বন্যার আগ্রাসনে ফেনীর রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, জনজীবন ও অর্থনীতি -সংবাদ
ফেনীতে এবারের বন্যায় প্রায় ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, গ্রামীণ সড়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবকাঠামো মিলিয়ে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। তবে ক্ষতির এ পরিমাণ চূড়ান্ত নয়। এদিকে বন্যায় গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত ফেনীতে পানিবন্দী রয়েছে জেলার সাত হাজার পরিবার।
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ৮ জুলাই থেকে ফেনীতে বন্যা দেখা দেয়। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার পাঁচ উপজেলার ১৩৭টি গ্রাম। পরশুরাম, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী। এই পাঁচ গ্রামের ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) রাত পর্যন্ত ছিলেন ৩৩০ জন বাসিন্দা।
সরকারি পাঁচটি দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারের বন্যায় সড়ক ভাঙার ফলে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা, আবার ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩৮ কোটি ৭ লাখ, মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৭১ লাখ, প্রাণিসম্পদ খাতে ৬৫ লাখ ও বাঁধ ভেঙে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। ফেনীতে গত বছরের বন্যায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় আমন ও আউশের বীজতলা এবং গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আউশের বীজতলা ৮৪৫ হেক্টর, আমনের ৬৮৯ হেক্টর, বস্তায় সংরক্ষিত থাকা আদা ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন সবজি ৫৩৭ হেক্টর, মরিচ ১৪ হেক্টর, আদা ৭ হেক্টর, হলুদ ২ দশমিক ৫ হেক্টর, টমেটো শূন্য দশমিক ১১ হেক্টর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, এটা প্রাথমিক হিসাব। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র ও আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।
জেলা মৎস্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় জেলার ৬ উপজেলায় ২ হাজার ৩৩০টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন মাছ। আবার পোনা মাছ ভেসেছে প্রায় ১২৮ মেট্রিক টন। এসব পোনার বাজারমূল্য ছিল ৩ কোটি ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতে কাজ করছে। গত বছরের মতো এবারও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে তালিকা পাঠানো হবে।
এদিকে বন্যায় জেলায় ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবার বন্যায় ১০ হাজার ৬০০ মুরগি, ৪টি গরু, ৩টি ছাগল, ১টি ভেড়া, ২৩৫টি হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পরশুরামেই ৭ হাজার ২০০টি মুরগির মারা গেছে। আবার ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকার পশুপাখির দানাদার, ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার খড় ও ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ঘাস নষ্ট হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য সরকার প্রণোদনা দিলে খামারিদের হস্তান্তর করা হবে।
নদীর বাঁধ ভেঙে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ১২৫
কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলায় ১০০ কিলোমিটার, পরশুরামে ২০ কিলোমিটার। এর বাইরে ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও কিছু সড়কের ক্ষতি হয়েছে। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মুহুরী, কুহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৪১টি স্থান ভেঙেছে। এর মধ্যে পরশুরামে ২২টি ও ফুলগাজীতে ১৯টি স্থান রয়েছে। জানতে চাইলে বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙনস্থল গভীর হওয়ায় সেগুলোতে এখনও নদীর পানি প্রবেশ করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বাঁধের ভাঙন অংশের মেরামতকাজ শুরু হবে। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, বন্যাপরবর্তী পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন করে ৩০ লাখ টাকা ও ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত ১১ হাজার ১৭৪ জনকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছে। এবার বন্যাকবলিতদের জন্য ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বন্যার আগ্রাসনে ফেনীর রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, জনজীবন ও অর্থনীতি -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
ফেনীতে এবারের বন্যায় প্রায় ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, গ্রামীণ সড়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবকাঠামো মিলিয়ে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। তবে ক্ষতির এ পরিমাণ চূড়ান্ত নয়। এদিকে বন্যায় গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত ফেনীতে পানিবন্দী রয়েছে জেলার সাত হাজার পরিবার।
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ৮ জুলাই থেকে ফেনীতে বন্যা দেখা দেয়। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার পাঁচ উপজেলার ১৩৭টি গ্রাম। পরশুরাম, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী। এই পাঁচ গ্রামের ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) রাত পর্যন্ত ছিলেন ৩৩০ জন বাসিন্দা।
সরকারি পাঁচটি দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারের বন্যায় সড়ক ভাঙার ফলে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা, আবার ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩৮ কোটি ৭ লাখ, মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৭১ লাখ, প্রাণিসম্পদ খাতে ৬৫ লাখ ও বাঁধ ভেঙে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। ফেনীতে গত বছরের বন্যায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় আমন ও আউশের বীজতলা এবং গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আউশের বীজতলা ৮৪৫ হেক্টর, আমনের ৬৮৯ হেক্টর, বস্তায় সংরক্ষিত থাকা আদা ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন সবজি ৫৩৭ হেক্টর, মরিচ ১৪ হেক্টর, আদা ৭ হেক্টর, হলুদ ২ দশমিক ৫ হেক্টর, টমেটো শূন্য দশমিক ১১ হেক্টর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, এটা প্রাথমিক হিসাব। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র ও আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।
জেলা মৎস্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় জেলার ৬ উপজেলায় ২ হাজার ৩৩০টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন মাছ। আবার পোনা মাছ ভেসেছে প্রায় ১২৮ মেট্রিক টন। এসব পোনার বাজারমূল্য ছিল ৩ কোটি ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতে কাজ করছে। গত বছরের মতো এবারও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে তালিকা পাঠানো হবে।
এদিকে বন্যায় জেলায় ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবার বন্যায় ১০ হাজার ৬০০ মুরগি, ৪টি গরু, ৩টি ছাগল, ১টি ভেড়া, ২৩৫টি হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পরশুরামেই ৭ হাজার ২০০টি মুরগির মারা গেছে। আবার ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকার পশুপাখির দানাদার, ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার খড় ও ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ঘাস নষ্ট হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য সরকার প্রণোদনা দিলে খামারিদের হস্তান্তর করা হবে।
নদীর বাঁধ ভেঙে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ১২৫
কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলায় ১০০ কিলোমিটার, পরশুরামে ২০ কিলোমিটার। এর বাইরে ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও কিছু সড়কের ক্ষতি হয়েছে। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মুহুরী, কুহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৪১টি স্থান ভেঙেছে। এর মধ্যে পরশুরামে ২২টি ও ফুলগাজীতে ১৯টি স্থান রয়েছে। জানতে চাইলে বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙনস্থল গভীর হওয়ায় সেগুলোতে এখনও নদীর পানি প্রবেশ করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বাঁধের ভাঙন অংশের মেরামতকাজ শুরু হবে। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, বন্যাপরবর্তী পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন করে ৩০ লাখ টাকা ও ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত ১১ হাজার ১৭৪ জনকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছে। এবার বন্যাকবলিতদের জন্য ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।