২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ১৪৩ মিলিমিটার , নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সংকেত
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল ‘নিম্নচাপে’ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এজন্য দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) এক বুলেটিনে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। দেশের দুই বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদপ্তর। এ ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের ১৫ অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টি ও ঝড়ের আভাস দেয়া হয়েছে। এ সময় এসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে।
অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ পরে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওপর সক্রিয় এবং অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে ভারী বৃষ্টি এবং এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলে তাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে এটি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আজ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, সঙ্গে থাকতে পারে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি। সেজন্য, এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এলাকায় সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ভারতের ঝাড়খন্ড ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সে কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আবারও মুষলধারে বৃষ্টি, উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে নোয়াখালীতে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ
বেগমগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নোয়াখালীতে টানা দুইদিন থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি এবং ফেনী নদীর মুহুরী শাখা দিয়ে নোয়াখালীতে পানি প্রবেশ করায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। এতে নতুন করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ অধিকাংশ নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে চরম ভোগান্তি ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন জেলায় পানিবন্দী প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার ভোর থেকে আজ রাত পর্যন্ত থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও রাতে তা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে রূপ নেয়। এতে আগের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে পানি আরও বেড়েছে। এ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এখন জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অনেকেই গত বছরের মতো আবারও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন।
জেলার পৌরসভার কিছু উঁচু এলাকা থেকে পানি কিছুটা নামলেও বৃষ্টির ফলে ফের সেসব এলাকায় পানি জমেছে। গ্রামাঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে পানি বেড়েছে। জেলার সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ অধিকাংশ সড়ক এখনও কয়েক ফুট পানির নিচে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর, কাদিরপুর, শরীফপুর, একলাসপুর, খানপুর, বেগমগঞ্জ ও লক্ষীনারায়ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে আছে।
জানা গেছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হওয়ায় পানি নামছে না, ফলে জলাবদ্ধতা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জেলা শহর মাইজদী এবং আশপাশের উপজেলা শহরগুলোতেও বিভিন্ন অফিস-আদালতের সামনে পানি ও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় সেবা নিতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার ৯৫০টি পরিবারের প্রায় ৯০ হাজার ৪০৩ জন মানুষ এখনো পানিবন্দী। এছাড়া ৫৮টি ঘর আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
গত রোববার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ২৩ জন মানুষ।
সরকারি ও সেনাবাহিনীর যৌথ সহযোগিতায় ত্রাণ কার্যক্রম এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, এখনও অধিকাংশ এলাকায় বাড়ির আঙিনা ও অলিগলিতে পানি জমে আছে, ঘর থেকে বেরোলেই পানি। অনেক খালের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় এবং শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে।
দূষিত পানিতে চর্মরোগও বাড়ছে।
গত রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার মুন্সিরতালুক থেকে রববাজার পর্যন্ত একটানা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ বাঁধ কেটে ফেলা হয়েছে। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহনেওয়াজ তানভীর এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালিত হয়।
তিনি জানান, কালাদরপ ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ব্যক্তি স্বার্থে নির্মিত ৫০টির বেশি অবৈধ বাঁধ এলাকার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছিল। এতে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়ছিল। জনগণের স্বার্থে এসব বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় গত রোববার বিকেল থেকে শুরু হয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খাল পরিষ্কারের অভিযান।
সেনাবাহিনীর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, লে. কর্নেল রিফাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক, ইউএনও আখিনূর জাহান নীলা, চৌমুহনী পৌর প্রশাসক আরিফুর রহমান এবং ব্যবসায়ী নেতা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “চৌমুহনীর খালটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু ফান্ড থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর কাজ আরও জোরদার হবে। আমরা সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চাই।”
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. আজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ভোর থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ আরও জানান, চলমান জলাবদ্ধতায় জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৯০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এখনো ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক গৃহপালিত পশুসহ ১ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
প্রাথমিক তথ্যমতে, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, সাড়ে ৭ হাজার একর ফসলি জমি, প্রায় ৯ হাজার গবাদিপশু এবং ৪০ হাজার মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ১৪৩ মিলিমিটার , নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সংকেত
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল ‘নিম্নচাপে’ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এজন্য দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) এক বুলেটিনে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। দেশের দুই বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদপ্তর। এ ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের ১৫ অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টি ও ঝড়ের আভাস দেয়া হয়েছে। এ সময় এসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে।
অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ পরে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওপর সক্রিয় এবং অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে ভারী বৃষ্টি এবং এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলে তাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে এটি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আজ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, সঙ্গে থাকতে পারে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি। সেজন্য, এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এলাকায় সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ভারতের ঝাড়খন্ড ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সে কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আবারও মুষলধারে বৃষ্টি, উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে নোয়াখালীতে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ
বেগমগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নোয়াখালীতে টানা দুইদিন থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি এবং ফেনী নদীর মুহুরী শাখা দিয়ে নোয়াখালীতে পানি প্রবেশ করায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। এতে নতুন করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ অধিকাংশ নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে চরম ভোগান্তি ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন জেলায় পানিবন্দী প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার ভোর থেকে আজ রাত পর্যন্ত থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও রাতে তা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে রূপ নেয়। এতে আগের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে পানি আরও বেড়েছে। এ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এখন জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অনেকেই গত বছরের মতো আবারও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন।
জেলার পৌরসভার কিছু উঁচু এলাকা থেকে পানি কিছুটা নামলেও বৃষ্টির ফলে ফের সেসব এলাকায় পানি জমেছে। গ্রামাঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে পানি বেড়েছে। জেলার সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ অধিকাংশ সড়ক এখনও কয়েক ফুট পানির নিচে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর, কাদিরপুর, শরীফপুর, একলাসপুর, খানপুর, বেগমগঞ্জ ও লক্ষীনারায়ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে আছে।
জানা গেছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হওয়ায় পানি নামছে না, ফলে জলাবদ্ধতা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জেলা শহর মাইজদী এবং আশপাশের উপজেলা শহরগুলোতেও বিভিন্ন অফিস-আদালতের সামনে পানি ও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় সেবা নিতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার ৯৫০টি পরিবারের প্রায় ৯০ হাজার ৪০৩ জন মানুষ এখনো পানিবন্দী। এছাড়া ৫৮টি ঘর আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
গত রোববার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ২৩ জন মানুষ।
সরকারি ও সেনাবাহিনীর যৌথ সহযোগিতায় ত্রাণ কার্যক্রম এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, এখনও অধিকাংশ এলাকায় বাড়ির আঙিনা ও অলিগলিতে পানি জমে আছে, ঘর থেকে বেরোলেই পানি। অনেক খালের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় এবং শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে।
দূষিত পানিতে চর্মরোগও বাড়ছে।
গত রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার মুন্সিরতালুক থেকে রববাজার পর্যন্ত একটানা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ বাঁধ কেটে ফেলা হয়েছে। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহনেওয়াজ তানভীর এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালিত হয়।
তিনি জানান, কালাদরপ ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ব্যক্তি স্বার্থে নির্মিত ৫০টির বেশি অবৈধ বাঁধ এলাকার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছিল। এতে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়ছিল। জনগণের স্বার্থে এসব বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় গত রোববার বিকেল থেকে শুরু হয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খাল পরিষ্কারের অভিযান।
সেনাবাহিনীর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, লে. কর্নেল রিফাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক, ইউএনও আখিনূর জাহান নীলা, চৌমুহনী পৌর প্রশাসক আরিফুর রহমান এবং ব্যবসায়ী নেতা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “চৌমুহনীর খালটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু ফান্ড থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর কাজ আরও জোরদার হবে। আমরা সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চাই।”
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. আজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ভোর থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ আরও জানান, চলমান জলাবদ্ধতায় জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৯০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এখনো ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক গৃহপালিত পশুসহ ১ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
প্রাথমিক তথ্যমতে, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, সাড়ে ৭ হাজার একর ফসলি জমি, প্রায় ৯ হাজার গবাদিপশু এবং ৪০ হাজার মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।