alt

জাতীয়

বোন চিরনিদ্রায়, বার্ন ইউনিটে ভাই লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

মাসুদ রানা : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের সামনে অপেক্ষমাণ রয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। কাদা মাখা প্যান্ট। গায়ের শার্ট ঘামে ভিজে আবার শুকিয়েছে বহুবার। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন। আর সেকেন্ডে সেকেন্ডে উঁকি দিচ্ছেন ওয়ার্ডের দিকে। দরজার কাচ দিয়ে ভেতরে দেখছেন। কেননা, সেখানে ভর্তি রয়েছে তার আদরের শিশু সন্তান মুনতাহা তোয়া কর্ন (১০)। ৫ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় কর্ন তুলনামূলকভাবে ভালো আছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে

চিকিৎসাধীন থাকা ২৮ শিশুর মধ্যে অনেকের জীবন শঙ্কায়

ছোট ভাইয়ের আকুতি

‘আমি কি বাঁচবো আপু’

হাসপাতাল ছুটি দিবে

কবে? প্রশ্ন করছে শিশুরা

আহতদের চিকিৎসা দিতে

ঢাকায় সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল

বার্ন ইনস্টিটিউটে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

চিকিৎসকরা এমনটি নিশ্চিত করলেও মন মানছে না বাইরে অপেক্ষমাণ থাকা বাবা-মায়ের। তাই মেয়েকে এক নজর দেখার আশায়, পরম আদরে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন আবুল কালাম। আবুল কালাম বলেন, যেখানে বিমান পড়েছে, ওই স্থানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আমার মেয়ে। বিমান পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে দৌড় দেয়। তবে বিস্ফোরণের তাপ এসে লাগে দুই হাতে। কাঁধের স্কুল ব্যাগেও আগুন ধরে যায়। সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে। এরপর কয়েক হাসপাতাল ঘুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসে মেয়েকে দেখতে পাই। খুব ভয় পেয়েছে আমার মেয়েটা। সারা রাত ঘুমাতেও পারেনি। একটু দোয়া কইরেন আমার মেয়েটার জন্য।

শুধু সামিয়া আর কর্ন নয়, তাদের মতো বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা ২৮ শিশুর মধ্যে অনেকের জীবন শঙ্কায় রয়েছে। ছোট্ট শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তাদের বাবা-মা বাইরে অপেক্ষা করছেন, কিছুক্ষণ পর পর অনুমতি নিয়ে সন্তানের কাছে যাচ্ছেন। পরম যত্নে আদর করছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘তোমার কিচ্ছু হবে না, সুস্থ হয়ে উঠবে। ২/১ দিন পরই আমরা তোমাকে এখান থেকে বাসায় নিয়ে যাবো।’ এমন আশ্বস্ত করে বাইরে এসে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অভিভাবকরা। স্কুল ছুটির পর দৌড়ে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও এখন জীবন শঙ্কায় হাসপাতালের বিছানায় কোমলমতি শিশুরা। ইতোমধ্যে লাশ হয়ে মর্গ ঘুরে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে তাদের অনেক সহপাঠী। অভিভাবকদের আশঙ্কা, না জানি তার সন্তানেরও এমনটি হয়। না জানি অস্ফূট স্বরে বলা সন্তানের কথাটি সত্য হয়ে যায়।

এছাড়া বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থী তাহিয়া তাবাসসুম নাজিয়া গতকাল সোমবার গভীর রাতে বার্ন ইউনিটে মারা গেছে। আর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে তার ছোট ভাই নাফি। নাজিয়া ও নাফি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছানকাজি হাওলাদার বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল হোসেন নিরবের ছেলেমেয়ে। তারা উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। গতকাল সোমবার দুপুরের এই দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর নাজিয়া (১৩) ও তার ভাই ক্লাস ওয়ানের শিক্ষার্থী নাফিকে

কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে সে মারা যায় বলে জানান। স্বজনরা জানান, দুর্ঘটনায় নাজিয়ার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

ছোট ভাইয়ের আকুতি ‘আমি কি বাঁচবো আপু’

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-এর সামনে বিলাপ করছিলেন ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহতাবুর রহমান ভূঁইয়ার বড় বোন নাবিলা। তিনি বলেন, ও বুঝতে পারছে না শরীরে কী হইছে? সকালে একটু জুস খাইয়ে দিছি। আমাকে বলে, আমি কি বাঁচবো আপু? কথাগুলো বলতে বলতে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন নাবিলা। শুধু হাফিজ উদ্দিন ও নাবিলাই নয়, বার্ন ইনস্টিটিউটের সব স্বজনের একই অবস্থা। দুর্ঘটনার পর থেকেই আর্তনাদ আর আহাজারিতে কাটছে তাদের। যাদের শ্বাসনালি পুড়েছে, তাদের সবাই চোখের অথবা হাতের ইশারাতে নিজের যন্ত্রণা বোঝানোর চেষ্টা করছে।

যারা কথা বলতে পারছে, মা মা আর পারছি না, অনেক কষ্ট হচ্ছে, বাবা আমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাও, এমন সব কথা বলে পোড়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। স্বজনরাও কোমলমতি শিশুদের এমন করুণ পরিণতি মানতে পারছেন না। মঙ্গলবার,( ২২ জুলাই ২০২৫) দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে এমন সব হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখা যায়। আইসিইউ, এফএইচডিইউ ও সাধারণ ওয়ার্ডগুলোর সামনে স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। অন্তত যেন প্রাণে বেঁচে থাকে আদরের সন্তান- এই একটিই প্রার্থনা সবার। এরসঙ্গে সন্তানের মৃত্যুর খবর আসার আতঙ্ক তো আছেই। কোনো প্রয়োজনে ওয়ার্ড নাম্বার উল্লেখ করে স্বজন খুঁজলেই আতঙ্কে আঁতকে উঠছেন স্বজনরা।

চিকিৎসাধীন ২৮ শিশু

বার্ন ইনস্টিটিউটের করা তালিকা অনুযায়ী সেখানে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে ২৮টি শিশু। তারা হলো- মাহতাব (১৪) ৪৫ শতাংশ, এবি শামীম (১৪) ৯৫ শতাংশ, সায়মা (১০) ২৫ শতাংশ, মাহিয়া (১৫) ৫০ শতাংশ, নাফিজ (৯) ৯৫ শতাংশ, আফরান ফাইয়াজ (১৪) ৯৫ শতাংশ। এদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকিরা হলো- মুনতাহাব (১০) ৫ শতাংশ, রুপি বড়–য়া (১০) ৬ শতাংশ, জায়ানা (১৩) ৮ শতাংশ, ইশা (১১) ৬ শতাংশ, পায়েল (১২) ১০ শতাংশ, তাসনিয়া (১০) ৫ শতাংশ, কাব্বো (১৩) ২০ শতাংশ, সায়েবা (৯), তৌফিক (১৩), আলভিরা (১০), নুসরাত (১২), জুনায়েদ (১২), শ্রেভা (৯), কাফি আহমেদ (১০), আয়াত (১৪), রোহান (১৪), আবিদুর রহমান (১০), আয়ন (১৪), আরিয়ান আফিফ (১২), মাকিন (১৫), সায়েমা (৯) ও মেহরিন (১১)।

অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী এবং কোমলমতি শিশু। আর তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে ভর্তি দগ্ধদের বেশিরভাগই শিশু। তাদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের একটি বিশেষ দল আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। সবাইকে সারিয়ে তুলতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বার্নে যে ৬ জন মারা গেল

বার্ন ইনস্টিটিউটে গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর থেকে মঙ্গলবার, বিভিন্ন সময়ে ৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি-ই শিশু। নিহত ৬ হলো- উত্তরা- ১নং সেক্টরের বাসিন্দা আবুল ফাতাহ মো. ইউসুফের ছেলে শায়ান ইউসুফ (১৪)। তার শরীরের ৯৫ দগ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার, তার চাচা মো. হাবিব সরোয়ার লাশ গ্রহণ করেন। তুরাগ থানাধীন তারার টেকের মো. আবু শাহীনের ছেলে রোহান উদ্দিন বাপ্পী (৯)। তার দগ্ধ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। একই এলাকার মো. সেলিম মিয়ার ছেলে আরিয়ান-১ (১২)। তার দগ্ধ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। রাজবাড়ীর আশরাফুল ইসলামের মেয়ে নাজিয়া (১৩)। তার দগ্ধ হয়েছে ৯০ শতাংশ। বান্দরবানের রামু উপজেলার উসাই মং মারমার ছেলে উক্য ছাই মারমা (১৪)। তার শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল। ৮৫ শতাংশ হওয়া শিক্ষিকা মাসুকা (৩৭)।

পুড়ে বিকৃত ৬ লাশ

বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়া ৬ লাশের বিপরীতে ৪টি দাবিদার এসেছে। পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মৃতদেহগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার, বেলা ৩টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন ভর্তি আছে। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা উন্নতি হওয়ায় বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২ জন শিক্ষক। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া ৬ জনের মধ্যে ৪ জনের বিপরীতে দাবিদার এসেছে। তাদের ডিএনএ টেস্ট করে ম্যাচ হওয়ার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। তবে এখনও ২টি লাশের দাবিদার আসেনি। মঙ্গলবার, রাতেই সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের এক দল বাংলাদেশে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা এলে চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন মনে করলে তারা করতে পারেন। এর আগে সকালে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ছিল ২৭ জন। এর মধ্যে ২৫টি শিশু ছিল।

শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশসহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মঙ্গলবার, বিকেল ৪টায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে সরেজমিনে দেখা যায়, বার্ন ইনস্টিটিউটে গেইটগুলোর সামনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার কাজ করছে সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট। পাশাপাশি কাজ করছেন পুলিশের একাধিক সদস্যও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টসহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। বাইরে বুথ বসিয়ে রক্তদাতাদের তালিকা করতে কাজ করছে বাঁধন, ছাত্রদলসহ একাধিক সংগঠন। এদিন বার্ন ইনস্টিটিউটে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একাধিক ভ্যান ও সদস্যদের। মেডিকেলের বাইরে তাদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছাই হলো সায়মার

ছবি

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে এক বছরে যাত্রী কমেছে অর্ধেক

‘আমার মেয়েসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক হত্যার দায় কে নেবে’

শিক্ষার্থী রাইসার নিথর দেহ সিএমএইচ-এ শনাক্ত

ছবি

রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় পাইলট তৌকির, জানাজায় হাজারও মানুষের ঢল

পাচারকৃত মোট অর্থের ৭৫ শতাংশই হয় বাণিজ্যের মাধ্যমে: গবেষণা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, দলগুলোর মতামতের অপেক্ষায় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘এই বিমান পুরনো না, প্রযুক্তিগতভাবে পুরনো’

প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না দলীয় প্রধান, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

আর্থিক সহায়তার পোস্ট সরিয়ে নেয়া হলো প্রধান উপদেষ্টার পেইজ থেকে

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লো

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি: সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্র

ছবি

৯ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যায় মুক্তি পেলেন উপদেষ্টারা

ছবি

বাংলাদেশকে ১৫ হাজার কোভিড টেস্টিং কিট উপহার দিলো চীন

ছবি

সেনাসদস্যদের হাতে শিক্ষার্থী ‘মারধরের’ অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে: আইএসপিআর

ছবি

প্রযুক্তি পুরনো হলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ছাড় নেই:বিমান বাহিনীর প্রধান

ছবি

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে আটকা পড়া উপদেষ্টারা পুলিশের পাহারায় ফিরলেন

ছবি

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মোবারক হোসেনের করা আপিলের শুনানি শেষ

ছবি

সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ কাদানে গ্যাস,সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি

স্থগিত ২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও

ছবি

বিক্ষোভের মুখে শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি, সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

উপদেষ্টাদের আটকে রেখে মাইলস্টোনের গেটে তালা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

ছবি

শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবিই ‘যৌক্তিক’ বলে স্বীকার করল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

বিধ্বস্ত এফটি-৭ বিজিআই বিমানটি প্রশিক্ষণ নয়, ছিল যুদ্ধবিমান: আইএসপিআর

ছবি

সব দাবি পূরণের আশ্বাস আইন উপদেষ্টার, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৮ জুলাই

ছবি

মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, উপদেষ্টাদের সঙ্গে চলছে আলোচনা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

হতাহতের তথ্য গোপনের দাবিকে ‘অপপ্রচার’ বলছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ২৭, চিকিৎসাধীন ৭৮ জন

ছবি

মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত, গভীর রাতে ফেইসবুকে উপদেষ্টা, কর্মকর্তাদের ঘোষণা

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শোক প্রকাশ

চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায় এআই চালুর উদ্যোগ

পীরগাছায় গৃহবধূকে ধর্ষণ, মামলা দায়ের

tab

জাতীয়

বোন চিরনিদ্রায়, বার্ন ইউনিটে ভাই লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

মাসুদ রানা

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের সামনে অপেক্ষমাণ রয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। কাদা মাখা প্যান্ট। গায়ের শার্ট ঘামে ভিজে আবার শুকিয়েছে বহুবার। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন। আর সেকেন্ডে সেকেন্ডে উঁকি দিচ্ছেন ওয়ার্ডের দিকে। দরজার কাচ দিয়ে ভেতরে দেখছেন। কেননা, সেখানে ভর্তি রয়েছে তার আদরের শিশু সন্তান মুনতাহা তোয়া কর্ন (১০)। ৫ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় কর্ন তুলনামূলকভাবে ভালো আছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে

চিকিৎসাধীন থাকা ২৮ শিশুর মধ্যে অনেকের জীবন শঙ্কায়

ছোট ভাইয়ের আকুতি

‘আমি কি বাঁচবো আপু’

হাসপাতাল ছুটি দিবে

কবে? প্রশ্ন করছে শিশুরা

আহতদের চিকিৎসা দিতে

ঢাকায় সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল

বার্ন ইনস্টিটিউটে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

চিকিৎসকরা এমনটি নিশ্চিত করলেও মন মানছে না বাইরে অপেক্ষমাণ থাকা বাবা-মায়ের। তাই মেয়েকে এক নজর দেখার আশায়, পরম আদরে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন আবুল কালাম। আবুল কালাম বলেন, যেখানে বিমান পড়েছে, ওই স্থানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আমার মেয়ে। বিমান পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে দৌড় দেয়। তবে বিস্ফোরণের তাপ এসে লাগে দুই হাতে। কাঁধের স্কুল ব্যাগেও আগুন ধরে যায়। সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে। এরপর কয়েক হাসপাতাল ঘুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসে মেয়েকে দেখতে পাই। খুব ভয় পেয়েছে আমার মেয়েটা। সারা রাত ঘুমাতেও পারেনি। একটু দোয়া কইরেন আমার মেয়েটার জন্য।

শুধু সামিয়া আর কর্ন নয়, তাদের মতো বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা ২৮ শিশুর মধ্যে অনেকের জীবন শঙ্কায় রয়েছে। ছোট্ট শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তাদের বাবা-মা বাইরে অপেক্ষা করছেন, কিছুক্ষণ পর পর অনুমতি নিয়ে সন্তানের কাছে যাচ্ছেন। পরম যত্নে আদর করছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘তোমার কিচ্ছু হবে না, সুস্থ হয়ে উঠবে। ২/১ দিন পরই আমরা তোমাকে এখান থেকে বাসায় নিয়ে যাবো।’ এমন আশ্বস্ত করে বাইরে এসে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অভিভাবকরা। স্কুল ছুটির পর দৌড়ে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও এখন জীবন শঙ্কায় হাসপাতালের বিছানায় কোমলমতি শিশুরা। ইতোমধ্যে লাশ হয়ে মর্গ ঘুরে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে তাদের অনেক সহপাঠী। অভিভাবকদের আশঙ্কা, না জানি তার সন্তানেরও এমনটি হয়। না জানি অস্ফূট স্বরে বলা সন্তানের কথাটি সত্য হয়ে যায়।

এছাড়া বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থী তাহিয়া তাবাসসুম নাজিয়া গতকাল সোমবার গভীর রাতে বার্ন ইউনিটে মারা গেছে। আর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে তার ছোট ভাই নাফি। নাজিয়া ও নাফি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছানকাজি হাওলাদার বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল হোসেন নিরবের ছেলেমেয়ে। তারা উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। গতকাল সোমবার দুপুরের এই দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর নাজিয়া (১৩) ও তার ভাই ক্লাস ওয়ানের শিক্ষার্থী নাফিকে

কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে সে মারা যায় বলে জানান। স্বজনরা জানান, দুর্ঘটনায় নাজিয়ার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

ছোট ভাইয়ের আকুতি ‘আমি কি বাঁচবো আপু’

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-এর সামনে বিলাপ করছিলেন ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহতাবুর রহমান ভূঁইয়ার বড় বোন নাবিলা। তিনি বলেন, ও বুঝতে পারছে না শরীরে কী হইছে? সকালে একটু জুস খাইয়ে দিছি। আমাকে বলে, আমি কি বাঁচবো আপু? কথাগুলো বলতে বলতে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন নাবিলা। শুধু হাফিজ উদ্দিন ও নাবিলাই নয়, বার্ন ইনস্টিটিউটের সব স্বজনের একই অবস্থা। দুর্ঘটনার পর থেকেই আর্তনাদ আর আহাজারিতে কাটছে তাদের। যাদের শ্বাসনালি পুড়েছে, তাদের সবাই চোখের অথবা হাতের ইশারাতে নিজের যন্ত্রণা বোঝানোর চেষ্টা করছে।

যারা কথা বলতে পারছে, মা মা আর পারছি না, অনেক কষ্ট হচ্ছে, বাবা আমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাও, এমন সব কথা বলে পোড়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। স্বজনরাও কোমলমতি শিশুদের এমন করুণ পরিণতি মানতে পারছেন না। মঙ্গলবার,( ২২ জুলাই ২০২৫) দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে এমন সব হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখা যায়। আইসিইউ, এফএইচডিইউ ও সাধারণ ওয়ার্ডগুলোর সামনে স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। অন্তত যেন প্রাণে বেঁচে থাকে আদরের সন্তান- এই একটিই প্রার্থনা সবার। এরসঙ্গে সন্তানের মৃত্যুর খবর আসার আতঙ্ক তো আছেই। কোনো প্রয়োজনে ওয়ার্ড নাম্বার উল্লেখ করে স্বজন খুঁজলেই আতঙ্কে আঁতকে উঠছেন স্বজনরা।

চিকিৎসাধীন ২৮ শিশু

বার্ন ইনস্টিটিউটের করা তালিকা অনুযায়ী সেখানে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে ২৮টি শিশু। তারা হলো- মাহতাব (১৪) ৪৫ শতাংশ, এবি শামীম (১৪) ৯৫ শতাংশ, সায়মা (১০) ২৫ শতাংশ, মাহিয়া (১৫) ৫০ শতাংশ, নাফিজ (৯) ৯৫ শতাংশ, আফরান ফাইয়াজ (১৪) ৯৫ শতাংশ। এদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকিরা হলো- মুনতাহাব (১০) ৫ শতাংশ, রুপি বড়–য়া (১০) ৬ শতাংশ, জায়ানা (১৩) ৮ শতাংশ, ইশা (১১) ৬ শতাংশ, পায়েল (১২) ১০ শতাংশ, তাসনিয়া (১০) ৫ শতাংশ, কাব্বো (১৩) ২০ শতাংশ, সায়েবা (৯), তৌফিক (১৩), আলভিরা (১০), নুসরাত (১২), জুনায়েদ (১২), শ্রেভা (৯), কাফি আহমেদ (১০), আয়াত (১৪), রোহান (১৪), আবিদুর রহমান (১০), আয়ন (১৪), আরিয়ান আফিফ (১২), মাকিন (১৫), সায়েমা (৯) ও মেহরিন (১১)।

অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী এবং কোমলমতি শিশু। আর তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে ভর্তি দগ্ধদের বেশিরভাগই শিশু। তাদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের একটি বিশেষ দল আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। সবাইকে সারিয়ে তুলতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বার্নে যে ৬ জন মারা গেল

বার্ন ইনস্টিটিউটে গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর থেকে মঙ্গলবার, বিভিন্ন সময়ে ৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি-ই শিশু। নিহত ৬ হলো- উত্তরা- ১নং সেক্টরের বাসিন্দা আবুল ফাতাহ মো. ইউসুফের ছেলে শায়ান ইউসুফ (১৪)। তার শরীরের ৯৫ দগ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার, তার চাচা মো. হাবিব সরোয়ার লাশ গ্রহণ করেন। তুরাগ থানাধীন তারার টেকের মো. আবু শাহীনের ছেলে রোহান উদ্দিন বাপ্পী (৯)। তার দগ্ধ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। একই এলাকার মো. সেলিম মিয়ার ছেলে আরিয়ান-১ (১২)। তার দগ্ধ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। রাজবাড়ীর আশরাফুল ইসলামের মেয়ে নাজিয়া (১৩)। তার দগ্ধ হয়েছে ৯০ শতাংশ। বান্দরবানের রামু উপজেলার উসাই মং মারমার ছেলে উক্য ছাই মারমা (১৪)। তার শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল। ৮৫ শতাংশ হওয়া শিক্ষিকা মাসুকা (৩৭)।

পুড়ে বিকৃত ৬ লাশ

বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়া ৬ লাশের বিপরীতে ৪টি দাবিদার এসেছে। পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মৃতদেহগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার, বেলা ৩টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন ভর্তি আছে। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা উন্নতি হওয়ায় বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২ জন শিক্ষক। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া ৬ জনের মধ্যে ৪ জনের বিপরীতে দাবিদার এসেছে। তাদের ডিএনএ টেস্ট করে ম্যাচ হওয়ার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। তবে এখনও ২টি লাশের দাবিদার আসেনি। মঙ্গলবার, রাতেই সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের এক দল বাংলাদেশে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা এলে চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন মনে করলে তারা করতে পারেন। এর আগে সকালে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ছিল ২৭ জন। এর মধ্যে ২৫টি শিশু ছিল।

শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশসহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মঙ্গলবার, বিকেল ৪টায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে সরেজমিনে দেখা যায়, বার্ন ইনস্টিটিউটে গেইটগুলোর সামনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার কাজ করছে সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট। পাশাপাশি কাজ করছেন পুলিশের একাধিক সদস্যও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টসহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। বাইরে বুথ বসিয়ে রক্তদাতাদের তালিকা করতে কাজ করছে বাঁধন, ছাত্রদলসহ একাধিক সংগঠন। এদিন বার্ন ইনস্টিটিউটে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একাধিক ভ্যান ও সদস্যদের। মেডিকেলের বাইরে তাদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

back to top