দুর্নীতির মামলায় লড়তে নিজের সব ব্যাংক হিসাবের ‘তথ্য-উপাত্ত’ পেতে চান সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি। তিনি আদালতকে বলেছেন, ‘আমাকে সুযোগ দেবেন যেন মামলার তথ্য-উপাত্ত পাই এবং লড়াই করতে পারি।’ বৃহস্পতিবার,(১৭ জুলাই ২০২৫) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের বিষয়ে শুনানি হয়। গত ২১ মে আবেদনটি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের কাছে কিছু বলার অনুমতি চার দীপু মনি। আদালত অনুমতি দিলে কথা বলেন তিনি।
দীপু মনি বলেন, ‘কারাগারে আমি খবরের কাগজ পাই। সেই পত্রিকায় বেশ আগে একটি খবর বেরিয়েছিল। সেখানে দেখেছিলাম, আমার নাকি ২৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। তাতে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। আমি একজন নিয়মিত করদাতা। গত ১৫ বছরে আমার আয়-ব্যয়ের সব হিসাব ওই আয়কর বিবরণীতে জমা রয়েছে।
‘আমার যে ২৮টি ব্যাংক হিসাবের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো কারও জানা নেই। জানামতে, আমার ছয়টা ব্যাংক হিসাব। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয় না। তবে বাকি চারটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ছিল। আমি দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আমার ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেনের তথ্য জানতে চাই।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি একজন নাগরিক। দেশের নাগরিক হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জানার অধিকার আমার রয়েছে। আমাকে অন্ধকারে রেখে দুদক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ‘একজন নাগরিকের সুনাম অর্জন করতে অনেক সময় যায়, কিন্তু নষ্ট হতে দুই মিনিটও লাগে না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে সুযোগ দিবেন, যেন মামলার তথ্য-উপাত্ত পাই, লড়াই করতে পারি। তথ্যের পক্ষে থেকে লড়াই করতে আপনিই একমাত্র শক্তি। আর আমার যে অর্থের কথা বলা হচ্ছে, তা একেবারে সম্ভব নয়।’ এ সময় বিচারক তার কাছে জানতে চান, আপনার সম্পদ কত টাকার?
দীপু মনি বলেন, ‘ছয় থেকে সাত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।’ তখন বিচারক বলেন, ‘৬০ কোটি টাকা ট্রান্সজেকশন হওয়া তো সম্ভব না।’
তখন দীপু মনি বলেন, ‘এটা কোনো হিসাবের মধ্যে পড়ে না।’ বিচারক বলেন, ‘আসলে কিন্তু এত কোটি টাকা ট্রান্সজেকশন সম্ভব না। উনাকে তো ডিফেন্স দিতে হবে।’ তখন দীপু মনি বলেন, ‘আমি ১১ মাস ধরে জেলে। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে বহু আগে দুবার কারাগারে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। আর যখন আয়কর বিবরণী জমা দেয়া হয়েছিল, তখন একবার আমি আমার আয়কর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম।
‘এর বাইরে আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কারাগারে কথা বলার কোনো সুযোগ পাচ্ছি না। কাশিমপুরের নারী কারাগারে সাক্ষাতের বিষয়টা জটিল। অন্যদের মতো দেখা করার সুযোগ নেই। আমি ৬০টির অধিক মামলার আসামি। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শের সুযোগ পাচ্ছি না।’
তখন বিচারক বলেন, ‘কী বলেন!’ দীপু মনি বলেন, ‘হচ্ছে এটা!’ এবার আদালত বলেন, ‘তাকে তো আইনি সুরক্ষা দিতে হবে।’ শুনানিতে দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উনি (দীপু মনি) যখন এ মামলায় গ্রেপ্তার হবেন, তখন আইনজীবীর মাধ্যমে এ মামলার সমস্ত কাগজপত্রের অনুলিপি পাবেন। আর দুদক মামলা করে কাগজপত্র আর নথিপত্রের ভিত্তিতে।’ পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলা হয়। সেখানে ৫ কোটি ৯২ লাখ ২ হাজার ৫৩০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার ২৮টি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার ৭৩১ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগও এনেছে দুদক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অন্য অনেক নেতার মতো দীপু মনিও প্রকাশ্যে ছিলেন না। সরকার পতনের দুই সপ্তাহের মাথায় ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০০৮ সাল থেকে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
দুর্নীতির মামলায় লড়তে নিজের সব ব্যাংক হিসাবের ‘তথ্য-উপাত্ত’ পেতে চান সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি। তিনি আদালতকে বলেছেন, ‘আমাকে সুযোগ দেবেন যেন মামলার তথ্য-উপাত্ত পাই এবং লড়াই করতে পারি।’ বৃহস্পতিবার,(১৭ জুলাই ২০২৫) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের বিষয়ে শুনানি হয়। গত ২১ মে আবেদনটি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের কাছে কিছু বলার অনুমতি চার দীপু মনি। আদালত অনুমতি দিলে কথা বলেন তিনি।
দীপু মনি বলেন, ‘কারাগারে আমি খবরের কাগজ পাই। সেই পত্রিকায় বেশ আগে একটি খবর বেরিয়েছিল। সেখানে দেখেছিলাম, আমার নাকি ২৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। তাতে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। আমি একজন নিয়মিত করদাতা। গত ১৫ বছরে আমার আয়-ব্যয়ের সব হিসাব ওই আয়কর বিবরণীতে জমা রয়েছে।
‘আমার যে ২৮টি ব্যাংক হিসাবের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো কারও জানা নেই। জানামতে, আমার ছয়টা ব্যাংক হিসাব। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয় না। তবে বাকি চারটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ছিল। আমি দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আমার ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেনের তথ্য জানতে চাই।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি একজন নাগরিক। দেশের নাগরিক হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জানার অধিকার আমার রয়েছে। আমাকে অন্ধকারে রেখে দুদক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ‘একজন নাগরিকের সুনাম অর্জন করতে অনেক সময় যায়, কিন্তু নষ্ট হতে দুই মিনিটও লাগে না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে সুযোগ দিবেন, যেন মামলার তথ্য-উপাত্ত পাই, লড়াই করতে পারি। তথ্যের পক্ষে থেকে লড়াই করতে আপনিই একমাত্র শক্তি। আর আমার যে অর্থের কথা বলা হচ্ছে, তা একেবারে সম্ভব নয়।’ এ সময় বিচারক তার কাছে জানতে চান, আপনার সম্পদ কত টাকার?
দীপু মনি বলেন, ‘ছয় থেকে সাত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।’ তখন বিচারক বলেন, ‘৬০ কোটি টাকা ট্রান্সজেকশন হওয়া তো সম্ভব না।’
তখন দীপু মনি বলেন, ‘এটা কোনো হিসাবের মধ্যে পড়ে না।’ বিচারক বলেন, ‘আসলে কিন্তু এত কোটি টাকা ট্রান্সজেকশন সম্ভব না। উনাকে তো ডিফেন্স দিতে হবে।’ তখন দীপু মনি বলেন, ‘আমি ১১ মাস ধরে জেলে। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে বহু আগে দুবার কারাগারে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। আর যখন আয়কর বিবরণী জমা দেয়া হয়েছিল, তখন একবার আমি আমার আয়কর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম।
‘এর বাইরে আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কারাগারে কথা বলার কোনো সুযোগ পাচ্ছি না। কাশিমপুরের নারী কারাগারে সাক্ষাতের বিষয়টা জটিল। অন্যদের মতো দেখা করার সুযোগ নেই। আমি ৬০টির অধিক মামলার আসামি। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শের সুযোগ পাচ্ছি না।’
তখন বিচারক বলেন, ‘কী বলেন!’ দীপু মনি বলেন, ‘হচ্ছে এটা!’ এবার আদালত বলেন, ‘তাকে তো আইনি সুরক্ষা দিতে হবে।’ শুনানিতে দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উনি (দীপু মনি) যখন এ মামলায় গ্রেপ্তার হবেন, তখন আইনজীবীর মাধ্যমে এ মামলার সমস্ত কাগজপত্রের অনুলিপি পাবেন। আর দুদক মামলা করে কাগজপত্র আর নথিপত্রের ভিত্তিতে।’ পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলা হয়। সেখানে ৫ কোটি ৯২ লাখ ২ হাজার ৫৩০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার ২৮টি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার ৭৩১ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগও এনেছে দুদক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অন্য অনেক নেতার মতো দীপু মনিও প্রকাশ্যে ছিলেন না। সরকার পতনের দুই সপ্তাহের মাথায় ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০০৮ সাল থেকে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।