বিদেশ থেকে ভাড়া করা লোক এনে দেশ চালানো যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করে দেবে-এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।
‘আগে ঘুষ দিতে হতো এক লাখ টাকা, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা’
‘কোথাও সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই’
‘মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে’- অর্থ উপদেষ্টা
তিনি বলেছেন, ‘আগে ঘুষ দিতে হতো এক লাখ টাকা, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা।’ এক বড় ব্যবসায়ী তাকে এ তথ্য দিয়েছেন বলে মির্জা ফখরুল জানান।
শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাব ও সিরডাপ মিলনায়তে পৃথক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আর সিরডাপ মিলনায়নে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
‘মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে’- অর্থ উপদেষ্টা:
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। আইনের ব্যত্যয় তো হয়েছেই। প্রক্রিয়াগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। আর মানুষগুলো তো রয়েই গেছে। মানুষগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেকে বলে সব বাদ দিয়ে দাও। কিন্তু সেটা সম্ভব না। এজন্য মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।’
কোথাও ‘সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ’ নেই:
দেশের কোথাও কোনো সুশাসন নেই ও নিয়ন্ত্রণ নেই অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় লাগবে। এজন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এজন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখা দরকার যে রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
সংস্কার ‘রাতারাতি’ হয় না:
প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ঘুষ-দুর্নীতি বেড়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে-ইটস এ কনটিনিউয়াস প্রসেস। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে- এটা মনে
করার কোনো কারণ নাই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে- যাতে করে সে ঘুষ না খায়।’
সভায় ২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ এর মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এখন এটা রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন যে, ক’জন লোক সংস্কার যারা করছেন, তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন, আর সংস্কার হয়ে গেল; সেইভাবে সংস্কার হয় না।’
রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আওয়ামী লীগ:
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ধ্বংস করেনি; তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট শক্তি, তারা যে ক্ষতিটা বাংলাদেশের করে দিয়ে গেছে- সেই ক্ষতিটা পূরণ এতো সহজে হবে না। তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে।’
জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে- বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেন চাই- সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে?’
প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থকে? কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কি দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ-সরল কথা, আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।’
সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের নামে ‘জগাখিচুড়ি’:
দেশে এখন সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে ‘জগাখিচুড়ি’ চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন আপনি দেখুন- খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে- সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন।’
পিআর পদ্ধতি সর্ম্পকে জনগণের ধারণা নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষ তো বোঝেই না যে- আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা জানে যে- একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক- ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যাই হোক- সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।’
পিআর পদ্ধতিতে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ যারা, তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায়; তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খোঁজে; সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্নকক্ষের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।’
‘নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি বদলাতে হবে’:
দেশের বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে উন্নয়নের ‘বড়’ বাধা আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের যে আমলাতন্ত্র, এই আমলাতন্ত্র- এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা; ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার, অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা- সেই বিষয়গুলো করতে হবে।’
দেশে ‘ক্রান্তিকাল’ চলছে:
‘গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে’-মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রান্সজিশনাল পিরিয়ড- গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান; তার একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে।’
ওই অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ সংকট উপস্থিত হয়েছে, আমরা যে এখন একটা রাজনৈতিক শূন্যতা এবং অর্থনৈতিক বিরূপ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি; সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো- যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, তাকে নিরূপণ করার ব্যাপারটা।’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্মের ওপর গবেষণা করে তা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে জিয়া পরিষদের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের এমতাজ হোসেন, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম, রুহুল আলম।
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
বিদেশ থেকে ভাড়া করা লোক এনে দেশ চালানো যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করে দেবে-এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।
‘আগে ঘুষ দিতে হতো এক লাখ টাকা, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা’
‘কোথাও সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই’
‘মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে’- অর্থ উপদেষ্টা
তিনি বলেছেন, ‘আগে ঘুষ দিতে হতো এক লাখ টাকা, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা।’ এক বড় ব্যবসায়ী তাকে এ তথ্য দিয়েছেন বলে মির্জা ফখরুল জানান।
শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাব ও সিরডাপ মিলনায়তে পৃথক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আর সিরডাপ মিলনায়নে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
‘মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে’- অর্থ উপদেষ্টা:
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। আইনের ব্যত্যয় তো হয়েছেই। প্রক্রিয়াগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। আর মানুষগুলো তো রয়েই গেছে। মানুষগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেকে বলে সব বাদ দিয়ে দাও। কিন্তু সেটা সম্ভব না। এজন্য মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।’
কোথাও ‘সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ’ নেই:
দেশের কোথাও কোনো সুশাসন নেই ও নিয়ন্ত্রণ নেই অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় লাগবে। এজন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এজন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখা দরকার যে রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
সংস্কার ‘রাতারাতি’ হয় না:
প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ঘুষ-দুর্নীতি বেড়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে-ইটস এ কনটিনিউয়াস প্রসেস। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে- এটা মনে
করার কোনো কারণ নাই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে- যাতে করে সে ঘুষ না খায়।’
সভায় ২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ এর মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এখন এটা রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন যে, ক’জন লোক সংস্কার যারা করছেন, তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন, আর সংস্কার হয়ে গেল; সেইভাবে সংস্কার হয় না।’
রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আওয়ামী লীগ:
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ধ্বংস করেনি; তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট শক্তি, তারা যে ক্ষতিটা বাংলাদেশের করে দিয়ে গেছে- সেই ক্ষতিটা পূরণ এতো সহজে হবে না। তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে।’
জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে- বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেন চাই- সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে?’
প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থকে? কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কি দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ-সরল কথা, আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।’
সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের নামে ‘জগাখিচুড়ি’:
দেশে এখন সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে ‘জগাখিচুড়ি’ চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন আপনি দেখুন- খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে- সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন।’
পিআর পদ্ধতি সর্ম্পকে জনগণের ধারণা নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষ তো বোঝেই না যে- আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা জানে যে- একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক- ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যাই হোক- সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।’
পিআর পদ্ধতিতে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ যারা, তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায়; তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খোঁজে; সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্নকক্ষের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।’
‘নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি বদলাতে হবে’:
দেশের বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে উন্নয়নের ‘বড়’ বাধা আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের যে আমলাতন্ত্র, এই আমলাতন্ত্র- এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা; ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার, অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা- সেই বিষয়গুলো করতে হবে।’
দেশে ‘ক্রান্তিকাল’ চলছে:
‘গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে’-মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রান্সজিশনাল পিরিয়ড- গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান; তার একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে।’
ওই অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ সংকট উপস্থিত হয়েছে, আমরা যে এখন একটা রাজনৈতিক শূন্যতা এবং অর্থনৈতিক বিরূপ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি; সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো- যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, তাকে নিরূপণ করার ব্যাপারটা।’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্মের ওপর গবেষণা করে তা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে জিয়া পরিষদের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের এমতাজ হোসেন, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম, রুহুল আলম।