বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদেশ থেকে তুলনামুলক নিম্ন মানের কয়লা আমদানিতে যে টাকা ব্যয় হচ্ছে, দেশীয় খনি থেকে উচ্চ মানের কয়লা নিয়ে সেই একই দাম দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ঠিকাদারের বিল, খনি পরিচালনার ব্যয় নির্বাহে ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা করছে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)।
খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার ক্যালোরি ফিক ভ্যালু যত বেশী হয় এবং ময়েশ্চর যত কম হয়, সেই কয়লার গুণগত মান ততো বেশী ধরা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবি যে কয়লা আমদানী করে তার ক্যালোরি ফিক ভ্যালু ৪৫০০-৫০০০কিলোক্যালোরি/কেজি, ময়েশ্চার ২৮-৩৫ শতাংশ। বড়পুকুরিয়া কয়লার ক্ষেত্রে তা ৬১৩৭ কিলোক্যালোরি/কেজি, ময়েশ্চার ৩.৩৯ শতংশ। অর্থাৎ বড়পুকুরিয়ার কয়লার গুণগত মান আমদানিকৃত কয়লার চেয়ে বেশী। ফলে এই কয়লার দামও বেশী।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি বিভাগ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদিত কয়লার দাম টন প্রতি ১৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৭৬ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছিল। তবে পিডিবি ১৩০ ডলার করেই দাম পরিশোধ করে আসছে। এতে পিডিবির কাছে ২৮৭ কোটি টাকা টাকা পাওনা হয় পেট্রোবাংলার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বিসিএমসিএল।
বকেয়ার ওপর ৪০দিনে গ্রেস সময় বাদে বিলম্ব মাসুল যোগ হয় ১৩ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের বিলম্ব মাসুল বাবদ ১০৯ কোটি টাকা পাওনা দাবিও ছিল বিসিএমসিএলের পক্ষ থেকে।
বিষয়টি সুরাহা করার জন্য গত জানুয়ারিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বিলম্ব মাসুল মওকুফ এবং মূল্যবৃদ্ধিজনিত বকেয়া ২৮৭ কোটি টাকা দুই বছরে সমান মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক কয়লার দাম নির্ধারণে ইন্দোনেশিয়ার কয়লাসূচক অনুসরণ করে সম্প্রতি বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম অন্তত ৭২ ডলার হ্রাস করে মন্ত্রণালয়। এখন পিডিবি প্রতি টন কয়লার দাম দিচ্ছে ১০৪ ডলার।
বিসিএমসিএলের একটি সূত্রে দাবি, ২০২২ সালে গুণগত মান অনুযায়ি তাদের কয়লার আন্তর্জাতিক বাজর দর প্রতি টন ১৯৬ ডলার থেকে ৪৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। তবে দেশিকয়লা হিসেবে প্রতিটন ১৭৬ ডলার দরেই পিডিবিকে দেয়া হয়েছে। তখন, আন্তর্জাতিকবাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করা হয়নি। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বিদেশি ঠিকাদারের মাধ্যমে বিসিএমসিএল কয়লা উত্তোলন করে। খনি থেকে প্রতি টান কয়লা উৎপাদনে বিসিএমসিএলের খরচ ১৪০ ডলার মতো। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কয়লা উত্তোলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেশনাল খরচ বাদ দিয়ে বিক্রি করে প্রতি টন কয়লায় যে মুনাফা থাকে, তা দিয়েই খনি উন্নয়ন ও সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চলতি অর্থবছরে এ উৎপাদন খরচ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
২০১৮ সালে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালুর পর থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে বিসিএমসিএলের পুরো কয়লার ক্রেতা পিডিবি। পিডিবির অধীনস্থ বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট। ইউনিট এক ও দুই ১২৫ মেগাওয়াট করে। এবং ইউনিট তিনের স্থাপিত ক্ষমতা ২৭৫ মেগাওয়াট।
দ্বিতীয় ইউনিটটিতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সংস্কারকাজ চলছে। ওই ইউনিটে উৎপাদন এখনো বন্ধ। ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও এই ইউনিট থেকে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট উৎপাদন হতো। প্রথম ইউনিটের উৎপাদনও একই রকম।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৫২৫ মেগাওয়াট চালু থাকলে বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশীরভাগ সবসময় ২টি ইউনিট চালু থাকায়
বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ৭-৮ লাখ টন কয়লা। কারিগরি ত্রুটিসহ নানা করাণে কখনো আবার একটি ইউনিট চালু থাকে। কোনো ইউনিট বন্ধ থাকলে অতিরিক্ত কয়লা কোল ইয়ার্ডে জমা হতে থাকে।
দেশে বছরে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ইটভাটায় ব্যবহার হলেও বিসিএমসিএল জমে থাকা কয়লা বিক্রি করতে পারে না। একমাত্র ক্রেতা পিডিবির কাছে উৎপাদন খরচের চেয়ে কমমূল্যে কয়লা বিক্রি করতে হলে বিসিএমসিএল শিগগিরই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদেশ থেকে তুলনামুলক নিম্ন মানের কয়লা আমদানিতে যে টাকা ব্যয় হচ্ছে, দেশীয় খনি থেকে উচ্চ মানের কয়লা নিয়ে সেই একই দাম দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ঠিকাদারের বিল, খনি পরিচালনার ব্যয় নির্বাহে ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা করছে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)।
খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার ক্যালোরি ফিক ভ্যালু যত বেশী হয় এবং ময়েশ্চর যত কম হয়, সেই কয়লার গুণগত মান ততো বেশী ধরা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবি যে কয়লা আমদানী করে তার ক্যালোরি ফিক ভ্যালু ৪৫০০-৫০০০কিলোক্যালোরি/কেজি, ময়েশ্চার ২৮-৩৫ শতাংশ। বড়পুকুরিয়া কয়লার ক্ষেত্রে তা ৬১৩৭ কিলোক্যালোরি/কেজি, ময়েশ্চার ৩.৩৯ শতংশ। অর্থাৎ বড়পুকুরিয়ার কয়লার গুণগত মান আমদানিকৃত কয়লার চেয়ে বেশী। ফলে এই কয়লার দামও বেশী।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি বিভাগ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদিত কয়লার দাম টন প্রতি ১৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৭৬ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছিল। তবে পিডিবি ১৩০ ডলার করেই দাম পরিশোধ করে আসছে। এতে পিডিবির কাছে ২৮৭ কোটি টাকা টাকা পাওনা হয় পেট্রোবাংলার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বিসিএমসিএল।
বকেয়ার ওপর ৪০দিনে গ্রেস সময় বাদে বিলম্ব মাসুল যোগ হয় ১৩ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের বিলম্ব মাসুল বাবদ ১০৯ কোটি টাকা পাওনা দাবিও ছিল বিসিএমসিএলের পক্ষ থেকে।
বিষয়টি সুরাহা করার জন্য গত জানুয়ারিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বিলম্ব মাসুল মওকুফ এবং মূল্যবৃদ্ধিজনিত বকেয়া ২৮৭ কোটি টাকা দুই বছরে সমান মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক কয়লার দাম নির্ধারণে ইন্দোনেশিয়ার কয়লাসূচক অনুসরণ করে সম্প্রতি বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম অন্তত ৭২ ডলার হ্রাস করে মন্ত্রণালয়। এখন পিডিবি প্রতি টন কয়লার দাম দিচ্ছে ১০৪ ডলার।
বিসিএমসিএলের একটি সূত্রে দাবি, ২০২২ সালে গুণগত মান অনুযায়ি তাদের কয়লার আন্তর্জাতিক বাজর দর প্রতি টন ১৯৬ ডলার থেকে ৪৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। তবে দেশিকয়লা হিসেবে প্রতিটন ১৭৬ ডলার দরেই পিডিবিকে দেয়া হয়েছে। তখন, আন্তর্জাতিকবাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করা হয়নি। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বিদেশি ঠিকাদারের মাধ্যমে বিসিএমসিএল কয়লা উত্তোলন করে। খনি থেকে প্রতি টান কয়লা উৎপাদনে বিসিএমসিএলের খরচ ১৪০ ডলার মতো। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কয়লা উত্তোলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেশনাল খরচ বাদ দিয়ে বিক্রি করে প্রতি টন কয়লায় যে মুনাফা থাকে, তা দিয়েই খনি উন্নয়ন ও সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চলতি অর্থবছরে এ উৎপাদন খরচ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
২০১৮ সালে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালুর পর থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে বিসিএমসিএলের পুরো কয়লার ক্রেতা পিডিবি। পিডিবির অধীনস্থ বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট। ইউনিট এক ও দুই ১২৫ মেগাওয়াট করে। এবং ইউনিট তিনের স্থাপিত ক্ষমতা ২৭৫ মেগাওয়াট।
দ্বিতীয় ইউনিটটিতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সংস্কারকাজ চলছে। ওই ইউনিটে উৎপাদন এখনো বন্ধ। ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও এই ইউনিট থেকে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট উৎপাদন হতো। প্রথম ইউনিটের উৎপাদনও একই রকম।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৫২৫ মেগাওয়াট চালু থাকলে বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশীরভাগ সবসময় ২টি ইউনিট চালু থাকায়
বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ৭-৮ লাখ টন কয়লা। কারিগরি ত্রুটিসহ নানা করাণে কখনো আবার একটি ইউনিট চালু থাকে। কোনো ইউনিট বন্ধ থাকলে অতিরিক্ত কয়লা কোল ইয়ার্ডে জমা হতে থাকে।
দেশে বছরে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ইটভাটায় ব্যবহার হলেও বিসিএমসিএল জমে থাকা কয়লা বিক্রি করতে পারে না। একমাত্র ক্রেতা পিডিবির কাছে উৎপাদন খরচের চেয়ে কমমূল্যে কয়লা বিক্রি করতে হলে বিসিএমসিএল শিগগিরই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।