ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের আলোচিত এই শতবর্ষী প্রাচীন ভবনটি ভাঙা হচ্ছে -সংবাদ
ময়মনসিংহে একটি পুরনো ভবন ভেঙে শিশু অ্যাকাডেমির নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে কয়েকদিন ধরে দেশি-বিদেশি কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রচারিত সংবাদটি পুরোটাই ইতিহাস বিকৃতি এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিতর্কিত যে বাড়িটিকে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের কোনো সম্পর্কই নেই।
ময়মনসিংহের নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের আলোচিত এই শতবর্ষী প্রাচীন ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের বংশধরদের কারও নয় বলে মতামত দিয়েছেন স্থানীয় একাধিক লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। তারা বলেন, সত্যজিৎ রায়ের বংশধরদের একটি ভবন ছিল এ সড়কেরই মাঝামাঝি স্থানে। সেই জায়গা বিক্রি করে দেয়ার পর সেখানে বেশ অনেক বছর আগেই বহুতল ভবন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে আলোচিত ভবনটি শশীলজের পেছনে ও জমিদার শশীকান্তের সময়ের। তথ্য সূত্রে জানা যায়, হরিকিশোর রায় রোডের যে ভবনটি বর্তমানে ভাঙা হচ্ছে, সেটি নির্মাণ করেছিলেন শশীকান্ত মহারাজ, তার নিজস্ব বাংলো ‘শশীলজ’-এর পাশেই। আর এই ভবনটি ছিল তার কর্মচারীদের জন্য গড়া একটি আবাসিক ভবন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত সমাজসেবক ও দানবীর রণদা প্রসাদ রায় ইংরেজদের কাছ থেকে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (স্থানীয়ভাবে যাকে ‘বাত্তির কল’ বলা হয়) এর জন্যে কিনে নিজের নিযুক্ত ম্যানেজারের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। এরপর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে বাড়িটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং একে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে শিশু অ্যাকাডেমির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এদিকে পুরো বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার(১৬-০৭-২০২৫) বিকেলে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন কর্মকর্তারা। সেই বৈঠকেরও উপস্থিত লোকজন বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের নয় বলে মতামত দেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, তারা কাগজপত্র দেখে জমির মালিক হিসেবে কোথাও রায় পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা পাননি। তিনি বলেন, একটি মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন বলে জানান।
এদিকে এ ঘটনা প্রকাশের মূল ব্যক্তি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ময়মনসিংহের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, তিনি নিজ ধারণা থেকে বাড়িটি রায় পরিবারের হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে এই বিভ্রান্তিকর প্রচারে ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ময়মনসিংহ সিটি নামে একটি আইডিসহ বিভিন্ন আইডি থেকে এই বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলে অপপ্রচার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হরিকিশোর রায় রোডের আলোচিত এ পুরনো বাড়িটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ২০১৪ সালে শিশু অ্যাকাডেমির কার্যালয়টি এখান থেকে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে পুরনো স্থানে নতুন শিশু অ্যাকাডেমি ভবন নির্মাণের আলোচনা ও পরিকল্পনা সরকারের পক্ষ থেকে চলছিল। সম্প্রতি এ ব্যাপারে অর্থপ্রাপ্তির পর এখানে প্রায় ৭১ লাখ টাকায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে এই বিভ্রান্তিকর ঘটনা ঘটে।
এদিকে বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নগরীর কয়েকজন লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। সভাতে শিশু অ্যাকাডেমির পরিচালক শিউলি রহমান তিন্নী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভাতে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বিমল কান্তি, কবি ও লেখক ফরিদ আহম্মেদ দুলাল, গবেষক স্বপন ধরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাতে জেলা প্রশাসক প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবিনা ইয়াসমীনের কাছে জানতে চান এ ভবনটিকে রায় পরিবারের কীভাবে বলা হলো। সভাতে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, তিনি ধারণা থেকে বলেছেন। যেহেতু সড়কটির নাম হরিকিশোর রায় রোড।
সভায় উপস্থিত প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষক স্বপন ধর বলেন, বর্তমানের আলোচিত ভবনটিকে কোনোভাবেই সত্যজিৎ রায়ের ভবন বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের রণদা প্রসাদ সাহার ম্যানেজার এখানে থাকতেন। অনেকেই না জেনে এ বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপূরুষদের বাড়ি বলে বলছেন। তিনি বলেন, সব বিভ্রান্তি দূর হোক। এখানে প্রস্তাবিত শিশু অ্যাকাডেমির ভবন দ্রুত নির্মাণ করা হোক- এটাই আমরা চাই।
ময়মনসিংহের একাধিক প্রবীণ নাগরিক বলেন, শশীলজের পেছনের এ বাড়িটি জমিদারের কর্মচারীদের জন্য তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি এখানে শিশু অ্যাকাডেমির ভবন তৈরির জন্য যখন ভাঙা হচ্ছিল, তখন কেউ একজন এটিকে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। তখনই এটা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের আলোচিত এই শতবর্ষী প্রাচীন ভবনটি ভাঙা হচ্ছে -সংবাদ
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
ময়মনসিংহে একটি পুরনো ভবন ভেঙে শিশু অ্যাকাডেমির নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে কয়েকদিন ধরে দেশি-বিদেশি কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রচারিত সংবাদটি পুরোটাই ইতিহাস বিকৃতি এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিতর্কিত যে বাড়িটিকে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের কোনো সম্পর্কই নেই।
ময়মনসিংহের নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের আলোচিত এই শতবর্ষী প্রাচীন ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের বংশধরদের কারও নয় বলে মতামত দিয়েছেন স্থানীয় একাধিক লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। তারা বলেন, সত্যজিৎ রায়ের বংশধরদের একটি ভবন ছিল এ সড়কেরই মাঝামাঝি স্থানে। সেই জায়গা বিক্রি করে দেয়ার পর সেখানে বেশ অনেক বছর আগেই বহুতল ভবন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে আলোচিত ভবনটি শশীলজের পেছনে ও জমিদার শশীকান্তের সময়ের। তথ্য সূত্রে জানা যায়, হরিকিশোর রায় রোডের যে ভবনটি বর্তমানে ভাঙা হচ্ছে, সেটি নির্মাণ করেছিলেন শশীকান্ত মহারাজ, তার নিজস্ব বাংলো ‘শশীলজ’-এর পাশেই। আর এই ভবনটি ছিল তার কর্মচারীদের জন্য গড়া একটি আবাসিক ভবন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত সমাজসেবক ও দানবীর রণদা প্রসাদ রায় ইংরেজদের কাছ থেকে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (স্থানীয়ভাবে যাকে ‘বাত্তির কল’ বলা হয়) এর জন্যে কিনে নিজের নিযুক্ত ম্যানেজারের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। এরপর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে বাড়িটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং একে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে শিশু অ্যাকাডেমির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এদিকে পুরো বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার(১৬-০৭-২০২৫) বিকেলে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন কর্মকর্তারা। সেই বৈঠকেরও উপস্থিত লোকজন বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের নয় বলে মতামত দেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, তারা কাগজপত্র দেখে জমির মালিক হিসেবে কোথাও রায় পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা পাননি। তিনি বলেন, একটি মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন বলে জানান।
এদিকে এ ঘটনা প্রকাশের মূল ব্যক্তি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ময়মনসিংহের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, তিনি নিজ ধারণা থেকে বাড়িটি রায় পরিবারের হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে এই বিভ্রান্তিকর প্রচারে ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ময়মনসিংহ সিটি নামে একটি আইডিসহ বিভিন্ন আইডি থেকে এই বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলে অপপ্রচার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হরিকিশোর রায় রোডের আলোচিত এ পুরনো বাড়িটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ২০১৪ সালে শিশু অ্যাকাডেমির কার্যালয়টি এখান থেকে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে পুরনো স্থানে নতুন শিশু অ্যাকাডেমি ভবন নির্মাণের আলোচনা ও পরিকল্পনা সরকারের পক্ষ থেকে চলছিল। সম্প্রতি এ ব্যাপারে অর্থপ্রাপ্তির পর এখানে প্রায় ৭১ লাখ টাকায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে এই বিভ্রান্তিকর ঘটনা ঘটে।
এদিকে বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নগরীর কয়েকজন লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। সভাতে শিশু অ্যাকাডেমির পরিচালক শিউলি রহমান তিন্নী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভাতে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বিমল কান্তি, কবি ও লেখক ফরিদ আহম্মেদ দুলাল, গবেষক স্বপন ধরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাতে জেলা প্রশাসক প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবিনা ইয়াসমীনের কাছে জানতে চান এ ভবনটিকে রায় পরিবারের কীভাবে বলা হলো। সভাতে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, তিনি ধারণা থেকে বলেছেন। যেহেতু সড়কটির নাম হরিকিশোর রায় রোড।
সভায় উপস্থিত প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষক স্বপন ধর বলেন, বর্তমানের আলোচিত ভবনটিকে কোনোভাবেই সত্যজিৎ রায়ের ভবন বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের রণদা প্রসাদ সাহার ম্যানেজার এখানে থাকতেন। অনেকেই না জেনে এ বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপূরুষদের বাড়ি বলে বলছেন। তিনি বলেন, সব বিভ্রান্তি দূর হোক। এখানে প্রস্তাবিত শিশু অ্যাকাডেমির ভবন দ্রুত নির্মাণ করা হোক- এটাই আমরা চাই।
ময়মনসিংহের একাধিক প্রবীণ নাগরিক বলেন, শশীলজের পেছনের এ বাড়িটি জমিদারের কর্মচারীদের জন্য তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি এখানে শিশু অ্যাকাডেমির ভবন তৈরির জন্য যখন ভাঙা হচ্ছিল, তখন কেউ একজন এটিকে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। তখনই এটা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।