নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পাথর উত্তোলনের কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তায়, নিঃস্ব হচ্ছে তিস্তা পাড়ের সাধারণ মানুষ, পরিবেশেও দেখা দিচ্ছে বিপর্যয়
ডিমলায় তিস্তা নদীতে ‘অবৈধ’ পাথর উত্তোলনে সিন্ডিকেট চক্র -সংবাদ
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে অবৈধ পাথর উত্তোলন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। প্রভাবশালী মহলের দুর্দান্ত ক্ষমতার দাপটের কারণে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে তিস্তা নদীর তলদেশ হতে পাথর উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট। তারা প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর লোক দেখানো দায়সারা অভিযান চালালেও তাতে আরও তিস্তা নদী হতে পাথর উত্তোলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেটগুলো। তারা অনেকটা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। তারা কোনোক্রমেই মানছে না বারণ। সে কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তায়। ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিস্তা পাড়ের সাধারণ মানুষ ও পরিবেশের।
তিস্তার তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীভাঙনে বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে হুঁ হুঁ করে।
তিস্তা পাড় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবৎ তিস্তা নদী ও সংলগ্ন এলাকায় মহোৎসবে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। অবৈধ এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় এই চক্রের হাতে নাজেহাল হয়েছেন অনেক প্রতিবাদী। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাদেরকে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কিছুতেই থামানো যায়নি তাদের দৌরাত্ম্য।
জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৬ টি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ডান তীরের গ্রামগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ভাঙন এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় শ্রমিকরা । নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা মজনু মিয়া জানান, ‘তিস্তা ব্যারাজের আশপাশে, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার , চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর উত্তোলনে প্রায় ১৫টি প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে।
সম্প্রতি তিস্তা ব্যারেজের উজানে তেলির বাজার, ছোটখাতা ও ভাটিতে ডালিয়া বাইশপুকুর এলাকায় দেখা যায় শ্রমিকেরা বেলচা, কোদাল ও শাবল ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করে অন্তত শতাধিক নৌকায় বোঝাই করেছেন। পরে সে সব পাথর বিক্রির জন্য ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হয় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাকের ডগায় তিস্তা সেচ নালার ধারে স্তুপ করা হয় । সেখান থেকে বাজার জাত করে বিক্রি করা হয়।
বাইশপুকুর এলাকায় নদীর যে স্থানে পাথর তোলা হচ্ছে তার ৫০০ মিটার উজানে ও ভাটিতে তিস্তা ব্যারেজ। পাশেই নদীর ভাঙন রোধে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তীরে জিওব্যাগ ভরাট করে ফেলানো হয়।
পাথর উত্তোলনকারীরা জানান, নৌকা চলন্ত অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাখা দিয়ে নদীর তলদেশের বালু সরিয়ে পাথর তুলে পানির ওপরে নিয়ে আসা হয়। এভাবেই নদীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক সক্রিয় টিম পাথর উত্তোলন করছে।
উত্তোলিত পাথর ৪০-৫০ টাকা সিএফটি দরে স্থানীয় সিন্ডিকেটটি ক্রয় করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে।
আর সিন্ডিকেটের এসব পাথর চড়া মূল্যে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি করে পাথর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বলে জানান পাথর শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাথর পরিবহনকারী একটি ট্রাক্টরের মালিক দবির উদ্দিন জানান, তারা ভাড়া চুক্তিতে এক মাস ধরে পাথর পরিবহন করছেন। ডালিয়া বাজারের শহিদ ইসলাম তাদের নিযুক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে শহিদ বলেন, যারা নৌকার মালিক তারাই পাথর তুলছে। আমি বিভিন্ন দলের কাছে প্রতি সিএফটি পাথর ৬৯ টাকায় কিনে ৭১ টাকা দরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমার মতো অনেকেই তিস্তা নদীর পাথর প্রতিদিন উত্তোলনকারী দলগুলোর কাছ থেকে কিনে নেন। শহিদ জানান, গত ৫ বছর নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল । সম্প্রতি আবার জোরে সোরে শুরু হয়েছে।
বাইশপুকুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহে নদীর ভাঙনে তার ৩ বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলন করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু আমরা নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়েছি। আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তাছাড়া পাথর পরিবহনের ট্রাক্টর থেকে পানি পড়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্থানীয় সড়কের বেহাল অবস্থা হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘নদীর বালু, পাথরের দায়িত্ব আমাদের না। যারা পাথর বালু উত্তোলন করছে তাদের শাস্তি দেয়ার দায়-দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের আইনগতভাবে কোনো সুযোগ নেই। গত ৩ দিন পূর্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুই পাথর উত্তোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫ দিন করে সাজা দেয়া হয়েছে। এরপরেও আইন অমান্য করে তিস্তা নদী হতে পাথর উত্তোলন করা হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নাই।
নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পাথর উত্তোলনের কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তায়, নিঃস্ব হচ্ছে তিস্তা পাড়ের সাধারণ মানুষ, পরিবেশেও দেখা দিচ্ছে বিপর্যয়
ডিমলায় তিস্তা নদীতে ‘অবৈধ’ পাথর উত্তোলনে সিন্ডিকেট চক্র -সংবাদ
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে অবৈধ পাথর উত্তোলন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। প্রভাবশালী মহলের দুর্দান্ত ক্ষমতার দাপটের কারণে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে তিস্তা নদীর তলদেশ হতে পাথর উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট। তারা প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর লোক দেখানো দায়সারা অভিযান চালালেও তাতে আরও তিস্তা নদী হতে পাথর উত্তোলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেটগুলো। তারা অনেকটা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। তারা কোনোক্রমেই মানছে না বারণ। সে কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তায়। ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিস্তা পাড়ের সাধারণ মানুষ ও পরিবেশের।
তিস্তার তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীভাঙনে বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে হুঁ হুঁ করে।
তিস্তা পাড় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবৎ তিস্তা নদী ও সংলগ্ন এলাকায় মহোৎসবে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। অবৈধ এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় এই চক্রের হাতে নাজেহাল হয়েছেন অনেক প্রতিবাদী। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাদেরকে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কিছুতেই থামানো যায়নি তাদের দৌরাত্ম্য।
জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৬ টি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ডান তীরের গ্রামগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ভাঙন এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় শ্রমিকরা । নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা মজনু মিয়া জানান, ‘তিস্তা ব্যারাজের আশপাশে, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার , চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর উত্তোলনে প্রায় ১৫টি প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে।
সম্প্রতি তিস্তা ব্যারেজের উজানে তেলির বাজার, ছোটখাতা ও ভাটিতে ডালিয়া বাইশপুকুর এলাকায় দেখা যায় শ্রমিকেরা বেলচা, কোদাল ও শাবল ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করে অন্তত শতাধিক নৌকায় বোঝাই করেছেন। পরে সে সব পাথর বিক্রির জন্য ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হয় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাকের ডগায় তিস্তা সেচ নালার ধারে স্তুপ করা হয় । সেখান থেকে বাজার জাত করে বিক্রি করা হয়।
বাইশপুকুর এলাকায় নদীর যে স্থানে পাথর তোলা হচ্ছে তার ৫০০ মিটার উজানে ও ভাটিতে তিস্তা ব্যারেজ। পাশেই নদীর ভাঙন রোধে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তীরে জিওব্যাগ ভরাট করে ফেলানো হয়।
পাথর উত্তোলনকারীরা জানান, নৌকা চলন্ত অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাখা দিয়ে নদীর তলদেশের বালু সরিয়ে পাথর তুলে পানির ওপরে নিয়ে আসা হয়। এভাবেই নদীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক সক্রিয় টিম পাথর উত্তোলন করছে।
উত্তোলিত পাথর ৪০-৫০ টাকা সিএফটি দরে স্থানীয় সিন্ডিকেটটি ক্রয় করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে।
আর সিন্ডিকেটের এসব পাথর চড়া মূল্যে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি করে পাথর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বলে জানান পাথর শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাথর পরিবহনকারী একটি ট্রাক্টরের মালিক দবির উদ্দিন জানান, তারা ভাড়া চুক্তিতে এক মাস ধরে পাথর পরিবহন করছেন। ডালিয়া বাজারের শহিদ ইসলাম তাদের নিযুক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে শহিদ বলেন, যারা নৌকার মালিক তারাই পাথর তুলছে। আমি বিভিন্ন দলের কাছে প্রতি সিএফটি পাথর ৬৯ টাকায় কিনে ৭১ টাকা দরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমার মতো অনেকেই তিস্তা নদীর পাথর প্রতিদিন উত্তোলনকারী দলগুলোর কাছ থেকে কিনে নেন। শহিদ জানান, গত ৫ বছর নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল । সম্প্রতি আবার জোরে সোরে শুরু হয়েছে।
বাইশপুকুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহে নদীর ভাঙনে তার ৩ বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলন করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু আমরা নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়েছি। আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তাছাড়া পাথর পরিবহনের ট্রাক্টর থেকে পানি পড়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্থানীয় সড়কের বেহাল অবস্থা হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘নদীর বালু, পাথরের দায়িত্ব আমাদের না। যারা পাথর বালু উত্তোলন করছে তাদের শাস্তি দেয়ার দায়-দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের আইনগতভাবে কোনো সুযোগ নেই। গত ৩ দিন পূর্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুই পাথর উত্তোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫ দিন করে সাজা দেয়া হয়েছে। এরপরেও আইন অমান্য করে তিস্তা নদী হতে পাথর উত্তোলন করা হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নাই।