বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউরকে জানানো হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার,(১৭ জুলাই ২০২৫) বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে। এরপর দুপুরে তার মরদেহ নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন স্বজনরা।
অধ্যাপক বদিউরের বড় মেয়ে সুপা সাদিয়া বলেন, বরিশালে উদীচী জেলা কার্যালয়ে তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর বরিশাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জানানো হবে নাগরিক শ্রদ্ধা।বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউরকে সেখানে জানানো হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান। এরপর সন্ধ্যায় বরিশাল কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
গতকাল বুধবার গভীর রাতে ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে মারা যান উদীচীর সভাপতি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক বদিউর রহমান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ছায়ানট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বরিশাল বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা শহীদ মিনারে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সংগঠনের কাজে সার্বক্ষণিক সক্রিয় ছিলেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। ভালো-মন্দ, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক সংকটসহ যে কোনো বিষয়ে সবসময় বলিষ্ঠভাবে প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ‘বিশেষ কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলেও তার এই হঠাৎ প্রয়াণে উদীচীর শিল্পী-কর্মী সহযোদ্ধারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও যে আদর্শের বীজ অধ্যাপক বদিউর রহমান বপণ করে গেছেন, সেটি ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ
প্রতিষ্ঠায় উদীচী আজীবন কাজ করবে।’
বদিউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, অধ্যাপক এম এম আকাশ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমসহ অনেকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে উদীচীর সংগঠন সংগীত, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে পরিবেশন করা হয়। পরে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় অধ্যাপক বদিউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন পর্ব।
১৯৪৭ সালে বরিশালে জন্ম নেয়া বদিউর রহমান একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক, গবেষক এবং প্রাবন্ধিক হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিত। ১৯৭১ সালে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে বদিউর রহমান আবারও যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। ১৯৭২ সালে শুরু হয় উদীচীর সঙ্গে তার পথচলা। জেলা ও শাখা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন পদে অবদান রাখেন তিনি।
তিন দশকের বেশি সময় তিনি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ৪ জুন ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি প্রথমবার উদীচীর সভাপতির দায়িত্ব পান। সবশেষ ২০২৫ সালের ২৩তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন।
অধ্যাপক বদিউর রহমানের উল্লেখযোগ্য মৌলিক ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে সাহিত্য স্বরূপ, ছন্দ অলঙ্কার রসতত্ত্ব, বাংলার চারণ মুকুন্দ দাস, রবীন্দ্রজীবনের আশি বছর, সাহিত্য-সংজ্ঞা অভিধান, পাশ্চাত্য সাহিত্য তত্ত্ব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সম্পাদনার ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রেখেছেন বদিউর রহমান। তার সম্পাদিত সঙ্কলনগুলোর মধ্যে সত্যেন সেন রচনাবলি প্রথম খ- থেকে অষ্টম খ-, সত্যেন সেন ধ্রুপদী গণ কথাশিল্পী, অগ্রন্থিত রণেশ দাশগুপ্ত, অশ্বিনীকুমার রচনা সংগ্রহ, মুকুন্দ দাসের যত লেখা, মুকুন্দ দাসের দেশগান, মাইকেল মধুসুদন দত্ত-এর প্রহসনের মত গ্রন্থ রয়েছে।
শুধু গবেষণা বা সম্পাদনা নয়, অনুবাদ সাহিত্যেও বিশেষ দক্ষতা ছিল অধ্যাপক বদিউর রহমানের। তার অনুদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে এরিস্টটলের পোয়েটিকস, লঙ্গিনাসের সাহিত্য-তত্ত্ব, হোরেসের আর্স পোয়েটিকা, প্লেটোর কাব্য ভাবনা, ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা, নয়া মানবতাবাদ, গণনাট্য, দ্য প্রফেট, দ্য ম্যাডম্যান, দ্য স্যন্ড অ্যান্ড ফোম, দ্য প্রিন্স উল্লেখযোগ্য।
২০০৪ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাওয়া অধ্যাপক বদিউর রহমান তার জীবনে অসংখ্য ছাত্র, সাহিত্যানুরাগী, প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মী, মননশীল চর্চায় আগ্রহী মানুষ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউরকে জানানো হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার,(১৭ জুলাই ২০২৫) বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে। এরপর দুপুরে তার মরদেহ নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন স্বজনরা।
অধ্যাপক বদিউরের বড় মেয়ে সুপা সাদিয়া বলেন, বরিশালে উদীচী জেলা কার্যালয়ে তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর বরিশাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জানানো হবে নাগরিক শ্রদ্ধা।বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউরকে সেখানে জানানো হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান। এরপর সন্ধ্যায় বরিশাল কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
গতকাল বুধবার গভীর রাতে ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে মারা যান উদীচীর সভাপতি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক বদিউর রহমান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ছায়ানট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বরিশাল বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা শহীদ মিনারে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সংগঠনের কাজে সার্বক্ষণিক সক্রিয় ছিলেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। ভালো-মন্দ, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক সংকটসহ যে কোনো বিষয়ে সবসময় বলিষ্ঠভাবে প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ‘বিশেষ কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলেও তার এই হঠাৎ প্রয়াণে উদীচীর শিল্পী-কর্মী সহযোদ্ধারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও যে আদর্শের বীজ অধ্যাপক বদিউর রহমান বপণ করে গেছেন, সেটি ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ
প্রতিষ্ঠায় উদীচী আজীবন কাজ করবে।’
বদিউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, অধ্যাপক এম এম আকাশ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমসহ অনেকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে উদীচীর সংগঠন সংগীত, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে পরিবেশন করা হয়। পরে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় অধ্যাপক বদিউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন পর্ব।
১৯৪৭ সালে বরিশালে জন্ম নেয়া বদিউর রহমান একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক, গবেষক এবং প্রাবন্ধিক হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিত। ১৯৭১ সালে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে বদিউর রহমান আবারও যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। ১৯৭২ সালে শুরু হয় উদীচীর সঙ্গে তার পথচলা। জেলা ও শাখা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন পদে অবদান রাখেন তিনি।
তিন দশকের বেশি সময় তিনি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ৪ জুন ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি প্রথমবার উদীচীর সভাপতির দায়িত্ব পান। সবশেষ ২০২৫ সালের ২৩তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন।
অধ্যাপক বদিউর রহমানের উল্লেখযোগ্য মৌলিক ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে সাহিত্য স্বরূপ, ছন্দ অলঙ্কার রসতত্ত্ব, বাংলার চারণ মুকুন্দ দাস, রবীন্দ্রজীবনের আশি বছর, সাহিত্য-সংজ্ঞা অভিধান, পাশ্চাত্য সাহিত্য তত্ত্ব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সম্পাদনার ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রেখেছেন বদিউর রহমান। তার সম্পাদিত সঙ্কলনগুলোর মধ্যে সত্যেন সেন রচনাবলি প্রথম খ- থেকে অষ্টম খ-, সত্যেন সেন ধ্রুপদী গণ কথাশিল্পী, অগ্রন্থিত রণেশ দাশগুপ্ত, অশ্বিনীকুমার রচনা সংগ্রহ, মুকুন্দ দাসের যত লেখা, মুকুন্দ দাসের দেশগান, মাইকেল মধুসুদন দত্ত-এর প্রহসনের মত গ্রন্থ রয়েছে।
শুধু গবেষণা বা সম্পাদনা নয়, অনুবাদ সাহিত্যেও বিশেষ দক্ষতা ছিল অধ্যাপক বদিউর রহমানের। তার অনুদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে এরিস্টটলের পোয়েটিকস, লঙ্গিনাসের সাহিত্য-তত্ত্ব, হোরেসের আর্স পোয়েটিকা, প্লেটোর কাব্য ভাবনা, ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা, নয়া মানবতাবাদ, গণনাট্য, দ্য প্রফেট, দ্য ম্যাডম্যান, দ্য স্যন্ড অ্যান্ড ফোম, দ্য প্রিন্স উল্লেখযোগ্য।
২০০৪ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাওয়া অধ্যাপক বদিউর রহমান তার জীবনে অসংখ্য ছাত্র, সাহিত্যানুরাগী, প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মী, মননশীল চর্চায় আগ্রহী মানুষ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন।