বিশ্বব্যাংকের চলতি বছরের রিপোর্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম আবহাওয়া বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এতে মৌলিক খাদ্য পণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। ফলে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে।
সোমবার,(২১ জুলাই ২০২৫) প্রকাশিত এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বার্সেলোনা সুপারকম্পিউটিং সেন্টারের ম্যারি কুরি পোস্টডক্টরাল ফেলো ম্যাক্সিমিলিয়ান কটজ। এতে সহায়তা করেছে পোটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ, আইসিআরইএ, ইসিআইইউ, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক, অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্য ফুড ফাউন্ডেশন।
এ রিপোর্ট এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন আগামী ২৭ জুলাই জাতিসংঘের ফুড সিস্টেমস সামিট স্টকটেক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যার আয়োজক ইথিওপিয়া ও ইতালি। এই দুই দেশই জলবায়ুজনিত খাদ্য সংকটে ভুগছে যা গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণায় ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৮টি দেশে সংঘটিত ১৬টি চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা ও বন্যার কারণে অনেক দেশে ২০২০ সালের আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যে ২০২৪ সালের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে আলুর দাম ২২ শতাংশ বেড়ে যায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘটনা ১০ গুণ বেশি সম্ভাব্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও অ্যারিজোনায় ২০২২ সালের গ্রীষ্মে ভয়াবহ খরার কারণে সবজির দাম ৮০ শতাংশ বেড়ে যায়।
ইথিওপিয়া ও হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলজুড়ে গত ৪০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার ফলে ২০২৩ সালের মার্চে খাদ্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই খরার সম্ভাবনা ১০০ গুণ বেশি ছিল। একই সময়ে, স্পেন ও ইতালিতে খরার কারণে জলপাই তেলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ে, আইভরি কোস্ট ও ঘানায় কোকো চকোলেটের দাম ২৮০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং ভিয়েতনামে রোবস্টা কফির দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ভারতে ২০২৪ সালের মে মাসে চরম তাপপ্রবাহের ফলে পেঁয়াজ ও আলুর দাম ৮০ শতাংশ এর বেশি বেড়ে যায়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মেক্সিকোতেও চরম আবহাওয়ার কারণে বড় ধরনের খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে। পাকিস্তানে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্যের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের চলতি বছরের রিপোর্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে ‘লাল’ শ্রেণীতে আছে বাংলাদেশ। দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই শ্রেণীতে অবস্থান করছে। সাধারণত, যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকে তাদের লাল শ্রেণীতে রাখে বিশ্বব্যাংক। তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি। ১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। ২০২৪ সালে মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি আগে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল।
এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব গভীর। দ্য ফুড ফাউন্ডেশন জানায়, প্রতি ক্যালোরির পুষ্টিকর খাবার অনপুষ্টিকর খাবারের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয়বহুল। ফলে, কম আয়ের পরিবারগুলো তাজা খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণার প্রধান লেখক ম্যাক্সিমিলিয়ান কটজ বলেন, ‘যতদিন না আমরা নিট-শূন্য কার্বন নিঃসরণে পৌঁছাচ্ছি, ততদিন চরম আবহাওয়া আরও বাড়বে। ইতোমধ্যেই তা ফসলের ক্ষতি করছে এবং খাদ্যের দাম বাড়াচ্ছে। মানুষ এখন এটি উপলব্ধি করছে চরম তাপমাত্রার পরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিই জলবায়ুর সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রভাব।’
ইসিআইইউ-এর বিশ্লেষক অ্যাম্বার সয়ার বলেন, ‘মাত্র দুই বছরে, জলবায়ু সংকট যুক্তরাজ্যের গড় পরিবারের খাদ্য ব্যয়ে অতিরিক্ত ৩৬০ ইউরো যোগ করেছে। কৃষকদের জন্য এটি কেবল ভবিষ্যৎ হুমকি নয় তারা প্রতিদিন এটির মুখোমুখি হচ্ছেন: অতিরিক্ত গরম ও বন্যা ফসল উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত করছে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবী ইতোমধ্যেই প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়ে গেছে। দ্রুত নিঃসরণ না কমালে বিশ্ব ৩ ডিগ্রি উষ্ণায়নের পথে রয়েছে যা বিজ্ঞানীরা ‘বিপর্যয়কর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ২০২৩ ছিল রেকর্ডের সর্বাধিক গরম বছর, যা ২০২৪তে ছাড়িয়ে গেছে, এবং ২০২৫ সালকেও বিশ্বের তিনটি সবচেয়ে উষ্ণ বছরের মধ্যে একটিতে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস।
বিশ্বব্যাংকের চলতি বছরের রিপোর্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম আবহাওয়া বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এতে মৌলিক খাদ্য পণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। ফলে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে।
সোমবার,(২১ জুলাই ২০২৫) প্রকাশিত এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বার্সেলোনা সুপারকম্পিউটিং সেন্টারের ম্যারি কুরি পোস্টডক্টরাল ফেলো ম্যাক্সিমিলিয়ান কটজ। এতে সহায়তা করেছে পোটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ, আইসিআরইএ, ইসিআইইউ, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক, অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্য ফুড ফাউন্ডেশন।
এ রিপোর্ট এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন আগামী ২৭ জুলাই জাতিসংঘের ফুড সিস্টেমস সামিট স্টকটেক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যার আয়োজক ইথিওপিয়া ও ইতালি। এই দুই দেশই জলবায়ুজনিত খাদ্য সংকটে ভুগছে যা গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণায় ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৮টি দেশে সংঘটিত ১৬টি চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা ও বন্যার কারণে অনেক দেশে ২০২০ সালের আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যে ২০২৪ সালের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে আলুর দাম ২২ শতাংশ বেড়ে যায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘটনা ১০ গুণ বেশি সম্ভাব্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও অ্যারিজোনায় ২০২২ সালের গ্রীষ্মে ভয়াবহ খরার কারণে সবজির দাম ৮০ শতাংশ বেড়ে যায়।
ইথিওপিয়া ও হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলজুড়ে গত ৪০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার ফলে ২০২৩ সালের মার্চে খাদ্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই খরার সম্ভাবনা ১০০ গুণ বেশি ছিল। একই সময়ে, স্পেন ও ইতালিতে খরার কারণে জলপাই তেলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ে, আইভরি কোস্ট ও ঘানায় কোকো চকোলেটের দাম ২৮০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং ভিয়েতনামে রোবস্টা কফির দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ভারতে ২০২৪ সালের মে মাসে চরম তাপপ্রবাহের ফলে পেঁয়াজ ও আলুর দাম ৮০ শতাংশ এর বেশি বেড়ে যায়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মেক্সিকোতেও চরম আবহাওয়ার কারণে বড় ধরনের খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে। পাকিস্তানে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্যের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের চলতি বছরের রিপোর্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে ‘লাল’ শ্রেণীতে আছে বাংলাদেশ। দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই শ্রেণীতে অবস্থান করছে। সাধারণত, যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকে তাদের লাল শ্রেণীতে রাখে বিশ্বব্যাংক। তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি। ১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। ২০২৪ সালে মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি আগে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল।
এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব গভীর। দ্য ফুড ফাউন্ডেশন জানায়, প্রতি ক্যালোরির পুষ্টিকর খাবার অনপুষ্টিকর খাবারের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয়বহুল। ফলে, কম আয়ের পরিবারগুলো তাজা খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণার প্রধান লেখক ম্যাক্সিমিলিয়ান কটজ বলেন, ‘যতদিন না আমরা নিট-শূন্য কার্বন নিঃসরণে পৌঁছাচ্ছি, ততদিন চরম আবহাওয়া আরও বাড়বে। ইতোমধ্যেই তা ফসলের ক্ষতি করছে এবং খাদ্যের দাম বাড়াচ্ছে। মানুষ এখন এটি উপলব্ধি করছে চরম তাপমাত্রার পরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিই জলবায়ুর সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রভাব।’
ইসিআইইউ-এর বিশ্লেষক অ্যাম্বার সয়ার বলেন, ‘মাত্র দুই বছরে, জলবায়ু সংকট যুক্তরাজ্যের গড় পরিবারের খাদ্য ব্যয়ে অতিরিক্ত ৩৬০ ইউরো যোগ করেছে। কৃষকদের জন্য এটি কেবল ভবিষ্যৎ হুমকি নয় তারা প্রতিদিন এটির মুখোমুখি হচ্ছেন: অতিরিক্ত গরম ও বন্যা ফসল উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত করছে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবী ইতোমধ্যেই প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়ে গেছে। দ্রুত নিঃসরণ না কমালে বিশ্ব ৩ ডিগ্রি উষ্ণায়নের পথে রয়েছে যা বিজ্ঞানীরা ‘বিপর্যয়কর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ২০২৩ ছিল রেকর্ডের সর্বাধিক গরম বছর, যা ২০২৪তে ছাড়িয়ে গেছে, এবং ২০২৫ সালকেও বিশ্বের তিনটি সবচেয়ে উষ্ণ বছরের মধ্যে একটিতে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস।