শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান, বহু হতাহত
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলটসহ অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। সোমবার,(২১ জুলাই ২০২৫) বেলা ১টা ১৮ মিনিটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই ঘটনায় আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ যুদ্ধবিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছিল। উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআরের ভাষ্যমতে, পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে জনবিরল স্থানে বিমানটিকে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুইতলা হায়দার আলী ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় পাইলট তৌকির ইসলামও নিহত হয়েছেন।
হতাহত ও উদ্ধার তৎপরতা
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দা, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে
আগুন নেভানোর কাজ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয় এবং আগুন ধরে যায়। আগুনের তীব্রতার কারণে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। আহত ও দগ্ধদের রিকশা, ঠেলাগাড়িসহ বিভিন্ন বাহনে করে এবং অর্ধশতাধিক অ্যাম্বুলেন্সে করে নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হয়।
আইএসপিআরের তথ্যানুযায়ী, দুর্ঘটনায় মোট ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন ঢাকা সিএমএইচে, ২ জন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, ২ জন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, ২ জন লুবনা জেনারেল হাসপাতালে, ১ জন ঢাকা মেডিকেলে এবং ১ জন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে রয়েছেন।
আহতদের একটি বড় অংশকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে অন্তত ৭০ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। দগ্ধদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে নাফিস নামে একজনের শরীরের ৯৫ শতাংশ এবং এরিকসন ও মেহরিনের শতভাগ দগ্ধ হয়েছে। আইসিইউতে ৬ জন চিকিৎসাধীন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১২০ জন অগ্নিদগ্ধকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
শোক ও তদন্ত
এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিমানবাহিনী একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, দুর্ঘটনার একটি ‘ভালো রকমের তদন্ত’ করা হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। পাশাপাশি সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে হতাহতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
জরুরি যোগাযোগ
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের তথ্য ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। মিলিটারি রেসকিউ ব্রিগেড (০১৭৬৯০২৪২০২), সিএমএইচ বার্ন ইউনিট (০১৭৬৯০১৬০১৯) এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের (০১৯৪৯০৪৩৬৯৭) নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯ থেকেও তথ্য সহায়তা পাওয়া যাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান, বহু হতাহত
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলটসহ অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। সোমবার,(২১ জুলাই ২০২৫) বেলা ১টা ১৮ মিনিটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই ঘটনায় আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ যুদ্ধবিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছিল। উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআরের ভাষ্যমতে, পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে জনবিরল স্থানে বিমানটিকে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুইতলা হায়দার আলী ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় পাইলট তৌকির ইসলামও নিহত হয়েছেন।
হতাহত ও উদ্ধার তৎপরতা
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দা, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে
আগুন নেভানোর কাজ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয় এবং আগুন ধরে যায়। আগুনের তীব্রতার কারণে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। আহত ও দগ্ধদের রিকশা, ঠেলাগাড়িসহ বিভিন্ন বাহনে করে এবং অর্ধশতাধিক অ্যাম্বুলেন্সে করে নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হয়।
আইএসপিআরের তথ্যানুযায়ী, দুর্ঘটনায় মোট ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন ঢাকা সিএমএইচে, ২ জন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, ২ জন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, ২ জন লুবনা জেনারেল হাসপাতালে, ১ জন ঢাকা মেডিকেলে এবং ১ জন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে রয়েছেন।
আহতদের একটি বড় অংশকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে অন্তত ৭০ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। দগ্ধদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে নাফিস নামে একজনের শরীরের ৯৫ শতাংশ এবং এরিকসন ও মেহরিনের শতভাগ দগ্ধ হয়েছে। আইসিইউতে ৬ জন চিকিৎসাধীন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১২০ জন অগ্নিদগ্ধকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
শোক ও তদন্ত
এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিমানবাহিনী একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, দুর্ঘটনার একটি ‘ভালো রকমের তদন্ত’ করা হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। পাশাপাশি সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে হতাহতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
জরুরি যোগাযোগ
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের তথ্য ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। মিলিটারি রেসকিউ ব্রিগেড (০১৭৬৯০২৪২০২), সিএমএইচ বার্ন ইউনিট (০১৭৬৯০১৬০১৯) এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের (০১৯৪৯০৪৩৬৯৭) নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯ থেকেও তথ্য সহায়তা পাওয়া যাবে।