তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম মতভিন্নতা নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে এই সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোট লাগবে, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এমন অভিমত এসেছে।
পিআর পদ্ধতিতে না, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট নিয়েও প্রশ্ন আছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
কোনো একটি বা তিনটি দল পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করলেই তা আটকে দেয়া ন্যায়সঙ্গত হবে না: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে, ব্যর্থতা সবার: আলী রীয়াজ
মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন আলী রীয়াজ।
আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে বলে উল্লেখ করে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের সংশোধনের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের প্রয়োজন হবে। তবে, সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ যেমন প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাবিষয়ক ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ অনুচ্ছেদের দ্বারা সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।’
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের আলোচনায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এ মত প্রকাশ করেছে। তবে, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজও ঐকমত্য হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে
আসনের সংখ্যানুপাতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো এ বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরেও ঐকমত্যের জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি, সেহেতু দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।’ ঐকমত্য কমিশন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
*গণভোট ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক*
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ব্রিফিংয়ে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কেউ যেন ‘হাত দিতে না পারে’, সেজন্য সংবিধানে ‘শক্তিশালী’ সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
তার ভাষায়, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সংশোধনীটা শক্তিশালী করতে চাই; ভবিষ্যতে যেন কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় হাত না দিতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কেউ যদি পরিবর্তন আনতে চায়, সেটাও গণভোটের মাধ্যমে করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
*পিআর পদ্ধতি, মতবিরোধ*
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজকের আলোচনা ছিল দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট নিয়ে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে কীভাবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত থাকায় ঐকমত্য হয়নি। দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট গঠনের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই একমত। কিন্তু এর গঠন প্রক্রিয়া কী হবে এবং এর ক্ষমতা ও কার্যাবলি কী হবে, তা নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ আছে।’
বিএনপি পিআর পদ্ধতি চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধানে সংরক্ষিত নারী আসন যেভাবে নির্ধারণ হয়, সেভাবে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হচ্ছে। তবে বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। কেউ চান পিআর পদ্ধতিতে, মানে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। এখানে আবার পাওয়ার ফাংশনের বিষয় আছে। সাধারণ বিল কীভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন হলে আপার হাউজে কীভাবে পাস হবে, ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও ঐকমত্য আসেনি।’
*দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট*
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্টের প্রয়োজন আছে কিনা, সেই প্রশ্ন অনেক দল তুলেছে। আমাদের দেশের যে আর্থিক সক্ষমতা, সেই বিষয়ে আরেকটি পার্লামেন্ট সৃষ্টি করা এবং সেই পার্লামেন্ট যদি নিম্নপক্ষের রিপাবলিক হয়, তাহলে সেটার প্রয়োজন আছে কিনা, সেসব প্রশ্ন এসেছে। কারণ এটাও একটা আলাদা পার্লামেন্টের মতো ব্যয়বহুল পার্লামেন্ট হবে। এসব বিষয়ে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন সবার মতামত নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত দেবে আগামী রোববার। সিদ্ধান্ত দেয়ার পর আমরা প্রতিক্রিয়া বা আমাদের সম্মতি বা অসম্মতি জানাতে পারব।’
*এটা হবে ইনজাস্টিস*
আলোচনা শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘কোনো একটি বা তিনটি দল পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির বিরোধিতা করলেই তা আটকে দেয়া ন্যায়সঙ্গত হবে না। এটা হবে ইনজাস্টিস ও বৈষম্য।’
তিনি জানান, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠন এবং পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর বিষয়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ‘ব্যাপক ঐকমত্য’ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি মাত্র দল বা সরকারিদল একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিক এটা আমরা চাই না। এজন্য গণভোট ব্যবস্থাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’
নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও জামায়াত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তাহের জানান, সংসদে নারী আসন ১০০-এ উন্নীত করার বিষয়ে জামায়াত সম্মত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৪তম দিনের আলোচনার (সংলাপ) শুরু হয়।
*ব্যর্থতা সবার, ঐক্যের আশা*
সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আসলে কমিশন কোনো আলাদা সত্তা নয়। কমিশন আপনাদের আমাদের সবার অংশীদার। ফলে যদি আমরা কোথাও কোথাও ব্যর্থ হই, সে ব্যর্থতা আমাদের সবার। কমিশনের ব্যর্থতা নয়। কমিশনের কোনো ব্যর্থতা হলে সে ব্যর্থতা আমাদের সবার হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যে দায়-দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে সে দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আমরা কেবল অংশীদার হয়েছি মাত্র।’
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্তে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে যতদূর সম্ভব এক জায়গায় আসার জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানান কমিশনের সহ সভাপতি।
দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের বিষয়ে গত রোববার অসমাপ্ত আলোচনা সোমবার পুনরায় শুরু হয়। আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় বলে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম মতভিন্নতা নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে এই সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোট লাগবে, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এমন অভিমত এসেছে।
পিআর পদ্ধতিতে না, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট নিয়েও প্রশ্ন আছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
কোনো একটি বা তিনটি দল পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করলেই তা আটকে দেয়া ন্যায়সঙ্গত হবে না: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে, ব্যর্থতা সবার: আলী রীয়াজ
মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন আলী রীয়াজ।
আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে বলে উল্লেখ করে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের সংশোধনের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের প্রয়োজন হবে। তবে, সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ যেমন প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাবিষয়ক ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ অনুচ্ছেদের দ্বারা সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।’
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের আলোচনায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এ মত প্রকাশ করেছে। তবে, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজও ঐকমত্য হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে
আসনের সংখ্যানুপাতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো এ বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরেও ঐকমত্যের জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি, সেহেতু দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।’ ঐকমত্য কমিশন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
*গণভোট ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক*
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ব্রিফিংয়ে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কেউ যেন ‘হাত দিতে না পারে’, সেজন্য সংবিধানে ‘শক্তিশালী’ সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
তার ভাষায়, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সংশোধনীটা শক্তিশালী করতে চাই; ভবিষ্যতে যেন কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় হাত না দিতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কেউ যদি পরিবর্তন আনতে চায়, সেটাও গণভোটের মাধ্যমে করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
*পিআর পদ্ধতি, মতবিরোধ*
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজকের আলোচনা ছিল দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট নিয়ে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে কীভাবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত থাকায় ঐকমত্য হয়নি। দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট গঠনের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই একমত। কিন্তু এর গঠন প্রক্রিয়া কী হবে এবং এর ক্ষমতা ও কার্যাবলি কী হবে, তা নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ আছে।’
বিএনপি পিআর পদ্ধতি চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধানে সংরক্ষিত নারী আসন যেভাবে নির্ধারণ হয়, সেভাবে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হচ্ছে। তবে বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। কেউ চান পিআর পদ্ধতিতে, মানে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। এখানে আবার পাওয়ার ফাংশনের বিষয় আছে। সাধারণ বিল কীভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন হলে আপার হাউজে কীভাবে পাস হবে, ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও ঐকমত্য আসেনি।’
*দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট*
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্টের প্রয়োজন আছে কিনা, সেই প্রশ্ন অনেক দল তুলেছে। আমাদের দেশের যে আর্থিক সক্ষমতা, সেই বিষয়ে আরেকটি পার্লামেন্ট সৃষ্টি করা এবং সেই পার্লামেন্ট যদি নিম্নপক্ষের রিপাবলিক হয়, তাহলে সেটার প্রয়োজন আছে কিনা, সেসব প্রশ্ন এসেছে। কারণ এটাও একটা আলাদা পার্লামেন্টের মতো ব্যয়বহুল পার্লামেন্ট হবে। এসব বিষয়ে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন সবার মতামত নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত দেবে আগামী রোববার। সিদ্ধান্ত দেয়ার পর আমরা প্রতিক্রিয়া বা আমাদের সম্মতি বা অসম্মতি জানাতে পারব।’
*এটা হবে ইনজাস্টিস*
আলোচনা শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘কোনো একটি বা তিনটি দল পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির বিরোধিতা করলেই তা আটকে দেয়া ন্যায়সঙ্গত হবে না। এটা হবে ইনজাস্টিস ও বৈষম্য।’
তিনি জানান, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠন এবং পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর বিষয়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ‘ব্যাপক ঐকমত্য’ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি মাত্র দল বা সরকারিদল একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিক এটা আমরা চাই না। এজন্য গণভোট ব্যবস্থাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’
নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও জামায়াত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তাহের জানান, সংসদে নারী আসন ১০০-এ উন্নীত করার বিষয়ে জামায়াত সম্মত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৪তম দিনের আলোচনার (সংলাপ) শুরু হয়।
*ব্যর্থতা সবার, ঐক্যের আশা*
সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আসলে কমিশন কোনো আলাদা সত্তা নয়। কমিশন আপনাদের আমাদের সবার অংশীদার। ফলে যদি আমরা কোথাও কোথাও ব্যর্থ হই, সে ব্যর্থতা আমাদের সবার। কমিশনের ব্যর্থতা নয়। কমিশনের কোনো ব্যর্থতা হলে সে ব্যর্থতা আমাদের সবার হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যে দায়-দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে সে দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আমরা কেবল অংশীদার হয়েছি মাত্র।’
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্তে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে যতদূর সম্ভব এক জায়গায় আসার জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানান কমিশনের সহ সভাপতি।
দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের বিষয়ে গত রোববার অসমাপ্ত আলোচনা সোমবার পুনরায় শুরু হয়। আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় বলে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।