গোপালগঞ্জ শহরে মোতায়েন সেনাবাহিনীর সদস্যরা, বৃহস্পতিবার কারফিউ চলাকালে -সংবাদ
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে গতকাল বুধবার দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত, অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। কারফিউর মধ্যে যৌথবাহিনী ২৪ জনকে আটক করেছে।
অন্যদিকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউ বাড়ানো হয়েছে। ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে। তারপর কারফিউ চলবে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার,(১৭ জুলাই ২০২৫) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এসব তথ্য জানান।
সারাদিনের চিত্র
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমিত আকারে রিকশা ইজিবাইক চলতে দেখা যায়। দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে জরুরি সেবাসমূহ সচল ছিল। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হননি। সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে পুলিশ ও এপিবিএন মোতায়েন করা হয়। সারাদিন সেনা সদস্যরা সাঁজোয়া যান নিয়ে শহরের টহল দিয়েছে। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় তেমন কোনো কোলাহল ছিল না। মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
২৪ জন আটক
কারফিউর মধ্যে গোপালগঞ্জে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে ১৪ জনকে গত রাতে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সারাদিনে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ জন আটক হন। গোপালগঞ্জে সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান ২৪ জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, গতকাল বুধবারের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।
আত্মগোপানে
আটক অভিযান শুরু পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। আটক নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জেলা কারাগার পরিদর্শন
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সভাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিদর্শন করেছেন কারার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর হোসেন ।
তিনি বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে এসে পৌঁছান।
কারা কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে সেখানে অভিবাদন জানান।
পরে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কারাগারে হামলার ঘটনা টাইটেল দিতে পেরেছি। এজন্য আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। কারাগারে ফের হামলার কোন আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, কোনো থ্রেট নেই। তারপরেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
পরে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রবেশ করেন। এ সময় এআইজি প্রিজন দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার এনসিপির পদযাত্রা ও সভাকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিকেলে হামলা করা হয় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে। সেখানে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সারারাত জেলা কারাগারের সামনে সতর্ক অবস্থানে ছিল।
তদন্ত কমিটি
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর প্রধান করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণিকে।
কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা
# ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সংবাদ সম্মেলন
গোপালগঞ্জের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা ও পর্যালোচনার পর কারফিউ বাড়ানোর সিদ্ধান্তর কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেন তিনি।
শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবারকে এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবারই কারফিউ জারি করা হয়েছে। যা এখনও রয়েছে। আমরা বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। যে পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছিল, তা এখন সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
‘গতকাল বুধবার চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রায় ৪০-৫০ জন আহত আছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ জন দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের ধরতে আমাদের পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’
গোপালগঞ্জের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয় এবং আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যার প্রমাণ তারা অতীতেও রেখেছেন, আমরা তাদের কাছে সেই প্রত্যাশা এখনও রাখি। আমরা সাধারণ মানুষকে বলতে চাই তাদের আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা দুষ্কৃতকারী আছেন আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং যাদেরকে চিহ্নিত করতে পারবো তাদের গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হবে।
# ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির ব্রিফিং
‘আমরা মনে করছি যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে অবস্থা আছে, আমাদের কাছে যে ইনফরমেশন আছে কিছু দুষ্কৃতকারী বাহির থেকেও এসেছিল, তারা এখনো গোপালগঞ্জে অবস্থান করছেন- এই মর্মে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। আমরা তাদেরকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মনে হবে না যে, পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা অব্যাহত রাখব।’
এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, এখন পর্যন্ত ২৪ জনের অধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা দুষ্কৃতকারী রয়েছেন, যারা গতকাল বুধবারের এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পেছনে জড়িত তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, বিষয়টি আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসবো।
এ ঘটনায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স আগে থেকেই ছিল এবং অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রেক্ষিতে আরও অধিক সংখ্যক ফোর্স নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বর্তমানে গোপালগঞ্জে কাজ করছেন এ বিষয়ে কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।
এ হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান বিভাগীয় কমিশনার।
বাইরে থেকে যারা আসছে তাদের সবাইকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট আছে বাইরে থেকে কিছু লোকজন এসেছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আব্দুল মাবুদ, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম তারেক সুলতান।
গোপালগঞ্জ শহরে মোতায়েন সেনাবাহিনীর সদস্যরা, বৃহস্পতিবার কারফিউ চলাকালে -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে গতকাল বুধবার দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত, অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। কারফিউর মধ্যে যৌথবাহিনী ২৪ জনকে আটক করেছে।
অন্যদিকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউ বাড়ানো হয়েছে। ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে। তারপর কারফিউ চলবে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার,(১৭ জুলাই ২০২৫) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এসব তথ্য জানান।
সারাদিনের চিত্র
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমিত আকারে রিকশা ইজিবাইক চলতে দেখা যায়। দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে জরুরি সেবাসমূহ সচল ছিল। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হননি। সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে পুলিশ ও এপিবিএন মোতায়েন করা হয়। সারাদিন সেনা সদস্যরা সাঁজোয়া যান নিয়ে শহরের টহল দিয়েছে। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় তেমন কোনো কোলাহল ছিল না। মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
২৪ জন আটক
কারফিউর মধ্যে গোপালগঞ্জে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে ১৪ জনকে গত রাতে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সারাদিনে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ জন আটক হন। গোপালগঞ্জে সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান ২৪ জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, গতকাল বুধবারের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।
আত্মগোপানে
আটক অভিযান শুরু পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। আটক নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জেলা কারাগার পরিদর্শন
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সভাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিদর্শন করেছেন কারার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর হোসেন ।
তিনি বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে এসে পৌঁছান।
কারা কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে সেখানে অভিবাদন জানান।
পরে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কারাগারে হামলার ঘটনা টাইটেল দিতে পেরেছি। এজন্য আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। কারাগারে ফের হামলার কোন আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, কোনো থ্রেট নেই। তারপরেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
পরে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রবেশ করেন। এ সময় এআইজি প্রিজন দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার এনসিপির পদযাত্রা ও সভাকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিকেলে হামলা করা হয় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে। সেখানে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সারারাত জেলা কারাগারের সামনে সতর্ক অবস্থানে ছিল।
তদন্ত কমিটি
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর প্রধান করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণিকে।
কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা
# ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সংবাদ সম্মেলন
গোপালগঞ্জের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা ও পর্যালোচনার পর কারফিউ বাড়ানোর সিদ্ধান্তর কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেন তিনি।
শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবারকে এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবারই কারফিউ জারি করা হয়েছে। যা এখনও রয়েছে। আমরা বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। যে পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছিল, তা এখন সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
‘গতকাল বুধবার চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রায় ৪০-৫০ জন আহত আছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ জন দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের ধরতে আমাদের পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’
গোপালগঞ্জের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয় এবং আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যার প্রমাণ তারা অতীতেও রেখেছেন, আমরা তাদের কাছে সেই প্রত্যাশা এখনও রাখি। আমরা সাধারণ মানুষকে বলতে চাই তাদের আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা দুষ্কৃতকারী আছেন আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং যাদেরকে চিহ্নিত করতে পারবো তাদের গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হবে।
# ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির ব্রিফিং
‘আমরা মনে করছি যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে অবস্থা আছে, আমাদের কাছে যে ইনফরমেশন আছে কিছু দুষ্কৃতকারী বাহির থেকেও এসেছিল, তারা এখনো গোপালগঞ্জে অবস্থান করছেন- এই মর্মে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। আমরা তাদেরকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মনে হবে না যে, পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা অব্যাহত রাখব।’
এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, এখন পর্যন্ত ২৪ জনের অধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা দুষ্কৃতকারী রয়েছেন, যারা গতকাল বুধবারের এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পেছনে জড়িত তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, বিষয়টি আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসবো।
এ ঘটনায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স আগে থেকেই ছিল এবং অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রেক্ষিতে আরও অধিক সংখ্যক ফোর্স নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বর্তমানে গোপালগঞ্জে কাজ করছেন এ বিষয়ে কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।
এ হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান বিভাগীয় কমিশনার।
বাইরে থেকে যারা আসছে তাদের সবাইকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট আছে বাইরে থেকে কিছু লোকজন এসেছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আব্দুল মাবুদ, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম তারেক সুলতান।