রাত ও সকালের বৃষ্টিতে প্লাবিত বেনাপোল স্থলবন্দর -সংবাদ
বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল রোববার রাতে ও সোমবার,(১৪ জুলাই ২০২৫) সারাদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডগুলোতে (গুদাম) ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে এবং বৃষ্টির মাত্রা বাড়লে শেডের ভেতরে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষতি হতে পারে।
বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডের চারপাশে পানিতে থৈ থৈ করছে। খোলা আকাশের নিচে রাখা মালামাল পানিতে ভেসে যাচ্ছে। ৫ দিন আগের বৃষ্টির পানি রেলওয়ের মাটি কেটে নিষ্কাশন করা হলেও এখনও তা ধীরে ধীরে বের হচ্ছে। বন্দরের নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে থাকায় দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না।
গত ৯ জুলাই ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হলেও, তারাও বলছেন, ‘এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান এখনই সম্ভব নয়।’
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে বারবার জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এতে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে, আর বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ চললেও কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
তাদের ভাষায়, বেনাপোল বন্দরে প্রতি বছর ২২-২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দরে রয়েছে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। ছোট পণ্য রাখা হয় শেডে, বড়গুলো ওপেন ইয়ার্ডে। কিন্তু এসব অবকাঠামো অধিকাংশই পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির সময় পানি জমে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ব্যবসায়ীরা বারবার অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের ভোগান্তিও চরমে। বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন,
‘একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে সাধারণ শ্রমিকরা কাজ করতে পারে না, আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সাধারণ শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা জীবন জীবিকার তাগিদে এখানে কাজ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এখন কাজ করতে পারছি না। একদিন বৃষ্টি হলে তিন দিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকে।’
বেনাপোলের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। অনেক সময় শেডে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভাড়া বাড়লেও উন্নয়নে কোনো তৎপরতা নেই। বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবের ফল।’
সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সরকার প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায়। অথচ এত বড় একটি স্থাপনায় বছরের পর বছর এই অবস্থা চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান নেয়া হচ্ছে না। বৃষ্টির পানি গুদামে ঢুকে পণ্য নষ্ট হলে ব্যবসায়ীদেরই লোকসান গুণতে হয়।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, ‘টানা ভারী বৃষ্টির কারণে বন্দরে পানি জমেছে। গত ৯ জুলাই মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত রোববার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত আবারো ভারী বৃষ্টিতে পানি জমেছে, তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। এতে রেলওয়ে, কাস্টমসসহ একাধিক সরকারি সংস্থা জড়িত। আপাতত প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সাময়িক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিলেও, স্থায়ী প্রকল্প হাতে না নেয়া পর্যন্ত পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়।’
রাত ও সকালের বৃষ্টিতে প্লাবিত বেনাপোল স্থলবন্দর -সংবাদ
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল রোববার রাতে ও সোমবার,(১৪ জুলাই ২০২৫) সারাদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডগুলোতে (গুদাম) ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে এবং বৃষ্টির মাত্রা বাড়লে শেডের ভেতরে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষতি হতে পারে।
বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডের চারপাশে পানিতে থৈ থৈ করছে। খোলা আকাশের নিচে রাখা মালামাল পানিতে ভেসে যাচ্ছে। ৫ দিন আগের বৃষ্টির পানি রেলওয়ের মাটি কেটে নিষ্কাশন করা হলেও এখনও তা ধীরে ধীরে বের হচ্ছে। বন্দরের নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে থাকায় দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না।
গত ৯ জুলাই ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হলেও, তারাও বলছেন, ‘এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান এখনই সম্ভব নয়।’
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে বারবার জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এতে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে, আর বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ চললেও কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
তাদের ভাষায়, বেনাপোল বন্দরে প্রতি বছর ২২-২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দরে রয়েছে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। ছোট পণ্য রাখা হয় শেডে, বড়গুলো ওপেন ইয়ার্ডে। কিন্তু এসব অবকাঠামো অধিকাংশই পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির সময় পানি জমে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ব্যবসায়ীরা বারবার অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের ভোগান্তিও চরমে। বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন,
‘একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে সাধারণ শ্রমিকরা কাজ করতে পারে না, আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সাধারণ শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা জীবন জীবিকার তাগিদে এখানে কাজ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এখন কাজ করতে পারছি না। একদিন বৃষ্টি হলে তিন দিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকে।’
বেনাপোলের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। অনেক সময় শেডে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভাড়া বাড়লেও উন্নয়নে কোনো তৎপরতা নেই। বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবের ফল।’
সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সরকার প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায়। অথচ এত বড় একটি স্থাপনায় বছরের পর বছর এই অবস্থা চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান নেয়া হচ্ছে না। বৃষ্টির পানি গুদামে ঢুকে পণ্য নষ্ট হলে ব্যবসায়ীদেরই লোকসান গুণতে হয়।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, ‘টানা ভারী বৃষ্টির কারণে বন্দরে পানি জমেছে। গত ৯ জুলাই মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত রোববার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত আবারো ভারী বৃষ্টিতে পানি জমেছে, তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। এতে রেলওয়ে, কাস্টমসসহ একাধিক সরকারি সংস্থা জড়িত। আপাতত প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সাময়িক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিলেও, স্থায়ী প্রকল্প হাতে না নেয়া পর্যন্ত পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়।’