alt

জাতীয়

সংসদে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ, মনোনয়ন পিআর পদ্ধতিতে: ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে ১০০ আসনবিশিষ্ট উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর যে ভোট পাবে, সেই হারে দলগুলোর মধ্যে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন করা হবে। এই পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল একটি আসন না পেলেও উচ্চকক্ষে আসন পেতে পারে। বৃহস্পতিবার, (৩১ জুলাই ২০২৫)ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে (আলোচনা) ২৩তম দিনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

কিছু পক্ষ ‘অনির্বাচিতদের’ দিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা ‘কেন্দ্রীভূত’ করতে

চায়: বিএনপি

উভয়কক্ষের সদস্যদের গোপন ভোটে হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, একমত সব দল

তিন বাহিনীর প্রধান ও দুই গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেয়ার প্রস্তাব

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাবের পক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ বেশ কিছু দল। তবে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে ছিল বিএনপিসহ কয়েকটি দল। এই ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় এবং ভিন্নমত থাকায়, বিষয়টি কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিল। সেই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে কমিশন এ সিদ্ধান্ত জানায়।

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে, অর্থবিল ব্যতীত অন্য সব বিল নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ উভয়কক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না। এক মাসের বেশি বিল আটকে রাখলে, সেটিকে উচ্চকক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে।

নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত বিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করবে উচ্চকক্ষ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, তবে উভয়কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। নিম্নকক্ষ সেই সংশোধনগুলো আংশিক বা পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।

বিএনপি এবং তাদের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) দাবি, উচ্চকক্ষের আসন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে। উচ্চকক্ষের এখতিয়ার

নিয়েও তাদের আপত্তি রয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, দেশের বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উচ্চকক্ষের কোনো প্রয়োজন নেই।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে এই কমিশন, যার নেতৃত্বে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিল। যেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০, নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি।

অস্পষ্টতা দেখছে এনসিপি

বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি, ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে। আমরা কমিশন এবং আলী রীয়াজ স্যারের কাছে আহ্বান জানাবো যে, বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে যেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা ও কার্যকর আলোচনা হয়। কমিশনের প্রস্তাবিত সময়সীমাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি এবং চাইছি যেন এটি তৎক্ষণাৎ কার্যকর হয়।’ তিনি বলেন, ‘আজকের আলোচনায় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহা হিসাব নিরীক্ষকের মতো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি দল ভিন্নমত পোষণ করলেও সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে।’

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষের গঠনপ্রণালি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলা হয়েছে। তবে এনসিপির পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হয়েছে যে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে।

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা প্রকৃত নির্বাচিত প্রতিনিধি নন, এমন কথা অনেকেই বলছেন তুলে ধরে আখতার বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই এফপিটিপি (ফার্স্ট-পাস্ট-দ্যা-পোস্ট) ও পিআর উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বৈধতা রয়েছে। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও জনগণের প্রতিনিধি। যেসব দল এক শতাংশ ভোট পেলেও তারা যেন একজন করে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি দিতে পারেন, এতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের আরও বিস্তৃত রূপ প্রতিষ্ঠিত হবে। আইন পাসের আগে উচ্চকক্ষে ব্যাপক আলোচনা হবে, যা এখন হয় না। এতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সঠিক ত্রুটি ধরার সুযোগ থাকবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হবে।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটি যেন না হয়। বরং উচ্চকক্ষে যদি পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা থাকেন, তাহলে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টিও জনগণের বৃহত্তর প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে হতে পারবে। মোটাদাগে আমরা উচ্চকক্ষ চাই। এখন অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তারা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে তারা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কিনা? আমরা বিশ্বাস করি, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ১০০ আসনের পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ বহুদলীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব না থেকে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে দেশ। গণতন্ত্র চর্চার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশের রাজনীতি যেন হানাহানি ও সংঘাত থেকে সরে এসে নীতিনির্ভর ও সংলাপনির্ভর পথে পরিচালিত হোক। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ থাকলে, তা সম্ভব।’

অনির্বাচিত সদস্য

পিআর পদ্ধতিতে ‘কিছু পক্ষ’ অনির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে বলে

অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার সংলাপের চা-বিরতিতে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি, উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না। উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা দেখছি, কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিন করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

আইনসভার উভয়কক্ষের (জাতীয় সংসদ ও উচ্চকক্ষ) সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংলাপে দুপুরের বিরতির পরে আলোচনার জন্য উপস্থাপন করলে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়।

কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইনানুযায়ী আইন সভার উভয়কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ। সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হইবেন।’ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) এ উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো প্রয়োজ্য হবে এবং রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পদে থাকতে পারবেন না এই মর্মে অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) (ঘ) যুক্ত হবে।

বৃহস্পতিবার সংলাপের শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, এদিন তিনি আলোচনার সমাপ্তি টানতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’ তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

রাষ্ট্রপতির হাতে নিয়োগের ক্ষমতা

তিন সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধান এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ প্রস্তাবের ওপর বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে একটি ধারণাপত্র তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছেন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে ঐকমত্য কমিশন আরও কিছু নিয়োগে রাষ্ট্রপতির স্বাধীন ক্ষমতার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে।

তিন বাহিনীর প্রধান ও দুই গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগের ক্ষমতার বিষয়টির পাশাপাশি আরও ৯টি নিয়োগের ক্ষমতা সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস্ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে বিএনপির চিন্তাভাবনা তুলে ধরে চা-বিরতিতে ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয়কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।’

জুলাই সনদ ‘আইনের ঊর্ধ্বে’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি তুলেছে। এ স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই সনদে সই না করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তারা। এমনকি সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও এসেছে জামায়াতের পক্ষ থেকে।

কিন্তু বিএনপি এখনই এর সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে। দলটি বলছে, এটি ‘আইনের ঊর্ধ্বে’।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়। জনগণের এ প্রত্যাশা (সংসদের মাধ্যমে) সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার অঙ্গীকার আমরা করেছি।’

ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রতিটি দলকে প্রস্তাব সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলাম। আমরা সংশোধন করে দিয়েছি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধান ও অন্যান্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে আমরা তা করব।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছি, পঞ্চম সংশোধনের মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বিতর্ক করব, মতপ্রকাশ করব, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য গড়ে তুলব। জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এ সনদকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি।’

ছবি

নিউ ইয়র্ক পুলিশের নিহত ডিটেকটিভ দিদারুলকে হেলিকপ্টারে শেষ শ্রদ্ধা, মরনোত্তর পদোন্নতি

ছবি

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন

ছবি

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক অপু গ্রেপ্তার

ছবি

রাজধানীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’, গ্রেপ্তার ২২

ছবি

চাঁদা আদায়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে রিয়াদ-অপু, উদ্ধার ৩ লাখ টাকা: পুলিশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে বাংলাদেশের ‘কূটনৈতিক বিজয়’: প্রধান উপদেষ্টা

সচিবকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে তালা, আটক ৬

রিয়াদের আরেক বাসা থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা উদ্ধার

ছবি

খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে চাঁদাবাজি, ১৩ ব্যাংকে ৫ কোটি টাকা ফ্রিজ

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি ফের ১৩ আগস্ট

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরের নিচু এলাকায় ভারী বৃষ্টিতে ফের জলাবদ্ধতা

ছবি

চুরি হচ্ছে ওএমএসের চাল-আটা, বঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষ

ছবি

গণঅভ্যুত্থানে সমন্বয়কদের ছাত্রশিবিরের ‘নির্দেশে’ কাজ করার তথ্য ‘মিথ্যাচার’: নাহিদ

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ: ঐকমত্যের আলোচনায় ফের উত্তেজনা

ছবি

ডেঙ্গু: জুলাই মাসে আক্রান্ত ১০,৬৮৪ জন, মৃত্যু ৪১

ছবি

দেশব্যাপী চাঁদাবাজদের তালিকা হচ্ছে, দায়িত্বে পুলিশ ও র‌্যাবসহ তিন গোয়েন্দা সংস্থা

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রত্যাশা ফখরুলের, মৌলিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ

ছবি

গোপালগঞ্জে জীবনের হুমকি বিবেচনায় এনসিপি নেতাদের উদ্ধার: সেনাবাহিনী

ছবি

জুলাই সনদ: সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি জামায়াতের

ছবি

ওসমানী বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজের চাকা ফেটে একজন নিহত

ছবি

এমএসএফের প্রতিবেদন: জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, রাজধানীতে দিনভর যানজট, দুর্ভোগ

ছবি

মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ, সাবেক মন্ত্রী জাবেদসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

জাপায় জি এম কাদেরের কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

ছবি

রাষ্ট্রপতির হাতে সেনা, নৌ, বিমানপ্রধান ও গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগের প্রস্তাব

ছবি

“সবার জীবন মূল্যবান” গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে সেনা হস্তক্ষেপ নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা

ছবি

সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রতিনিধিত্বে দ্বিকক্ষীয় সংসদ গঠনের পথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভোটের সময়সূচি ঘিরে আলোচনা, প্রস্তুতি চলছে নির্বাচনের: আসিফ নজরুল

ছবি

বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে শিশুদের অবস্থা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে গুরুতর

ছবি

জুলাই সনদ: আজই নিষ্পত্তি চায় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, তীব্র যানজট

ছবি

দুর্নীতি মামলা: শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু

ছবি

গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে, বাগেরহাটে কমছে একটি: নির্বাচন কমিশন

আ’লীগ আমলের তিন সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে কমিশনে রূপান্তর

ছবি

বিমান শারজাহ থেকে ফিরলো ৬ ঘণ্টা দেরিতে

tab

জাতীয়

সংসদে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ, মনোনয়ন পিআর পদ্ধতিতে: ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে ১০০ আসনবিশিষ্ট উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর যে ভোট পাবে, সেই হারে দলগুলোর মধ্যে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন করা হবে। এই পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল একটি আসন না পেলেও উচ্চকক্ষে আসন পেতে পারে। বৃহস্পতিবার, (৩১ জুলাই ২০২৫)ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে (আলোচনা) ২৩তম দিনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

কিছু পক্ষ ‘অনির্বাচিতদের’ দিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা ‘কেন্দ্রীভূত’ করতে

চায়: বিএনপি

উভয়কক্ষের সদস্যদের গোপন ভোটে হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, একমত সব দল

তিন বাহিনীর প্রধান ও দুই গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেয়ার প্রস্তাব

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাবের পক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ বেশ কিছু দল। তবে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে ছিল বিএনপিসহ কয়েকটি দল। এই ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় এবং ভিন্নমত থাকায়, বিষয়টি কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিল। সেই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে কমিশন এ সিদ্ধান্ত জানায়।

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে, অর্থবিল ব্যতীত অন্য সব বিল নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ উভয়কক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না। এক মাসের বেশি বিল আটকে রাখলে, সেটিকে উচ্চকক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে।

নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত বিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করবে উচ্চকক্ষ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, তবে উভয়কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। নিম্নকক্ষ সেই সংশোধনগুলো আংশিক বা পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।

বিএনপি এবং তাদের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) দাবি, উচ্চকক্ষের আসন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে। উচ্চকক্ষের এখতিয়ার

নিয়েও তাদের আপত্তি রয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, দেশের বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উচ্চকক্ষের কোনো প্রয়োজন নেই।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে এই কমিশন, যার নেতৃত্বে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিল। যেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০, নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি।

অস্পষ্টতা দেখছে এনসিপি

বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি, ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে। আমরা কমিশন এবং আলী রীয়াজ স্যারের কাছে আহ্বান জানাবো যে, বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে যেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা ও কার্যকর আলোচনা হয়। কমিশনের প্রস্তাবিত সময়সীমাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি এবং চাইছি যেন এটি তৎক্ষণাৎ কার্যকর হয়।’ তিনি বলেন, ‘আজকের আলোচনায় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহা হিসাব নিরীক্ষকের মতো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি দল ভিন্নমত পোষণ করলেও সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে।’

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষের গঠনপ্রণালি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলা হয়েছে। তবে এনসিপির পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হয়েছে যে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে।

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা প্রকৃত নির্বাচিত প্রতিনিধি নন, এমন কথা অনেকেই বলছেন তুলে ধরে আখতার বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই এফপিটিপি (ফার্স্ট-পাস্ট-দ্যা-পোস্ট) ও পিআর উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বৈধতা রয়েছে। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও জনগণের প্রতিনিধি। যেসব দল এক শতাংশ ভোট পেলেও তারা যেন একজন করে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি দিতে পারেন, এতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের আরও বিস্তৃত রূপ প্রতিষ্ঠিত হবে। আইন পাসের আগে উচ্চকক্ষে ব্যাপক আলোচনা হবে, যা এখন হয় না। এতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সঠিক ত্রুটি ধরার সুযোগ থাকবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হবে।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটি যেন না হয়। বরং উচ্চকক্ষে যদি পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা থাকেন, তাহলে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টিও জনগণের বৃহত্তর প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে হতে পারবে। মোটাদাগে আমরা উচ্চকক্ষ চাই। এখন অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তারা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে তারা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কিনা? আমরা বিশ্বাস করি, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ১০০ আসনের পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ বহুদলীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব না থেকে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে দেশ। গণতন্ত্র চর্চার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশের রাজনীতি যেন হানাহানি ও সংঘাত থেকে সরে এসে নীতিনির্ভর ও সংলাপনির্ভর পথে পরিচালিত হোক। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ থাকলে, তা সম্ভব।’

অনির্বাচিত সদস্য

পিআর পদ্ধতিতে ‘কিছু পক্ষ’ অনির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে বলে

অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার সংলাপের চা-বিরতিতে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি, উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না। উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা দেখছি, কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিন করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

আইনসভার উভয়কক্ষের (জাতীয় সংসদ ও উচ্চকক্ষ) সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংলাপে দুপুরের বিরতির পরে আলোচনার জন্য উপস্থাপন করলে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়।

কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইনানুযায়ী আইন সভার উভয়কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ। সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হইবেন।’ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) এ উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো প্রয়োজ্য হবে এবং রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পদে থাকতে পারবেন না এই মর্মে অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) (ঘ) যুক্ত হবে।

বৃহস্পতিবার সংলাপের শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, এদিন তিনি আলোচনার সমাপ্তি টানতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’ তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

রাষ্ট্রপতির হাতে নিয়োগের ক্ষমতা

তিন সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধান এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ প্রস্তাবের ওপর বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে একটি ধারণাপত্র তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছেন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে ঐকমত্য কমিশন আরও কিছু নিয়োগে রাষ্ট্রপতির স্বাধীন ক্ষমতার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে।

তিন বাহিনীর প্রধান ও দুই গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগের ক্ষমতার বিষয়টির পাশাপাশি আরও ৯টি নিয়োগের ক্ষমতা সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস্ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে বিএনপির চিন্তাভাবনা তুলে ধরে চা-বিরতিতে ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয়কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।’

জুলাই সনদ ‘আইনের ঊর্ধ্বে’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি তুলেছে। এ স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই সনদে সই না করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তারা। এমনকি সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও এসেছে জামায়াতের পক্ষ থেকে।

কিন্তু বিএনপি এখনই এর সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে। দলটি বলছে, এটি ‘আইনের ঊর্ধ্বে’।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়। জনগণের এ প্রত্যাশা (সংসদের মাধ্যমে) সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার অঙ্গীকার আমরা করেছি।’

ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রতিটি দলকে প্রস্তাব সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলাম। আমরা সংশোধন করে দিয়েছি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধান ও অন্যান্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে আমরা তা করব।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছি, পঞ্চম সংশোধনের মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বিতর্ক করব, মতপ্রকাশ করব, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য গড়ে তুলব। জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এ সনদকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি।’

back to top