বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গনে কিল, ঘুষি, লাথি মেরেছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া আদালত কক্ষে যাওয়া-আসার পথে তার উপর ডিমও নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। গুলশান থানার অর্থপাচার মামলায় খায়রুল বাশারকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ছানাউল্যাহ।
এদিন দুপুর একটার দিকে খায়রুল বাশারকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এর আগেই তার কাছে ‘প্রতারিত’ শতাধিক শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবকরা আদালত প্রাঙ্গনে এসে হাজির হন। বাশারের বিচারের দাবিতে সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
ভুক্তভোগীদের চাপে বাশারকে আদালতে তুলতে বেগ পেতে হয়। পরিস্থিতি দেখে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে বাড়নো হয় নিরাপত্তা। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বাশারকে হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলার জন্য বের করা হয়। এসময় তার হাতে হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ছিল।
সিএমএম আদালতের গেইটে পৌঁছানোমাত্র তার উপর ডিম ছোড়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে বাশারকে অত্যন্ত দ্রত সিএমএম আদালতের তৃতীয় তলায়, ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহর আদালতে নেয়া হয়। আদালত কক্ষে নেয়ার সময় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুক্তভোগীরাও বাশারকে কিল, ঘুষি মারতে ছাড়েননি, কেউ কেউ লাথিও মেরে বসেন তাকে। সে সময় অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করা হয়।
কিছু ভুক্তভোগী আগে থেকেই আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বাশারকে নেয়া হয়ে কিছু ‘উচ্ছৃঙ্খলাও দেখা যায়’। আদালতের হস্তক্ষেপে কিছু সময় পরে পরিবেশ শান্ত হয়। পরে রিমান্ডের শুনানি শুরু হয়। বাদীপক্ষে আইনবীজী জামাল উদ্দিন খন্দকার বাশারের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন,‘বাশার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপ দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ক্যামব্রিয়ানের অনেক শিক্ষার্থীর জীবন শেষ। ফ্যাসিস্ট সরকারের মত কাজ করেছে। বর্তমান যুগের নমরুদ সে। ‘প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ৫ কোটি টাকা খরচ করে বাশারবাহিনী গঠন করেছে। যারা টাকার জন্য যেত তাদের ওপর নির্যাতন চালাত।’
বাশারের কারণে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ‘ শেষ হয়ে গেছে’ মন্তব্য করে আইনবীজী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিভাবকরা পথে পথে ঘুরছে দেউলিয়া হয়ে। তার কারণে বাবা ছেলেকে হারিয়ে, আবার ছেলে বাবাকে হারিয়েছে। এখন সময় এসেছে, তাকে ধরতে পেরেছি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার ১০ দিন না, সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি। যেন এটা নজির হয়ে থাকে।’
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমনও রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন,‘এ আসামি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করেছে। জেনেছি চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মত কুলাঙ্গারের সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
এরপর বিচারক খায়রুল বাশারকে কিছু বিষয়ে জানতে চান। বিচারক তার প্রশ্নে বলেন,‘এই কাজগুলো (শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে টাকা আত্মসাৎ) কেন করলেন?’ তখন তিনি
নিশ্চুপ ছিলেন। ফের বিচারক বলেন, ‘কোন কারণে তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন বা অপরাগ হন, তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি?’
তখনও বাশারকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। এরপর বিচারক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন? তখন বলেন, আনুমানিক ৭০ টা হয়েছে। যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারাজীবন কারাগারে কেটে যাবে। টাকাগুলো যে আত্মসাৎ করলেন আপনার মানবিক সত্ত্বা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন।’
উত্তরে বাশার জানিয়েছেন তিনি দুইবার বিয়ে করেছেন। আরেক প্রশ্নে বিচারক বলেন, ‘আপনার সন্তান কয়জন?’ তখন তিনি জানিয়েছেন ছয় সন্তান তার। বিচারক বলেন, ‘টাকা নিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। একবারো কী আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি?’ পরে তার আইনজীবী কাজী আনিসুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করতে চান।
তখন আদালতে উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী আইনজিবী আনিসুরের উদ্দেশে বলেছেন, তিনি একজন ‘নির্লজ্জ আইনজীবী’। পরে এই আইনজীবী আর শুনানি করেননি। এর পর আদালত বাশারের ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বল গুলশান থানার প্রসিকিউশনের এসআই মোক্তার হোসেন জানিয়েছেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পর আদালত ভবন থেকে নিচে নামানোর সময় সেখানেই একজন বাশারকে লাথি মারেন। নিচে নিয়ে আসার পর ফের তার উপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। পরে বাশারকে দ্রুত হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাশারকে মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বাশার, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে তারা ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা লোপাট করেছেন। গত ৪ মে সিআইডির এসআই রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। খায়রুল বাশার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গনে কিল, ঘুষি, লাথি মেরেছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া আদালত কক্ষে যাওয়া-আসার পথে তার উপর ডিমও নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। গুলশান থানার অর্থপাচার মামলায় খায়রুল বাশারকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার,(১৫ জুলাই ২০২৫) এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ছানাউল্যাহ।
এদিন দুপুর একটার দিকে খায়রুল বাশারকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এর আগেই তার কাছে ‘প্রতারিত’ শতাধিক শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবকরা আদালত প্রাঙ্গনে এসে হাজির হন। বাশারের বিচারের দাবিতে সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
ভুক্তভোগীদের চাপে বাশারকে আদালতে তুলতে বেগ পেতে হয়। পরিস্থিতি দেখে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে বাড়নো হয় নিরাপত্তা। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বাশারকে হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলার জন্য বের করা হয়। এসময় তার হাতে হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ছিল।
সিএমএম আদালতের গেইটে পৌঁছানোমাত্র তার উপর ডিম ছোড়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে বাশারকে অত্যন্ত দ্রত সিএমএম আদালতের তৃতীয় তলায়, ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহর আদালতে নেয়া হয়। আদালত কক্ষে নেয়ার সময় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুক্তভোগীরাও বাশারকে কিল, ঘুষি মারতে ছাড়েননি, কেউ কেউ লাথিও মেরে বসেন তাকে। সে সময় অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করা হয়।
কিছু ভুক্তভোগী আগে থেকেই আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বাশারকে নেয়া হয়ে কিছু ‘উচ্ছৃঙ্খলাও দেখা যায়’। আদালতের হস্তক্ষেপে কিছু সময় পরে পরিবেশ শান্ত হয়। পরে রিমান্ডের শুনানি শুরু হয়। বাদীপক্ষে আইনবীজী জামাল উদ্দিন খন্দকার বাশারের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন,‘বাশার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপ দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ক্যামব্রিয়ানের অনেক শিক্ষার্থীর জীবন শেষ। ফ্যাসিস্ট সরকারের মত কাজ করেছে। বর্তমান যুগের নমরুদ সে। ‘প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ৫ কোটি টাকা খরচ করে বাশারবাহিনী গঠন করেছে। যারা টাকার জন্য যেত তাদের ওপর নির্যাতন চালাত।’
বাশারের কারণে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ‘ শেষ হয়ে গেছে’ মন্তব্য করে আইনবীজী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিভাবকরা পথে পথে ঘুরছে দেউলিয়া হয়ে। তার কারণে বাবা ছেলেকে হারিয়ে, আবার ছেলে বাবাকে হারিয়েছে। এখন সময় এসেছে, তাকে ধরতে পেরেছি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার ১০ দিন না, সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি। যেন এটা নজির হয়ে থাকে।’
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমনও রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন,‘এ আসামি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করেছে। জেনেছি চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মত কুলাঙ্গারের সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
এরপর বিচারক খায়রুল বাশারকে কিছু বিষয়ে জানতে চান। বিচারক তার প্রশ্নে বলেন,‘এই কাজগুলো (শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে টাকা আত্মসাৎ) কেন করলেন?’ তখন তিনি
নিশ্চুপ ছিলেন। ফের বিচারক বলেন, ‘কোন কারণে তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন বা অপরাগ হন, তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি?’
তখনও বাশারকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। এরপর বিচারক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন? তখন বলেন, আনুমানিক ৭০ টা হয়েছে। যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারাজীবন কারাগারে কেটে যাবে। টাকাগুলো যে আত্মসাৎ করলেন আপনার মানবিক সত্ত্বা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন।’
উত্তরে বাশার জানিয়েছেন তিনি দুইবার বিয়ে করেছেন। আরেক প্রশ্নে বিচারক বলেন, ‘আপনার সন্তান কয়জন?’ তখন তিনি জানিয়েছেন ছয় সন্তান তার। বিচারক বলেন, ‘টাকা নিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। একবারো কী আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি?’ পরে তার আইনজীবী কাজী আনিসুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করতে চান।
তখন আদালতে উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী আইনজিবী আনিসুরের উদ্দেশে বলেছেন, তিনি একজন ‘নির্লজ্জ আইনজীবী’। পরে এই আইনজীবী আর শুনানি করেননি। এর পর আদালত বাশারের ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বল গুলশান থানার প্রসিকিউশনের এসআই মোক্তার হোসেন জানিয়েছেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পর আদালত ভবন থেকে নিচে নামানোর সময় সেখানেই একজন বাশারকে লাথি মারেন। নিচে নিয়ে আসার পর ফের তার উপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। পরে বাশারকে দ্রুত হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাশারকে মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বাশার, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে তারা ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা লোপাট করেছেন। গত ৪ মে সিআইডির এসআই রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। খায়রুল বাশার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী।