জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ও দ্বিকক্ষীয় সংসদ গঠনের পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পরও রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “নারী প্রতিনিধিত্ব ও দ্বিকক্ষীয় সংসদ নিয়ে আগেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিছু প্রাথমিক সমর্থন মিললেও পদ্ধতিগত মতানৈক্যের কারণে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি।”
কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, বর্তমানে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে থাকা ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ১০০ করা যেতে পারে। এ প্রস্তাব বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেলেও প্রার্থী মনোনয়নের পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ রয়ে গেছে।
প্রথম প্রস্তাবে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী আসনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। আরেক প্রস্তাবে বর্তমান সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থাকে প্রসারিত করে ১০০ আসন করার কথা উল্লেখ করা হয়।
“মতানৈক্যের প্রেক্ষিতে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও দেয়—যে সব দল ২৫টির বেশি আসনে প্রার্থী দেবে, তাদের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী থাকতে হবে। তবে এ প্রস্তাবও ঐকমত্য পায়নি,” বলেন আলী রীয়াজ।
দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিকক্ষীয় সংসদ ও উচ্চকক্ষ সৃষ্টি। কমিশনের সুপারিশে ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষ ও ১০০ আসনের উচ্চকক্ষের প্রস্তাব ছিল, যা আগের বৈঠকগুলোতে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেয়েছিল।
তবে উচ্চকক্ষ গঠনের পদ্ধতি নিয়ে এখনো মতানৈক্য রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, সংসদে দলগুলোর আসন সংখ্যার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক। আরেক পক্ষ কমিশনের মতোই জাতীয় ভোটের শতাংশ অনুযায়ী প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন চায়।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা চাইছি আলোচনা অব্যাহত থাকুক যাতে একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পৌঁছানো যায়। এই দুই বিষয়ে আলোচনা আগামীকালও চলবে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মঙ্গলবারের আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে কিছু দল লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে, যা বুধবার বা বৃহস্পতিবার আলাদাভাবে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
“আমাদের এখনো বিশ্বাস আছে, জুলাইয়ের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে,” বলেন আলী রীয়াজ।
এদিন বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নারী প্রতিনিধিত্ব ও উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে বিএনপি ‘বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে সংস্কারের’ পক্ষে।
তিনি বলেন, “আমরা নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করা যেতে পারে। তবে তা যেন বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত হয়।”
নতুন করে ১০০টি আসন নির্ধারণ বা সীমানা নির্ধারণকে বাস্তবভিত্তিক মনে করে না বিএনপি। ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা এখনো আরপিও অনুযায়ী দলের বিভিন্ন কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতে পারিনি। সরাসরি নির্বাচন এক সময় বাস্তবতা হবে, তবে এখন ধাপে ধাপে এগোনোই যৌক্তিক।”
উচ্চকক্ষ নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব আসে, যেখানে ৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৭৬ জন প্রতিনিধি নেওয়ার কথা বলা হয়। এ প্রস্তাবকে ‘অস্বাভাবিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে আলাদা করে প্রতিনিধি নেওয়া কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়। উচ্চকক্ষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মেধা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষদের রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত করা।”
অন্যদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ১০০ নারী আসনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা উচিত। দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে মোট প্রার্থীর ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমর্থন পায়নি।
দ্বিকক্ষীয় সংসদ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল নানা প্রস্তাব দিয়ে এ আলোচনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “উচ্চকক্ষ অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করতে হবে। নিম্নকক্ষের প্রতিফলন না হয়ে উচ্চকক্ষের নিজস্ব গুরুত্ব থাকতে হবে।”
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ও দ্বিকক্ষীয় সংসদ গঠনের পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পরও রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “নারী প্রতিনিধিত্ব ও দ্বিকক্ষীয় সংসদ নিয়ে আগেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিছু প্রাথমিক সমর্থন মিললেও পদ্ধতিগত মতানৈক্যের কারণে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি।”
কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, বর্তমানে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে থাকা ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ১০০ করা যেতে পারে। এ প্রস্তাব বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেলেও প্রার্থী মনোনয়নের পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ রয়ে গেছে।
প্রথম প্রস্তাবে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী আসনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। আরেক প্রস্তাবে বর্তমান সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থাকে প্রসারিত করে ১০০ আসন করার কথা উল্লেখ করা হয়।
“মতানৈক্যের প্রেক্ষিতে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও দেয়—যে সব দল ২৫টির বেশি আসনে প্রার্থী দেবে, তাদের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী থাকতে হবে। তবে এ প্রস্তাবও ঐকমত্য পায়নি,” বলেন আলী রীয়াজ।
দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিকক্ষীয় সংসদ ও উচ্চকক্ষ সৃষ্টি। কমিশনের সুপারিশে ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষ ও ১০০ আসনের উচ্চকক্ষের প্রস্তাব ছিল, যা আগের বৈঠকগুলোতে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেয়েছিল।
তবে উচ্চকক্ষ গঠনের পদ্ধতি নিয়ে এখনো মতানৈক্য রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, সংসদে দলগুলোর আসন সংখ্যার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক। আরেক পক্ষ কমিশনের মতোই জাতীয় ভোটের শতাংশ অনুযায়ী প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন চায়।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা চাইছি আলোচনা অব্যাহত থাকুক যাতে একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পৌঁছানো যায়। এই দুই বিষয়ে আলোচনা আগামীকালও চলবে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মঙ্গলবারের আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে কিছু দল লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে, যা বুধবার বা বৃহস্পতিবার আলাদাভাবে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
“আমাদের এখনো বিশ্বাস আছে, জুলাইয়ের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে,” বলেন আলী রীয়াজ।
এদিন বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নারী প্রতিনিধিত্ব ও উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে বিএনপি ‘বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে সংস্কারের’ পক্ষে।
তিনি বলেন, “আমরা নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করা যেতে পারে। তবে তা যেন বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত হয়।”
নতুন করে ১০০টি আসন নির্ধারণ বা সীমানা নির্ধারণকে বাস্তবভিত্তিক মনে করে না বিএনপি। ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা এখনো আরপিও অনুযায়ী দলের বিভিন্ন কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতে পারিনি। সরাসরি নির্বাচন এক সময় বাস্তবতা হবে, তবে এখন ধাপে ধাপে এগোনোই যৌক্তিক।”
উচ্চকক্ষ নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব আসে, যেখানে ৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৭৬ জন প্রতিনিধি নেওয়ার কথা বলা হয়। এ প্রস্তাবকে ‘অস্বাভাবিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে আলাদা করে প্রতিনিধি নেওয়া কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়। উচ্চকক্ষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মেধা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষদের রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত করা।”
অন্যদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ১০০ নারী আসনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা উচিত। দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে মোট প্রার্থীর ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমর্থন পায়নি।
দ্বিকক্ষীয় সংসদ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল নানা প্রস্তাব দিয়ে এ আলোচনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “উচ্চকক্ষ অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করতে হবে। নিম্নকক্ষের প্রতিফলন না হয়ে উচ্চকক্ষের নিজস্ব গুরুত্ব থাকতে হবে।”