এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের পর নতুন করে জিকা ভাইরাস হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুইজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ও শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। তবে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) বিকেলে সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, চট্টগ্রামের জিকা ভাইরাস শনাক্তের খবর নিয়ে কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ- ডা. মুস্তাক
স্বাস্থ্য অধিপ্তরে নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ: কবিরুল বাসার
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি,
৩ জনের মৃত্যু
এদিকে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৯ হাজার ১২০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ জন, ঢাকা বিভাগে ৭৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ ৩ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের ২৮ শিশু, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সের ১৯ জন।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ কারীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, ঢাকা বিভাগে ১ জন, ঢাকা উত্তরে ৮ জন, ঢাকা দক্ষিণে ৩২ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন।
হাসপাতালের তথ্যমতে, আক্রান্তদের এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪৫ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১২ জন, সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৩১ জন। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি আছে ২৮৩ জন। সারাদেশে এখনও ভর্তি আছে ১,৩৫৪ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এডিস মশা বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার শনিবার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে যখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় নতুন এক ভাইরাস ‘জিকা, নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উগি¦গ্ন করে তুলেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুইজনের শরীরে জিকা শনাক্ত হওয়ার খবর জাতীয় পর্যায়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া ও ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ রয়েছে। জিকার উপস্থিতি
ভবিষ্যতের জন্য এক সম্ভাব্য অশনিসংকেত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৪৭ সালে উগান্ডার ‘জিকা বন,- এ। এটি ফ্লাভিভাইরাস গোত্রের অন্তর্গত। যেমন ডেঙ্গু, ইয়েলো ফিভার ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসেরও অবস্থান। জিকা মূলত এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিক্টাস নামক মশার মাধ্যমে ছাড়ায়।
যা ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও বাহক। জিকার একটি বিশেষ দিক হলো এটি যৌন সংস্পর্শ, রক্ত সংক্রমণ এবং গর্ভবস্থায় মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ শিশুর দেহেও সংক্রমিত হতে পারে।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ল্যাবে শনাক্ত হওয়া দুইজন রোগীর মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, জিকা ভাইরাস সম্ভবত দেশের ভিতরেই ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ এটি স্থানীয় সংক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। তবে আইইডিসিআরের টিম চট্টগ্রামে এ নিয়ে কাজ করছেন। দুই রোগীর গত এক মাসের ভ্রমণ ইতিহাস, তাদের মধ্যে সম্পর্কের বিশ্লেষণ করা দরকার বলে এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, জিকা ভাইরাসে উপসর্গ তুলনামূলকভাবে হালকা হলেও এর সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব অত্যন্ত জটিল। সাধারণত এতে দেখা যায়, হালকা জ্বর, ত্বকে র্যাশ, মাথাব্যাথা, চোখ লাল হওয়া, অস্থিসন্ধি ও পেশির ব্যথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ দিনে মধ্যেই এই উপসর্গ সেরে যায়। কিন্তু গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত হলে গর্ভস্থ শিশুদের মধ্যে
মাইক্রোসেফালি, মস্তিস্ক ছোট হওয়া ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল জটিলতা তৈরি করে। এই ভাইরাসের উদ্বেগের বিষয় হলো এ ভাইরাস স্নায়ুবিক জটিলতার কারণ হতে পারে।
যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি পক্ষাঘাতও হতে পারেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এ মূহুর্তে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধা হলো জিকা ভাইরাস শনাক্ত করার পরীক্ষার অভাব। গ্রামীণ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এই পরীক্ষা ব্যয়বহুল।
জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এ তিন ভাইরাসজনিত রোগই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় ও উপসর্গে অনেকটাই মিল থাকে। ফলে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্যই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রসঙ্গে তিনটি ভাইরাসের স্ক্রিনিং পরীক্ষার সুবিধা চালু করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জিকা মহামারী : বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে জিকা ভাইরাস একাধিকবার মহামারী আকার ধারণ করেছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্রাজিলে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে। তখন হাজার হাজার শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হয়। কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা ও ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশে জিকা সংক্রমণের শিকার হয়েছে। নতুন মশাবাহিত এই রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে একটি সুসংহত কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য।
টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা,অ ভিজ্ঞ কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্ট ও চিকিৎসকদের নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করার পরামর্শ। এই কমিটি নতুন করে কেউ কোনো ভাইরাস আক্রান্ত হলে তারা করণীয় সম্পর্কে গাইডলাইন দিবেন। আর এজন্য জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। আর জরুরি বাজেট প্রণয়ন করে ওষুধ, টিকা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ওপর এ কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ গুরুত্ব দিয়েছেন।
জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এ তিনটি রোগ এডিস মশাবাহিত। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসম্পৃক্ততাই সবচেয়ে কার্যকর। প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত উভয় এলাকাই মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলমান রাখতে হবে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন শনিবার রাতে সংবাদকে জানান, এডিস মশা থেকে এই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এতে গর্ভবতী নারীদের নবজাতক শিশুর মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। শিশুদের মস্তিস্ক ছোট হয়।
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের পর নতুন করে জিকা ভাইরাস হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুইজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ও শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। তবে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন শনিবার,(২৬ জুলাই ২০২৫) বিকেলে সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, চট্টগ্রামের জিকা ভাইরাস শনাক্তের খবর নিয়ে কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ- ডা. মুস্তাক
স্বাস্থ্য অধিপ্তরে নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ: কবিরুল বাসার
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি,
৩ জনের মৃত্যু
এদিকে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৯ হাজার ১২০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ জন, ঢাকা বিভাগে ৭৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ ৩ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের ২৮ শিশু, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সের ১৯ জন।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ কারীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, ঢাকা বিভাগে ১ জন, ঢাকা উত্তরে ৮ জন, ঢাকা দক্ষিণে ৩২ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন।
হাসপাতালের তথ্যমতে, আক্রান্তদের এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪৫ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১২ জন, সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৩১ জন। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি আছে ২৮৩ জন। সারাদেশে এখনও ভর্তি আছে ১,৩৫৪ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এডিস মশা বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার শনিবার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে যখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় নতুন এক ভাইরাস ‘জিকা, নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উগি¦গ্ন করে তুলেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুইজনের শরীরে জিকা শনাক্ত হওয়ার খবর জাতীয় পর্যায়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া ও ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ রয়েছে। জিকার উপস্থিতি
ভবিষ্যতের জন্য এক সম্ভাব্য অশনিসংকেত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৪৭ সালে উগান্ডার ‘জিকা বন,- এ। এটি ফ্লাভিভাইরাস গোত্রের অন্তর্গত। যেমন ডেঙ্গু, ইয়েলো ফিভার ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসেরও অবস্থান। জিকা মূলত এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিক্টাস নামক মশার মাধ্যমে ছাড়ায়।
যা ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও বাহক। জিকার একটি বিশেষ দিক হলো এটি যৌন সংস্পর্শ, রক্ত সংক্রমণ এবং গর্ভবস্থায় মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ শিশুর দেহেও সংক্রমিত হতে পারে।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ল্যাবে শনাক্ত হওয়া দুইজন রোগীর মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, জিকা ভাইরাস সম্ভবত দেশের ভিতরেই ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ এটি স্থানীয় সংক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। তবে আইইডিসিআরের টিম চট্টগ্রামে এ নিয়ে কাজ করছেন। দুই রোগীর গত এক মাসের ভ্রমণ ইতিহাস, তাদের মধ্যে সম্পর্কের বিশ্লেষণ করা দরকার বলে এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, জিকা ভাইরাসে উপসর্গ তুলনামূলকভাবে হালকা হলেও এর সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব অত্যন্ত জটিল। সাধারণত এতে দেখা যায়, হালকা জ্বর, ত্বকে র্যাশ, মাথাব্যাথা, চোখ লাল হওয়া, অস্থিসন্ধি ও পেশির ব্যথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ দিনে মধ্যেই এই উপসর্গ সেরে যায়। কিন্তু গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত হলে গর্ভস্থ শিশুদের মধ্যে
মাইক্রোসেফালি, মস্তিস্ক ছোট হওয়া ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল জটিলতা তৈরি করে। এই ভাইরাসের উদ্বেগের বিষয় হলো এ ভাইরাস স্নায়ুবিক জটিলতার কারণ হতে পারে।
যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি পক্ষাঘাতও হতে পারেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এ মূহুর্তে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধা হলো জিকা ভাইরাস শনাক্ত করার পরীক্ষার অভাব। গ্রামীণ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এই পরীক্ষা ব্যয়বহুল।
জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এ তিন ভাইরাসজনিত রোগই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় ও উপসর্গে অনেকটাই মিল থাকে। ফলে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্যই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রসঙ্গে তিনটি ভাইরাসের স্ক্রিনিং পরীক্ষার সুবিধা চালু করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জিকা মহামারী : বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে জিকা ভাইরাস একাধিকবার মহামারী আকার ধারণ করেছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্রাজিলে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে। তখন হাজার হাজার শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হয়। কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা ও ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশে জিকা সংক্রমণের শিকার হয়েছে। নতুন মশাবাহিত এই রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে একটি সুসংহত কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য।
টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা,অ ভিজ্ঞ কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্ট ও চিকিৎসকদের নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করার পরামর্শ। এই কমিটি নতুন করে কেউ কোনো ভাইরাস আক্রান্ত হলে তারা করণীয় সম্পর্কে গাইডলাইন দিবেন। আর এজন্য জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। আর জরুরি বাজেট প্রণয়ন করে ওষুধ, টিকা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ওপর এ কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ গুরুত্ব দিয়েছেন।
জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এ তিনটি রোগ এডিস মশাবাহিত। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসম্পৃক্ততাই সবচেয়ে কার্যকর। প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত উভয় এলাকাই মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলমান রাখতে হবে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন শনিবার রাতে সংবাদকে জানান, এডিস মশা থেকে এই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এতে গর্ভবতী নারীদের নবজাতক শিশুর মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। শিশুদের মস্তিস্ক ছোট হয়।