alt

জাতীয়

‘পেশার স্বীকৃতিসহ যৌনকর্মীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘নারীপক্ষ’ আয়োজিত দুইদিনের সেমিনারে বক্তারা -সংবাদ

যৌনকর্মীদের পেশার স্বীকৃতি দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, আইনি অধিকার, মর্যাদা নিশ্চিত করাসহ নাগরিক অধিকার ও তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

‘যৌনকর্মীদের শ্রমের স্বীকৃতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে, না হলে সবাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের দায়ে অভিযুক্ত থাকব’

‘যৌনকর্মীদের ওপর যে হামলা ও হয়রানি শুরু হয়েছে বছর ঘুরে এলেও তা থামেনি’

রাজধানীতে ‘নারীপক্ষ’ আয়োজিত সম্প্রতি ‘যৌনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতি ও অধিকার: নারীবাদী আলোচনা’ শীর্ষক দুইদিনের সেমিনারে আবারও এসব দাবি তোলেছেন আলোচকরা। সেক্স ওয়ার্কার অ্যান্ড এলায়েন্স সাউথ এশিয়া- সোয়াসার অর্থায়নে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমের স্বীকৃতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। না হলে আমরা সবাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের দায়ে অভিযুক্ত থাকব।

এসময় একজন যৌনকর্মী বলেন, ‘একজন পুরুষ সব হারিয়ে মুটে-মজুর হতে পারেন। কিন্তু নারীকে তো সড়কে দাঁড়িয়ে পণ্য হয়ে বাঁচার বিকল্প খুঁজতে হয়। শুধু বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালানো দায়। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়া সম্ভব হয় না।’ সেমিনারের প্রথম দিন বক্তব্য রাখেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক, সদস্য মাহীন সুলতান, কামরুন নাহার, শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার এবং অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার, বাসসের সাবেক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খায়রুজ্জামান কামাল, মানবাধিকার মোর্চা সংহতির সভাপতি ও নারীপক্ষ সদস্য মাহবুবা মাহমুদ লীনা ও কয়েকজন যৌনকর্মী।

শিরীন হক বলেন, ‘কাউকে আপনি সমাজচ্যুত করে রাখলে, তিনি চোরাগলি খুঁজে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। অপরাধের জন্ম হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের নীরবতা থেকে।’

মাহবুবা মাহমুদ লীনা বলেন, ‘যৌনকর্মীরা শ্রম দেন। সেই শ্রমের স্বীকৃতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। তা না হলে আমরা সবাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের দায়ে অভিযুক্ত থাকব।’

সেমিনারে অন্যান্যরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যৌনকর্মীদের ওপর যে হামলা ও হয়রানি শুরু হয়েছে বছর ঘুরে এলেও তা থামেনি। নিবন্ধিত যৌনকর্মীদের অনেকেই পতিতালয় উচ্ছেদসহ নানা কারণে পথে নেমেছেন। ভাসমান অনেকেই উপার্জন হারিয়ে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

সেমিনারে প্রথম দিনে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনায় যা ছিলো

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের উপর হেফাজত যখন অযৌক্তিক এবং অশোভন আক্রমণ চালায়, তখন প্রগতিশীল সুশীল সমাজের অনেকে নিশ্চুপ ছিল, প্রতিবাদে আওয়াজ তোলেনি। তবু পিছু হটেনি নারী সংস্কার কমিশন। কাজ সম্পন্ন করে নারী সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় ১৯ এপ্রিল ২০২৫। এখন এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ উপস্থাপন, বিশেষ করে যৌনকর্মী ইস্যুতে এই কমিশন প্রধান শিরীন হক উল্লিখিত মন্তব্য করেন।

যৌনকর্মী আন্দোলনে নারীপক্ষের ভূমিকা তুলে ধরেন প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহানারা খাতুন। যৌনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন উল্কা নারী সংঘের হেনা আক্তার, কল্যাণময়ী নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ বেগম, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সভানেত্রী ফরিদা পারভীন, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ারকারস ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন প্রমুখ।

শিরীন হক বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের দ্বাদশ অধ্যায় শ্রম ও কর্মসংস্থান এর অধিনে যৌনকর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করার কথা আমরা বলেছি। যৌনকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, তাদের সন্তানদের শিক্ষা, দক্ষতা-প্রশিক্ষণ, আর্থিক পরিষেবা, আইনি পরিষেবা নিশ্চিতকরণে দৃশ্যমান ফলাফলভিত্তিক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করেছি।

কামরুন নাহার বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের তৃতীয় অধ্যায়

“সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি” এই অংশে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (২): গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ঘ) অনুচ্ছেদ ১৯। (৩): সংশোধন করে লেখা হবে ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবেন’।

খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, সংহতির মাধ্যমে আমরা যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই। যৌনকর্মীদের সহযোগিতার জন্য সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার কাছ থেকে যে অর্থ পাওয়া গেছে, সেসব বন্টনে জাতীয় সনদপত্র প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেকেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি পযার্য়ে কথা বলতে হবে। নিবন্ধনকৃত সংস্থার যৌনকর্মী সদস্যরা যাতে এই অর্থের সুবিধা ভোগ করতে পারেন এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারের মতে, যৌনকর্মীদের মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিবেচনায় শ্রম আইন সংশোধন করে তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী বিষয়ক সংস্কারের যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, তাতে নানা বিষয়ের পাশাপাশি যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি ও তাদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। নারীর নিরাপত্তা, তার বিকাশ, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে মোট ১৭টি অধ্যায়ে ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান নিয়ে প্রস্তাবে যৌনকর্মীদের বিষয়ে উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়েছে, “অনানুষ্ঠানিক খাতে নারী শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা প্রয়োজন। ...যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।’

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে কমিটি

শ্যামলীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন

ছবি

গোপালগঞ্জে জনসমাবেশে হামলা ও ভাঙচুর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি

গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা পালন করেছে: আসিফ মাহমুদ

বিএনপি-জামায়াতের সুপারিশ করা দলগুলো সংলাপে ডাকছে ঐকমত্য কমিশন: অভিযোগ জনতা পার্টির

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে ‘ফ্যাসিবাদের’ উত্থান হবে: জামায়াত

সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশ নারীবিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করবে: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

ফরিদপুরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

ছবি

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ ও গুলিতে নিহত চারজনের দাফন সম্পন্ন, পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখা হবে

নিজের সব ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চান দীপু মনি

ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা তোলা গ্রাহকদের টার্গেট করতো তারা

‘কমপ্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ, সারাদেশে নিহত ৩১

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ, অধ্যাদেশ অনুমোদন

ছবি

শহীদ মিনারে অধ্যাপক বদিউরকে শেষ বিদায়

ছবি

জুনে ১৮ বছরের কম বয়সীরাই বেশি সহিংসতার শিকার: ডেটাফুল

দুর্নীতির মামলায় সম্রাটের বিচার শুরুর আদেশ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

কারফিউর শহরে সারাদিন

গোপালগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটবে, আগাম তথ্য ছিল না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জ্বালানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট, বলছেন মার্কিন তদন্তকারীরা

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক: আইএসপিআর

ছবি

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: তিন আসামির ‘দায় স্বীকার’ করে জবানবন্দী

ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের, ফের গোপালগঞ্জে যাওয়ার ঘোষণা নাহিদের

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি, আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ

ডেমোক্রেসির বদলে মবোক্রেসি হয়ে যাচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিদ্যুতে ৪৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা লোকসানের পূর্বাভাস পিডিবির

ছবি

গোপালগঞ্জে কারফিউ চলছে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের দাফন, সৎকার

ছবি

যুবাদের সঠিকভাবে কাজে না লাগালে ভালো কিছু আশা করা যাবে না: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা

ছবি

জন্মশতবর্ষে তাজউদ্দীনের স্মরণ, প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণপত্র দিল পরিবার

ছবি

দুদকের মামলায় তারিক সিদ্দিকের পরিবারের স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ

ছবি

‘হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’— আসিফ মাহমুদ

ছবি

অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ করতে ও বিনিয়োগ উন্নয়নে দুই অধ্যাদেশের অনুমোদন

ছবি

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত পুলিশ ১০; ২৫ জন গ্রেপ্তার

ছবি

আইসিইউতে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

ছবি

শহীদ মিনারে সিক্ত নয়নে অধ্যাপক বদিউরকে বিদায়

ছবি

উদীচী সভাপতি বদিউর রহমান মারা গেছেন

ছবি

গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ হয়নি: টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

tab

জাতীয়

‘পেশার স্বীকৃতিসহ যৌনকর্মীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘নারীপক্ষ’ আয়োজিত দুইদিনের সেমিনারে বক্তারা -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

যৌনকর্মীদের পেশার স্বীকৃতি দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, আইনি অধিকার, মর্যাদা নিশ্চিত করাসহ নাগরিক অধিকার ও তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

‘যৌনকর্মীদের শ্রমের স্বীকৃতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে, না হলে সবাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের দায়ে অভিযুক্ত থাকব’

‘যৌনকর্মীদের ওপর যে হামলা ও হয়রানি শুরু হয়েছে বছর ঘুরে এলেও তা থামেনি’

রাজধানীতে ‘নারীপক্ষ’ আয়োজিত সম্প্রতি ‘যৌনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতি ও অধিকার: নারীবাদী আলোচনা’ শীর্ষক দুইদিনের সেমিনারে আবারও এসব দাবি তোলেছেন আলোচকরা। সেক্স ওয়ার্কার অ্যান্ড এলায়েন্স সাউথ এশিয়া- সোয়াসার অর্থায়নে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমের স্বীকৃতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। না হলে আমরা সবাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের দায়ে অভিযুক্ত থাকব।

এসময় একজন যৌনকর্মী বলেন, ‘একজন পুরুষ সব হারিয়ে মুটে-মজুর হতে পারেন। কিন্তু নারীকে তো সড়কে দাঁড়িয়ে পণ্য হয়ে বাঁচার বিকল্প খুঁজতে হয়। শুধু বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালানো দায়। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়া সম্ভব হয় না।’ সেমিনারের প্রথম দিন বক্তব্য রাখেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক, সদস্য মাহীন সুলতান, কামরুন নাহার, শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার এবং অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার, বাসসের সাবেক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খায়রুজ্জামান কামাল, মানবাধিকার মোর্চা সংহতির সভাপতি ও নারীপক্ষ সদস্য মাহবুবা মাহমুদ লীনা ও কয়েকজন যৌনকর্মী।

শিরীন হক বলেন, ‘কাউকে আপনি সমাজচ্যুত করে রাখলে, তিনি চোরাগলি খুঁজে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। অপরাধের জন্ম হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের নীরবতা থেকে।’

মাহবুবা মাহমুদ লীনা বলেন, ‘যৌনকর্মীরা শ্রম দেন। সেই শ্রমের স্বীকৃতি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। তা না হলে আমরা সবাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের দায়ে অভিযুক্ত থাকব।’

সেমিনারে অন্যান্যরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যৌনকর্মীদের ওপর যে হামলা ও হয়রানি শুরু হয়েছে বছর ঘুরে এলেও তা থামেনি। নিবন্ধিত যৌনকর্মীদের অনেকেই পতিতালয় উচ্ছেদসহ নানা কারণে পথে নেমেছেন। ভাসমান অনেকেই উপার্জন হারিয়ে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

সেমিনারে প্রথম দিনে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনায় যা ছিলো

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের উপর হেফাজত যখন অযৌক্তিক এবং অশোভন আক্রমণ চালায়, তখন প্রগতিশীল সুশীল সমাজের অনেকে নিশ্চুপ ছিল, প্রতিবাদে আওয়াজ তোলেনি। তবু পিছু হটেনি নারী সংস্কার কমিশন। কাজ সম্পন্ন করে নারী সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় ১৯ এপ্রিল ২০২৫। এখন এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ উপস্থাপন, বিশেষ করে যৌনকর্মী ইস্যুতে এই কমিশন প্রধান শিরীন হক উল্লিখিত মন্তব্য করেন।

যৌনকর্মী আন্দোলনে নারীপক্ষের ভূমিকা তুলে ধরেন প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহানারা খাতুন। যৌনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন উল্কা নারী সংঘের হেনা আক্তার, কল্যাণময়ী নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ বেগম, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সভানেত্রী ফরিদা পারভীন, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ারকারস ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন প্রমুখ।

শিরীন হক বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের দ্বাদশ অধ্যায় শ্রম ও কর্মসংস্থান এর অধিনে যৌনকর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করার কথা আমরা বলেছি। যৌনকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, তাদের সন্তানদের শিক্ষা, দক্ষতা-প্রশিক্ষণ, আর্থিক পরিষেবা, আইনি পরিষেবা নিশ্চিতকরণে দৃশ্যমান ফলাফলভিত্তিক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করেছি।

কামরুন নাহার বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের তৃতীয় অধ্যায়

“সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি” এই অংশে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (২): গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ঘ) অনুচ্ছেদ ১৯। (৩): সংশোধন করে লেখা হবে ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবেন’।

খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, সংহতির মাধ্যমে আমরা যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই। যৌনকর্মীদের সহযোগিতার জন্য সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার কাছ থেকে যে অর্থ পাওয়া গেছে, সেসব বন্টনে জাতীয় সনদপত্র প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেকেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি পযার্য়ে কথা বলতে হবে। নিবন্ধনকৃত সংস্থার যৌনকর্মী সদস্যরা যাতে এই অর্থের সুবিধা ভোগ করতে পারেন এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারের মতে, যৌনকর্মীদের মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিবেচনায় শ্রম আইন সংশোধন করে তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী বিষয়ক সংস্কারের যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, তাতে নানা বিষয়ের পাশাপাশি যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি ও তাদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। নারীর নিরাপত্তা, তার বিকাশ, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে মোট ১৭টি অধ্যায়ে ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান নিয়ে প্রস্তাবে যৌনকর্মীদের বিষয়ে উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়েছে, “অনানুষ্ঠানিক খাতে নারী শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা প্রয়োজন। ...যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।’

back to top