পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভুণ্ডল করার চেষ্টা করছে: প্রধান উপদেষ্টা
আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।
দেশের ১৩টি রাজনৈতিক দল এবং একটি জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।’
বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভুণ্ডল করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্ত বড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গণ্ডগোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট।’
প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন বলেও তার দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বৈঠকের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) বৈঠক শেষে যমুনার বাইরে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘এর চাইতে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আজকের মূল বিষয় হচ্ছে এইটা। আজকে দেশব্যাপী যে সমস্যা, নৈরাজ্যের সমাধান করবে নির্বাচন। এর সমাধানের একমাত্র পথ নির্বাচন, এটা উনি (প্রধান উপদেষ্টা), ওনার বক্তব্যে সুস্পষ্ট করেছেন। উনি আশ্বাস দিয়েছেন আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে উনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলে আসছিলেন। সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ঘোষণা এসেছিল ঈদ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে।
জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো সে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) আপত্তি করেনি। তবে আপত্তি তুলেছিল বিএনপি ও এর মিত্ররা। নির্বাচনের এই সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ছিল।
এরপর লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা আসে।
তবে রোজা শুরুর আগে এই সময়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতির দুটো শর্ত দেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা, কেবল একটি দলের (বিএনপি) সঙ্গে বৈঠকের পর আসায় এ ধরনের সমঝোতা নিয়ে আপত্তি তোলে জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপিসহ কয়েকটি দল।
শনিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের প্রধান সমস্যা আইনশৃঙ্খলার অবনতি আর কোনো অভিযান চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে?
বৈঠক থেকে বের হয়ে এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে জানান, আগামী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচন কবে হবে এবং প্রক্রিয়া কী হবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করে ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) তরফ থেকে জাতির জন্য পরিষ্কার করে জানানো হবে। প্রধান উপদেষ্টা আজকে আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসে আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখসহ সবকিছু জাতির সামনে তুলে ধরবেন।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা
তার প্রত্যাশার কথা আবারও এদিনের বৈঠকে তুলে ধরেছেন। পুরো দেশবাসীকে নির্বাচনের জন্য তৈরি হওয়ার জন্য বলেছেন। আজকের আলোচনায় সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে, এগুলো কারা কীভাবে করছে, এগুলো কীভাবে আমরা দমন করতে পারি এগুলো নিয়ে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।’
জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস বলেন, তিনি আগামী ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছেন বৈঠকে।
এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বলেছেন তারা। নির্বাচিত সরকার থাকলে দেশে সন্ত্রাস কমবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা মূলত আমাদের কাছে বর্তমান সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। ৫ আগস্টের আগে আমরা যেমন সবাই এক এবং ঐক্যবদ্ধ ছিলাম সেটা যেন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি সেটা বলেছেন। কোনোভাবে পরাজিত শক্তি যেন মাথা চাড়া দেয়ার সুযোগ না পায়।’
মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাই এটা বলেছেন। একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু সর্ব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনে দিকে অগ্রসর হতে চাই’- এই লাইনে তিনি (ইউনূস) কথা বলেছেন।’
গত সোমবার ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পরদিন ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
গত মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা চারটি রাজনৈতিক দলকে ডেকেছিলেন।
পরদিন এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ১২টি দল ও একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান।
শনিবার বৈঠকে ছিলেন জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, নেজামে ইসলাম পার্টির আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ইউসুফ আশরাফ, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের ববি হাজ্জাজ, জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী ও ১২ দলীয় জোটের পক্ষে মোস্তফা জামাল হায়দার।
পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভুণ্ডল করার চেষ্টা করছে: প্রধান উপদেষ্টা
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।
দেশের ১৩টি রাজনৈতিক দল এবং একটি জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।’
বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভুণ্ডল করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্ত বড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গণ্ডগোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট।’
প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন বলেও তার দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বৈঠকের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) বৈঠক শেষে যমুনার বাইরে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘এর চাইতে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আজকের মূল বিষয় হচ্ছে এইটা। আজকে দেশব্যাপী যে সমস্যা, নৈরাজ্যের সমাধান করবে নির্বাচন। এর সমাধানের একমাত্র পথ নির্বাচন, এটা উনি (প্রধান উপদেষ্টা), ওনার বক্তব্যে সুস্পষ্ট করেছেন। উনি আশ্বাস দিয়েছেন আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে উনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলে আসছিলেন। সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ঘোষণা এসেছিল ঈদ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে।
জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো সে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) আপত্তি করেনি। তবে আপত্তি তুলেছিল বিএনপি ও এর মিত্ররা। নির্বাচনের এই সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ছিল।
এরপর লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা আসে।
তবে রোজা শুরুর আগে এই সময়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতির দুটো শর্ত দেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা, কেবল একটি দলের (বিএনপি) সঙ্গে বৈঠকের পর আসায় এ ধরনের সমঝোতা নিয়ে আপত্তি তোলে জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপিসহ কয়েকটি দল।
শনিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের প্রধান সমস্যা আইনশৃঙ্খলার অবনতি আর কোনো অভিযান চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে?
বৈঠক থেকে বের হয়ে এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে জানান, আগামী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচন কবে হবে এবং প্রক্রিয়া কী হবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করে ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) তরফ থেকে জাতির জন্য পরিষ্কার করে জানানো হবে। প্রধান উপদেষ্টা আজকে আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসে আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখসহ সবকিছু জাতির সামনে তুলে ধরবেন।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা
তার প্রত্যাশার কথা আবারও এদিনের বৈঠকে তুলে ধরেছেন। পুরো দেশবাসীকে নির্বাচনের জন্য তৈরি হওয়ার জন্য বলেছেন। আজকের আলোচনায় সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে, এগুলো কারা কীভাবে করছে, এগুলো কীভাবে আমরা দমন করতে পারি এগুলো নিয়ে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।’
জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস বলেন, তিনি আগামী ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছেন বৈঠকে।
এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বলেছেন তারা। নির্বাচিত সরকার থাকলে দেশে সন্ত্রাস কমবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা মূলত আমাদের কাছে বর্তমান সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। ৫ আগস্টের আগে আমরা যেমন সবাই এক এবং ঐক্যবদ্ধ ছিলাম সেটা যেন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি সেটা বলেছেন। কোনোভাবে পরাজিত শক্তি যেন মাথা চাড়া দেয়ার সুযোগ না পায়।’
মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাই এটা বলেছেন। একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু সর্ব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনে দিকে অগ্রসর হতে চাই’- এই লাইনে তিনি (ইউনূস) কথা বলেছেন।’
গত সোমবার ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পরদিন ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
গত মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা চারটি রাজনৈতিক দলকে ডেকেছিলেন।
পরদিন এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ১২টি দল ও একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান।
শনিবার বৈঠকে ছিলেন জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, নেজামে ইসলাম পার্টির আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ইউসুফ আশরাফ, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের ববি হাজ্জাজ, জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী ও ১২ দলীয় জোটের পক্ষে মোস্তফা জামাল হায়দার।