর্ম। ভয়েস মেসেজ, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ও মোবাইল ফিচারের মাধ্যমে এ প্লাটফর্ম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেবে।
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘উজানের দেশ’ বাঁধ খুলে পানি ছাড়ার আগ মুহূর্তে তথ্য দিলে বন্যার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থাকে না। ঢলের মাত্রা সম্পর্কে তথ্য না পাওয়ায় বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সোমবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নতুন ওয়েবসাইট এবং ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (ডিএসএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্যোগ পূর্বাভাসের আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা রাইমস ও বিশ্ব ব্যাংকের কেয়ার ফর সাউথ এশিয়া প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে এই সেবা চালু করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমি এসেই শুনেছি যে রিয়েল টাইম ডেটা নাই আমাদের। উজানের দেশ যদি আমাদেরকে না জানায়- ভারি মানে কত, তাইলে আমরা বেশিটা জানতে পারি না। ফলে উজানের দেশ যদি আমাদের দুই ঘণ্টা আগেই বলে যে ‘আমি গেইট খুলে দেব’, ২ ঘণ্টায় তো আর আপনি কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেন না।”
তিনি আরও জানান, রিয়েল টাইম তথ্য পেতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। “২ ঘণ্টা (আগে তথ্য পেলেন), আপনার এখানে (ঢল) নামতে নামতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা, এর মধ্যে আপনার তো ওটা (তথ্যপ্রাপ্তি) মাঝ রাতেও হইতে পারে। সো ইউ মে নট গেট এনাফ টাইম টু প্রিপারেশন। সেজন্য আমরা ইউকেতে কথা বলেছি এবং ইউকে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে যে ওরা আমাদেরকে সাইট স্পেসিফিক এবং রিয়েল টাইম ডেটাতে অ্যাকসেস দিয়ে আমাদের সাথে একটা সমঝোতায় যাবে।”
কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করে বন্যা মোকাবেলা সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া ফেনীর যে বন্যা, ওটা কিন্তু আমাদের আশঙ্কাটাকে আরো অনেক বাড়িয়ে তোলে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা তো আরো বেশি এগুলোর ভেতর দিয়ে যাব। কতটা ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সমাধান আপনি দিতে পারবেন? আমাদের মতন আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অবকাঠামোগত প্রটেকশন আপনি কতটা দিতে পারবেন? কতটা অবকাঠামোগত সমাধান হলে ৫৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন? কতটা অবকাঠামোগত সমাধান হলে ২১ ফিট পানিকে আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন? ফলে প্রাক-প্রস্তুতিটাই আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক বেশি জরুরি।”
তিনি বলেন, সেই প্রাক-প্রস্তুতির জন্য বন্যা ও বৃষ্টির পূর্বাভাসের তথ্যের সঙ্গে কোন এলাকায় নদী ভাঙনের ঝুঁকি বেশি- সেই তথ্যও লাগবে। পাশাপাশি সেসব এলাকায় সামনের দিনগুলোতে কী হতে পারে তারও পূর্বাভাস লাগবে, যাতে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে জনবসতি ও অবকাঠামো নির্মাণে বিধিনিষেধ রাখা যায়।
তিনি জানান, নতুন চালু হওয়া ওয়েবসাইটে ১০ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি ও পানি বাড়া-কমার পূর্বাভাস মিলবে। একইসঙ্গে সতর্কবার্তার নোটিফিকেশনও পাওয়া যাবে। এছাড়া গবেষণার জন্য বৃষ্টি ও বন্যার কয়েক বছরের তথ্য, গতি-প্রকৃতির তথ্যও থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও বিনিয়োগের তাগিদ দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এখানে আসলে সরকারকে অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। টাকা, মেধা, শ্রম সবই ইনভেস্ট করতে হবে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে। নেটওয়ার্কিং করতে হবে। কারণ আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি রাখতে চান, তাহলে এটাই আমাদের প্রধান কাজ হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান বলেন, “২০১২ সাল থেকে রাইমসের সহযোগিতায় বাংলাদেশে ৫, ১০ এবং ১৫ দিনের বিভিন্ন মেয়াদে বন্যার পূর্বাভাস চালু হয়েছে, যা আমাদের সক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়েছে।”
রাইমস’র কান্ট্রি প্রোগ্রাম লিড রায়হানুল হক খান বলেন, “শুধু ঝুঁকিভিত্তিক নয়, ডিএসএসকে প্রভাবভিত্তিক পূর্বাভাসে রূপান্তর করা হচ্ছে, যাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।”
ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে বন্যার আগাম বার্তা প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “২০২৪ সালে সময়মত বন্যার সতর্ক বার্তার প্রচারের কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।”
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যায়ে তথ্য পৌঁছানো প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, “২০ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীকে ভয়েস মেসেজে পূর্বাভাস পাঠানো হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন চালু হওয়া ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম দেশের দুর্যোগ প্রস্তুতি, আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ে নতুন মাত্রা আনবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে এই প্লাটফর্ম। ভয়েস মেসেজ, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ও মোবাইল ফিচারের মাধ্যমে এ প্লাটফর্ম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেবে।