গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

রাজনীতি ও সংসদে রাষ্ট্রপরিচালনায় নারীকে সম্মানজনক অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সমতার মর্যাদায় নারীকে সম্মানিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নারীকে যথাযথ সম্মান না দিয়ে দমিয়ে রাখলে রাষ্ট্র পিছিয়ে যাবে।’

আলী রীয়াজ সোমবার,(১৪ জুলাই ২০২৫) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৩ তম দিনের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন। সোমবারের আলোচ্য সূচিতে সংসদে নারী আসন এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ রাখা হয়। নারীদের ‘গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার’ কারণে জুলাই আন্দোলন ‘বেগবান হয়’ মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সেটা স্মরণ করে তাদের ভূমিকাকে যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে, সেই জন্য আমরা মনে করি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার।’

১৪ জুলাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘জুলাই নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, তাদের এ অবদান দেশের ইতিহাসে ‘স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’। তারই প্রেক্ষাপটে তারা সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা করবেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার মনে রাখা দরকার দিনটির, কারণ সবার প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদ শাসনকে ক্রমাগত ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। তাদের প্রচেষ্টার কারণে আজকে এখানে এসেছি।’

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই স্মরণ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনাদের সবার মনে আছে এক বছর আগে আমরা কোথায় ছিলাম। ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জুলাই মাসে, ১৪ জুলাই বড় ধরনের মোড় ঘুরার দিন।’

আন্দোলনকারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা রাতের মধ্যে পথে নেমে এসেছিলেন উল্লেখ করে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘তাদের সে প্রতিবাদ, তাদের সে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, যে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ রচনা করেছিল, সেটি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করেছিল, একটি পরিবর্তনের দিকে নিয়েছিল।’

আলোচনার দুটো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিশেষ করে রাজনীতি, রাষ্ট্রগঠন ও আইন প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীকে মর্যাদার সঙ্গে অংশগ্রহণের পথ আমরা তৈরি করতে পারব। সে জায়গায় একমত হতে পারবো, এক জায়গায় আসতে পারবো।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া।

বিএনপি ১০০ নারী আসনের পক্ষে:

জাতীয় সংসদে ১০০ নারী আসনের পক্ষে বিএনপি। তবে তারা এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি সোমবার ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ১০০ আসনে নারী সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হতে পারেন।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিএনপি সব সময়ই ভূমিকা রেখেছে মন্তব্য করেন তিনি আরও বলেন, সমাজে যারা বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রেখেছেন তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে তাদের সংসদের উচ্চকক্ষ বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। তবে তাদের নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে, সেটা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি।

এ ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, জাতীয় সংসদের কাঠামোগত সংস্কার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নারী আসন বৃদ্ধি ও উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। নারী আসনে কোন পদ্ধতিতে প্রতিনিধিদের নির্বাচন করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।