বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রির কারণে প্রতি বছরই লোকসান দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের লোকসান হতে পারে ৪৪,১৬৭.০৪ কোটি টাকা।
সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে টাকা চায় বিদ্যুৎ বিভাগ
আইপিপি ও বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে জরুরিভিত্তিতে ৩ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা দিতে অর্থ বিভাগকে চিঠি
লোকসান নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত পিডিবিকে ২১,৩০১.৭৭ কোটি টাকা দিয়েছে। এরপরও আইপিপিগুলোর কাছে এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানিবাবদ ২২,৮৬৫.২৭ কোটি টাকা ঋণে আছে পিডিবি।
শুধুমাত্র ২০২৫ সালের মে মাসে পিডিবি ৩,৬৬৮.১০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এর মধ্যে ৩,৫৬৮.৮৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আইপিপি এবং ছোট আইপিপি (ঝওচচ) থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের কারণে। এছাড়া, ৪.৪৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে এবং ৯৪.৭৮ কোটি টাকা আমদানি করা বিদ্যুতের বিল দিয়ে।
মে মাসের লোকসান কাটিয়ে উঠতে, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগকে অতিরিক্ত ৩,২৮৭.৮৯ কোটি টাকা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। গত ৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে এক চিঠিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জোর দিয়ে বলেছে যে, দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আইপিপিগুলিকে (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) অর্থ (বিল) প্রদান এবং আমদানিকৃত বিদ্যুতের জন্য অর্থ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসান হয়েছে ৪০ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সে তুলানায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লোকসান বাড়বে ৩,৮৯৪.০৪ কোটি টাকা।
লোকসানের প্রধান কারণ, আইপিপিগুলোর (স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী) কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় করে গ্রাহাকদের কাছে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থা। এছাড়া, ভারত থেকে যে মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হয়, তাও ভর্তুকিযুক্ত (কম দামে) মূল্যে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করতে হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং সিস্টেম লস কমানো আগামী বছরগুলোতে সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। সিস্টেম লস কমে ১০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। তবে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমলেও ট্রান্সমিশন লস ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যে সিস্টেম লস ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে, এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া, চাহিদা অনুয়ায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় অনেক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উচ্চমূল্যের জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ভরশীল হচ্ছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস সংকটে ব্যয়বহুল এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) মিশ্রণে চলা সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচও তুলনামূলক বেড়েছে। পুরাতন অনেক কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া না হলে উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৩১ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। বাল্ক (পাইকারি) বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত আছে ৭ টাকা ৪ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিটে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ২৭ পয়সা । গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ছিল ১১ টাকা ৩৫ পয়সা, বাল্ক বিক্রয় মূল্য ছিল ৬ টাকা ৯২ পয়সা। গত অর্থবছরে ইউনিট প্রতি লোকসান ছিল ৪ টাকা ৪৩ পয়সা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৯৬ পয়সা; লোকসান বেড়েছে ৮৪ পয়সা।
বিদ্যুৎ বিভাগের ওই সূত্র বলছে, এই হিসাব বিদ্যুতের মোট (সরকারি, বেসরকারি, যৌথ) উৎপাদনের ভিত্তিতে করা হয়েছে। সরকারি উৎপাদন বাদ দিলে প্রতি ইউনিটে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।
আগামীতে বিদ্যুৎ বিক্রিতে লোকসান কমানো এবং ভর্তুকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার লক্ষ্যে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রির কারণে প্রতি বছরই লোকসান দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের লোকসান হতে পারে ৪৪,১৬৭.০৪ কোটি টাকা।
সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে টাকা চায় বিদ্যুৎ বিভাগ
আইপিপি ও বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে জরুরিভিত্তিতে ৩ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা দিতে অর্থ বিভাগকে চিঠি
লোকসান নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত পিডিবিকে ২১,৩০১.৭৭ কোটি টাকা দিয়েছে। এরপরও আইপিপিগুলোর কাছে এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানিবাবদ ২২,৮৬৫.২৭ কোটি টাকা ঋণে আছে পিডিবি।
শুধুমাত্র ২০২৫ সালের মে মাসে পিডিবি ৩,৬৬৮.১০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এর মধ্যে ৩,৫৬৮.৮৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আইপিপি এবং ছোট আইপিপি (ঝওচচ) থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের কারণে। এছাড়া, ৪.৪৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে এবং ৯৪.৭৮ কোটি টাকা আমদানি করা বিদ্যুতের বিল দিয়ে।
মে মাসের লোকসান কাটিয়ে উঠতে, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগকে অতিরিক্ত ৩,২৮৭.৮৯ কোটি টাকা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। গত ৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে এক চিঠিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জোর দিয়ে বলেছে যে, দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আইপিপিগুলিকে (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) অর্থ (বিল) প্রদান এবং আমদানিকৃত বিদ্যুতের জন্য অর্থ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসান হয়েছে ৪০ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সে তুলানায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লোকসান বাড়বে ৩,৮৯৪.০৪ কোটি টাকা।
লোকসানের প্রধান কারণ, আইপিপিগুলোর (স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী) কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় করে গ্রাহাকদের কাছে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থা। এছাড়া, ভারত থেকে যে মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হয়, তাও ভর্তুকিযুক্ত (কম দামে) মূল্যে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করতে হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং সিস্টেম লস কমানো আগামী বছরগুলোতে সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। সিস্টেম লস কমে ১০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। তবে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমলেও ট্রান্সমিশন লস ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যে সিস্টেম লস ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে, এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া, চাহিদা অনুয়ায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় অনেক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উচ্চমূল্যের জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ভরশীল হচ্ছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস সংকটে ব্যয়বহুল এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) মিশ্রণে চলা সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচও তুলনামূলক বেড়েছে। পুরাতন অনেক কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া না হলে উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৩১ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। বাল্ক (পাইকারি) বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত আছে ৭ টাকা ৪ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিটে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ২৭ পয়সা । গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ছিল ১১ টাকা ৩৫ পয়সা, বাল্ক বিক্রয় মূল্য ছিল ৬ টাকা ৯২ পয়সা। গত অর্থবছরে ইউনিট প্রতি লোকসান ছিল ৪ টাকা ৪৩ পয়সা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৯৬ পয়সা; লোকসান বেড়েছে ৮৪ পয়সা।
বিদ্যুৎ বিভাগের ওই সূত্র বলছে, এই হিসাব বিদ্যুতের মোট (সরকারি, বেসরকারি, যৌথ) উৎপাদনের ভিত্তিতে করা হয়েছে। সরকারি উৎপাদন বাদ দিলে প্রতি ইউনিটে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।
আগামীতে বিদ্যুৎ বিক্রিতে লোকসান কমানো এবং ভর্তুকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার লক্ষ্যে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।