জলাবদ্ধতায় ক্ষতি ২৪০ কোটি টাকা, ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতায় যেমন জনজীবন -সংবাদ
নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এখনো পানিবন্দী রয়েছে জেলার ছয় উপজেলার ১৭ হাজার ৪৬০ পরিবার। এতে কৃষি ও মৎস্যসহ বিভিন্ন খাতে ২৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে—আনুমানিক ১৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। কৃষিখাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫১ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় জেলার প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ৭ জুলাই থেকে নোয়াখালীতে টানা মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর পরপর চার দিন প্রবল বর্ষণ ও ফেনী নদী থেকে আসা বন্যার পানিতে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পুকুর ও নালার পানি মিশে যাওয়ায় অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমি এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ এবং বেগমগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টানা জলাবদ্ধতায় তাঁরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। প্রতিদিনের কাজ, চলাচল, খাদ্য ও পানির সংকটে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সেনাবাহিনীর সহায়তায় জেলার চৌমুহনী শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করার কাজ চলছে। কোথাও কোথাও বাঁধ কেটে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, নোয়াখালীর মোট ৫ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮৯১ হেক্টর আমনের বীজতলা, ২ হাজার ৫০০ হেক্টর আউশ ধানের জমি, ১ হাজার ২০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষেত এবং ৫৭৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির জমি। টানা বৃষ্টি ও ফেনী থেকে আসা বন্যার পানিতে আমনের বীজতলা ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকায় গোড়া
পচে বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়েছে। পাশাপাশি আমন ধানের বীজের দাম বাড়ায় প্রান্তিক কৃষকরা নতুন করে চাষাবাদে ঝুঁকতে পারছেন না। ফলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় তারা সরকারি সহায়তা চেয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মীরা রানী দাস বলেন, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সেনবাগ, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় বীজতলা ও সবজির ক্ষতি বেশি হয়েছে। কৃষকদের পাশে থেকে ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতায় ৫৮টি বাড়ি-ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারের বেশি মানুষ অবস্থান করছেন। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে ২৯টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির ট্যাবলেট ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জলাবদ্ধতায় ক্ষতি ২৪০ কোটি টাকা, ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতায় যেমন জনজীবন -সংবাদ
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এখনো পানিবন্দী রয়েছে জেলার ছয় উপজেলার ১৭ হাজার ৪৬০ পরিবার। এতে কৃষি ও মৎস্যসহ বিভিন্ন খাতে ২৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে—আনুমানিক ১৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। কৃষিখাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫১ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় জেলার প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ৭ জুলাই থেকে নোয়াখালীতে টানা মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর পরপর চার দিন প্রবল বর্ষণ ও ফেনী নদী থেকে আসা বন্যার পানিতে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পুকুর ও নালার পানি মিশে যাওয়ায় অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমি এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ এবং বেগমগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টানা জলাবদ্ধতায় তাঁরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। প্রতিদিনের কাজ, চলাচল, খাদ্য ও পানির সংকটে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সেনাবাহিনীর সহায়তায় জেলার চৌমুহনী শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করার কাজ চলছে। কোথাও কোথাও বাঁধ কেটে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, নোয়াখালীর মোট ৫ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮৯১ হেক্টর আমনের বীজতলা, ২ হাজার ৫০০ হেক্টর আউশ ধানের জমি, ১ হাজার ২০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষেত এবং ৫৭৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির জমি। টানা বৃষ্টি ও ফেনী থেকে আসা বন্যার পানিতে আমনের বীজতলা ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকায় গোড়া
পচে বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়েছে। পাশাপাশি আমন ধানের বীজের দাম বাড়ায় প্রান্তিক কৃষকরা নতুন করে চাষাবাদে ঝুঁকতে পারছেন না। ফলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় তারা সরকারি সহায়তা চেয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মীরা রানী দাস বলেন, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সেনবাগ, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় বীজতলা ও সবজির ক্ষতি বেশি হয়েছে। কৃষকদের পাশে থেকে ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতায় ৫৮টি বাড়ি-ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারের বেশি মানুষ অবস্থান করছেন। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে ২৯টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির ট্যাবলেট ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।