মাইলস্টোন স্কুলের সামনে সন্তানকে না পেয়ে এক মায়ের আহাজারি - সংবাদ
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় কলেজ ক্যাম্পাসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও স্বজনরা। তাদের কেউ সন্তানদের খুঁজছেন। কেউ কেউ সন্তানের খোঁজে এদিক-ওদিক ছুটছিলেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, সর্বত্রই স্বজনদের আহাজারি।
‘মিস আমার বাচ্চা কই’
‘ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না’
‘আমার বাচ্চা নাই’
‘ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে’
মা, আমার সব জ্বলে’
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার,(২১ জুলাই ২০২৫) বেলা ১টা ৬ মিনিটে মাইলস্টোন স্কুলের দোতলা ভবনের প্রবেশমুখে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আগুন ধরে যায়। এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু ও ১৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মাইলস্টোন স্কুলের সামনে ভিড় করেন শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও স্বজনরা। ভবনের যে অংশে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি আছড়ে পড়ে, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল ছুটির পরও জড়ো হয়েছিল। কিছু অভিভাবকও সেখানে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
‘মিস আমার বাচ্চা কই’
দুর্ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের নিয়ে একের পর এক ছুটে চলছে অ্যাম্বুলেন্স। স্ট্রেচারে করে হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল। এ সময় বাঁশি ফুঁয়ে অভিভাবক ও স্বজনদের ভিড় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় সন্তানদের খোঁজ পেতে এক নারী চিৎকার করে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তিনি ফোনের ওপাশে ব্যক্তিকে কাঁদতে কাঁদতে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন ‘মিস, আমার বাচ্চা কই’। তখন সেখানে জড়ো হওয়া স্থানীয় লোকজন
তার সন্তানের নাম এবং কোন শ্রেণীতে পড়ে তা জানতে চান। ওই নারী বলেন, তার ছেলের নাম সাজ্জাদ সাদী, সে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
তখন উপস্থিত লোকজনের কয়েকজন এই অভিভাবককে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। ক্লাস টেনের বাচ্চাদের কিছুই হয়নি। আমরা ভেতরে গিয়েছিলাম। ক্লাস ফোর আর ক্লাস ফাইভের বাচ্চারাই মূলত বেশি হতাহত হয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়া ভবনটির প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম। এর সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের অফিস ও মিটিং রুম। বিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয় তার আগেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
ভবনের যে অংশে বিধ্বস্ত বিমানটি আঘাত করে সেখানে ‘বাচ্চাকাচ্চারা জড়ো’ হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিলেন বলেও জানান মহাপরিচালক।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, বিমানটি একটি ভবনের গেইটে আছড়ে পড়ে। সেটি অ্যাকাডেমিক ভবন। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের ক্লাস চলছিল। একের পর এক আহতদের বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বিমান দুর্ঘটনার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকজুড়ে দেখা যায় শোকের ছাপ। মাইলস্টোন কলেজের অনেকেই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ও প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেছেন।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালায় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সেখানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।
‘আমার বাচ্চা নাই’:
সন্তানের খোঁজ চেয়ে আহাজারি করছিলেন মাইলস্টোনের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমার পিতা লিয়ন মির। ফেইসবুকে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘আমরা কোন হাসপাতালে যাব, সন্তানকে খুঁজে দেন।’
এরপর ফেইসবুকে লাইভে তিনি দাবি করেন, তার সন্তান বেঁচে নেই। লিয়ন মিন বলেন, ‘আমার বাচ্চা নাই। আমার বাচ্চা মারা গেছে। সিএমএইচের মর্গে আছে। কেউ আমাদের এসে নিয়ে যান।’
‘ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না’:
দুর্ঘটনাস্থলে সন্তানদের খোঁজ নিতে আসেন লাকি আক্তার নামের এক অভিভাবক। তিনি বেলা তিনটার দিকে সেখানে উপস্থিত লোকজন ও উদ্ধারকর্মীদের বলেন, তার দুই সন্তান মাইলস্টোন স্কুলে পড়ে। তিনি বড় সন্তানকে ক্লাসরুম থেকে বের করতে পেরেছেন। কিন্তু ‘ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে’:
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর কক্ষের মেঝেতে পড়ে কাঁদছিলেন ফাহাদ নিয়ন। তিনি তার চতুর্থ শ্রেণীপড়–য়া ভাগনি মেহরিনের পোড়া কাপড় ধরে কাঁদছিলেন।
ফাহাদ বলেন, ‘ও খুব নিষ্পাপ। ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে।’ এ সময় তিনি ওই শিক্ষার্থীর স্কুল ড্রেস দেখিয়ে বলেন, ‘এটা ওর ড্রেস। ও খুব নিষ্পাপ ভাই। সারা দিন পড়াশোনা করে। ওর দুই হাত পুড়ে গেছে। মুখ পুড়ে গেছে।’
‘মা, আমার সব জ্বলে’:
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একই কক্ষের মেঝেতে মেয়েকে ধরে চিৎকার করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তার মেয়ে জান্নাত ইউশা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে মা, আমার সব জ্বলে.... মেয়ের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, পিঠও পুড়ে গেছে।
তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার মেয়ের সব পুড়ে গেছে, তোমরা কেউ তার জ্বলা বন্ধ করো। আমি আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমার বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছে।’
ইয়াসমিন আক্তার জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে মাইলস্টোনে পড়ে।
এ সময় তার পাশে বসা ছেলে তাহমিন ইসলাম রোহান বলে, প্রতিদিনের মতো এদিন বোনকে স্কুল থেকে আনতে যাই। গিয়ে দেখি স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে ক্লাসরুমে গিয়ে খুঁজতে থাকি, কিন্তু দেখি বোনকে পাচ্ছিলাম না। পরে তাকে খুঁজে বের করে দেখি বোনের শরীর পুড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উত্তরার লুবনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসি।
ঘটনাস্থলে থাকা মাইলস্টোন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পরিচয় দিয়ে সবুজ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের দোতলা ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। ক্লাস শেষ হয়েছিল বেলা ১টার দিকে। কিছু শিক্ষার্থী বেরিয়ে গিয়েছিল। অনেকে অভিভাবকদের জন্য অপেক্ষা করছিল, তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।
মাইলস্টোনের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহিম হাসান সিয়াম বলেন, প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে বিমানটি পড়েছে। ভবনটিতে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি ক্লাসরুম ও ৪টি শিক্ষকের রুম আছে। এই ভবনে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস হতো। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শ্রেণীকক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তখন ক্লাস চলছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শেষ হতো। ঠিক সেই সময় কলেজের প্রজেক্ট-৭ নম্বর ভবনে বিমানটি ধাক্কা লেগে জ্বালানি ‘লিকেজ’ হয়। পরে প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে আছড়ে পড়ে।
মাইলস্টোন স্কুলের সামনে সন্তানকে না পেয়ে এক মায়ের আহাজারি - সংবাদ
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় কলেজ ক্যাম্পাসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও স্বজনরা। তাদের কেউ সন্তানদের খুঁজছেন। কেউ কেউ সন্তানের খোঁজে এদিক-ওদিক ছুটছিলেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, সর্বত্রই স্বজনদের আহাজারি।
‘মিস আমার বাচ্চা কই’
‘ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না’
‘আমার বাচ্চা নাই’
‘ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে’
মা, আমার সব জ্বলে’
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার,(২১ জুলাই ২০২৫) বেলা ১টা ৬ মিনিটে মাইলস্টোন স্কুলের দোতলা ভবনের প্রবেশমুখে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আগুন ধরে যায়। এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু ও ১৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মাইলস্টোন স্কুলের সামনে ভিড় করেন শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও স্বজনরা। ভবনের যে অংশে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি আছড়ে পড়ে, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল ছুটির পরও জড়ো হয়েছিল। কিছু অভিভাবকও সেখানে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
‘মিস আমার বাচ্চা কই’
দুর্ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের নিয়ে একের পর এক ছুটে চলছে অ্যাম্বুলেন্স। স্ট্রেচারে করে হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল। এ সময় বাঁশি ফুঁয়ে অভিভাবক ও স্বজনদের ভিড় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় সন্তানদের খোঁজ পেতে এক নারী চিৎকার করে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তিনি ফোনের ওপাশে ব্যক্তিকে কাঁদতে কাঁদতে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন ‘মিস, আমার বাচ্চা কই’। তখন সেখানে জড়ো হওয়া স্থানীয় লোকজন
তার সন্তানের নাম এবং কোন শ্রেণীতে পড়ে তা জানতে চান। ওই নারী বলেন, তার ছেলের নাম সাজ্জাদ সাদী, সে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
তখন উপস্থিত লোকজনের কয়েকজন এই অভিভাবককে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। ক্লাস টেনের বাচ্চাদের কিছুই হয়নি। আমরা ভেতরে গিয়েছিলাম। ক্লাস ফোর আর ক্লাস ফাইভের বাচ্চারাই মূলত বেশি হতাহত হয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়া ভবনটির প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম। এর সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের অফিস ও মিটিং রুম। বিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয় তার আগেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
ভবনের যে অংশে বিধ্বস্ত বিমানটি আঘাত করে সেখানে ‘বাচ্চাকাচ্চারা জড়ো’ হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিলেন বলেও জানান মহাপরিচালক।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, বিমানটি একটি ভবনের গেইটে আছড়ে পড়ে। সেটি অ্যাকাডেমিক ভবন। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের ক্লাস চলছিল। একের পর এক আহতদের বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বিমান দুর্ঘটনার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকজুড়ে দেখা যায় শোকের ছাপ। মাইলস্টোন কলেজের অনেকেই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ও প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেছেন।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালায় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সেখানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।
‘আমার বাচ্চা নাই’:
সন্তানের খোঁজ চেয়ে আহাজারি করছিলেন মাইলস্টোনের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমার পিতা লিয়ন মির। ফেইসবুকে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘আমরা কোন হাসপাতালে যাব, সন্তানকে খুঁজে দেন।’
এরপর ফেইসবুকে লাইভে তিনি দাবি করেন, তার সন্তান বেঁচে নেই। লিয়ন মিন বলেন, ‘আমার বাচ্চা নাই। আমার বাচ্চা মারা গেছে। সিএমএইচের মর্গে আছে। কেউ আমাদের এসে নিয়ে যান।’
‘ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না’:
দুর্ঘটনাস্থলে সন্তানদের খোঁজ নিতে আসেন লাকি আক্তার নামের এক অভিভাবক। তিনি বেলা তিনটার দিকে সেখানে উপস্থিত লোকজন ও উদ্ধারকর্মীদের বলেন, তার দুই সন্তান মাইলস্টোন স্কুলে পড়ে। তিনি বড় সন্তানকে ক্লাসরুম থেকে বের করতে পেরেছেন। কিন্তু ‘ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে’:
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর কক্ষের মেঝেতে পড়ে কাঁদছিলেন ফাহাদ নিয়ন। তিনি তার চতুর্থ শ্রেণীপড়–য়া ভাগনি মেহরিনের পোড়া কাপড় ধরে কাঁদছিলেন।
ফাহাদ বলেন, ‘ও খুব নিষ্পাপ। ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে।’ এ সময় তিনি ওই শিক্ষার্থীর স্কুল ড্রেস দেখিয়ে বলেন, ‘এটা ওর ড্রেস। ও খুব নিষ্পাপ ভাই। সারা দিন পড়াশোনা করে। ওর দুই হাত পুড়ে গেছে। মুখ পুড়ে গেছে।’
‘মা, আমার সব জ্বলে’:
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একই কক্ষের মেঝেতে মেয়েকে ধরে চিৎকার করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তার মেয়ে জান্নাত ইউশা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে মা, আমার সব জ্বলে.... মেয়ের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, পিঠও পুড়ে গেছে।
তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার মেয়ের সব পুড়ে গেছে, তোমরা কেউ তার জ্বলা বন্ধ করো। আমি আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমার বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছে।’
ইয়াসমিন আক্তার জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে মাইলস্টোনে পড়ে।
এ সময় তার পাশে বসা ছেলে তাহমিন ইসলাম রোহান বলে, প্রতিদিনের মতো এদিন বোনকে স্কুল থেকে আনতে যাই। গিয়ে দেখি স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে ক্লাসরুমে গিয়ে খুঁজতে থাকি, কিন্তু দেখি বোনকে পাচ্ছিলাম না। পরে তাকে খুঁজে বের করে দেখি বোনের শরীর পুড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উত্তরার লুবনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসি।
ঘটনাস্থলে থাকা মাইলস্টোন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পরিচয় দিয়ে সবুজ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের দোতলা ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। ক্লাস শেষ হয়েছিল বেলা ১টার দিকে। কিছু শিক্ষার্থী বেরিয়ে গিয়েছিল। অনেকে অভিভাবকদের জন্য অপেক্ষা করছিল, তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।
মাইলস্টোনের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহিম হাসান সিয়াম বলেন, প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে বিমানটি পড়েছে। ভবনটিতে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি ক্লাসরুম ও ৪টি শিক্ষকের রুম আছে। এই ভবনে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস হতো। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শ্রেণীকক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তখন ক্লাস চলছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শেষ হতো। ঠিক সেই সময় কলেজের প্রজেক্ট-৭ নম্বর ভবনে বিমানটি ধাক্কা লেগে জ্বালানি ‘লিকেজ’ হয়। পরে প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে আছড়ে পড়ে।