alt

জাতীয়

৯ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যায় মুক্তি পেলেন উপদেষ্টারা

মহসীন ইসলাম টুটুল : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাত্র বিক্ষোভ -সংবাদ

রাজধানী ঢাকার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩১ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার,( ২২ জুলাই ২০২৫) দিনভর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। শিক্ষার্থীদের টানা বিক্ষোভে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন। বিকেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশি পাহারায় একবার ক্যাম্পাস থেকে বের হয়েও দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তারা পুনরায় কলেজে ফিরতে বাধ্য হন। দিনভর নাটকীয়তার পর অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কড়া পুলিশি পাহারায় উপদেষ্টাদের গাড়িবহর ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

গতকাল সোমবারের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মঙ্গলবার, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইলস্টোন কলেজে যান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। কিন্তু পরিদর্শন শেষে তারা ফিরতে গেলেই শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীরা গাফিলতির অভিযোগ তুলে স্লোগানে স্লোগানে ক্যাম্পাস উত্তাল করে তোলে। শিক্ষার্থীরা মূলত ছয়টি দাবিতে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হাসিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিটি ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী ছিল। কলেজের স্কুল শাখার হায়দার আলী ভবনের দুটি ক্লাস রুমজুড়ে আছড়ে পড়ে যুদ্ধবিমানটি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ওই দুটি ক্লাস রুম থেকে একজন শিক্ষার্থীও বের হতে পারেনি।’ ওই দুই ক্লাস রুমে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে দাবি তার। এছাড়া উপর তলার ক্লাস রুমগুলোতেও আগুনের শিখা গ্রাস করে এবং সেখানেও বহু হতাহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

হাসিবের অভিযোগ, যেখানে দুই ক্লাস রুমেই এই পরিমাণ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, সেখানে সরকারের তরফ থেকে কী করে ২০ জন নিহতের কথা বলা হয়। তিনি আহত ও নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করার জন্য দাবি জানান। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এবং ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।

এ সময় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় উপদেষ্টারা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে ৫ নম্বর ভবনের একটি সম্মেলন কক্ষে আশ্রয় নেন। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচ থেকে সাতজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেন। বেলা পৌনে একটার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল লাউডস্পিকারে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির সব ‘অত্যন্ত যৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু এই আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং কলেজের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।

দুপুর সোয়া ২টার দিকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা ৫ নম্বর ভবনের ফটকে অবস্থান নেয়া পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ বাহিনীর একটি ডাবল কেবিন গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকর্মীদেরও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে এক প্লাটুন এপিবিএন, ডিএমপির রিজার্ভ পুলিশ এবং এটিইউর একটি ইউনিটসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এরপর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশি পাহারায় উপদেষ্টারা কলেজ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

তবে মূল নাটকীয়তার তখনও বাকি ছিল। উপদেষ্টাদের গাড়িবহর বিকেল পৌনে চারটার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া মাইলস্টোনসহ রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী তাদের পথরোধ করে। শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ ও র?্যাব সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় দশ মিনিট পর, উপায়ন্তর না দেখে উপদেষ্টাদের গাড়িবহর পুনরায় মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।

এই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, উপদেষ্টারা ক্যাম্পাসের ৭ নম্বর অ্যাকাডেমিক ভবনে অবস্থান নেন। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর অবশেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩৩ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাদের গাড়িবহর মেট্রোরেল ডিপোর পাশের রাস্তা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

শিক্ষার্থীরা যে ছয়টি দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করে সেগুলো হলো, ১. নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করা। ২. আহতদের নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করা। ৩. শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত সেনাসদস্যদের জনসম্মুখে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। ৪. নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া। ৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু করা। ৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও কেন্দ্র সংস্কার করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করা।

সরকারের বক্তব্য:

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকার শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবিকেই যৌক্তিক বলে মনে করে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, মাইলস্টোন কলেজে একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে নিহত, আহত ও নিখোঁজদের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। তিনি আরও জানান, নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট দেয়া হবে। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর জন্য বিমানবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। এছাড়া, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার জানান, আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষাটি পরে নেয়া হবে।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছাই হলো সায়মার

ছবি

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে এক বছরে যাত্রী কমেছে অর্ধেক

‘আমার মেয়েসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক হত্যার দায় কে নেবে’

শিক্ষার্থী রাইসার নিথর দেহ সিএমএইচ-এ শনাক্ত

ছবি

রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় পাইলট তৌকির, জানাজায় হাজারও মানুষের ঢল

পাচারকৃত মোট অর্থের ৭৫ শতাংশই হয় বাণিজ্যের মাধ্যমে: গবেষণা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, দলগুলোর মতামতের অপেক্ষায় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘এই বিমান পুরনো না, প্রযুক্তিগতভাবে পুরনো’

প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না দলীয় প্রধান, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

আর্থিক সহায়তার পোস্ট সরিয়ে নেয়া হলো প্রধান উপদেষ্টার পেইজ থেকে

বোন চিরনিদ্রায়, বার্ন ইউনিটে ভাই লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লো

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি: সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্র

ছবি

বাংলাদেশকে ১৫ হাজার কোভিড টেস্টিং কিট উপহার দিলো চীন

ছবি

সেনাসদস্যদের হাতে শিক্ষার্থী ‘মারধরের’ অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে: আইএসপিআর

ছবি

প্রযুক্তি পুরনো হলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ছাড় নেই:বিমান বাহিনীর প্রধান

ছবি

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে আটকা পড়া উপদেষ্টারা পুলিশের পাহারায় ফিরলেন

ছবি

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মোবারক হোসেনের করা আপিলের শুনানি শেষ

ছবি

সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ কাদানে গ্যাস,সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি

স্থগিত ২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও

ছবি

বিক্ষোভের মুখে শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি, সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

উপদেষ্টাদের আটকে রেখে মাইলস্টোনের গেটে তালা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

ছবি

শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবিই ‘যৌক্তিক’ বলে স্বীকার করল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

বিধ্বস্ত এফটি-৭ বিজিআই বিমানটি প্রশিক্ষণ নয়, ছিল যুদ্ধবিমান: আইএসপিআর

ছবি

সব দাবি পূরণের আশ্বাস আইন উপদেষ্টার, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৮ জুলাই

ছবি

মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, উপদেষ্টাদের সঙ্গে চলছে আলোচনা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

হতাহতের তথ্য গোপনের দাবিকে ‘অপপ্রচার’ বলছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ২৭, চিকিৎসাধীন ৭৮ জন

ছবি

মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত, গভীর রাতে ফেইসবুকে উপদেষ্টা, কর্মকর্তাদের ঘোষণা

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শোক প্রকাশ

চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায় এআই চালুর উদ্যোগ

পীরগাছায় গৃহবধূকে ধর্ষণ, মামলা দায়ের

tab

জাতীয়

৯ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যায় মুক্তি পেলেন উপদেষ্টারা

মহসীন ইসলাম টুটুল

গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাত্র বিক্ষোভ -সংবাদ

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

রাজধানী ঢাকার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩১ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার,( ২২ জুলাই ২০২৫) দিনভর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। শিক্ষার্থীদের টানা বিক্ষোভে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন। বিকেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশি পাহারায় একবার ক্যাম্পাস থেকে বের হয়েও দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তারা পুনরায় কলেজে ফিরতে বাধ্য হন। দিনভর নাটকীয়তার পর অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কড়া পুলিশি পাহারায় উপদেষ্টাদের গাড়িবহর ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

গতকাল সোমবারের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মঙ্গলবার, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইলস্টোন কলেজে যান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। কিন্তু পরিদর্শন শেষে তারা ফিরতে গেলেই শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীরা গাফিলতির অভিযোগ তুলে স্লোগানে স্লোগানে ক্যাম্পাস উত্তাল করে তোলে। শিক্ষার্থীরা মূলত ছয়টি দাবিতে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হাসিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিটি ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী ছিল। কলেজের স্কুল শাখার হায়দার আলী ভবনের দুটি ক্লাস রুমজুড়ে আছড়ে পড়ে যুদ্ধবিমানটি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ওই দুটি ক্লাস রুম থেকে একজন শিক্ষার্থীও বের হতে পারেনি।’ ওই দুই ক্লাস রুমে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে দাবি তার। এছাড়া উপর তলার ক্লাস রুমগুলোতেও আগুনের শিখা গ্রাস করে এবং সেখানেও বহু হতাহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

হাসিবের অভিযোগ, যেখানে দুই ক্লাস রুমেই এই পরিমাণ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, সেখানে সরকারের তরফ থেকে কী করে ২০ জন নিহতের কথা বলা হয়। তিনি আহত ও নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করার জন্য দাবি জানান। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এবং ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।

এ সময় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় উপদেষ্টারা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে ৫ নম্বর ভবনের একটি সম্মেলন কক্ষে আশ্রয় নেন। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচ থেকে সাতজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেন। বেলা পৌনে একটার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল লাউডস্পিকারে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির সব ‘অত্যন্ত যৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু এই আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং কলেজের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।

দুপুর সোয়া ২টার দিকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা ৫ নম্বর ভবনের ফটকে অবস্থান নেয়া পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ বাহিনীর একটি ডাবল কেবিন গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকর্মীদেরও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে এক প্লাটুন এপিবিএন, ডিএমপির রিজার্ভ পুলিশ এবং এটিইউর একটি ইউনিটসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এরপর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশি পাহারায় উপদেষ্টারা কলেজ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

তবে মূল নাটকীয়তার তখনও বাকি ছিল। উপদেষ্টাদের গাড়িবহর বিকেল পৌনে চারটার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া মাইলস্টোনসহ রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী তাদের পথরোধ করে। শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ ও র?্যাব সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় দশ মিনিট পর, উপায়ন্তর না দেখে উপদেষ্টাদের গাড়িবহর পুনরায় মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।

এই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, উপদেষ্টারা ক্যাম্পাসের ৭ নম্বর অ্যাকাডেমিক ভবনে অবস্থান নেন। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর অবশেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩৩ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাদের গাড়িবহর মেট্রোরেল ডিপোর পাশের রাস্তা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

শিক্ষার্থীরা যে ছয়টি দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করে সেগুলো হলো, ১. নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করা। ২. আহতদের নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করা। ৩. শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত সেনাসদস্যদের জনসম্মুখে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। ৪. নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া। ৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু করা। ৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও কেন্দ্র সংস্কার করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করা।

সরকারের বক্তব্য:

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকার শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবিকেই যৌক্তিক বলে মনে করে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, মাইলস্টোন কলেজে একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে নিহত, আহত ও নিখোঁজদের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। তিনি আরও জানান, নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট দেয়া হবে। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর জন্য বিমানবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। এছাড়া, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার জানান, আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষাটি পরে নেয়া হবে।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।

back to top