alt

জাতীয়

‘জাতীয় সনদ’কে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ সুজনের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে; যার মধ্য দিয়ে একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শেষে আগামী ৩১ জুলাই চূড়ান্ত জাতীয় সনদ প্রকাশ করার অঙ্গীকার রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের, যার আলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই সনদের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আইনি বিধান সংবিধানে করা যাবে না: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ মতিন

সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ

রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় সনদের খসড়া হালনাগাদ সুজনের; প্রস্তাব ২১ দফা

ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জাতীয় সনদ’ হবে, সেটাকে জনগণের আকাক্সক্ষা বা সর্বোচ্চ আইন হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এই নাগরিক সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, ওই ‘জাতীয় সনদে’ এমন একটি বিধান রাখতে হবে যে, এই সনদের বিরুদ্ধে যায় সংবিধানে এমন কোনো বিধান বা আইন করা যাবে না।

শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) ঢাকার খামারবাড়ী এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ সম্পর্কে নাগরিক ভাবনা উপস্থাপন’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুজন।

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য ২১ দফা প্রস্তাবও হালনাগাদ করেছে সুজন; যা চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হবে। দেশের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবগুলো হালনাগাদ করার তথ্য তুলে ধরে সুজন এর তরফে বলা হয়েছে, দ্বিকক্ষ সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ ‘শাসিত’ সরকার, ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদ সদস্য প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় তাদের প্রস্তাবে স্থান পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন। সামনে যে জাতীয় সনদ বা জুলাই সনদ করা হবে, কেউ পরবর্তী সময়ে সেটা না মানলে তখন কী হবে এমন প্রশ্ন রেখে নিজের একটি পরামর্শ তুলে ধরেন এম এ মতিন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সনদে একটা বিধান থাকবে হবে এই সনদের বিরুদ্ধে কোনো আইন, সংবিধান হবে না। যা কিছু এই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে, ওটা বাতিল হবে।’

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান সরকারের আইনগত ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে এম এ মতিন বলেন, ‘সনদে যদি থাকে যে হাইকোর্ট ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করতে হবে, তাহলে এটাই আইন। কারণ, এটাই জনগণের অভিপ্রায়, জনগণের আকাক্সক্ষা এবং এটাই সর্বোচ্চ আইন।’

কিছু মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে সুজনের সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এগুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। মৌলিক সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে, কিন্তু গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এমন বিধান করতে হবে যেন কথায় কথায় সংবিধান পরিবর্তন করা না যায়। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার লাগাম টানতে হবে। আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া না গেলে তা হবে পণ্ডশ্রম।’ ইতোমধ্যে ১০টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। বাকি বিষয়গুলোতেও ঐকমত্য হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

হতাশ তোফায়েল আহমেদ

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি না হওয়ায় অনুষ্ঠানে হতাশা ব্যক্ত করেন ওই কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তিনি এখন ‘টিজিং’-এর শিকার হন। অনেকে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, রিপোর্ট দিলেন, এরপর কী হলো?’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলোর জন্য সংবিধানে বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তারা চারটি আইনের খসড়াও তৈরি করে দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের জন্য একীভূত একটি আইনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কেন এসব আইন প্রয়োজন, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এখন শুধু মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। তিনি বলেন, ‘এখনও ছয় মাস সময় আছে। এর মধ্যে অনেক কাজ করে ফেলতে হবে।’ তারা যেসব আইন প্রস্তাব করেছেন, সেগুলো অধ্যাদেশ আকারে জারি করার দাবি জানান তিনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হওয়া উচিত মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকারে এখন চলছে ‘প্রশাসকের কাল’। নির্বাচন কবে হবে জানা নেই। নির্বাচনের কথা বলাই যাচ্ছে না।’

গণ-অভ্যুত্থান হবে না

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের

সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেসমিন টুলি বলেন, ‘৫৩ বছরে জাতীয় ঐকমত্য দেখা যায়নি। এবার যদি ঐকমত্য হয় এবং তার বাস্তবায়ন হয়, তাহলে আর গণঅভ্যুত্থান দেখতে হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকলে এক রকম আর ক্ষমতার বাইরে গেলে আরেক রকম আচরণ করে। দলগুলোকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে দেখা যায়নি। তিনি আশা করেন, এবার দেশের স্বার্থে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হবে।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন। তার আগে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে। বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সংস্কার করতে হবে। ‘সিস্টেম’ সংস্কার করা না গেলে, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করা না গেলে রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে যতই সংস্কার আনা হোক, তার ফল আসবে না। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোরও সদিচ্ছা থাকতে হবে।’

* নির্বাচনকে ভয় *

আগে মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করে তারপর সংসদে যেতে হবে বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন। তিনি বলেন, ‘এনসিপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। এনসিপি পুরনো পদ্ধতিকে ভয় পায়। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জবাবদিহি ও ক্ষমতার ভারসাম্য- এটাই এনসিপির মূল কথা।’

সেমিনারে সুজনের পক্ষ থেকে সদস্য একরাম হোসেন ২১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে নাগরিক সংগঠন সুজন এর পক্ষ থেকে কাক্সিক্ষত জাতীয় সনদের একটি খসড়া তৈরি করে জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে অনেক সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সব সংলাপ থেকে প্রাপ্ত নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদটি হালনাগাদ করেছে। আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হবে।’

সুজন এর ২১ প্রস্তাবে যেসব বিষয় এসেছে তার মধ্যে কয়েকটির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। সেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা।

তবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ (উচ্চকক্ষের গঠন ও সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি), নারী আসন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতিসহ আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।

* এগিয়ে যাবে দেশ *

সেমিনারে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন না আসলেও যেগুলোতে ঐকমত্য এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব আবদুল আউয়াল মজুমদার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর প্রমুখ।

আন্দোলনের ফসল ‘দখল’ হওয়ায় মানুষকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে হাসনাত কাইয়ুম

ছবি

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার পর নতুন করে বাড়ছে জিকা ভাইরাস

ছবি

ব্যাংক পুনর্গঠনে ৩৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

মেঘনায় ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিতে ২ হাজার পরিবার

ছবি

দেশজুড়ে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ

ছবি

নিম্নচাপ: সারাদেশে বৃষ্টির আভাস, ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

অসংখ্য আসামি, তাই চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পরে ডিআইজি বললেন, খাগড়াছড়িতে ৪ জন নিহতের খবর সঠিক নয়

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক ২৯, ৩০, ৩১ জুলাই, দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি ‘করবে না’ সরকার

ছবি

গ্রিন শিপ ইয়ার্ড না হলে ব্যবসা গুটানোর নির্দেশ : নৌ উপদেষ্টা

ছবি

সেই যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

‘মনে হচ্ছিল কানের পর্দা ফেটে যাবে, আতঙ্কে সবাই ছোটাছুটি করছিলাম’

ছবি

গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানালেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

রোববার খুলছে না মাইলস্টোন স্কুল, সিদ্ধান্ত সোমবার

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করলে নির্বাচনে সমস্যা হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ভাড়া করা লোক এনে দেশ চালানো যায় না: ফখরুল

ছবি

গোপালগঞ্জের ঘটনা পুরনো বন্দোবস্ত ফেরাচ্ছে, বিবৃতি ১০ নাগরিকের

ছবি

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় দগ্ধ আরও দুইজনের মৃত্যু

ছবি

‘চার-পাঁচ দিনের মধ্যে’ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

ছবি

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো চালিয়ে যাচ্ছি: মাইকেল চাকমা

ছবি

‘৪-৫ দিনের মধ্যে ভোটের তারিখ জানাবেন ইউনূস’, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ‘আশ্বাস’

ছবি

নির্বাচনের আগে আরও অস্ত্র উদ্ধার হতে পারে: জাহাঙ্গীর আলম

ছবি

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা

ছবি

ভুয়া তথ্য ও এআই চ্যালেঞ্জ,জনআস্থা ফেরানোই বড় দায়িত্ব: সিইসি

ছবি

তথ্য কমিশন গঠন শিগগিরই

ছবি

সংস্কারে অগ্রগতি, কিন্তু ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ: ইউএসসিআইআরএফ

ছবি

নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস, উপকূলজুড়ে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

ছবি

মাইলস্টোন দুর্ঘটনা: দগ্ধ আয়া মাসুমার মৃত্যু

ছবি

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় দগ্ধ আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অপপ্রচার না করার আহ্বান উপদেষ্টার

নিহত শিক্ষিকা মাসুকার কবরে বিমানবাহিনীর গার্ড অব অনার

কুমারশাইল সীমান্ত দিয়ে ৫ জনকে পুশইন

ছবি

আ’লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের’ ব্যানার

‘ওসি বললেন, দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!’

ছবি

দু’দিনের বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে আবারও জলাবদ্ধতা

নিলামে বেনজীর পরিবারের শার্ট-প্যান্ট-শাড়ি-জুতা

tab

জাতীয়

‘জাতীয় সনদ’কে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ সুজনের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে; যার মধ্য দিয়ে একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শেষে আগামী ৩১ জুলাই চূড়ান্ত জাতীয় সনদ প্রকাশ করার অঙ্গীকার রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের, যার আলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই সনদের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আইনি বিধান সংবিধানে করা যাবে না: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ মতিন

সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ

রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় সনদের খসড়া হালনাগাদ সুজনের; প্রস্তাব ২১ দফা

ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জাতীয় সনদ’ হবে, সেটাকে জনগণের আকাক্সক্ষা বা সর্বোচ্চ আইন হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এই নাগরিক সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, ওই ‘জাতীয় সনদে’ এমন একটি বিধান রাখতে হবে যে, এই সনদের বিরুদ্ধে যায় সংবিধানে এমন কোনো বিধান বা আইন করা যাবে না।

শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) ঢাকার খামারবাড়ী এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ সম্পর্কে নাগরিক ভাবনা উপস্থাপন’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুজন।

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য ২১ দফা প্রস্তাবও হালনাগাদ করেছে সুজন; যা চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হবে। দেশের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবগুলো হালনাগাদ করার তথ্য তুলে ধরে সুজন এর তরফে বলা হয়েছে, দ্বিকক্ষ সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ ‘শাসিত’ সরকার, ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদ সদস্য প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় তাদের প্রস্তাবে স্থান পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন। সামনে যে জাতীয় সনদ বা জুলাই সনদ করা হবে, কেউ পরবর্তী সময়ে সেটা না মানলে তখন কী হবে এমন প্রশ্ন রেখে নিজের একটি পরামর্শ তুলে ধরেন এম এ মতিন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সনদে একটা বিধান থাকবে হবে এই সনদের বিরুদ্ধে কোনো আইন, সংবিধান হবে না। যা কিছু এই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে, ওটা বাতিল হবে।’

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান সরকারের আইনগত ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে এম এ মতিন বলেন, ‘সনদে যদি থাকে যে হাইকোর্ট ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করতে হবে, তাহলে এটাই আইন। কারণ, এটাই জনগণের অভিপ্রায়, জনগণের আকাক্সক্ষা এবং এটাই সর্বোচ্চ আইন।’

কিছু মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে সুজনের সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এগুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। মৌলিক সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে, কিন্তু গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এমন বিধান করতে হবে যেন কথায় কথায় সংবিধান পরিবর্তন করা না যায়। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার লাগাম টানতে হবে। আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া না গেলে তা হবে পণ্ডশ্রম।’ ইতোমধ্যে ১০টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। বাকি বিষয়গুলোতেও ঐকমত্য হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

হতাশ তোফায়েল আহমেদ

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি না হওয়ায় অনুষ্ঠানে হতাশা ব্যক্ত করেন ওই কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তিনি এখন ‘টিজিং’-এর শিকার হন। অনেকে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, রিপোর্ট দিলেন, এরপর কী হলো?’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলোর জন্য সংবিধানে বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তারা চারটি আইনের খসড়াও তৈরি করে দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের জন্য একীভূত একটি আইনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কেন এসব আইন প্রয়োজন, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এখন শুধু মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। তিনি বলেন, ‘এখনও ছয় মাস সময় আছে। এর মধ্যে অনেক কাজ করে ফেলতে হবে।’ তারা যেসব আইন প্রস্তাব করেছেন, সেগুলো অধ্যাদেশ আকারে জারি করার দাবি জানান তিনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হওয়া উচিত মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকারে এখন চলছে ‘প্রশাসকের কাল’। নির্বাচন কবে হবে জানা নেই। নির্বাচনের কথা বলাই যাচ্ছে না।’

গণ-অভ্যুত্থান হবে না

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের

সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেসমিন টুলি বলেন, ‘৫৩ বছরে জাতীয় ঐকমত্য দেখা যায়নি। এবার যদি ঐকমত্য হয় এবং তার বাস্তবায়ন হয়, তাহলে আর গণঅভ্যুত্থান দেখতে হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকলে এক রকম আর ক্ষমতার বাইরে গেলে আরেক রকম আচরণ করে। দলগুলোকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে দেখা যায়নি। তিনি আশা করেন, এবার দেশের স্বার্থে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হবে।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন। তার আগে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে। বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সংস্কার করতে হবে। ‘সিস্টেম’ সংস্কার করা না গেলে, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করা না গেলে রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে যতই সংস্কার আনা হোক, তার ফল আসবে না। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোরও সদিচ্ছা থাকতে হবে।’

* নির্বাচনকে ভয় *

আগে মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করে তারপর সংসদে যেতে হবে বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন। তিনি বলেন, ‘এনসিপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। এনসিপি পুরনো পদ্ধতিকে ভয় পায়। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জবাবদিহি ও ক্ষমতার ভারসাম্য- এটাই এনসিপির মূল কথা।’

সেমিনারে সুজনের পক্ষ থেকে সদস্য একরাম হোসেন ২১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে নাগরিক সংগঠন সুজন এর পক্ষ থেকে কাক্সিক্ষত জাতীয় সনদের একটি খসড়া তৈরি করে জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে অনেক সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সব সংলাপ থেকে প্রাপ্ত নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদটি হালনাগাদ করেছে। আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হবে।’

সুজন এর ২১ প্রস্তাবে যেসব বিষয় এসেছে তার মধ্যে কয়েকটির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। সেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা।

তবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ (উচ্চকক্ষের গঠন ও সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি), নারী আসন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতিসহ আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।

* এগিয়ে যাবে দেশ *

সেমিনারে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন না আসলেও যেগুলোতে ঐকমত্য এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব আবদুল আউয়াল মজুমদার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর প্রমুখ।

back to top