alt

জাতীয়

জাপায় জি এম কাদেরের কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) এবং দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। এছাড়া জি এম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলাম এ আদেশ দেয়। বৃহস্পতিবার, (৩১ জুলাই ২০২৫) সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জি এম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গঠনতন্ত্রের ২০ (১) (ক) ধারা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার জন্যও বলা হয়েছে।

আইনজীবী বলেন, এছাড়াও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ১০ জনের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই ১০ জন হলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর)।

গত ২৮ জুন প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে এই ১০ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়; ওই ঘটনায় ১০ জুলাই অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা জি এম কাদেরসহ দুইজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। বিবাদীর তালিকায় আরও দুজনের (মোকাবিলা বিবাদী) রয়েছেন, যাদের বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়া হয়নি।

মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা দলের ‘গঠনতন্ত্র পরিপন্থিভাবে’ জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর জিএম কাদের পার্টির সম্মেলন ও কাউন্সিল করে ‘অবৈধভাবে’ নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করেন।

জাতীয় পার্টিরে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, গত ২৫ জুন দলের মতবিনিময় সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়। এর তিন দিন পর গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ‘এমতাবস্থা পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই তিনজনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ পার্টির সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।’ মহাসচিব পদ থেকে চুন্নুকে সরিয়ে সেই পদে জি এম কাদের তার আস্থাভাজন প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে বসান।

পূর্বাপর

জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের ‘পাপ’ থেকে দলকে মুক্ত করতে সম্প্রতি এরশাদের ভাই জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর উদ্যোগ নিলে জাতীয় পার্টি আবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে।

গত ২৮ জুন চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় সম্মেলন দিন ঠিক করেছিলেন জি এম কাদেরর নেতৃত্বাধীন দলটি। কিন্তু শেষমেশ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, ওই তারিখে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি থাকায় অনুমতি দেয়া যাবে না। এরপর জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করে দেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। মহাসচিব চুন্নুও ছিলেন তাদের সঙ্গে।

বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে যেসব দল গঠিত হয়েছে, তাদের শীর্ষ নেতাদেরও এক মঞ্চে এনে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তারা। সেজন্য এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতাদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।

পার্টির কর্মীদের একটি অংশের মধ্যে একটি চালু ধারণা হলো, বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনাতে হবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জি এম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে যেহেতু নানা প্রশ্ন রয়েছে, সেজন্য পার্টির ভেতরে যৌথ নেতৃত্ব সৃষ্টি করে পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। সেজন্য পুরনো ও নিষ্ক্রিয় নেতাদেরকে যুক্ত করতে হবে।

মূলত ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা থেকে জাতীয় পার্টিকে বের করে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনে জোর দিচ্ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন তালুকদাররা। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সে সময় স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, জি এম কাদের ‘একাই সবকিছু’ করতে চান। এর পরিবর্তন চান তারা। ‘মেইন জিনিস হচ্ছে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র। আমরা পার্টি থেকে সেটা সরাতে চাই। পার্টিতে যদি স্বৈরতন্ত্র থাকে, তাহলে গণতন্ত্রের কথা বলে তো লাভ নাই,’ বলেছিলেন তিনি।

জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব গঠনের একটি প্রক্রিয়া যে শুরু হয়েছে, সেটা তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন।

গত ২০ জুন সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে বাদ দিতে পারছে না। কাজেই জি এম কাদের মাইনাস হয়ে জাতীয় পার্টি সেটা হলো সরকারের পলিসি টু কাম কামিং ইলেকশন। বিএনপি-জামায়াত ওরা আওয়ামী লীগকে থাকতে দেবে না। আর জাতীয় পার্টিকেও বাদ দিতে চাচ্ছিল, কিন্তু যেহেতু পারছে না, সেহেতু জি এম কাদের মাইনাস, সেটা তারা চায়। কাউন্সিল করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিলে লাঙ্গলও পাবে, এটা তারা বলে বেড়াচ্ছে।’

এরমধ্যে বিরোধীদের সম্মেলনের পাল্টায় নিজের শক্তির জানান দিতে গত ২৮ জুন দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মহা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে বসেন জি এম কাদের। কিন্তু আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের ওই অংশটি সম্মেলনের নতুন তারিখের ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই, চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে দলের প্রতিষ্ঠাতা পল্লিবন্ধুর (এইচ এম এরশাদ) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।’

জাতীয় পার্টির ওই অংশের একজন নেতা সে সময় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পার্টি অফিসে সম্মেলন করার জন্যও তারা প্রশাসনের অনুমতি পাননি। মূলত সে কারণেই তারা অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তারা জি এম কাদেরকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন। দল ভাঙার দায় না নিয়ে তারা নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চান।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ২৭ জুন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘চীন মৈত্রীর বরাদ্দ বাতিলের পর কাকরাইলে কাউন্সিল করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে তো চেয়ারম্যান মহাসমাবেশ আহ্বান করেছে। সবমিলিয়ে আপাতত সম্মেলন করছি না।’ আর জিএম কাদেরের পক্ষে শামীম হায়দার পাটোয়ারী সেদিন বলেন, ‘আমরা তো সম্মেলন স্থগিত করেছি। পরে আপনাদের সম্মেলনের তারিখ জানিয়ে দিবো। আপাতত কোনো প্রোগ্রামও আমরা করছি না।’

দুই পক্ষ এক পা করে পিছু হটায় সে সময় দলের কর্মীদের উত্তেজনা কিছুটা কমলেও এক সপ্তাহের মাথায় নতুন পদক্ষেপ নিলেন জি এম কাদের।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে, ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা ভাঙন হয়। কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় পঞ্চমবারের মতো ভাঙে জাতীয় পার্টি। এরশাদ মারা যাওয়ার পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।

ছবি

নিউ ইয়র্ক পুলিশের নিহত ডিটেকটিভ দিদারুলকে হেলিকপ্টারে শেষ শ্রদ্ধা, মরনোত্তর পদোন্নতি

ছবি

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন

ছবি

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক অপু গ্রেপ্তার

ছবি

রাজধানীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’, গ্রেপ্তার ২২

ছবি

চাঁদা আদায়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে রিয়াদ-অপু, উদ্ধার ৩ লাখ টাকা: পুলিশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে বাংলাদেশের ‘কূটনৈতিক বিজয়’: প্রধান উপদেষ্টা

সচিবকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে তালা, আটক ৬

রিয়াদের আরেক বাসা থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা উদ্ধার

ছবি

খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে চাঁদাবাজি, ১৩ ব্যাংকে ৫ কোটি টাকা ফ্রিজ

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি ফের ১৩ আগস্ট

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরের নিচু এলাকায় ভারী বৃষ্টিতে ফের জলাবদ্ধতা

ছবি

চুরি হচ্ছে ওএমএসের চাল-আটা, বঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষ

ছবি

গণঅভ্যুত্থানে সমন্বয়কদের ছাত্রশিবিরের ‘নির্দেশে’ কাজ করার তথ্য ‘মিথ্যাচার’: নাহিদ

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ: ঐকমত্যের আলোচনায় ফের উত্তেজনা

ছবি

ডেঙ্গু: জুলাই মাসে আক্রান্ত ১০,৬৮৪ জন, মৃত্যু ৪১

ছবি

দেশব্যাপী চাঁদাবাজদের তালিকা হচ্ছে, দায়িত্বে পুলিশ ও র‌্যাবসহ তিন গোয়েন্দা সংস্থা

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রত্যাশা ফখরুলের, মৌলিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ

ছবি

গোপালগঞ্জে জীবনের হুমকি বিবেচনায় এনসিপি নেতাদের উদ্ধার: সেনাবাহিনী

ছবি

জুলাই সনদ: সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি জামায়াতের

ছবি

ওসমানী বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজের চাকা ফেটে একজন নিহত

ছবি

এমএসএফের প্রতিবেদন: জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, রাজধানীতে দিনভর যানজট, দুর্ভোগ

ছবি

সংসদে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ, মনোনয়ন পিআর পদ্ধতিতে: ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

ছবি

মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ, সাবেক মন্ত্রী জাবেদসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

রাষ্ট্রপতির হাতে সেনা, নৌ, বিমানপ্রধান ও গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগের প্রস্তাব

ছবি

“সবার জীবন মূল্যবান” গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে সেনা হস্তক্ষেপ নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা

ছবি

সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রতিনিধিত্বে দ্বিকক্ষীয় সংসদ গঠনের পথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভোটের সময়সূচি ঘিরে আলোচনা, প্রস্তুতি চলছে নির্বাচনের: আসিফ নজরুল

ছবি

বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে শিশুদের অবস্থা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে গুরুতর

ছবি

জুলাই সনদ: আজই নিষ্পত্তি চায় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, তীব্র যানজট

ছবি

দুর্নীতি মামলা: শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু

ছবি

গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে, বাগেরহাটে কমছে একটি: নির্বাচন কমিশন

আ’লীগ আমলের তিন সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে কমিশনে রূপান্তর

ছবি

বিমান শারজাহ থেকে ফিরলো ৬ ঘণ্টা দেরিতে

tab

জাতীয়

জাপায় জি এম কাদেরের কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) এবং দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। এছাড়া জি এম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলাম এ আদেশ দেয়। বৃহস্পতিবার, (৩১ জুলাই ২০২৫) সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জি এম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গঠনতন্ত্রের ২০ (১) (ক) ধারা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার জন্যও বলা হয়েছে।

আইনজীবী বলেন, এছাড়াও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ১০ জনের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই ১০ জন হলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর)।

গত ২৮ জুন প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে এই ১০ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়; ওই ঘটনায় ১০ জুলাই অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা জি এম কাদেরসহ দুইজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। বিবাদীর তালিকায় আরও দুজনের (মোকাবিলা বিবাদী) রয়েছেন, যাদের বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়া হয়নি।

মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা দলের ‘গঠনতন্ত্র পরিপন্থিভাবে’ জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর জিএম কাদের পার্টির সম্মেলন ও কাউন্সিল করে ‘অবৈধভাবে’ নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করেন।

জাতীয় পার্টিরে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, গত ২৫ জুন দলের মতবিনিময় সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়। এর তিন দিন পর গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ‘এমতাবস্থা পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই তিনজনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ পার্টির সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।’ মহাসচিব পদ থেকে চুন্নুকে সরিয়ে সেই পদে জি এম কাদের তার আস্থাভাজন প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে বসান।

পূর্বাপর

জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের ‘পাপ’ থেকে দলকে মুক্ত করতে সম্প্রতি এরশাদের ভাই জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর উদ্যোগ নিলে জাতীয় পার্টি আবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে।

গত ২৮ জুন চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় সম্মেলন দিন ঠিক করেছিলেন জি এম কাদেরর নেতৃত্বাধীন দলটি। কিন্তু শেষমেশ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, ওই তারিখে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি থাকায় অনুমতি দেয়া যাবে না। এরপর জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করে দেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। মহাসচিব চুন্নুও ছিলেন তাদের সঙ্গে।

বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে যেসব দল গঠিত হয়েছে, তাদের শীর্ষ নেতাদেরও এক মঞ্চে এনে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তারা। সেজন্য এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতাদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।

পার্টির কর্মীদের একটি অংশের মধ্যে একটি চালু ধারণা হলো, বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনাতে হবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জি এম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে যেহেতু নানা প্রশ্ন রয়েছে, সেজন্য পার্টির ভেতরে যৌথ নেতৃত্ব সৃষ্টি করে পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। সেজন্য পুরনো ও নিষ্ক্রিয় নেতাদেরকে যুক্ত করতে হবে।

মূলত ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা থেকে জাতীয় পার্টিকে বের করে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনে জোর দিচ্ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন তালুকদাররা। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সে সময় স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, জি এম কাদের ‘একাই সবকিছু’ করতে চান। এর পরিবর্তন চান তারা। ‘মেইন জিনিস হচ্ছে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র। আমরা পার্টি থেকে সেটা সরাতে চাই। পার্টিতে যদি স্বৈরতন্ত্র থাকে, তাহলে গণতন্ত্রের কথা বলে তো লাভ নাই,’ বলেছিলেন তিনি।

জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব গঠনের একটি প্রক্রিয়া যে শুরু হয়েছে, সেটা তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন।

গত ২০ জুন সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে বাদ দিতে পারছে না। কাজেই জি এম কাদের মাইনাস হয়ে জাতীয় পার্টি সেটা হলো সরকারের পলিসি টু কাম কামিং ইলেকশন। বিএনপি-জামায়াত ওরা আওয়ামী লীগকে থাকতে দেবে না। আর জাতীয় পার্টিকেও বাদ দিতে চাচ্ছিল, কিন্তু যেহেতু পারছে না, সেহেতু জি এম কাদের মাইনাস, সেটা তারা চায়। কাউন্সিল করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিলে লাঙ্গলও পাবে, এটা তারা বলে বেড়াচ্ছে।’

এরমধ্যে বিরোধীদের সম্মেলনের পাল্টায় নিজের শক্তির জানান দিতে গত ২৮ জুন দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মহা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে বসেন জি এম কাদের। কিন্তু আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের ওই অংশটি সম্মেলনের নতুন তারিখের ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই, চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে দলের প্রতিষ্ঠাতা পল্লিবন্ধুর (এইচ এম এরশাদ) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।’

জাতীয় পার্টির ওই অংশের একজন নেতা সে সময় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পার্টি অফিসে সম্মেলন করার জন্যও তারা প্রশাসনের অনুমতি পাননি। মূলত সে কারণেই তারা অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তারা জি এম কাদেরকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন। দল ভাঙার দায় না নিয়ে তারা নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চান।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ২৭ জুন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘চীন মৈত্রীর বরাদ্দ বাতিলের পর কাকরাইলে কাউন্সিল করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে তো চেয়ারম্যান মহাসমাবেশ আহ্বান করেছে। সবমিলিয়ে আপাতত সম্মেলন করছি না।’ আর জিএম কাদেরের পক্ষে শামীম হায়দার পাটোয়ারী সেদিন বলেন, ‘আমরা তো সম্মেলন স্থগিত করেছি। পরে আপনাদের সম্মেলনের তারিখ জানিয়ে দিবো। আপাতত কোনো প্রোগ্রামও আমরা করছি না।’

দুই পক্ষ এক পা করে পিছু হটায় সে সময় দলের কর্মীদের উত্তেজনা কিছুটা কমলেও এক সপ্তাহের মাথায় নতুন পদক্ষেপ নিলেন জি এম কাদের।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে, ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা ভাঙন হয়। কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় পঞ্চমবারের মতো ভাঙে জাতীয় পার্টি। এরশাদ মারা যাওয়ার পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।

back to top