গতকাল সচিবালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠিপেটা -সংবাদ
শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার ও শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘাত শুরু হয়। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ৭৫ শিক্ষার্থী আহত
কয়েকটি জেলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মধ্যরাতের পর এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা
বিক্ষোভকারীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার পর সারাদিন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা না দিয়ে রাত ৩টার দিকে তা করেছেন। একই সঙ্গে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের ‘সঠিক তথ্য’ প্রকাশের দাবি করেছেন। এদিন একই দাবিতে ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নওগাঁয় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সচিবালয়ের ভেতর থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করে দেয়। শিক্ষার্থীরাও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সচিবালয় ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার,( ২২ জুলাই ২০২৫) বিকেল ৬টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষে আহত ৭৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থী ও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ঢাকা ছাড়াও শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবিতে একইদিনে চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে যশোর শিক্ষা বোর্ড ও ডিসি অফিস ঘেরাও, নওগাঁয় সড়কে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে তালা দেয়া এবং বরিশাল মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গতকাল সোমবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা দেয় গতকাল সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক পরীক্ষার্থী সেই খবর জানতে পায় কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর।
শিক্ষা উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তথ্য উপদেষ্টা গতকাল সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে রাত ৪টার দিকে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষা সচিবের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার, দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীসহ কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়েও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
শিক্ষার্থীরা এদিন প্রথমে সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পরে সচিবালয়ের সব ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ সময় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, ‘প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ডসংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে।’
তিনি মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক তথ্য প্রকাশেরও দাবি জানান।
ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা (বিমান দুর্ঘটনা) ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থী জানতেও পারেনি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সকালবেলা অনেকে পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।’
শিক্ষার্থীদের দাবি মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান।
এরপরও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সচিবালয়ের তিন নম্বর গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। এ সময় সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে তৎপর হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। পরে জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শোনা যায়।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ‘খুবই ব্যস্ত’। তাদের কথা বলার সময় নেই।
বিকেল ৫টার দিকেও গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে টিকতে না পেরে বাইতুল মোকাররম মসজিদ ও গুলিস্তান থেকেও সরে যায় শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান-জিরো পয়েন্ট এলাকা স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আহত ব্যক্তিদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আহত শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- বিজন, তামিম, ইমন, সিয়াম, মো. হাসান, তানভীর, সাকিব, বেরাতুল, রিফাত, আবির মাহমুদ, তানভীর, রিফাত, মেহেদী, সাদমান, সামিরা, মারুফ, সাকিব, মাহিম, রোহান, বিশাল, ইমরান, আহনাদ, মাহি নাঈম, হাসিব, সায়েম, জিদান, রায়হান, রোমান, প্রান্ত, মাহিদ অনতু। এদের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে।
ঢাকা মেডিকেলে মেহবুব ইমন নামের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনার পর গভীর রাতে হঠাৎ করে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
সে কারণেই শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবিতে সব কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে সচিবালয় ঘেরাও করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান।
গতকাল সচিবালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠিপেটা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার ও শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘাত শুরু হয়। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ৭৫ শিক্ষার্থী আহত
কয়েকটি জেলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মধ্যরাতের পর এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা
বিক্ষোভকারীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার পর সারাদিন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা না দিয়ে রাত ৩টার দিকে তা করেছেন। একই সঙ্গে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের ‘সঠিক তথ্য’ প্রকাশের দাবি করেছেন। এদিন একই দাবিতে ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নওগাঁয় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সচিবালয়ের ভেতর থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করে দেয়। শিক্ষার্থীরাও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সচিবালয় ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার,( ২২ জুলাই ২০২৫) বিকেল ৬টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষে আহত ৭৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থী ও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ঢাকা ছাড়াও শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবিতে একইদিনে চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে যশোর শিক্ষা বোর্ড ও ডিসি অফিস ঘেরাও, নওগাঁয় সড়কে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে তালা দেয়া এবং বরিশাল মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গতকাল সোমবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা দেয় গতকাল সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক পরীক্ষার্থী সেই খবর জানতে পায় কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর।
শিক্ষা উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তথ্য উপদেষ্টা গতকাল সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে রাত ৪টার দিকে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষা সচিবের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার, দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীসহ কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়েও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
শিক্ষার্থীরা এদিন প্রথমে সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পরে সচিবালয়ের সব ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ সময় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, ‘প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ডসংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে।’
তিনি মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক তথ্য প্রকাশেরও দাবি জানান।
ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা (বিমান দুর্ঘটনা) ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থী জানতেও পারেনি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সকালবেলা অনেকে পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।’
শিক্ষার্থীদের দাবি মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান।
এরপরও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সচিবালয়ের তিন নম্বর গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। এ সময় সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে তৎপর হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। পরে জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শোনা যায়।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ‘খুবই ব্যস্ত’। তাদের কথা বলার সময় নেই।
বিকেল ৫টার দিকেও গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে টিকতে না পেরে বাইতুল মোকাররম মসজিদ ও গুলিস্তান থেকেও সরে যায় শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান-জিরো পয়েন্ট এলাকা স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আহত ব্যক্তিদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আহত শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- বিজন, তামিম, ইমন, সিয়াম, মো. হাসান, তানভীর, সাকিব, বেরাতুল, রিফাত, আবির মাহমুদ, তানভীর, রিফাত, মেহেদী, সাদমান, সামিরা, মারুফ, সাকিব, মাহিম, রোহান, বিশাল, ইমরান, আহনাদ, মাহি নাঈম, হাসিব, সায়েম, জিদান, রায়হান, রোমান, প্রান্ত, মাহিদ অনতু। এদের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে।
ঢাকা মেডিকেলে মেহবুব ইমন নামের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনার পর গভীর রাতে হঠাৎ করে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
সে কারণেই শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবিতে সব কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে সচিবালয় ঘেরাও করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান।