শাহবাগ থেকে পালিয়ে গেলো অবরোধকারীরা, ৩২ ঘন্টার পর স্বাভাবিক,ভোগান্তির অবসান
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে গত দুদিন ধরে শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছিল জুলাইযোদ্ধারা। এতে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হচ্ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নিজেদের প্রকৃত জুলাইযোদ্ধা দাবি করে তাদের ওপর হামলা চালায় আরেক দল। পরে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষকেই ছত্রভঙ্গ করে দেয় -সংবাদ
নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন একদল ব্যক্তি। টানা ৩২ ঘণ্টা অবরোধের পর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরেক দল ব্যক্তি নিজেদের ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে ওই অবরোধকারীদের ওপর হামলা করেন। তারা শাহবাগ মোড়ের চারপাশে রাখা ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধকতা) সরিয়ে দেন। এর এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন পুলিশ এসে দুইপক্ষকে লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে পুরোদমে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং তা স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে জুলাই যোদ্ধারা। গত বৃহস্পতিবার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও একই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এ রুটে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষকে। কারণ শাহবাগ মোড় বন্ধ থাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সব সড়কে। ভোগান্তিতে অন্য মাত্রা যোগ করে দিনব্যাপী হওয়া বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে শাহবাগ মোড় পার হয়েছেন। এ সময় দুদিন পরপর শাহবাগ মোড় অবরোধের তীব্র সমালোচনা করেন পথচারীরা। সড়ক অবরোধের এমন ভোগান্তির একটি স্থায়ী সমাধান চান তারা। এরই মধ্যে টানা ৩২ ঘণ্টা টানা অবরোধের পর তাদেরকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে শাহবাগ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে একদল ছাত্র-জনতা। তাদের দাবি তারাই ‘প্রকৃত’ জুলাইযোদ্ধা।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে এ ঘটনা ঘটে। এতে করে দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। যদিও পালিয়ে যাওয়ার আগে জনভোগান্তি উপেক্ষা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ছাড়া হবে না জানিয়ে অনড় অবস্থানের কথা জনিয়েছিল আন্দোলনকারীরা।
পুলিশের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার থেকেই বেশ কয়েকবার তাদের সড়ক ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের প্রস্তাব দিলেও তারা কোনো সাড়া দেননি। শুক্রবার বিকেলেও ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমের নেতৃত্বে
আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করার পরও সড়ক ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন অবরোধকারীরা।
এদিকে শাহবাগের দুপাশে দুটি বড় হাসপাতাল হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদেরও। এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালগামী অনেক রোগীও বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন। যদিও জরুরি রোগী থাকা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেয়া হয়নি না।
সরজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে শাহবাগ অবরোধ করে যারা জুলাই যোদ্ধা দাবি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিল হঠাৎ করেই একদল ছাত্র-জনতা ঢুকে অবরোধকারীদের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। এরপর তাদের ‘ভুয়া’ জুলাই যোদ্ধা আখ্যা দিয়ে মারধর করতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। ‘প্রকৃত’ জুলাইযোদ্ধা দাবি করে এক ব্যক্তি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে তারিখ ঘোষণ করেছেন। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে শাহবাগের মতো ব্যস্ত রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। ]
এর ফলে জুলাই নিয়ে মানুষের কাছে আরও ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। তাদেরকে গত বৃহস্পতিবারও আমরা বলেছি। তারা আমাদের কথা রাখেনি। এ সময় তিনি জুলাই-আহত কার্ড বের করে দেখান ওই ব্যক্তি। আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, দুইদিন ধরে শাহবাগ অবরোধ। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে তো জুলাই সনদ ঘোষণা করার কথা বলাই হয়েছে, তারপরও এরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিল।
এখন জানতে পারলাম এরা ‘ভুয়া’ জুলাই যোদ্ধা। পরে যারা এসে এদের তুলে দিয়েছে তারা অনেকেই জুলাই-আহত কার্ড দেখিয়েছে, গুলির চিহ্ন দেখিয়েছে। এতে করে আমরা বুঝতে পেরেছি এরাই ‘আসল’ জুলাইযোদ্ধা। জানা যায়, প্রথমে একটু সংঘর্ষ হলেও কিছু সময়ের মধ্যেই অবরোধকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। তবে এ ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হননি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সারাদিন সড়ক অবরোধের পর রাতেও সেখানে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন জুলাই যোদ্ধারা। শুক্রবার সকাল থেকেই তারা ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’; ‘টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’; ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ দরকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে কর্মসূচি থেকে ঘোষণা করা হয় এখনও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মসূচি চলমান থাকবে। বৃষ্টির মাঝেও একে একে বক্তারা অস্থায়ী মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেন। তারা জুলাই আন্দোলনের পটভূমি, প্রেক্ষাপট এবং আন্দোলনের বিভিন্ন দিক স্মরণ ও বিশ্লেষণ করেন।
এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’-এর সদস্য সচিব মাসুদ রানা সৌরভ তিন দফা মূল দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মান, আজীবন চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সংবিধানে রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে। ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে, যাতে শহীদ ও আহতদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এ লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও ন্যায়সংগত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়, যেখানে ভুক্তভোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত সুরক্ষা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আরমান শাফিন জানান, সরকার থেকে এ-সংক্রান্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। দেশের ৬৪ জেলা থেকে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য এবং জুলাইযোদ্ধারা আমরা যার যার খাবার-দাবার নিয়ে এসে এখানে বসেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসবে ততক্ষণ আমরা থাকব।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এখনও জুলাই সনদ না হওয়ায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন। বারবার এ দাবি জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তারা। তারা আরও বলেন, জুলাই সনদ তাদের অধিকার। আর এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জুলাই সনদ নিয়ে আশ্বাস পূরণ না হলে শাহবাগে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জুলাই যোদ্ধারা।
এদিকে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারীরা। শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় শুক্রবার ও কাঁটাবন মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, মৎস্যভবন মোড় ও শাহবাগ থানার সামনের সড়ক থেকেই যানবাহন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয় মানুষ। অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে।
অন্যদিকে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক মোটরসাইকেল চালক। তারা বলেন, আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন এক ঘণ্টার গন্তব্যে যেতে তিন ঘণ্টা লাগে। যারা রাইড শেয়ার করি তাদের চরম ক্ষতি হয়। জুলাইয়ের আন্দোলন আমরাও করেছি, কিন্তু এখন আমাদেরই দুর্ভোগ বেশি।
শুক্রবার সকালে মিরপুর থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছিলেন সাহাবুদ্দিন সাবু নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢামেকে আমার বড় ভাই ভর্তি রয়েছে। শুক্রবার কখনোই সড়কে এত যানজট থাকে না। কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর মোড় পার হতেই একঘণ্টার বেশি সময় লাগল। বৃষ্টির কারণে হেঁটেও আসতে পারিনি। এভাবে দুদিন পরপর আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ করাটা কালচারে পরিণত হয়ে গেছে।
সরকারের উচিত সড়ক অবরোধ বন্ধে স্থায়ী একটি সমাধান করা। আর যেগুলো যৌক্তিক দাবি রয়েছে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে মেনে নেয়া। যাতে সাধারণ মানুষকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। লেহাজুর রহমান অনিক নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, শুক্রবার ও রাস্তা বন্ধ। বাধ্য হয়ে হেঁটে যাওয়া লাগছে। এরচেয়ে দুঃখজনক কী হতে পারে।
অন্যদিকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার থেকেই শাহবাগে নিরাপত্তা জোরদারে মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে সড়ক ছেড়ে দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার অনুরোধ জানিয়েছি। শুক্রবার ও ডিসি স্যারের (রমনা বিভাগের ডিসি) নেতৃত্বে আমরা কয়েকবার তাদের অনুরোধ করি। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বে না বলে জানায়। একপর্যায়ে একদল ছাত্র জনতার তাড়া খেয়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
শাহবাগ থেকে পালিয়ে গেলো অবরোধকারীরা, ৩২ ঘন্টার পর স্বাভাবিক,ভোগান্তির অবসান
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে গত দুদিন ধরে শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছিল জুলাইযোদ্ধারা। এতে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হচ্ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নিজেদের প্রকৃত জুলাইযোদ্ধা দাবি করে তাদের ওপর হামলা চালায় আরেক দল। পরে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষকেই ছত্রভঙ্গ করে দেয় -সংবাদ
শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন একদল ব্যক্তি। টানা ৩২ ঘণ্টা অবরোধের পর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরেক দল ব্যক্তি নিজেদের ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে ওই অবরোধকারীদের ওপর হামলা করেন। তারা শাহবাগ মোড়ের চারপাশে রাখা ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধকতা) সরিয়ে দেন। এর এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন পুলিশ এসে দুইপক্ষকে লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে পুরোদমে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং তা স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে জুলাই যোদ্ধারা। গত বৃহস্পতিবার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও একই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এ রুটে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষকে। কারণ শাহবাগ মোড় বন্ধ থাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সব সড়কে। ভোগান্তিতে অন্য মাত্রা যোগ করে দিনব্যাপী হওয়া বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে শাহবাগ মোড় পার হয়েছেন। এ সময় দুদিন পরপর শাহবাগ মোড় অবরোধের তীব্র সমালোচনা করেন পথচারীরা। সড়ক অবরোধের এমন ভোগান্তির একটি স্থায়ী সমাধান চান তারা। এরই মধ্যে টানা ৩২ ঘণ্টা টানা অবরোধের পর তাদেরকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে শাহবাগ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে একদল ছাত্র-জনতা। তাদের দাবি তারাই ‘প্রকৃত’ জুলাইযোদ্ধা।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে এ ঘটনা ঘটে। এতে করে দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। যদিও পালিয়ে যাওয়ার আগে জনভোগান্তি উপেক্ষা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ছাড়া হবে না জানিয়ে অনড় অবস্থানের কথা জনিয়েছিল আন্দোলনকারীরা।
পুলিশের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার থেকেই বেশ কয়েকবার তাদের সড়ক ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের প্রস্তাব দিলেও তারা কোনো সাড়া দেননি। শুক্রবার বিকেলেও ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমের নেতৃত্বে
আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করার পরও সড়ক ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন অবরোধকারীরা।
এদিকে শাহবাগের দুপাশে দুটি বড় হাসপাতাল হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদেরও। এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালগামী অনেক রোগীও বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন। যদিও জরুরি রোগী থাকা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেয়া হয়নি না।
সরজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে শাহবাগ অবরোধ করে যারা জুলাই যোদ্ধা দাবি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিল হঠাৎ করেই একদল ছাত্র-জনতা ঢুকে অবরোধকারীদের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। এরপর তাদের ‘ভুয়া’ জুলাই যোদ্ধা আখ্যা দিয়ে মারধর করতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। ‘প্রকৃত’ জুলাইযোদ্ধা দাবি করে এক ব্যক্তি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে তারিখ ঘোষণ করেছেন। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে শাহবাগের মতো ব্যস্ত রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। ]
এর ফলে জুলাই নিয়ে মানুষের কাছে আরও ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। তাদেরকে গত বৃহস্পতিবারও আমরা বলেছি। তারা আমাদের কথা রাখেনি। এ সময় তিনি জুলাই-আহত কার্ড বের করে দেখান ওই ব্যক্তি। আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, দুইদিন ধরে শাহবাগ অবরোধ। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে তো জুলাই সনদ ঘোষণা করার কথা বলাই হয়েছে, তারপরও এরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিল।
এখন জানতে পারলাম এরা ‘ভুয়া’ জুলাই যোদ্ধা। পরে যারা এসে এদের তুলে দিয়েছে তারা অনেকেই জুলাই-আহত কার্ড দেখিয়েছে, গুলির চিহ্ন দেখিয়েছে। এতে করে আমরা বুঝতে পেরেছি এরাই ‘আসল’ জুলাইযোদ্ধা। জানা যায়, প্রথমে একটু সংঘর্ষ হলেও কিছু সময়ের মধ্যেই অবরোধকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। তবে এ ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হননি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সারাদিন সড়ক অবরোধের পর রাতেও সেখানে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন জুলাই যোদ্ধারা। শুক্রবার সকাল থেকেই তারা ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’; ‘টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’; ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ দরকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে কর্মসূচি থেকে ঘোষণা করা হয় এখনও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মসূচি চলমান থাকবে। বৃষ্টির মাঝেও একে একে বক্তারা অস্থায়ী মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেন। তারা জুলাই আন্দোলনের পটভূমি, প্রেক্ষাপট এবং আন্দোলনের বিভিন্ন দিক স্মরণ ও বিশ্লেষণ করেন।
এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’-এর সদস্য সচিব মাসুদ রানা সৌরভ তিন দফা মূল দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মান, আজীবন চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সংবিধানে রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে। ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে, যাতে শহীদ ও আহতদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এ লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও ন্যায়সংগত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়, যেখানে ভুক্তভোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত সুরক্ষা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আরমান শাফিন জানান, সরকার থেকে এ-সংক্রান্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। দেশের ৬৪ জেলা থেকে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য এবং জুলাইযোদ্ধারা আমরা যার যার খাবার-দাবার নিয়ে এসে এখানে বসেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসবে ততক্ষণ আমরা থাকব।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এখনও জুলাই সনদ না হওয়ায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন। বারবার এ দাবি জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তারা। তারা আরও বলেন, জুলাই সনদ তাদের অধিকার। আর এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জুলাই সনদ নিয়ে আশ্বাস পূরণ না হলে শাহবাগে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জুলাই যোদ্ধারা।
এদিকে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারীরা। শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় শুক্রবার ও কাঁটাবন মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, মৎস্যভবন মোড় ও শাহবাগ থানার সামনের সড়ক থেকেই যানবাহন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয় মানুষ। অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে।
অন্যদিকে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক মোটরসাইকেল চালক। তারা বলেন, আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন এক ঘণ্টার গন্তব্যে যেতে তিন ঘণ্টা লাগে। যারা রাইড শেয়ার করি তাদের চরম ক্ষতি হয়। জুলাইয়ের আন্দোলন আমরাও করেছি, কিন্তু এখন আমাদেরই দুর্ভোগ বেশি।
শুক্রবার সকালে মিরপুর থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছিলেন সাহাবুদ্দিন সাবু নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢামেকে আমার বড় ভাই ভর্তি রয়েছে। শুক্রবার কখনোই সড়কে এত যানজট থাকে না। কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর মোড় পার হতেই একঘণ্টার বেশি সময় লাগল। বৃষ্টির কারণে হেঁটেও আসতে পারিনি। এভাবে দুদিন পরপর আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ করাটা কালচারে পরিণত হয়ে গেছে।
সরকারের উচিত সড়ক অবরোধ বন্ধে স্থায়ী একটি সমাধান করা। আর যেগুলো যৌক্তিক দাবি রয়েছে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে মেনে নেয়া। যাতে সাধারণ মানুষকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। লেহাজুর রহমান অনিক নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, শুক্রবার ও রাস্তা বন্ধ। বাধ্য হয়ে হেঁটে যাওয়া লাগছে। এরচেয়ে দুঃখজনক কী হতে পারে।
অন্যদিকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার থেকেই শাহবাগে নিরাপত্তা জোরদারে মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে সড়ক ছেড়ে দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার অনুরোধ জানিয়েছি। শুক্রবার ও ডিসি স্যারের (রমনা বিভাগের ডিসি) নেতৃত্বে আমরা কয়েকবার তাদের অনুরোধ করি। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বে না বলে জানায়। একপর্যায়ে একদল ছাত্র জনতার তাড়া খেয়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচি ছেড়ে পালিয়ে যায়।