রাজধানীতে আবু সাঈদ স্মরণে সমাবেশ জেএসডির -সংবাদ
তার আত্মত্যাগ আমার মতো একজন মধ্যবয়সী মানুষকেও আন্দোলনে সার্বক্ষণিক থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছে এমন মন্তব্য করেছেন আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই সম্পন্ন হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন বিচার করতে চাই যা সারা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
বুধবার(১৬-০৭-২০২৫) রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘১৬ জুলাই আমি আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও দেখিনি, তবে শুনছিলাম চারদিকে গুলি হচ্ছে। আমি প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। তখন অনেকে আমাকে বাসায় না থাকতে বলেছিল। আমি রাতে এক সহকর্মীর বাসায় আশ্রয় নিই। এরপর আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ১৭ জুলাই আমি ভিডিওটি দেখি। আমি নিজে খুব সাহসী নই, কিন্তু তার সেই দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে ছেলে গুলির সামনে দাঁড়াতে পারে, তার সাহস আমাদের সবাইকে নাড়া দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আবু সাঈদের ফেইসবুক স্ট্যাটাসগুলো দেখেছি। মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে, ১৩ জুলাই তিনি লিখেছিলেন “বেঁচে থাকার চেয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের মতো মরে যাওয়া অনেক সম্মানের।’ আরেকটি স্ট্যাটাসে বলেছিলেন ‘অত্যাচারীদের সঙ্গে একশ’ বছর বেঁচে থাকার চেয়ে, এখনই মরে যাওয়া অনেক আনন্দের।’ তার এই কথাগুলো দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। তার আত্মত্যাগ আমাদের মতো ভীতু মধ্যবয়সীদেরও আন্দোলনে সক্রিয় করেছে।”
আসিফ নজরুল বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদের হত্যার বিচার শুরু হয়েছে। যেসব পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করে হত্যা করেছে কনস্টেবল সুজন চন্দ্র ও এএসআই আমির আলী- তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিচার দেরি হওয়ার কারণে আপনারা আমাদের সমালোচনা করেন, সেটাই কাম্য। কারণ এই সমালোচনার মধ্য দিয়ে আমরা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার শুরু করার সময় আদালত ভবন ছিল না। প্রকৌশলীরা বলেছিলেন, ভবন তৈরি করতে তিন মাস লাগবে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছি, বিচারক নিয়োগ দিয়েছি এবং বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে যা যা প্রয়োজন, সব করছি।’
স্মরণ সভায় বন ও পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমি বলব, আবু সাঈদ মৃত্যুকে জয় করেছেন বলেই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও রেজওয়ানা হাসান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ আবু সাঈদ গেইটের সামনে পৌঁছান। এখানেই ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। দুই উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ আবু সাঈদের তোরণ ও জাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।
এদিকে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহীদ গেইটের সামনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের প্রধান জোনায়েদ সাকি।
অপরদিকে, সকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও দোয়া-মাহফিলসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক শওকত আলীর নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার আবু সায়েম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও ছোট ভাই আহম্মেদ হোসেনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শওকত আলীর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম এ ফয়েজ উদ্দিন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরসহ অন্য নেতারা। সবাই বলেন, আবু সাঈদের আত্মত্যাগই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পথ তৈরি করেছে।
স্মরণ সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
রাজধানীতে আবু সাঈদ স্মরণে সমাবেশ জেএসডির -সংবাদ
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
তার আত্মত্যাগ আমার মতো একজন মধ্যবয়সী মানুষকেও আন্দোলনে সার্বক্ষণিক থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছে এমন মন্তব্য করেছেন আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই সম্পন্ন হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন বিচার করতে চাই যা সারা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
বুধবার(১৬-০৭-২০২৫) রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘১৬ জুলাই আমি আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও দেখিনি, তবে শুনছিলাম চারদিকে গুলি হচ্ছে। আমি প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। তখন অনেকে আমাকে বাসায় না থাকতে বলেছিল। আমি রাতে এক সহকর্মীর বাসায় আশ্রয় নিই। এরপর আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ১৭ জুলাই আমি ভিডিওটি দেখি। আমি নিজে খুব সাহসী নই, কিন্তু তার সেই দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে ছেলে গুলির সামনে দাঁড়াতে পারে, তার সাহস আমাদের সবাইকে নাড়া দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আবু সাঈদের ফেইসবুক স্ট্যাটাসগুলো দেখেছি। মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে, ১৩ জুলাই তিনি লিখেছিলেন “বেঁচে থাকার চেয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের মতো মরে যাওয়া অনেক সম্মানের।’ আরেকটি স্ট্যাটাসে বলেছিলেন ‘অত্যাচারীদের সঙ্গে একশ’ বছর বেঁচে থাকার চেয়ে, এখনই মরে যাওয়া অনেক আনন্দের।’ তার এই কথাগুলো দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। তার আত্মত্যাগ আমাদের মতো ভীতু মধ্যবয়সীদেরও আন্দোলনে সক্রিয় করেছে।”
আসিফ নজরুল বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদের হত্যার বিচার শুরু হয়েছে। যেসব পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করে হত্যা করেছে কনস্টেবল সুজন চন্দ্র ও এএসআই আমির আলী- তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিচার দেরি হওয়ার কারণে আপনারা আমাদের সমালোচনা করেন, সেটাই কাম্য। কারণ এই সমালোচনার মধ্য দিয়ে আমরা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার শুরু করার সময় আদালত ভবন ছিল না। প্রকৌশলীরা বলেছিলেন, ভবন তৈরি করতে তিন মাস লাগবে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছি, বিচারক নিয়োগ দিয়েছি এবং বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে যা যা প্রয়োজন, সব করছি।’
স্মরণ সভায় বন ও পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমি বলব, আবু সাঈদ মৃত্যুকে জয় করেছেন বলেই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও রেজওয়ানা হাসান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ আবু সাঈদ গেইটের সামনে পৌঁছান। এখানেই ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। দুই উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ আবু সাঈদের তোরণ ও জাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।
এদিকে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহীদ গেইটের সামনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের প্রধান জোনায়েদ সাকি।
অপরদিকে, সকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও দোয়া-মাহফিলসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক শওকত আলীর নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার আবু সায়েম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও ছোট ভাই আহম্মেদ হোসেনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শওকত আলীর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম এ ফয়েজ উদ্দিন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরসহ অন্য নেতারা। সবাই বলেন, আবু সাঈদের আত্মত্যাগই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পথ তৈরি করেছে।
স্মরণ সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।