গভীর সংস্কারের মাধ্যমে ‘নতুন পথ রচনার’ অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু কাগুজে সংস্কার নয়, প্রয়োজন অন্তরের গভীর থেকে পরিবর্তন। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জুলাই স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইউনূস। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জুলাইকে বাংলাদেশের ‘পুনর্জন্মের মাস’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা শুধু স্বৈরাচার মুক্তির মাস নয়। এখনো সময় আছে। জুলাইয়ের শিক্ষাগুলো আমাদের কাছে তাজা আছে। মাঝে মাঝে ভয় হয়, এই শিক্ষা ক্ষয়ে যাবে, ভুলে যাবে সবাই। আবার অতীতের মত ভাষা রপ্ত হয়ে যাবে, আবার সেই ভাষা ব্যবহার করব, আবার সেই ব্যাখ্যা ব্যবহার করব। সে দিকে যাতে আমাদের যেতে না হয় আর কোনদিন, এই পথ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া; এই পথের কোনো ঠিকানায় আর যাব না, আমাদের নতুন পথ রচনা হবে।”
আওয়ামী লীগ আমলে গুম ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, “যে মহাতাণ্ডব, এই তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়া কত গভীরভাবে আমাদের মধ্যে প্রথিত আছে, সেটা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। যদি আয়নাঘরের প্রতিটি ঘর আমরা দেখাতে পারতাম, তাহলে জাতি বুঝতে পারত, ১৬ বছরে কী কাণ্ডটা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “উপরে প্রলেপ দেওয়া পরিবর্তন নয়, গভীরতম পরিবর্তন। সেই গভীরতম পরিবর্তন যদি না করি, আবার চলে আসবে সেটা। যে সংস্কার আমাদের দরকার তা হল আরও গভীরের সংস্কার।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে ইউনূস বলেন, “আমার আবেদন হচ্ছে, আমাদের জাতির মাঝে এমন কিছু রয়ে গেছে, সেটার যত শাস্তি দিই, যত কিছু দিই, ওটার বীজগুলো আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। এই বীজ থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাই, এটাই আজকের জানার বিষয়, আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়।”
তিনি বলেন, “মানুষ হিসেবে আমাদেরকে নিজেদের কাছে পরিচিত করা দরকার। মানুষ হিসেবে আমরা কী কী চাই, তা করা দরকার।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা বিশ্বের একটি নৈতিক দিকনির্দেশক এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত। “তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।”
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান ও সুপারিশের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কেবল অন্যদের প্রতি বাধ্যবাধকতার জন্য নয়, বরং আমাদের নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে। আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি। সংস্কারের পাশাপাশি গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারিক জবাবদিহিতায় আনার কাজ করছি আমরা।”
তিনি বলেন, “বিচার মানে শুধু শাস্তি দেওয়া নয়। বিচার মানে এটা নিশ্চিত করা যে, নিজের নাগরিকের নিবর্তন, স্তব্ধ করা এবং ধ্বংস করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়েছে।”
ইউনূস বলেন, “আমরা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য কাজ করছি। যাতে সেটা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট: এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গৌরবের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”
জাতিসংঘ কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জুলাই আন্দোলনে নিহত গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান লিটন এবং নিহত মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী।
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
গভীর সংস্কারের মাধ্যমে ‘নতুন পথ রচনার’ অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু কাগুজে সংস্কার নয়, প্রয়োজন অন্তরের গভীর থেকে পরিবর্তন। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জুলাই স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইউনূস। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জুলাইকে বাংলাদেশের ‘পুনর্জন্মের মাস’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা শুধু স্বৈরাচার মুক্তির মাস নয়। এখনো সময় আছে। জুলাইয়ের শিক্ষাগুলো আমাদের কাছে তাজা আছে। মাঝে মাঝে ভয় হয়, এই শিক্ষা ক্ষয়ে যাবে, ভুলে যাবে সবাই। আবার অতীতের মত ভাষা রপ্ত হয়ে যাবে, আবার সেই ভাষা ব্যবহার করব, আবার সেই ব্যাখ্যা ব্যবহার করব। সে দিকে যাতে আমাদের যেতে না হয় আর কোনদিন, এই পথ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া; এই পথের কোনো ঠিকানায় আর যাব না, আমাদের নতুন পথ রচনা হবে।”
আওয়ামী লীগ আমলে গুম ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, “যে মহাতাণ্ডব, এই তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়া কত গভীরভাবে আমাদের মধ্যে প্রথিত আছে, সেটা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। যদি আয়নাঘরের প্রতিটি ঘর আমরা দেখাতে পারতাম, তাহলে জাতি বুঝতে পারত, ১৬ বছরে কী কাণ্ডটা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “উপরে প্রলেপ দেওয়া পরিবর্তন নয়, গভীরতম পরিবর্তন। সেই গভীরতম পরিবর্তন যদি না করি, আবার চলে আসবে সেটা। যে সংস্কার আমাদের দরকার তা হল আরও গভীরের সংস্কার।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে ইউনূস বলেন, “আমার আবেদন হচ্ছে, আমাদের জাতির মাঝে এমন কিছু রয়ে গেছে, সেটার যত শাস্তি দিই, যত কিছু দিই, ওটার বীজগুলো আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। এই বীজ থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাই, এটাই আজকের জানার বিষয়, আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়।”
তিনি বলেন, “মানুষ হিসেবে আমাদেরকে নিজেদের কাছে পরিচিত করা দরকার। মানুষ হিসেবে আমরা কী কী চাই, তা করা দরকার।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা বিশ্বের একটি নৈতিক দিকনির্দেশক এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত। “তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।”
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান ও সুপারিশের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কেবল অন্যদের প্রতি বাধ্যবাধকতার জন্য নয়, বরং আমাদের নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে। আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি। সংস্কারের পাশাপাশি গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারিক জবাবদিহিতায় আনার কাজ করছি আমরা।”
তিনি বলেন, “বিচার মানে শুধু শাস্তি দেওয়া নয়। বিচার মানে এটা নিশ্চিত করা যে, নিজের নাগরিকের নিবর্তন, স্তব্ধ করা এবং ধ্বংস করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়েছে।”
ইউনূস বলেন, “আমরা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য কাজ করছি। যাতে সেটা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট: এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গৌরবের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”
জাতিসংঘ কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জুলাই আন্দোলনে নিহত গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান লিটন এবং নিহত মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী।