alt

জাতীয়

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, দলগুলোর মতামতের অপেক্ষায় ঐকমত্য কমিশন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর তত্ত্বাধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া, কাঠামো, প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, এই সরকারের মেয়াদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সমন্বিত একটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রস্তাবনা লিখিত আকারে দলগুলোকে দেয়া হয়েছে। এখন তাদের মতামতের অপেক্ষায় আছে কমিশন।

কমিশনের তৈরি সমন্বিত প্রস্তাবের বলা হয়েছে, সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে সংসদের মেয়াদ অবসান বা মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের বিধান যুক্ত করা হবে।

একই সঙ্গে সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদের মেয়াদের শেষের আগের ১৫ দিন বা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরের ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। সমন্বিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার বয়স হবে সর্বোচ্চ ৭৫ বছর এবং উপদেষ্টা পরিষদ হবে সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যের।

গত রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের পঞ্চদশ দিনের আলোচনা শেষে বিফ্রিংয়ে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছিলেন, ‘প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলোর একমত হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে লিখিত প্রস্তাব দলগুলোর কাছে দেয়া হয়েছে। তারা খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে দলগতভাবে আমাদের জানাবেন।’

দলগুলোর সঙ্গে ওইদিনের আলোচনার বিষয়ে আলী রিয়াজ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন উপ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। এবং সংশোধিত ভাষ্য হবে- ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান, যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার যে ব্যবস্থা ছিল সেটা বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমরা সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’

ওই দিনের আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজ অধিকাংশ সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টাই আলোচিত হয়েছে। বিভিন্ন রকম প্রস্তাব ছিল। আমরা সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব চেয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী চারটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছিলাম। দলগুলো হল- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী।’

এই চার দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এদিন সকালে কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপনের কথা তুলে ধরে আলী রিয়াজ বলেন, ‘অধিকাংশ দল মনে করেছে, এই সংশোধিত প্রস্তাবের মধ্যে গত কয়েকদিনের আলোচনার বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সেগুলোকে সমন্বিত করা সম্ভব হয়েছে।’

সমন্বিত প্রস্তাবে যা আছে

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কমিটি করতে হবে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন আগে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।

বাছাই কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যের কাছ থেকে ৫৮গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার জন্য নাম প্রস্তাবের আহ্বান করা হবে। সবাই একটি করে নাম দিতে পারবেন। সংসদ সচিবালয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্রস্তাবিত নাম জমা দেবে।

পরের ঘণ্টার মধ্যে বাছাই কমিটির সদস্যরা নিজেদের অনুসন্ধানে পাওয়া নাম এবং দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে আলোচনা করবেন। তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেবেন।

বাছাই কমিটি এ পদ্ধতিতে ১২০ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাউকে চূড়ান্ত করতে না পারলে পরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সংসদের সরকারি দল বা জোট তিনজন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। প্রধান বিরোধী দল বা জোটও তিনজন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। তৃতীয় বৃহত্তম জোট দুজনের নাম দেবে। এসব নাম স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।

এ সময় পার হলে পরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল বা জোটের প্রস্তাবিত তিনজন থেকে বিরোধী দল বা জোট একজনকে বেছে নেবেন। একইভাবে বিরোধী দলীয় জোটের তিনজনের নাম থেকে সরকারি দল একজনকে বেছে নেবেন। তৃতীয় বৃহত্তম দল বা জোটের দুইজন থেকে একজন বেছে নেবে সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দল যে কোনো একজনকে বেছে নেবেন। একইভাবে তৃতীয় বৃহত্তম দল সরকারি দলের প্রস্তাবিত তিনজন থেকে একজন এবং প্রধান বিরোধী দলের প্রস্তাবিত তিনজন থেকে যে কোনো একজনের নাম বাছাই করবেন।

এ পদ্ধতিতে পাওয়া নামগুলো থেকে যেকোনো একজনের ব্যাপারে যদি দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তিনিই প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবে।

উপরের পদ্ধতিতে পক্ষগুলো একমত না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটির সদস্যরা গোপন ব্যালটে ‘র‌্যাংক চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করা হবে। যেকোনো পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তবে সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় শপথ নেবেন না তিনি।

কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি কোনো সময় ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য ভোটাভোটুতেস দ্বিতীয় স্থানে (র‌্যাংক চয়েজ/ক্রমভিত্তিক ভোটপদ্ধতিতে) থাকা জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে বা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তিকে বাকি মেয়াদের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হবে।

এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন এলেও উপদেষ্টারা বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো পদ শূন্য হলে নতুন প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্য পদ পূরণের অধিকার রাখবেন।

নিয়োগ পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা উপযুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে ৫৮গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যক্তিদের থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য বাছাই করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন।

এমন ক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নির্বাচনকালীন প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি হবে। সেই কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন বা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে অভিন্ন পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবেন এবং অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

সংবিধানের ৫৮(৭)(ঘ) সংশোধন করে ‘৭২ বছরের বেশি বয়স নন’ এর পরিবর্তে ৭৫ বছরের বেশি বয়স্ক নন’ শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করবেন। সংবিধানে দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিনের। তবে দৈব দুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে আরও ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে অন্তর্বর্তী এ সরকার। নতুন সংসদ গঠন হবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাদের কার্যভার নেবে সেই তারিখে নির্বাচনকালীন সরকার বিলুপ্ত হবে।

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছাই হলো সায়মার

ছবি

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে এক বছরে যাত্রী কমেছে অর্ধেক

‘আমার মেয়েসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক হত্যার দায় কে নেবে’

শিক্ষার্থী রাইসার নিথর দেহ সিএমএইচ-এ শনাক্ত

ছবি

রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় পাইলট তৌকির, জানাজায় হাজারও মানুষের ঢল

পাচারকৃত মোট অর্থের ৭৫ শতাংশই হয় বাণিজ্যের মাধ্যমে: গবেষণা

ছবি

‘এই বিমান পুরনো না, প্রযুক্তিগতভাবে পুরনো’

প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না দলীয় প্রধান, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

আর্থিক সহায়তার পোস্ট সরিয়ে নেয়া হলো প্রধান উপদেষ্টার পেইজ থেকে

বোন চিরনিদ্রায়, বার্ন ইউনিটে ভাই লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লো

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি: সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্র

ছবি

৯ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যায় মুক্তি পেলেন উপদেষ্টারা

ছবি

বাংলাদেশকে ১৫ হাজার কোভিড টেস্টিং কিট উপহার দিলো চীন

ছবি

সেনাসদস্যদের হাতে শিক্ষার্থী ‘মারধরের’ অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে: আইএসপিআর

ছবি

প্রযুক্তি পুরনো হলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ছাড় নেই:বিমান বাহিনীর প্রধান

ছবি

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে আটকা পড়া উপদেষ্টারা পুলিশের পাহারায় ফিরলেন

ছবি

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মোবারক হোসেনের করা আপিলের শুনানি শেষ

ছবি

সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ কাদানে গ্যাস,সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি

স্থগিত ২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও

ছবি

বিক্ষোভের মুখে শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি, সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

উপদেষ্টাদের আটকে রেখে মাইলস্টোনের গেটে তালা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

ছবি

শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবিই ‘যৌক্তিক’ বলে স্বীকার করল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

বিধ্বস্ত এফটি-৭ বিজিআই বিমানটি প্রশিক্ষণ নয়, ছিল যুদ্ধবিমান: আইএসপিআর

ছবি

সব দাবি পূরণের আশ্বাস আইন উপদেষ্টার, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৮ জুলাই

ছবি

মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, উপদেষ্টাদের সঙ্গে চলছে আলোচনা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

হতাহতের তথ্য গোপনের দাবিকে ‘অপপ্রচার’ বলছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ২৭, চিকিৎসাধীন ৭৮ জন

ছবি

মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত, গভীর রাতে ফেইসবুকে উপদেষ্টা, কর্মকর্তাদের ঘোষণা

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শোক প্রকাশ

চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায় এআই চালুর উদ্যোগ

পীরগাছায় গৃহবধূকে ধর্ষণ, মামলা দায়ের

tab

জাতীয়

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, দলগুলোর মতামতের অপেক্ষায় ঐকমত্য কমিশন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর তত্ত্বাধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া, কাঠামো, প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, এই সরকারের মেয়াদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সমন্বিত একটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রস্তাবনা লিখিত আকারে দলগুলোকে দেয়া হয়েছে। এখন তাদের মতামতের অপেক্ষায় আছে কমিশন।

কমিশনের তৈরি সমন্বিত প্রস্তাবের বলা হয়েছে, সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে সংসদের মেয়াদ অবসান বা মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের বিধান যুক্ত করা হবে।

একই সঙ্গে সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদের মেয়াদের শেষের আগের ১৫ দিন বা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরের ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। সমন্বিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার বয়স হবে সর্বোচ্চ ৭৫ বছর এবং উপদেষ্টা পরিষদ হবে সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যের।

গত রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের পঞ্চদশ দিনের আলোচনা শেষে বিফ্রিংয়ে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছিলেন, ‘প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলোর একমত হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে লিখিত প্রস্তাব দলগুলোর কাছে দেয়া হয়েছে। তারা খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে দলগতভাবে আমাদের জানাবেন।’

দলগুলোর সঙ্গে ওইদিনের আলোচনার বিষয়ে আলী রিয়াজ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন উপ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। এবং সংশোধিত ভাষ্য হবে- ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান, যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার যে ব্যবস্থা ছিল সেটা বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমরা সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’

ওই দিনের আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজ অধিকাংশ সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টাই আলোচিত হয়েছে। বিভিন্ন রকম প্রস্তাব ছিল। আমরা সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব চেয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী চারটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছিলাম। দলগুলো হল- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী।’

এই চার দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এদিন সকালে কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপনের কথা তুলে ধরে আলী রিয়াজ বলেন, ‘অধিকাংশ দল মনে করেছে, এই সংশোধিত প্রস্তাবের মধ্যে গত কয়েকদিনের আলোচনার বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সেগুলোকে সমন্বিত করা সম্ভব হয়েছে।’

সমন্বিত প্রস্তাবে যা আছে

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কমিটি করতে হবে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন আগে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।

বাছাই কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যের কাছ থেকে ৫৮গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার জন্য নাম প্রস্তাবের আহ্বান করা হবে। সবাই একটি করে নাম দিতে পারবেন। সংসদ সচিবালয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্রস্তাবিত নাম জমা দেবে।

পরের ঘণ্টার মধ্যে বাছাই কমিটির সদস্যরা নিজেদের অনুসন্ধানে পাওয়া নাম এবং দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে আলোচনা করবেন। তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেবেন।

বাছাই কমিটি এ পদ্ধতিতে ১২০ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাউকে চূড়ান্ত করতে না পারলে পরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সংসদের সরকারি দল বা জোট তিনজন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। প্রধান বিরোধী দল বা জোটও তিনজন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। তৃতীয় বৃহত্তম জোট দুজনের নাম দেবে। এসব নাম স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।

এ সময় পার হলে পরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল বা জোটের প্রস্তাবিত তিনজন থেকে বিরোধী দল বা জোট একজনকে বেছে নেবেন। একইভাবে বিরোধী দলীয় জোটের তিনজনের নাম থেকে সরকারি দল একজনকে বেছে নেবেন। তৃতীয় বৃহত্তম দল বা জোটের দুইজন থেকে একজন বেছে নেবে সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দল যে কোনো একজনকে বেছে নেবেন। একইভাবে তৃতীয় বৃহত্তম দল সরকারি দলের প্রস্তাবিত তিনজন থেকে একজন এবং প্রধান বিরোধী দলের প্রস্তাবিত তিনজন থেকে যে কোনো একজনের নাম বাছাই করবেন।

এ পদ্ধতিতে পাওয়া নামগুলো থেকে যেকোনো একজনের ব্যাপারে যদি দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তিনিই প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবে।

উপরের পদ্ধতিতে পক্ষগুলো একমত না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটির সদস্যরা গোপন ব্যালটে ‘র‌্যাংক চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করা হবে। যেকোনো পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তবে সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় শপথ নেবেন না তিনি।

কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি কোনো সময় ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য ভোটাভোটুতেস দ্বিতীয় স্থানে (র‌্যাংক চয়েজ/ক্রমভিত্তিক ভোটপদ্ধতিতে) থাকা জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে বা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তিকে বাকি মেয়াদের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হবে।

এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন এলেও উপদেষ্টারা বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো পদ শূন্য হলে নতুন প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্য পদ পূরণের অধিকার রাখবেন।

নিয়োগ পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা উপযুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে ৫৮গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যক্তিদের থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য বাছাই করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন।

এমন ক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নির্বাচনকালীন প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি হবে। সেই কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন বা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে অভিন্ন পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবেন এবং অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

সংবিধানের ৫৮(৭)(ঘ) সংশোধন করে ‘৭২ বছরের বেশি বয়স নন’ এর পরিবর্তে ৭৫ বছরের বেশি বয়স্ক নন’ শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করবেন। সংবিধানে দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিনের। তবে দৈব দুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে আরও ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে অন্তর্বর্তী এ সরকার। নতুন সংসদ গঠন হবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাদের কার্যভার নেবে সেই তারিখে নির্বাচনকালীন সরকার বিলুপ্ত হবে।

back to top