প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় চারজনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার,(২৪ জুলাই ২০২৫) ঢাকার মহানগর হাকিম জামসেদ আলম এ আদেশ দেয়।

কারাগারে যাওয়া চারজন হলেন আশিকুর রহমান তানভীর, জেফরী অভিষেক সিকদার, আবু সুফিয়ান এবং শাকিল মিয়া। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মাহমুদুল হাসান তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী তাহমিনা আক্তার লিজা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় বলে শাহবাগ থানার প্রসিকিউশনের এসআই জিন্নাত আলী জানিয়েছেন। এর আগে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১টার দিকে অভিযান চালিয়ে শাহবাগ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের এসআই গোলাম মুক্তি মাহমুদ মঙ্গলবার রাতে এ মামলা করেন। গতকাল বুধবার এজাহার গ্রহণ করে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদেন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় ‘দাঙ্গা সৃষ্টি করে সচিবালয়ে প্রবেশ, ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের’ অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন কলেজের অজ্ঞাত শিক্ষার্থী ও ‘স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীদের’ আসামি করা হয়েছে সেখানে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, গত মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী ও ‘স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীরা’ মাইলস্টোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে স্থগিতসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ‘মার্চ টু শিক্ষা মন্ত্রণালয়’

কর্মসূচি পালন করে। প্রথমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষাভবনের উদ্দেশে মার্চ করলেও পরে শিক্ষাভবন থেকে বের হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

অভিযোগে বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের সব গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তাদের সচিবালয়ে প্রবেশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুরোধ করা হয়। পরে তারা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে পুলিশের বেরিকেড ভেঙে সচিবালয়ের মেইন গেইটের সামনে এসে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন তাদের বাধা দিলে কর্তব্যরত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেকে গুরুতর আহত হন। এছাড়া সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতি সাধন, বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।

শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করতে পারলেও আশপাশের এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলে। এই সংঘর্ষের মধ্যে আহত ৬৬ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গত মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে গত সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা গত সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।