ক্ষমতা হারানোর ভয় না থাকলে সরকার ‘দানবে’ পরিণত হয়—এমন মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি বলেন, “ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ভয়টা চলে গেলে তখন (সরকার) কী দানবে পরিণত হয়, সেটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আমল থেকে আমরা বুঝতে পারি। যে কারণে আমাদের এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ চিরস্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের ভয়াবহ মূল্য স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী থাকবো, কিন্তু যেন কল্পলোকের বাসিন্দা হয়ে না যাই।”
তিনি বলেন, মানবাধিকারকে কেবল আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না; এর জন্য দরকার সবার উপলব্ধি, আত্মশুদ্ধি ও স্বচ্ছতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ—শুদ্ধ না হলে মানবাধিকার কমিশন বা তথ্য কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসিফ নজরুল বলেন, “এই তিনটা অঙ্গের সমস্যা রেখে শুধু কমিশন করে, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে কোনো লাভ হবে না।”
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকে তিনি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “অনেকে মনে করে ইউরোপ-আমেরিকায় মানবাধিকার বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু তারা নিজের দেশে কিছু করলেও বিশ্বের অন্য প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ ছড়ানো, অস্ত্র বিক্রি ও অত্যাচারী শাসকদের সহায়তার মাধ্যমে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।”
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মুহম্মদ একরামুল হক বলেন, “কাগজে অনেক কিছু লেখা থাকে। বাস্তবায়নটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আদালতকে ফ্যাসিবাদের অংশে পরিণত করা হয়, তাহলে সংবিধানের কথাগুলো বাস্তবায়ন হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখানে জরুরি।”
‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’ আয়োজিত এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘গুম’ হওয়া আহমেদ বিন কাশেম ও মাইকেল চাকমা, অভ্যুত্থানে নিহত নাইমা সুলতানা ও শাহরিয়ার খানের মা, এবং আহত দুইজন জুলাইযোদ্ধা বক্তব্য রাখেন।
শাহরিয়ার খানের মা সানজিদা খান বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করি, যেখানে প্রতিটি স্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি আমার সন্তানের বুকে লেগেছে। আমার দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী আমার সন্তানের ঘাতক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সন্তানরা মানবাধিকার রক্ষায় রাস্তায় নেমেছিল, অথচ তারাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। পৃথিবীতে ক’টা দেশে এমন হয়, যেখানে দেশের সেনাবাহিনী নিজের দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করে?”
মাইকেল চাকমা বলেন, “আমাকে তুলে নেওয়ার পর আমার পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীরা আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন। এক পর্যায়ে আমার পরিবার এতটাই ভেঙে পড়ে যে আমার বাবার মৃত্যু ঘটে। তারা এক সময় আমার শেষকৃত্যও করে ফেলে।”
তিনি বলেন, “সেই অবস্থা থেকে আমি ফিরেছি, কিন্তু এখনো প্রশ্ন রয়ে যায়—ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে? আমরা যেন সবাই এক হয়ে বাস করতে পারি। আমি আশাবাদী, আমার অধিকার আদায়ের লড়াই এখনো চলছে।”
সম্মেলনের শেষ অংশে মানবাধিকার অলিম্পিয়াডে বিজয়ী দশজনের হাতে ব্যাগ, সম্মান স্মারক, সনদ ও সম্মাননা অর্থ তুলে দেওয়া হয়।
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
ক্ষমতা হারানোর ভয় না থাকলে সরকার ‘দানবে’ পরিণত হয়—এমন মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি বলেন, “ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ভয়টা চলে গেলে তখন (সরকার) কী দানবে পরিণত হয়, সেটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আমল থেকে আমরা বুঝতে পারি। যে কারণে আমাদের এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ চিরস্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের ভয়াবহ মূল্য স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী থাকবো, কিন্তু যেন কল্পলোকের বাসিন্দা হয়ে না যাই।”
তিনি বলেন, মানবাধিকারকে কেবল আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না; এর জন্য দরকার সবার উপলব্ধি, আত্মশুদ্ধি ও স্বচ্ছতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ—শুদ্ধ না হলে মানবাধিকার কমিশন বা তথ্য কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসিফ নজরুল বলেন, “এই তিনটা অঙ্গের সমস্যা রেখে শুধু কমিশন করে, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে কোনো লাভ হবে না।”
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকে তিনি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “অনেকে মনে করে ইউরোপ-আমেরিকায় মানবাধিকার বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু তারা নিজের দেশে কিছু করলেও বিশ্বের অন্য প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ ছড়ানো, অস্ত্র বিক্রি ও অত্যাচারী শাসকদের সহায়তার মাধ্যমে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।”
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মুহম্মদ একরামুল হক বলেন, “কাগজে অনেক কিছু লেখা থাকে। বাস্তবায়নটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আদালতকে ফ্যাসিবাদের অংশে পরিণত করা হয়, তাহলে সংবিধানের কথাগুলো বাস্তবায়ন হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখানে জরুরি।”
‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’ আয়োজিত এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘গুম’ হওয়া আহমেদ বিন কাশেম ও মাইকেল চাকমা, অভ্যুত্থানে নিহত নাইমা সুলতানা ও শাহরিয়ার খানের মা, এবং আহত দুইজন জুলাইযোদ্ধা বক্তব্য রাখেন।
শাহরিয়ার খানের মা সানজিদা খান বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করি, যেখানে প্রতিটি স্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি আমার সন্তানের বুকে লেগেছে। আমার দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী আমার সন্তানের ঘাতক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সন্তানরা মানবাধিকার রক্ষায় রাস্তায় নেমেছিল, অথচ তারাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। পৃথিবীতে ক’টা দেশে এমন হয়, যেখানে দেশের সেনাবাহিনী নিজের দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করে?”
মাইকেল চাকমা বলেন, “আমাকে তুলে নেওয়ার পর আমার পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীরা আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন। এক পর্যায়ে আমার পরিবার এতটাই ভেঙে পড়ে যে আমার বাবার মৃত্যু ঘটে। তারা এক সময় আমার শেষকৃত্যও করে ফেলে।”
তিনি বলেন, “সেই অবস্থা থেকে আমি ফিরেছি, কিন্তু এখনো প্রশ্ন রয়ে যায়—ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে? আমরা যেন সবাই এক হয়ে বাস করতে পারি। আমি আশাবাদী, আমার অধিকার আদায়ের লড়াই এখনো চলছে।”
সম্মেলনের শেষ অংশে মানবাধিকার অলিম্পিয়াডে বিজয়ী দশজনের হাতে ব্যাগ, সম্মান স্মারক, সনদ ও সম্মাননা অর্থ তুলে দেওয়া হয়।